বাসায় পারিবারিক আড্ডায় জিজ্ঞেস করলাম 'শবে বরাতের প্রস্তুতি কি? ছোট বোন বলল আমি হালুয়া বানিয়ে আনব, বউ বলল গরুর মাংস লাগবে। আম্মাও বলল কি বানাব বলতে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম শবে বরাতের প্রিপারেশনের সাথে এসবের কি সম্পর্ক? আমি নামায-কালামের কথা বলছি।
আমি তাদের কনফিউজ করতেই এমন কথা জিজ্ঞেস করলেও আমাদের কালচারেই তা পরিনত হয়ে গেছে। সবকালেই শবে বরাতের রাতে মসজিদ ও এর আশপাশের এলাকায় কাটানোর অভ্যাস। আর আম্মা সারাদিন চালের রুটি, হালুয়া, গরুর গোশত এসব বানাতে বানাতে টায়ার্ড হয়ে ৯/১০টায় ঘুমিয়ে পড়ত।
কৈশোরে আমরা চট্টগ্রামের হালিশহরে থাকতাম। তখন তো আর মোবাইল ছিল না। আমরা ঈশার নামাযের পর বাসায় গিয়ে খেয়ে বের হতাম। কয়েকজন এক সাথে হলেই শুরু হত হাটা। এই সময় কেউ যদি আসতে দেরী করত তাকে প্রায় সারারাতই একা থাকতে হত। কারন আমরা কোথায় গিয়েছি বা সারা রাতের প্ল্যান কি তা জানার তেমন কোন উপায় থাকত না। এলাকাকে একটা সার্কেল ধরে হাটতাম। আর এই এলাকার মধ্যে যত মসজিদ সব মসজিদেই ঢুকতাম এবং যার যার মত করে নামায পড়তাম। আমার টার্গেট ছিল মিনিমাম ১০ রাকাত নামায এবং ৫টাকা করে দান। ৫টাকার মাহাত্ন এই যে তখন ৩.৫+ টাকায় ১টা ইট পাওয়া যেত এবং আমার এই ভেবে ভাল লাগত যে এই মসজিদের নির্মানে ১টা ইটের টাকা আমি দিয়েছি।
ঢাকায় চলে আসার পর আর তেমন করে শবে বরাত পালন করা হয় না। আর এর মধ্যে শবে বরাত বলে স্পেশাল কিছু নেই - এমন ফতোয়া শোনার পর তো আলসেমি আরও বেড়ে গিয়েছে। সৌভাগ্যের কথা এই যে আমার ঐ সার্কেলের এক বন্ধুও এখন আমাদের এলাকায় থাকে। তার জন্য গত বছর আবারও প্রায় সেই কায়দায় নামায পড়েছি। এবারও তেমন করে রাত কাটানোর ইচ্ছা। বাড়তি হিসেবে আমার আরেক বন্ধু আরিফ তার এক কাজে ঢাকায় আমাদের বাসায় উঠেছে। আমাদের আরেক বন্ধু 'সমকালের গান' তো আন্তর্জাতিক কাজে ব্যস্ত, তাকে হয়ত পাওয়া যাবে না। তবুও আজকে রাত আড্ডা আর নামাযে কাটানোর ইচ্ছা।
শবে বরাত আছে কি নেই তা নিয়ে এই কয় বছর খুব বিতর্ক হচ্ছে। তাই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে শবে বরাত নিয়ে। আমার কোন কালে এমন ভাবনা ছিল না যে এই রাতে গোনাহ মাফ করাই বা কিছু চাই। এই দুটো যার হাতে তিনিই ভেবে দেখবেন আমার কি দরকার। আমার মনে হয় রোযা আমাদের জন্য খুব স্পেশাল একটা মাস। হাদিসে তাকে অভাগা বলা হয়েছে যে এই মাসে তার গোনাহ মাফ করায় নেয় নাই। প্রতি শেষ রোযার রাতে মন খারাপ হয় এই ভেবে যে ঠিকমত রমযান মাস পালন করলাম না। ভেবে রাখি পরের বছর ঠিকমত করব কিন্তু পরের বছরও আবার একই কাজ করি। আমরা অনেকেই নিয়মিত নামায পড়ি না কিন্তু রমযান মাসটা খুব চেষ্টা করি যেন ঠিকমত নামায-কালাম পড়তে পারি। আর আমাদের জন্য শবে বরাতকে একটা এলার্ম হিসেবে নিতে পারি। শবে বরাতে আমরা প্রিপারেশন নিতে পারি রমযানের। শুনেছি আমেরিকায় বরফ পড়ার ১৫ দিন আগে তুষার পড়ে। তখন সবাই লম্বা সময় বরফাছন্ন থাকার প্রিপারেশন নেয়। আমরা যারা নিয়মিত ধর্মপালন করি না কিন্তু রমযান মাসে নিয়মিত নামায পড়তে চাই তারা শবে বরাত থেকেই শুরু করতে পারি। এই ১৫ দিনের চর্চা থেকে হয়ত সর্বোচ্চ শুদ্ধভাবে পালন করতে পারব রমযান।
সারা বছর ধর্ম কর্ম করি না বলে শবে বরাত বা রমযানে করব না তা তো হয় না। হয়ত আজ রাতে পথে দেখা হয়েও যেতে পারে যদিও রুট এখনও জানি না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ১০:৫৫