somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দারোগা বাড়ি

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শোড়গোল বাড়তেই লাগল। থেকে থেকে লোক জমা হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তেমন একটা লোক জমতে পারছে না। অনেকে ভয়ে বাড়িটার কাছে ভিড়ছে না। অদূরে রাস্তায় দোকানে লোক জমে আছে। কেমন যেন থমথমে অবস্থা। আবারও সেই চিৎকার। মনের ভিতর ভয় জমিয়ে দিচ্ছে অনেকের। চায়ের দোকানে এক বৃদ্ধের হাত কেপে কিছু চা পাঞ্জাবীতে পড়ে গেল। দাঁত কিড়মিড় করে একটা খিস্তি দিল। সালাগো জালায় চাও খাইতে পারি না। কিন্তু কেউই ভয়ে বাড়িটার দিকে এগোবার সাহস করে না। ভোরবেলা থেকেই শুরু হয়েছে এই চিৎকার। দারোগা জমির আলীর বাসা। জাদরেল দারোগা। এলাকায় যথেষ্ট কুখ্যাতি আছে তার। চেহারাও দিন দিন কালো হয়ে যাচ্ছে। লোকজন আড়ালে বলাবলি করে, ঘুষ খেলে নাকি চেহারা কালো হয়ে যায়। জমির আলীর চেহারা খুব বেশি কালো বিদঘুটে হয়ে যাচ্ছে। হয়তো ঘুষ বেশি খাচ্ছে সে। গতরাতে তার ছেলের মটর সাইকেল চুরি গেছে। বাসার কেচিগেটের তালা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। দামী মটর সাইকেল, পালসার। একদম নতুন। সকালে উঠে দেখে তালা ভাঙ্গা। জমির আলী অনেকক্ষণ থ মেরে ছিল। তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না তার বাসায় চুরি হবে। দারোগার বাসায় চুরি। ছোট খাট ব্যাপার না। নির্ঘাত চোরের হাত অনেক লম্বা |
জমির আলী দোতালার ব্যালকনিতে অনেকক্ষণ পায়চারী করলেন। কপালে তিন ভাজ পড়েছে। অনেক ভেবে চিন্তে তিনি এলাকার নাইট গার্ডকে ধরে নিয়ে আসলেন। ফজরের পর বেচারা বাসায় গিয়েছিল ঘুমাতে। যেই ঘুমোতে যাবে তখনই বাড়ির বাইরে থেকে হাক দিল।
বাসেত আছস? দারোগার লোকজন হাজির।
বাসেত ঘরের জানালা দিয়ে উকি দেয়।
কেডা?
তোরে জমির চাচা যাইতে কইছে।
জমির চাচা যাইতে কইছে, বাসেতের মাথায় ধরে না। উঠে দাড়ায় সে। জামা হাতে নিতেই পাশে এসে দাড়ায় পারভীন।
আপনে যাইয়েন না। দারোগ ভাল মানুষ না।
বাসেত শুকনো একটা হাসি দেয়। বুকের মধ্যে ধরফর করছে। পারভীনকে বুঝতে দেয় না। বাসেত যওয়ান মানুষ। স্বাস্থ্য ভাল। দারোগার লোকের সাথে হাটা ধরে সে। তাকে সোজা দোতলার একটি খালি ঘরে নিয়ে যাওয়া হল। আসতে আসতে কয়েকবার জিজ্ঞেস করল, কেন এত সকালে তাকে ডাকা হল? কোন উত্তর পেল না সে। ঘরে ঢুকেও আবার জিজ্ঞেস করল। কিন্তু কিছু বোঝার আগেই তাকে বেধে ফেলা হল। তারপর পুলিশের মোটা লাঠি হাতে হাজির হলেন জমির আলী। লাঠি দিয়ে চেহারায় একটা গুতো মেরে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে মটর সাইকেল কই?
চাচা কিসের মটর সাইকেল! অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল বাসেত।
কিসের... এখনি বুঝবি। বলেই পায়ের মাঝ বরাবর বাড়ি দিলেন জমির আলী। চিৎকার দিয়ে উঠল বাসেত।
কে কে মটর সাইকেল চুরি করছে বল? বলেই আরেকটি বাড়ি লাগালেন জমির আলী।
চাচা আমি চুরি করি নাই। আমি কিছু জানি না।
এখনই জানবি। বলেই রিমান্ডের মার শুরু করলেন জমির আলী। গগন বিদারি চিৎকার করতে লাগল বাসেত।
চাচা আমারে ছাইড়া দেন। আমি কিছু জানি না। কার কথা কে শোনে। আস্তে আস্তে লোক জমতে লাগল। সবাই কানাঘুষা করছে। থেমে থেমে চিৎকার শোনা যাচ্ছে। বেলা বাড়ছে। লোকের ভিড় আস্তে আস্তে কমে আসছে। এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য লোক বাড়ির ভিতরে যাওয়া আসা করল। দারোগার সাথে কথা বলল। কিন্তু সবাই বিরস মুখে ফিরল।
বাড়ির বাহিরে বাসেত মিয়ার স্ত্রী হাউমাউ করে কাদছে। যে আসছে তাকেই ধরছে। আমার স্বামী নির্দোষ। তারে ছাইড়া দেন। সে চুরি করে নাই। কয়েকজন মহিলা তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছে। মাস ছয়েক হয়েছে বাসেত মিয়ার সাথে পারভীনের বিয়ে হয়েছে। নতুন সংসার। এর মাঝে এ কি হল।
এলাকার মেম্বার সাহেব এসেছে। দারোগা সাহেব নিজেই নেমে আসলেন। তাকে নিয়ে ভিতরে ঘরে বসলেন। চা নাস্তা দেয়া হল।
মেম্বার সাব নেন, চা নেন। কেমন আছেন?
ভাল। আপনার শরীরের অবস্থা কেমন?
এই আছি আরকি।
শুনলাম আপনার ছেলের মটর সাইকেল চুরি হইছে।
হু। কাল রাতে। বাসেতরে ধইরা আনছি। ও সব জানে। ও দলের সাথে আছে। কেচি গেটের তালা কাইটা নিছে।
মেম্বার সাহেব কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। পুলিশ মানুষ। বুক পিঠ নাই। তার উপর দারোগা। সে জানে বাসেত চুরি করে নাই। সে ও রকম ছেলে না। বড় ভাল ছেলে। ছোটকাল থেকে দেখছে। ওর বিয়েটাও মেম্বার সাহেব দিয়েছেন। এক ধরনের সুক্ষ্ম দায়বোধ কাজ করছে তার। কিন্তু কি বলবে সে।
আপনিতো বাসেতকে চিনেন। এলাকার ছেলে।
হু তাইতো ওরে ধইরা আনছি। এলাকার বলেই তো ও সব ফাক ফোকড় জানে।
কিন্তু আমার মনে হয় ও চুরি করে নাই।
তাহলে কে চুরি করছে? আপনার কাছে খবর আছে মনে হয়!
মেম্বার সাহেব কথা হারিয়ে ফেলেন। কি বলবেন তিনি। পুলিশের সাথে কথা বাড়ালে বিপদ। এরা মেম্বার চেয়ারম্যান পাত্তা দেয় না।
কোন খবর কি বের হল?
না, তবে মনে হয় বলব।
দেখেন...। আমি এখন উঠি। পরে আবার আসব।
মেম্বার সাহেব পা বাড়ান। বাড়ির বাহিরে এসে দাড়ান তিনি। আম গাছ তলায় পারভীন বসে আছে। ধুলোয় চেহারা মলিন হয়ে গেছে। তাকে দেখেই এলোচুলে দৌড়ে আসে সে।
চাচা, আমারে বাচান। ওরা আমার স্বামীরে ধইরা আনছে।
মেম্বার সাহেব পারভীনের মাথায় হাত রাখে।
কাদিস না মা। আমি এখন চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে যাব। ওনারে সব খুইলা বলি। উনি নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করব।
পারভীন হু হু করে কাঁদতে থাকে। মেম্বার সাহেব আবার পা বাড়ান। জীবন খুবই বৈচিত্রময়। নির্দোষ মানুষ চুরির দায়ে মার খাচ্ছে। আইনের লোক মারছে। কার বিচার কে করবে?
মধ্য দুপুর। খা খা রৌদ্র। মহিলারা যে যার মত করে চলে গেছে। এখন আর দারোগা বাড়ি থেকে কোন চিৎকার আসছে না। তেমন লোকজনও নেই। পারভীন আম গাছ তলায় পা মেলে বসে আছে। কাঁদছে না সে। ধুলোয় তার কাপড় শরীর একাকার। নীল আকাশ। কোন মেঘ নেই। হালকা একটা বাতাস বইছে। শুকনো একটা আম পাতা পারভীনের কোলের উপর পড়ে। হাতে নিয়ে সে তা ভাঙ্গতে থাকে। মচর মচর শব্দ। দারোগা বাড়ি থেকে এখন কোন আওয়াজ আসছে না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×