somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা মানুষ রপ্তানি করি

০৯ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের মানুষ। সরকারি হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে বিদেশে বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন ১ কোটি ২০ লক্ষেরও বেশি। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশি মানুষ রয়েছেন। বিএমইটিএর হিসেব অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি অভিবাসীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছে। গেল বছর করোনা ভাইরাস মহামারীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী আয় কিছুটা কমলেও বাংলাদেশে বেড়েছে। ২০১৯ সালে বিশ্বে প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশ ছিল অষ্টম স্থানে। পরের বছর করোনা মহামারী প্রথম বছরে উঠে এসেছে সপ্তম স্থানে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ২২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পেয়েছে। এটি মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির নিরিখে যা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

সাধারণত একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস হয় দেশটির উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি খাত থেকে। বাংলাদেশেরও সেটিই ছিল। স্বাধীনতার পরের বছরেই ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। তার মধ্যে ৯০ ভাগ পণ্যই ছিল পাট ও পাটজাত। পাটের পর প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল চা ও হিমায়িত খাদ্য। একসময় ছেলেমেয়েদেরকে পাঠ্য বই শেখাত, কৃষিপ্রধান এই দেশটিতে পাট হলো সোনালী আঁঁশ। কেননা পাট হলো এ দেশটির প্রধান অর্থকরী ফসল। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে স্বীকৃত ছিল পাট। পঞ্চাশ বছর আগের ওই পণ্য রপ্তানির চিত্রটি এখন বদলে গেছে। পাট শিল্প প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। পাটকলগুলো লোকসানের অজুহাতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বা ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এসব কলকারখানায় কাজ করতে থাকা শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। পাটকে সরিয়ে পণ্য রপ্তানির শীর্ষস্থানের জায়গাটি দখল করেছিল তৈরি পোশাক খাত। এখন সে জায়গাটিও পাল্টেছে। সে জায়গা এখন নিয়ে নিয়েছে মানুষ।

আমরা এখন মানুষ রপ্তানি করি। কায়দা করে আমরা এর নাম দিয়েছি জনশক্তি রপ্তানি। এই রপ্তানি করা মানুষদের আয়ই এখন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপ অনুযায়ী দেশের মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের একভাগের নিয়মিত কোনো কর্মসংস্থান নেই। প্রতি বছর ১৮ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে আসছে। এদের মধ্যে গড়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ প্রতি বছর কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা দেশের চলতি শিক্ষা ব্যবস্থাকে সেকেলে বলে আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলছেন, শিক্ষার মানের সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানও ভালো নয়। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বেশ ক’বারই শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবার কথা বলেছেন। তারমানে সরকারও শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের ওই বক্তব্যকে সমর্থন করেন। সে কারণেই শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে চান। তারওপর প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জীবিকার সম্পর্ক নেই। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার সঙ্গে জীবিকার যোগাযোগ নেই বলে শিক্ষা থেকে প্রতিবছর অসংখ্য ছেলেমেয়ে ঝরে পড়ে।

সমাজের প্রধান অংশটির কাছে জীবিকাই মুখ্য। এটি খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। ভালো ও সুস্থভাবে বাঁচতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি খুব দরকার। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র অর্থ উপার্জনের পন্থা তৈরি করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সে ব্যর্থতা ঢাকতে রেমিট্যান্সকে আঁঁকড়ে ধরেছে। সরকারের রেমিট্যান্সের বিজ্ঞাপনের ফলে দরিদ্র মানুষ ঋণ করে, জমি বেচে, গয়না বেচে শ্রমিকের কাজ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমাচ্ছে। কিন্তু চাইলেই ফিরতে পারছে না। খরচের টাকাটা তুলতে হবে। আটশ’ থেকে হাজার রিয়াল বেতন। দেশে পরিবারকে খরচও পাঠাতে হয়। এভাবেই বৃত্তে আটকে যায় প্রবাসী শ্রমিকের জীবন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব পেশায় দক্ষকর্মীর চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কম্পিউটার সিস্টেম অ্যানালিস্ট, রোবটিক্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বিগ ডাটা অ্যানালিস্ট, সিকিউরিটি এক্সপার্ট, কিউলিনারি সার্ভিস এবং নির্মাণশিল্প। এছাড়া জাপান, কোরিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নার্সিং, বয়স্ক সেবা, ওয়েল্ডিং, কেয়ার গিভিং, পাইপ ফিটিং, প্লাম্বার, কৃষি, হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ইত্যাদি পেশার চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ প্রধানত নির্মাণশিল্পের জন্যে শ্রমিকের চাহিদাটি সুষ্ঠুভাবেই পূরণ করে চলেছে। কিন্তু দক্ষতার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষা কারিকুলাম ও কারিগরি শিক্ষা পদ্ধতি এখনো পুরনো ধাঁচের তাত্ত্বিক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। মধ্যপ্রাচ্যের ৭৫ শতাংশ নিয়োগকারীদের বাংলাদেশি শ্রমিকদের কারিগরি দক্ষতার ওপর আস্থা নেই।

কারণ আমাদের কর্মীরা দক্ষ নয়। শিক্ষার সঙ্গে জীবিকার যোগাযোগটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জীবিকার সে যোগাযোগটা নেই। ফলে দক্ষ কর্মীও আমরা তৈরি করতে পারছি না। শিক্ষার সঙ্গে যতদিন কাজের ক্ষেত্রটির মেলবন্ধন তৈরি করা না যাবে, ততদিন আমরা না পাবো দক্ষ কর্মী, না পাবো শিক্ষিত জনগোষ্ঠী।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১:৩৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×