somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূরহীন দূরে (ছোট গল্প)

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
একটা বদ্ধ ঘর। দেয়ালগুলো নোংরা। আবছা আলোতে ঘরটাকে কেমন যেন ভৌতিক লাগছে। কিছুই চোখে পড়ছে না। এই পর্যন্তই। চোখ মেলে তাকায় শাহেদ। এখন মধ্যরাত। সময়টা অনুমান করার চেষ্টা করল সে। মনে হয় তিনটা বাজে। চাঁদের একটা সরু আলো জানালার গ্রীল গলে বিছানার একপাশে পড়ছে। সব কিছুই ঠিকঠাক আছে। এই নিয়ে তিনবার হল। শোয়া থেকে উঠে বসে শাহেদ। তেষ্টা পেয়েছে। মশারী উঠিয়ে বাহিরে এসে দাড়ায়। একটা চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে মাথার ভিতর। খুবই সূক্ষ ব্যাথা। প্রতিবারই এমন হচ্ছে। লাইট জালিয়ে গ্লাসে পানি ঢালে ও। তিনটা সতের বাজে। অনুমান একদম মিথ্যা না। এক চুমুকে পানি শেষ করে পড়ার টেবিলটায় এসে বসে। ব্যাপারগুলো একসুতোয় গাথার চেষ্টা করছে। এই নিয়ে তিনদিন সে একই স্বপ্ন দেখল। একটা বদ্ধ ঘর, নোংরা দেয়াল, গুমোট অন্ধকার। স্মৃতি হাতরেও সে এই জায়গার সন্ধান পেল না। কোন সিনেমায় দেখেছে কিনা মনে পড়ছে না। কেমন জেলখানার মত মনে হয়। হয়ত কোন সিনেমায় দেখেছে। হিসাব মিলছে না। একই স্বপ্ন তিনদিন দেখার মানে কি! শাহেদ লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। চোখের পাতায় ঘুম নেমে আসার ঠিক পূর্ব মূহুর্তে সে একটা আওয়াজ শুনে। ”গুড নাইট”। মুহুর্তেই ঘুমের অতলে হারিয়ে যায় সে।

২.
কাকে এই স্বপ্নটা বলা যায় তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেল শাহেদ। এটা খুব আহমারি কিছু নয়। স্বপ্নের বিষয়বস্তুও খুব একটা অস্বাভাবিক না। সহজেই হেসে উড়িয়ে দেবার মত বিষয়। বন্ধুরা হাসাহাসিও করতে পারে। কি করা যায়? তার উপর শেষবার ঘুমিয়ে যাবার খানিক আগে কি যেন সে শুনেছিল। সকালে উঠে খুব মনে করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিল না। তবে কিছু একটা যে শুনেছিল তা মনে আছে। সারাদিন ব্যাপারটা চেপে রেখে বিকালে সে জাহিদকে ব্যাপারটা খুলে বলল। জাহিদ ভাবলেশহীন ভাবে স্বপ্নটা শুনল। এক বাদামওয়ালাকে ডেকে কিছু বাদাম কিনল। তারপর আয়েশ করে বাদাম চিবাতে লাগল।
শাহেদ তাকে দেখতে লাগল। জাহিদের কাছে ব্যাপারটা তেমন মনে হয় গুরুত্ব পায়নি।
কিরে তুই কি আমার কথাগুলো শুনেছিস?
হু, শুনেছি। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। তোর কাছে কি মনে হয়েছে আমি অমনোযোগী ছিলাম!
শাহেদ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এই কথার জন্য সে প্রস্তুত ছিল না।
তা না, কিছু বলছিস না যে?
আসলে ব্যাপারটা একদম ফেলনাও না। একদম হুবুহু দেখেছিস। তাও আবার তিনদিন। তুই কি একবার মনে করতে পারছিস কি শুনেছিলি?
না।
ইদানিং কি তুই কোন বই পড়ছিস?
দেখ এই ব্যাপারগুলো আমি ভেবে দেখেছি। আমার মস্তিস্ক আমাকে এই ব্যাপার সাহায্য করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই শুরুতেই আমি এগুলো চিন্তা করেছি। কিন্তু হিসাব মিলে নাই।
তাহলে তুই কোন টয়লেট দেখেছিস। বলেই হো হো করে হেসে উঠে জাহিদ।
শাহেদ চুপ মেরে যায়। আসলে এর কোন সমাধান নেই। কোন হুজুরের কাছে যাবে নাকি। স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিবে। তেমন জানা শুনাও কেউ নেই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। পশ্চিম আকাশটা লাল থেকে আরও লাল হয়ে আসছে। বড় দুটো বাদুড় মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল। শাহেদ আর জাহিদ উঠে দাড়ায়।

৩.
সিড়ির অর্ধেকটায় এসে শাহেদের মনে হল কেউ তাকে ডাকছে। ঝট করে ঘুরে দাড়ায় ও। লাইটের আলোতে রাস্তায় কয়েকজনকে দেখা গেল। তাদের মধ্যে থেকে কেউ ডেকেছে বলে মনে হল না ওর। তারপরও কিছুক্ষন দাড়ায় ও। না ওরা কেউ ডাকেনি। তার কি হ্যালুসিনেশন হচ্ছে? নাহ্। গা ঝাড়া দিয়ে বাকি সিড়িগুলো বেয়ে উপরে উঠে আসে ও। দোতলার দক্ষিণের রুমটা ওর। রুম লগোয়া ব্যালকনি। ব্যালকনির গা বেয়ে উঠেছে মানিপ্লান্ট গাছ। শাহেদ রুমে এসে শুয়ে পড়ে। লাইট নিভানোই ছিল। ইচ্ছে করেই ও আর জ্বালায়নি। চোখ বুজে ভাবতে থাকে ও, এমন কেন হচ্ছে? মাথার ভিতর আবার সেই চিনচিনে ব্যাথাটা শুরু হয়েছে। আগের চেয়ে একটু তীব্র। আত্ম নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে সে। এক ঝটকায় বিছানা থেকে উঠে বসে। লাইট জ্বালিয়ে সোজা পড়ার টেবিলে চলে যায়। শাহেদ খুব ভাল করে খেয়াল করছে তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রন নেই। এক অজানা শক্তি তাকে টানছে। লাইট জ্বালানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা তার ছিল না। কিন্তু লাইট সে জ্বালিয়েছে। টেবিলের উপর থাকা কাগজের উপর সে কলম চালাল। সাদা কাগজের উপর খসখস করে লিখে চলছে সে। কি দ্রুত তার হাত চলছে। শাহেদ হাত থামাতে চেয়েও পারল না। লিখেই চলছে। মিনিটি পাচেক লেখার পর তার হাত থামল। মাথার ব্যথাটাও কমে আসতে লাগল। চেয়ার থেকে পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল ও। কোনমতে বিছানায় এসে গা এলিয়ে দেয়।

কতক্ষন ঘুমিয়েছে আন্দাজ করতে পারছে না শাহেদ। তবে এখন মধ্যরাত। কটা বাজে অনুমান করতে গিয়ে ব্যর্থ হল সে। মাথা ঘুরিয়ে তাকাতে শরীরে একটা প্রচন্ড ঝাকুনি দিল তার। শিরদাড়া দিয়ে ঠান্ডা কি যেন বয়ে গেল। একটা ছায়ামূর্তি অন্ধকারে বসে আছে। ব্যালকনির লাইটের আলোর দিকে পিছন ফিরে বাসা। অন্ধকারে চেহারা দেখা যাচ্ছে না। শাহেদ শক্তি হারিয়ে ফেলে। এই মধ্যরাতে তার ঘরে কে এই লোক! শাহেদের চোখ সরু হয়ে আসে। খুব ভাল করে বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। ছায়ামূর্তিটি উঠে দাড়ায়। শাহেদ সতর্ক হয়ে উঠে। তার মাথা কাজ করছে না। কি করবে সে? ছায়ামূর্তিটি তার দিকে না এগিয়ে দরজার কাছে এগিয়ে গেল। তারপর সুইসবোর্ডে হাত রেখে লাইট জ্বালালো। শাহেদের হাফ ছাড়ে। বুক থেকে ভারী কি যেন একটা নেমে যায়। তার পাশে তার মা দাড়িয়ে।
কিরে বাবা কি হয়েছে তোর?
শাহেদ উঠে বসে।
না মা কিছু নাহ।
না, কিছু একটা হয়েছে। আমি বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ তোর পাশে বসে ছিলাম। তুমি কেমন জানি করছিলি।
কি করছিলাম মা?
মনে হয় দুঃস্বপ্ন দেখছিলি। তোর চেহারা কেমন জানি হয়ে গিয়েছিল। চোখ মুখ কেমন জানি করছিলি। কয়েকবার অস্পষ্টভাবে কি যেন বলেছিলি, বুঝতে পারিনি। ভাবলাম লাইটের আলোতে তোর ডিস্টার্ব হচ্ছে তাই নিভিয়ে দিলাম।
জানিনা মা। কয়েকদিন যাবৎ আমি একটা স্বপ্ন দেখছি। একই স্বপ্ন তিনদিন দেখেছি। অদ্ভুদ স্বপ্ন।
রাতে স্বপ্ন বলে না। দিনে বলিস। তুই না খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলি। কিছু খেয়ে নে।
না মা তুমি যাও। আমি খাব না।
শাহেদ আবার শুয়ে পড়ে। লাইট নিভিয়ে তার মা চলে যায়। শাহেদ জানালা দিয়ে ব্যালকনির মানিপ্লান্ট গাছের দিকে তাকিয়ে থাকে। আলো আধারির খেলায় গাছটাকে অদ্ভুদ লাগছে।

৪.
সকালে উঠে খাতায় লেখার ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে গেল শাহেদ। স্বাভাবিকভাবেই সে নাস্তা খেল। ভার্সিটি যাবার জন্য তৈরি হল। কোন কিছুতেই ব্যতয় ঘটল না।
ক্লাস এখন শেষের দিকে। শেষ ক্লাসে একটা জরুরী কাজে খাতা খুলতে হল। খাতা খুলেই পৃষ্ঠা উল্টাতেই শাহেদ একদম থ। এগুলো কি লেখা তার খাতায়, কে লিখল এগুলো? ঝট করেই গতরাতের কথা মনে গেল তার। ক্লাসের মধ্যেই সে পড়া শুরু করল। অল্প লেখা।
“কেমন আছেন আপনি? আশা করি প্রতিদিনের মতই ভালই আছেন। আমি কিন্তু ভাল নেই। এক ঘোর অন্ধকার আমার দিকে ধেয়ে আসছে। জানিনা সেটা কি? আমার দিনগুলো আপনার দিনগুলোর ঠিক বিপরীত। আমার এখানে কোন সকাল নেই, নেই মধ্যদুপুরের খরতাপ। আমার কাছে ঘড়ির কাটা নেই। ঘড়ির কাটা এখানে এক জায়গায় স্থির। জীবনের সব আলো এখানে এস ফিকে হয়ে যায়। থেমে যায় সকল কোলাহল। আমার জানা নেই আমার জীবনের শেষ কথাগুলো আপনাকে বলা হবে কিনা? হয়ত খুব শীঘ্রই হয়ত আপনার সাথে আমার দেখাও হতে পারে। ভাল থাকবেন।”
একদম শেষে তার নাম মনে হয় লেখা ছিল। কলম দিয়ে ঘষে নামটা মুছে ফেলা হয়েছে। শাহেদ খুব চেষ্টা করেও নামটি পড়তে পাড়ল না। বুকটা কেমন যেন ধকধক করছে। এটা কি ধরনের চিঠি! কেন সে এটা লিখল? কোন কিছুই তার মাথায় ধরছে না। এক ধরনের শূণ্যতা কাজ করছে। সামান্য এ কয়েকটি লাইন তার বর্তমান সময়টাকে কেমন যেন মুছড়ে দিয়েছে। শাহেদ খাতাটা ভাজ করে রাখে। ক্লাস শেষ। রুম থেকে বেড়িয়ে একাকী হাটাতে থাকে। বিমর্ষ সে। সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? মানসিক ভারসম্যহীন এক ছেলে।
বিকালে জাহিদের সাথে দেখা করল শাহেদ। ওকে ছাড়া কাউকেই এ ব্যাপারটা বলা যাচ্ছে না। জাহিদ মনোযোগ দিয়ে পুরো ব্যাপারটা শুনল। বাদাম ওয়ালাকে ডেকে আবার বাদাম চিবাতে লাগল।
দোস্ত, ব্যাপারটা মনে হয় আমি বুঝতে পারছি।
কি মনে হয় তোর কাছে?
টেলিপ্যাথ।
সেটা আবার কি?
এক ধরনের ঐশ্বরিক শক্তি। যেখান সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পূর্ণ বিকল। যার মাধ্যমে এক প্রান্তের মানুষ অনায়াসেই অপর প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারে কোন রকম প্রযুক্তি ছাড়া। যেখানে কোন ইন্টারনেট, মোবাইল এর প্রয়োজন হয় না। আমার ধারনা কেউ তোর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।
আমি কি পারব তার সাথে যোগাযোগ করতে?
জানিনা। এটা খুব উঁচু স্তরের শক্তি। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তবে কেউ দীর্ঘ সময় সাধনা করলে হয়ত এটা অর্জন করতে পারে। তবে জানা নেই কে পারবে। চেষ্টা করে দেখতে পারিস। কিভাবে শুরু করবি তাও আমার জানা নেই। ওর লেখা, স্বপ্ন কিংবা ওকে স্মরণ করে দেখতে পারিস। অনেকটা মেডিটেশনের মত। এটা আমার ধারণা। দেখ পারিস কিনা।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। শাহেদ চুপ করে বসে থাকে। জাহিদ পাশে বসে থাকার পরেও তার কেন জানি একাকী মনে হচ্ছে। জীবন কেমন জানি বৈচিত্রময়।

৫. মধ্যরাত। রাত দুটো বাজে এখন। শাহেদ লাইট নিভিয়ে একাকী বসে আছে। একাগ্রচিত্তে মেডিটেশন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। হাল ছেড়ে দেয় শাহেদ। তার পক্ষে সম্ভব নয়। তার কোন সূত্র নেই। কিভাবে সে এগুবে? হঠাৎ করেই শাহেদ শরীর একটা ঝাকুনি দেয়। মাথার চিনচিনে ব্যাথাটা আবার শুরু হয়েছে। শাহেদ আবার আত্মনিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়ে। চোখ মেলে সে তার সামনের দিকে দেয়ালটায় তাকিয়ে থাকে। প্রজেক্টরের স্ক্রীনের মত একটা স্ক্রীন দেয়ালে ভেসে উঠে। একট বদ্ধ ঘর। সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। নোংরা দেয়াল। দেয়ালের কয়েক জায়গায় প্লাস্টার ভেঙ্গে গেছে। একটা অল্প আলোর লাইট জ্বলছে। আলো আধারির খেলা। এরপরই আবার স্ক্রীনটা নিভে যায়। ঝট করে আবার একটা স্ক্রীন ভেসে উঠে। একটা শুভ্র পবিত্র চেহারা। অপার্থিব স্বর্গীয় সৌন্দর্য যেন চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। খোলা চুলে মেয়েটিকে স্বর্গীয় অপ্সরী মত লাগছে। হঠাৎ করে স্ক্রীনটা নিভে গিয়ে আবার জ্বলে উঠল। আবার সেই বদ্ধ ঘর। ঘরের এক কোণে একটা এলোচুলের মেয়ে বসা। হাড্ডিসার শরীর। মেয়েটি মাথা তুলে চাইল শাহেদের দিকে। শাহেদ একটা ঝাটকা খায়। এই মেয়েটিই হল আগের মেয়েটি। মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিল। সে হাসিতে শাহেদের পৃথিবী দুলতে লাগল। সবকিছু তার কাছে অন্তঃসার শূন্য হয়ে গেল। চাওয়া পাওয়ার একট কঠিন হিসাবের মাঝে দাড় করিয়ে দিল যেন শাহেদকে। স্ক্রীনটা নিভে গেল। অন্ধকার ঘরের মাঝে শাহেদ বসে আছে। বুকটা কেমন যেন খা খা করছে। একটা চাপা ব্যাথা অনুভব করে সে বুকের মাঝে। জীবন এত রহস্যময় কেন?
পরদিন শাহেদ দিনে রাতে কয়েকবার চেষ্টা করে মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করার। কিন্তু যোগাযোগ হয় না। তার এই শক্তি নেই। আরো একটি দিন পেরিয়ে গেল কোন কিছুরই পরিবর্তন হল না। শাহেদ উদগ্রীব হয়ে রইল একটা স্বপ্নের জন্য। কিন্তু কিছুই হল না। স্বাভাবিকতা ফিরে এল শাহেদের জীবনে। আরো একটি দিন এভাবেই গড়াল। কোন রহস্যময় শব্দ তাকে স্পর্শ করল না। শাহেদ অস্থির হয়ে গেল। কিন্তু কিছুই ফিরে এল না। তিনটি দিন এভাবেই গড়াল।

৬.
তিনদিন পরের সকাল। হালকা রোদটা যেন সকালকে আরও মোহনীয় করে তুলল। হেমন্তের বাতাসে শাহেদের ঘর যেন দুলতে লাগল। ব্যালকনিতে বসে শাহেদ পত্রিকা পড়ছে। তিনদিনে তার আবেগ অনেকটা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। হাল ছেড়ে দিয়েছে সে। তার কাছে মনে হল একটা ঘোরের পিছনে সে ছুটছে। এটা হয়ত নিছক বোকামী। মানুষের জীবনেতো কত কিছুই অপূর্ণ থেকে যায়। পাতা উল্টাল শাহেদ। আন্তর্জাতিক সংবাদ। কিন্তু হঠাৎ একটা সংবাদের উপর শাহেদের চোখ আটকে যায়। বুক আবার ধকধক করে উঠে। একটা সংবাদ, একটা ছবি। জীবনের ছবি। শাহেদের চোখ বেয়ে জল গড়ায়। ভিজে উঠে পত্রিকার কাগজ। জীবন কেন এমন হয়? কেন সুখ স্বপ্ন এভাবেই অধরা থাকে। হাজারো প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে যায় শাহেদের কাছে। পত্রিকা ভাজ করে ব্যালকনির গ্রীল ধরে দাড়ায় সে। নীল আকাশ। সাদা মেঘগুলো উড়ে বেড়াচ্ছে। কাছের মেঘগুলো আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। দূর থেকে দূরে, আরও দূরে।

পুণশ্চ: পত্রিকার শিরোনাম: আন্তর্জাতিক সংবাদ। কারাগারে মহিলার মৃত্যু, শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×