সুইট আসছে। ওরে নিয়ে রসিকলালে গেছি। এখন হোটেল-রেস্টুরেন্টে বসা নিষেধ আছে। রসিকলালের মালিক লোকটা আমাদের খুব খাতির করে বসালো।...
সুইট খুব সুন্দর করে বলল, দাদা, কেমন আছেন?
আমি সঙ্গে সঙ্গে সুইটকে চেপে ধরলাম, তুই দাদা ডাকলি কেন!
সুইট বিস্মিত হলো। তারপর বলল, উনার বাবাকে কাকা ডাকতাম। এই জন্যে দাদা ডাকছি।
আমি বলি, কাকা ক্যান ডাকতি?
সুইট এবারে কথা বলে না। আমার দিকে তাকায়। আমি বলি, অন্য দোকানে গেলে বলস্, চাচা এইটার দাম কত, ভাই ওইটা দেন তো। এখানে কাকা-দাদা ডাকবি ক্যান? তুই যখনই ধর্মীয় পরিচয় জানলি তখনই সম্পর্ক না বদলালেও সম্বোধন বদলে গেল। এই ডাকটাই বৈষম্য। এইটাই সাম্প্রদায়িকতা। অসাম্প্রদায়িকতাটা আসলে ভান। ভেতরে আমরা সকলেই কমবেশি সাম্প্রদায়িক।
যেমন ধরেন সন্তান তো সন্তানই। 'কন্যাসন্তান' আবার কি! এই 'কন্যাসন্তান' ডাকটাই তো বৈষম্য। মেয়ে তাই সন্তান হলেও 'ঘরের ইজ্জত।' পরাধীন তাই। চাবি দেয়া পুতুলের মতো। নিজস্ব কোনো ইচ্ছা থাকতে দেয়া যাবে না।
আমার বোনটা দারুণ অভিনয় প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিল। চুপিচুপি থিয়েটারে ভর্তি হলো। লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়ে রিহার্সেলও করে। কিন্তু কদ্দিন লুকাবে? একদিন ধরা পড়ে গেল। আমাদের 'ইজ্জতে' ঘা লাগল। আমরা 'ইজ্জত গেল' ইজ্জত গেল' বলে হায় হায় করে উঠলাম। এরপর পিটিয়ে বোনটার হাড় গুঁড়া করে মনের আনন্দে আফজাল-সুবর্ণার নাটক দেখতে লাগলাম।
'কন্যাসন্তান' আবার কি! মেয়ে হলেই আমরা শরীর নিয়ে ভাবি। ভাবি বলেই 'ইজ্জত' নামক লেবেল লাগিয়ে আত্মপ্রসাদে ডুবে থাকি। 'ইজ্জত' ব্যাপারটা যে নিজের যোগ্যতা দিয়ে অর্জন করতে হয়, সেটাকে আড়াল করতে ঘরের মেয়েটার কাঁধেই তার দায় চাপাই।
শালা ভণ্ডর দল।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২১ রাত ২:০৩