জীবনানন্দ,
আচ্ছা একটা কথা বল তো, তোমার নাম জীবনানন্দ কে রেখেছিল? তোমাকে তোমার নামটা একটু সংক্ষিপ্ত করে ডাকতে গেলেই জীবন ডাকতে হয়। এটা একটা কথা হলো! কি অদ্ভুত কৌতুক! তোমাকে কেন আমি জীবন ডাকব! আবার সবটা ডাকলে তো আরও সমস্যা! জীবনের সঙ্গে যোগ হয় আনন্দ। তুমি কেন আমার জীবন ও তার আনন্দ হতে যাবা! কোন্ দুঃখে! শোন জীবন+আনন্দ, তুমি অবশ্যই তোমার নামটা বদলে ফেলবা। এমনি এমনি মুখে মুখে বদলে দিয়ে বলবা বদলে ফেলেছি, সেটা হবে না। কোর্টে গিয়ে এফিডেভিট করে বদলাবা। অবশ্যই বদলাবা। বুঝেছ?
এবার আসল কথা বলি। আচ্ছা তুমি আমার কে হও বল তো? আমার বাপ-মা? আমার চাচা, মামা, খালা, ফুপু? আমার অভিভাবক? কেউ নও, তাই না? তাহলে আমাকে ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেছ কেন? হোয়াই? হু আর ইউ? তুমি নিষেধ করার কে? ফাজলামো পেয়েছ? আমি যার সঙ্গে ইচ্ছা কথা বলব, তোমার তাতে কি? তোমার এত জ্বলে কেন জীবনানন্দ? আমি ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলব, তার বাসায় গিয়ে দাওয়াত খাব, তার সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে ছবি তুলব, তোমার কি? খবরদার, আর কখনও আমার ব্যক্তিস্বাধীনতায় নাক গলাতে আসবা না বলে দিলাম। একেবারে নাক ভেঙে দিব।
আর শোন, ফিরে এসো সুরঞ্জনা মানে কি? এটা কি ধরণের ফাজলামো? ফিরে আসব মানে কি? আমি তোমার কাছে ছিলাম নাকি কখনও? তুমি দেখছি আমায় ডোবাবে জীবনানন্দ! আবার বলেছ, নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে নাকি ফিরতে হবে! ছিঃ! এমন একটা কথা বলতে তোমার লজ্জা করল না? এভাবে তুমি আমাকে রাতের বেলায় তোমার কাছে যেতে বলতে পারলে! রাতবিরেতে আমি কেন যাব তোমার কাছে! আমি ভদ্রঘরের মেয়ে নই? আমার কোনও মানসন্মানবোধ নেই? তুমি তো লিখে দিয়েই খালাস, যারা পড়বেন তারা আমাকে কি ভাববেন বলতে পার? তাদের সামনে আমি কেমন করে মুখ দেখাব?
আর নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতের ব্যাপারটা কি? নৌকায় করে রাত জেগে জেগে জ্যোৎস্না দেখে দেখে তোমার মাথাটা যে একদম গেছে, সেটা কি তুমি বুঝতে পারছ জীবনানন্দ? মাঠঘাট ঢেউয়ে ডাকাডাকি করে কেউ! আজব!
তোমার হৃদয়ে তো আমি যাই নাই কখনও তবে ফিরব মানে কি! একটা ভালো পরামর্শ দেই, নাম বদলাতে এফিডেভিট করতে কোর্টে যেদিন যাবা, ফেরার সময় একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে দেখা করে আসবা। তাকে মাঠঘাট ঢেউয়ের গল্পগুলা বলবা। আর বাসায় আসার আগে ডাইজিপাম জাতীয় ওষুধ কিনে আনবা। ডাক্তার যদি ঘুমের ওষুধ দেয় তো ভালো। না দিলে ঘুমানোর আগে ওটা খেয়ে ঘুমাবা। দেখবা নক্ষত্র থেকে মাঠঘাট জাতীয় ভাবনারা সুস্থ হয়ে গেছে।
এই শোন, যুবকের কাছে না ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে। তোমার তো ক্যামেরা নাই, ডিএসএলআর ক্যামেরা তো তুমি চিনবে না। ধরো আমি এখানে দাঁড়ালাম, যুবক দৌড়ে আধমাইল দূরে গিয়ে আমার ছবি তুলল, ক্যামেরা যেহেতু আমার দিকে তাক করেছে তাই শুধু আমার ছবিই উঠবে, আর যা কিছু আশপাশে থাকবে সবই ঘোলাটে দেখাবে; সে কারণে আমাকে দেখাবে স্বপ্নিল আর মায়াময়। অপ্সরীর মতো আর কি। তাই 'তুমি দূর থেকে দূরে – আরও দূরে/ যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর' বললে আমি শুনব না তো।
'কি কথা তাহার সাথে? তার সাথে!' তা দিয়ে তোমার কি দরকার? আমি কি তোমাকে এর সাথে কি কথা, তার সাথে কি কথা কখনও জানতে চেয়েছি? আর চাইবই বা কেন! তুমি তো আমার কেউ হও না। তাহলে তুমি কেন জানতে চাইছ জীবনানন্দ? অন্যের চড়কা রেখে এবার নিজের চড়কায় তেলটা দাও না প্লিজ।
আকাশের আড়ালে আকাশেরা থাকুক না তাদের মতো। আমি তো মৃত্তিকাই, মৃত্তিকার মতো বল কেন! প্রেম যদি ঘাস হ’য়ে আসে, তো আসুক না, তখন না হয় গরুতে খাবে। তোমার তো তাতে সমস্যা হওয়ার কথা না।
জীবনানন্দ, আমার হৃদয় আজ ঘাস নয়, আমার হৃদয় আজ রাগ। তোমার বিরক্তিতে আমি অতিষ্ঠ। বাতাসের ওপারে বাতাস থাকুক। তুমিও থাক ওইখানে। সময় করে কোর্ট থেকে নামটা বদলে এস, কেমন? আবারও বলছি, আমার বিষয়ে নাক গলিয়ো না, নাক কিন্তু সত্যিই ভেঙে দিব।
ইতি
সুরঞ্জনা
১৮.৬.২০
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৩৮