somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শূণ্য

১৭ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে। মহামান্য ডিকি চশমার ফাক দিয়ে চারপাশটা একবার দেখে নিলেন। ছোটখাট মানুষ। ভ্রুগুলো ঝরে গেছে বহু আগে। মাথায় একটা চুলও নেই। অদ্ভুদ লাগে লোকটাকে। প্রথম দেখায় মনে হবে একটা রোবট। থার্ড জেনারেশন রোবটের মত। এখন আর এই রোবটগুলো নেই। বহু আগে রিসাইক্লিন হয়ে গেছে। ছবি আকারে স্মৃতি রয়ে গেছে। মিউজিশিয়ামে একটা রয়েছে দেখার জন্য।
আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চিন্তা করেছি। বিষয়টি আপানাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। আর আমি চাই এটা হোক। কারণ এর পিছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। যুক্তিগুলো খন্ডনের সুযোগ অবশ্য আপনাদের দেয়া হবে।
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন ডিকি। কেউ কিছু বলছে না, একটু বিরক্তই লাগল ডিকির কাছে।
আপানি কথা এগিয়ে নিয়ে যান। অল্প বয়স্ক এক তরুন বলল। জন হুপার নাম। চুলগুলো এমনভাবে মাথার চারপাশে পড়ে রয়েছে চোখ, কান কোন কিছুই তার দেখা যায় না। ডিকি তার চোখ দুটো খুঁজতে লাগলেন। কারও চোখে চোখ রেখে কথা না বলতে পারলে অস্বস্তি লাগে। জন কি তার দিকে তাকিয়ে আছে নাকি অন্য কারও সাথে কথা বলছে বোঝা গেল না। ডিকি আবারও খানিকটা বিরক্ত হলেন। বিরক্তি চেপে রেখেই আবার বলা শুরু করলেন।
আমি যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছি, তা হল কিভাবে পৃথিবীর স্থলভূমি আরও বাড়ানো যায়। জলসীমাকে আরও ছোট করে স্থলসীমাকে আরও বড় করতে চাই।
কিভাবে আপনি এ কাজটি করতে চান?
ডিকির চোখ চকচক করে উঠল। তার সহকারীরা বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
আমি চাচ্ছি সাগর উপকূলগুলো আস্তে আস্তে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিব। বিষয়টি খুবই জটিল। কিন্তু ব্যর্থ হবার মত নয়।
বিষয়টি আসলেই জটিল এবং সফল হওয়ার সম্ভাবনা আমি দেখছি না। তার উপর আমাদের এই স্থলসীমা আমাদের জন্য খুব বেশি সংকীর্ণ হয়ে আসেনি। এখন জনসংখ্যা পূর্বের তুলনায় খুব বেশি নয়।
ডিকি লিনিয়ার কথাগুলো শুনল। মেয়েটি মন্দ বলেনি। প্রশ্ন করলেই উত্তর আসে।
জটিল হলেও সফল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু আপনি এর মন্দ দিক গুলো নিয়ে কি চিন্তা করেছেন?
যেমন.........
প্রথমত এত বিপুল পরিমাণ মাটি আপনি কোথায় পাবেন? দ্বিতীয়ত ভরাট করার ফলে বাড়তি পানিটুকু আপনি কোথায় ফেলবেন? নিশ্চিত জ্বলোচ্ছাস হবে। এ ব্যাপারে সমাধান কি?
চমৎকার প্রশ্ন জন। আমি চাচ্ছি পাহাড়গুলোকে ধ্বসিয়ে দিব। লেজার দিয়ে এগুলো খুব সহজেই ধ্বংস করা যাবে। তারপর সেই মাটিগুলো প্রথমে সমুদ্র উপকূল থেকে ভরাট শুরু হবে। অল্প অল্প করে কাজ শুরু হবে, পরীক্ষামূলক। সফল হলে পুরোদস্তর কাজ হবে।
জ্বলোচ্ছাস?
আমাদের প্রচুর জায়গা কিন্তু নদী নালা বিহীন শুস্ক মরু। কৃত্রিম নদী খনন করে বাড়তি পানিটুকুতে সমতা আনা হবে।
সাফল্যের হাসি হাসলেন ডিকি। চারপাশে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিলেন তিনি।
আর কোন প্রশ্ন আছে কারো?
পাহাড়গুলো ধ্বংস করা ঠিক হবে না।
খুবই নিচু স্বরে কথাটা বললেন জন হুপার। নিজ মনে সাথে কথা। কিন্তু ডিকি কথাটা শুনে ফেললেন।
কেন ঠিক হবে না জন!
আমি কিছু বলিনি স্যার।
এতে কোন সমস্যা নেই, তোমার অভিমত তুমি ব্যক্ত করতে পার।
আমি কোথাও যেন পড়েছিলাম, ঈশ্বর বলেছেন পাহাড়গুলোকে পেরেকের মতো ঠুকে দেয়া হয়েছে যাতে করে স্থলে স্থীতিশীলতা আসে। নড়াচাড়া না করে।
হো হো করে হেসে উঠলেন ডিকি।
তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস কর! ঈশ্বর! ঈশ্বর বলেছেন! কেমন বোকার মত কথা বললে তুমি জন। পাহাড়গুলোকে পেরেকের মত ঠুকে দেয়া হয়েছে। এটার কোন যৌক্তিকতা আছে? তোমার মত এমন একজন বিজ্ঞানী এমন কথা বলতে পারে আমার বুঝে আসছে না।
ডিকি হাসতে লাগলেন। জন এমন কথা দ্বিতীয়বার আর বলবে না। যদি বল, তবে যুক্তির সঙ্গে বলবে।
জন চুপ করে থাকে।
আজকের মত এখানেই শেষ। খুব শ্রীঘই কাজ শুরু হবে। তোমাদের মাথায় আর কোন প্রশ্ন আসলে নির্ধিদ্বায় বলে ফেলবে।
যে যার যার মত করে চলে গেল। ডিকি তার পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে লাগল।

এরই ফাকে মাস দুয়েকের মত সময় চলে গেল। ডিকি তার কাজে প্রায় সফল। পাহাড়গুলোকে ভেঙ্গে সাগর উপকূলে ভরাট করা প্রায় শেষ। বিশাল জায়গা জুড়ে সমতল ভূমি। মহাকাশ যান ডিপ্রো-৩ করে ডিকি পঁচিশ হাজার ফুট উপরে চলে এসেছে। মেঘমুক্ত আকাশ। এখান থেকে পৃথিবীকে চমৎকার দেখা যায়। ডিকি ডিপ্রো-৩ এর সামনের ডেকে এসে দাড়ালেন। বিশাল উইন্ডশীল দিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আছেন ডিকি। গর্বে তার বুকটা তিন ইঞ্চি বেড়ে গেছে। বর্ধিত স্থলসীমা দেখছে সে। কি চমৎকার! কত সুন্দর! তাকিয়ে আছে ডিকি। কিন্তু তার হাসি দীর্ঘস্থায়ী হল না। উইন্ডশীলের ডান কোনায় স্ক্রীন ভেসে উঠেছে। ডিকি ঐ দিকেই তাকিয়ে আছে। বর্ধিত স্থলসীমার খুব কাছাকাছি জায়গায় একটা আগ্নেয়গিরির অগ্নোপাত ঘটল। ডিকি কপাল কুকচে তাকিয়ে আছে স্ক্রীনের দিকে।
হঠাৎ করেই তার কপালে ভাজ পড়ে। উইন্ডশীলের উপর ঝুকে পড়ে ডিকি। কি দেখছে সে? ডিপ্রো-৩ কে আরও নিচে নামিয়ে আনা হল। ১৫ হাজার ফুট উপরে আছে ডিপ্রো। ডিকি কি দেখছে এসব। বিশাল জায়গা জুড়ে স্থলসীমায় ফাটল ধরেছে। মাটির বুক চিড়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ফাঠল। খুব দ্রুত। ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে বর্ধিত স্থলসীমা। ফাটল এগিয়ে চলছে বর্ধিত সীমা পেড়িয়ে মুল সীমানায়। হু হু করে পানি ঢুকছে। দ্রুত খাল সৃষ্টি হয়ে গেল। স্থলসীমাগুলো পানির উপর ভাসতে লাগল। কোথাও কোথাও ভেঙ্গে ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ডিকি দিশেহারা হয়ে পড়ল। তার সাজানো স্বপ্ন চোখের সামনে নিঃশ্বেষ হয়ে যাচ্ছে। ডিকি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে। কানের খুব কাছ থেকে কে যেন বলে উঠল, “ঈশ্বর পাহাড়গুলোকে পেরেকের মতো ঠুকে দিয়েছেন যাতে করে স্থলে স্থীতিশীলতা আসে। নড়াচাড়া না করে।”
ডিকি চমকে উঠে পিছনে ফিরলেন। কেউ নেই। ডিকি ঘুরেফিরে এদিক ওদিকে তাকাতে লাগলেন। কেউ নেই, কোথাও কেউ নেই।
ডিকি ফ্যাস ফ্যাস কন্ঠে বলতে লাগল, কে, কে?
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×