somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সড়ক নির্মাণ: বিটুমিন না কংক্রিট সমাধানে

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃষ্টিতে নাকাল পুরো ঢাকা। শুধু রাজধানী নয় দেশের বড় বড় শহরগুলোর অবস্থা খুবই করুণ। রাস্তাঘাট ডুবে আছে। আর জেগে থাকা রাস্তাগুলোর অবস্থা যাচ্ছে তাই। রাস্তার এই বেহাল দশার কারণে অহরহ দুর্ঘটনাও ঘটছে। বর্ষায় রাস্তার অবস্থা খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এই জন্য চাই মজবুত ও টেকসই রাস্তা। এরই ধারাবাহিকতায় কিছুদিন পূর্বে প্রধানমন্ত্রী টেকসই সড়ক নির্মাণে কংক্রিটের ব্যবহার শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করলেই কি সমাধান পাওয়া যাবে?
সড়ক নষ্টের জন্য মূলত দায়ী করা হয় পানিকে । আমাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। পানি হলো বিটুমিনাসের প্রধান শত্রু। তাই পিচঢালা পথগুলো খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এর বিপরীতে কংক্রিটের রাস্তার পানি সহনক্ষমতা রয়েছে। সিমেন্টের পানি সহনক্ষমতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। তাই কংক্রিটের সড়ক তৈরি করলে পানির সংস্পর্শে এলে এটি আরও টেকসই হবে এ রকমই ধারনা পোষন করেন বিশেষজ্ঞরা। কংক্রিটের রাস্তার আরও কিছু সুবিধা রয়েছে। সড়কের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বিটুমিনাসের চেয়ে কংক্রিটের রাস্তা বেশি নিরাপদ। যেসব রাস্তায় লাইটিং দেয়া যায় না, সে ক্ষেত্রে কংক্রিটের রাস্তায় গাড়ির লাইট আলোর প্রতিফলনের জন্য ভালো দেখা যায়। আবার গাড়ির ব্রেকিংয়ের জন্যও এটা তুলনামূলক বেশি নিরাপদ। এছাড়া কংক্রিটের রাস্তা জ্বালানিসাশ্রয়ী, স্থায়িত্ব অনেক বেশি এবং পরিবেশবান্ধব। বিটুমিনাসের সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে সাড়ে পাঁচ গুণ জ্বালানি বেশি খরচ হয়। যেমন: এক মাইল রাস্তা নির্মাণের জন্য কংক্রিট ব্যবহারে ৫৫০ গ্যালন জ্বালানি খরচ হলে বিটুমিনাসে ৯ হাজার গ্যালন জ্বালানি খরচ করতে হয়। আবার বিটুমিনাস সার্ফেসে ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎ বেশি ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া গরমের সময় শহরাঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আমাদের বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়।
একসময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কংক্রিটের রাস্তা ছিল। এখন প্রায় নেই বললেই চলে। এখন সারা দেশেই বিটুমিনসের রাস্তা। আর পুরো দেশের রাস্তার বেহাল অবস্থা নতুন করে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করছে কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণে। প্রধানমন্ত্রীর সেই রকমই ইচ্ছা। কিন্তু কংক্রিটের রাস্তাই কি সমাধান?
পানি হলো বিটুমিনাসের প্রধান শত্রু। এই পানি কিন্তু শুধু বৃষ্টি থেকেই আসে না। ঢাকা-ময়মনসিংহ রাস্তার দিকে তাকালে দেখা যায়, এই রাস্তাটাকে কোনোভাবেই ঠিক রাখা যায় না। এর কারণ হলো ময়মনসিংহ থেকে মাছ পরিবহনের সময় রাস্তায় পানি পড়ে রাস্তাটা সব সময় ভেজা থাকে। ফলে রাস্তা টেকে না। আবার রাজধানীর কথাই ধরুন, এখানে জলাবদ্ধতার কারণ সবারই জানা। এই পানির পেছনে মূলত আমরাই দায়ী। অব্যবস্থাপনা, দূর্নীতি, জনসচেতনার অভাব সহ বিভিন্ন সমস্যা এই জলাবদ্ধতাকে যেন উস্কে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে কংক্রিটের রাস্তাকে অগ্রাধিকার দেয়া যায়। কিন্তু রাজধানীর ভিতর কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণ সহজসাধ্য নয়।
যেকোন রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কার করতে হলে একটি বিকল্প রাস্তা রাখতে হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা পাওয়া যায় না। আবার কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণের জন্য একটি রাস্তা প্রায় ২১ দিন ব্যবহার করা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ২১ দিন রাস্তা বন্ধ রাখতে হবে, যা ঢাকা শহরে অসম্ভব। আর বিটুমিনাসের রাস্তা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবহার করা যায়। তাই ঢাকায় এ পদ্ধতির বিকল্প নেই। সুনামগঞ্জের কিছু রাস্তা কংক্রিটের তৈরি, যেগুলো বেশ কিছুদিন পানির নিচে ডুবে থাকে। কিন্তু তার পরও বেশ স্থায়ী হচ্ছে। এগুলো তৈরিতেও তেমন কোনো বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয় না। কিছু দুর্গম জায়গায়, যেখানে রোলার বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি নেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে এই কংক্রিটের ব্যবহার বেশ ফলদায়ক।
মূলত দুটো রাস্তারই সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। বিটুমিনাসের রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে ঢালাও ভাবে এগুলো বাদ দিয়ে কংক্রিটের রাস্তা তৈরী করতে হবে এমনটি নয়। এখনো বিশ্বব্যাপী ৯০ শতাংশ রাস্তা বিটুমিনাসের তৈরি। উন্নত দেশে বিটুমিনাসের রাস্তাকে এখনো অবিনশ্বর ধরা হয়। ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত স্থায়িত্ব থাকে এই রাস্তাগুলো।
আমাদের দেশে কেন বিটুমিনাসের রাস্তা টিকছে না? এর প্রধান কারণগুলো হলো আমাদের দেশে বিটুমিনাসের সড়ক তৈরিতে যে প্রযুক্তির প্রয়োজন, তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমাদের দেশে যারা এই কাজে নিযুক্ত তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষ জানেই না বিটুমিনাস সড়ক তৈরির ধাপগুলো কী কী। যে ১০ শতাংশ মানুষ এটা জানে, তারাও এর ব্যবহার করতে পারে না যন্ত্রপাতির অভাবে। রাস্তা কিভাবে হবে তার পরিকল্পনা করার জন্য একটা বিভাগ আছে। মিরপুরে ৪৫ বিঘা জমি নিয়ে এই বিভাগটা আছে। এমনকি ঢাকার বাইরেও অনেক আছে। এর মধ্যে প্রায় কোটি কোটি টাকার মেশিনারিজও আছে, যেগুলো প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, রাস্তার ভেতরের সার্ফেস। যদি এর ভেতরের সার্ফেসটাকে ঠিকমতো তৈরি করা না যায়, তবে বিটুমিনাস হোক আর কংক্রিট হোক, রাস্তা টিকবে না। তাই সড়কের নিচের স্তরটাকে শক্ত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সততারও প্রয়োজন। উন্নত অনেক দেশেও বিটুমিনাসের রাস্তা আছে, সেখানে অনেক বৃষ্টিপাতও হয়। কিন্তু সেই পানি জমে থাকে না। বিটুমিনাসের রাস্তায় যে পাথর ব্যবহার করা হয়, তার একটা বৈজ্ঞানিক মাপও রয়েছে। সেটারও তদারকি প্রয়োজন। রাস্তা নষ্ট হওয়ার আরেকটি কারণ হলো ওভারলোডিং। আমাদের রাস্তাগুলোতে পরিবহনে যে পরিমাণ লোড নেওয়ার কথা, অনেকেই তা মানছে না। এছাড়া বিটুমিনাস কেনার ক্ষেত্রেও অনেক সতর্কতা প্রয়োজন।
তাছাড়া রাস্তা নির্মাণের সময় সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা হয় না। ঠিকাদারের বাড়তি আয় উপার্জনের নানা চিন্তা-ভাবনা থাকে। যত তাড়াতাড়ি রাস্তা নষ্ট হবে, মেরামত কাজের মাধ্যমে আবার তা থেকে বাড়তি আয় করা যাবে। এ মানসিকতার জন্য অনেক সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। আমাদের ড্রেনেজ ব্যবস্থা এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। এর পরও আমরা রাস্তা তৈরিতে কী মালামাল ব্যবহার করছি, এটা তেমন কোনো বিষয় নয়। মূল বিষয় হলো, এই মালামালগুলো সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না। এ ছাড়া যেসব এলাকায় রাস্তার নিচ দিয়ে পানির লাইন, গ্যাসলাইন কিংবা টেলিফোন লাইন যায়, সেসব এলাকায় কংক্রিটের রাস্তা করা যাবে না। কারণ বিভিন্ন সময় প্রয়োজনে এসব রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়। যা প্রধান শহরগুলোর জন্য প্রায় অসম্ভব।
তাই এক্ষেত্রে একটা মাপকাঠি নির্ধারণ করা দরকার। সব রাস্তাগুলোকে কংক্রিটের না তৈরী করে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোন রাস্তা কংক্রিটের আবার কোন কোন রাস্তা বিটুমিনাসের তৈরী করা যেতে পারে। ঢাকার ভেতরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে হবে, যেন এখানে-সেখানে পানি জমে না থাকে। ঢাকার কিছু কিছু এলাকায় কংক্রিটের রাস্তা তৈরি হয়েছে। কিছু কংক্রিটের রাস্তা ভালোই চলছে। আর কিছু কিছু এলাকায় কংক্রিটের রাস্তা এক বছর যেতে না যেতেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একই জিনিস কেন ওটা টিকে থাকল আর এটা নষ্ট হয়ে গেল? এ বিষয়গুলো খুঁজে বের করে তবেই কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হঠাৎ করেই আমরা যদি ঢালাওভাবে কংক্রিটের রাস্তার দিকে সরে যাই, তাহলে যে কারণে বিটুমিনাসের রাস্তা থেকে সরে আসছি, একই কারণে পাঁচ বছর পর কংক্রিটের রাস্তা থেকেও সরে যেতে হতে পারে। তাই তড়িঘড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে দেশের বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করা দরকার। মূলত বৈজ্ঞানিকভাবে যে সড়কই তৈরি হবে, তাকে যেন স্বচ্ছভাবে তৈরি করা হয়। না হলে এটাকে ফলপ্রসূ করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। তবে শুধু কংক্রিট ব্যবহার করলেই আমাদের রাস্তাঘাট টেকসই হবে না। দুর্নীতি দূর করতে হবে সবার আগে। দক্ষ লোকের সহায়তায় সব উপকরণ সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে আমরা কোনো সুফল পাব না। অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করে সিমেন্ট-বালু ঠিকমতো ব্যবহার না করলে আমরা মুখে মুখে যতই টেকসই সড়কের কথা বলি, কোনো কাজ হবে না।

(লেখাটি আজ দৈনিক ভোরের কাগজ, উপসম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে।)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×