somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘মদের পার্টি’ আর অবহেলাই হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর কারণ

৩১ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
জানি না নিচের খবরটা কতটুকু সত্য


জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, চলচ্চিত্রকার ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু রহস্য নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক দর্পণ কবীর।আমেরিকায় বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও এটিএন বাংলার নিউইয়র্ক শাখার বার্তা সম্পাদক দর্পণ কবীর কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা, মৃত্যুর কারণ ও মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন, জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিকের মৃত্যুর অন্যতম কারণ সফল অপারেশনের ৮ দিন পর মদের পার্টির আয়োজন। ওই পার্টিতে মেহের আফরোজ শাওন, মাজহারুল ইসলামসহ উপস্থিত সকলেই মদপান করেছেন। দর্পণ কবীর বলেন, লাশ বুঝে নেওয়ার সময় বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে আমেরিকার বেলভ্যু হাসপাতলে লিখিত অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করেছিলেন শাওন। কিন্তু ঢাকায় ফিরেই নুহাশ পল্লীতে দাফনের জন্য গো ধরেন।

তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সফল অপারেশন হয় ১২ জুন। হাসপাতাল থেকে নিউইয়র্কের বাসায় ফেরার দিনই (২০ জুন) পার্টিতে অ্যালকোহল পান করেছিলেন সবাই। পার্টিতে উপস্থিত সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার কোনো এক সময়ে চেয়ার থেকে পড়ে যান হুমায়ূন আহমেদ। তাতে আট দিন আগে করা অপারেশনের সেলাই ছিঁড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু মদ্যপ অবস্থায় কেউই হুমায়ূনকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি। কিংবা মদ্যপ থাকায় হুমায়ূনের পড়ে যাওয়া, সেলাই ছিঁড়ে যাওয়ার গুরুত্ব অনুধাবনই করতে পারেননি। তাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন ১১ ঘণ্টা পর। ধারণা করা হয় হুমায়ূন আহমেদকেও অতিরিক্ত মদপান করানো হয়েছিল।

অনলাইন নিউজ দ্য রিপোর্টে প্রকাশিত দর্পণ কবীরের একটি ইন্টারভিউ থেকে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাহরাম খান।

সাক্ষাতকারটি সময়ের কণ্ঠস্বরের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হল-

একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, হুমায়ূন আহমেদ যে হাসপাতালের অধীন চিকিৎসাধীন (বেলভ্যু) ছিলেন দুর্ঘটনার পর তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়নি। নেওয়া হয়েছিল অন্য হাসপাতালে।

তিনি বলেন, জনপ্রিয় এই লেখকের চিকিৎসার ব্যয় সংকোচন করতে গিয়ে ভাল হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। তিনি আরও জানান, লাশ বুঝে নেওয়ার সময় বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে আমেরিকার বেলভ্যু হাসপাতলে লিখিত অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করেছিলেন শাওন। কিন্তু ঢাকায় ফিরেই নুহাশ পল্লীতে দাফনের জন্য গো ধরেন।

তিনি বলেন, শাওনের কাছে চিকিৎসকের নম্বর ছিল না। হুমায়ূন আহমেদ চেয়ার থেকে পড়ে গিয়ে অপারেশনের সেলাই ছিঁড়ে যাওয়ার পর শাওন অন্যের কাছ থেকে নম্বর সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া শেষ দিকে হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা ও মৃত্যুর তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোরও চেষ্টা করা হয়।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে অনেক অপ্রকাশিত তথ্য আপনি জানেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে যদি বলেন …

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। তার মৃত্যু নিয়ে যখন বিতর্ক দেখা দেয় তখন পাঠক-অনুরাগীদের কৌতূহল থাকাই স্বাভাবিক।

হুমায়ূন আহমেদ যখন বেলভ্যু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তখন ডাক্তাররা বলেছিলেন, এমন রোগীর ৯৫ ভাগই সুস্থ হন। মারা যাওয়ার আশঙ্কা শতকরা পাঁচভাগ। কিন্তু এই চিকিৎসা যদি স্লোয়ান ক্যাটারিং হাসপাতালে হতো তাহলে আরও ভালো হতো। বেলভ্যু হাসপাতালকে খারাপ বলছি না। তবে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য আমেরিকার স্লোয়ান ক্যাটারিং হাসপাতাল পৃথিবীশ্রেষ্ঠ।

আমাদের দুর্ভাগ্য যে, হুমায়ূন আহমেদ সেই পাঁচভাগের মধ্যে পড়েছেন। তবে এই ক্ষেত্রে চিকিৎসার চেয়ে আমার কাছে হুমায়ূন আহমেদের আমেরিকায় থাকার পরিবেশকেই বেশি দায়ী মনে হয়।

কী ধরনের পরিবেশ?

হুমায়ূন আহমেদ নিউইয়র্কের যে বাসায় থাকতেন তার কাছেই আমার বাসা। হাসপাতালে তার অপারেশন হয় ১২ জুন । এর পর বাড়ি ফেরেন ২০ জুন।

সুস্থ হওয়া উপলক্ষে ২০ জুন সন্ধ্যাই হুমায়ূন আহমেদের বাড়িতে একটি পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। পার্টিতে অনেক কিছু পরিবেশন করা হয়েছিল এবং সেখানেই তিনি চেয়ার থেকে পড়ে যান। এ সময় অপারেশনের সেলাই ছিঁড়ে যায়।

পার্টি অনেক কিছু পরিবেশন বলতে …

আমরিকায় পার্টিতে অ্যালকোহল একটি কমন আইটেম, অর্থাৎ হার্ড ড্রিংকস। আমি বুঝতে পারি না একজন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের বাসায় এত মানুষের একটি পার্টি কীভাবে হয়? হুমায়ূন আহমেদ জনপ্রিয় লেখক। তার সান্নিধ্যে সবাই আসতে চাইবেন। কিন্তু এমন একজন রোগীকে যত নীরবে রাখা যায় ততই ভাল। এটা ডাক্তারদের কথা। আমার কথা নয়।

আপনি বলছেন ওই দিন হুমায়ূন আহমেদ অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করার কারণে ভারসাম্য হারিয়ে চেয়ার থেকে পড়েযান?

আমি যেহেতু সামনে ছিলাম না, তাই সরাসরি দেখিনি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি, ওই দিনের পার্টিতে অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করেন অনেকে। স্বাভাবিকভাবেই হুমায়ূন আহমেদকেও কেউ অ্যালকোহল দিয়ে থাকতে পারেন। ফলে হুমায়ূন আহমেদ চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার পরও তাৎক্ষণিভাবে কেউ তাকে হাসপাতালে নিতে পারেনি। আমার ধারণা, ওই দিন যদি সঙ্গে সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদকে হাসপাতালে নেওয়া হতো তাহলে তিনি যেমন আশঙ্কামুক্ত হতে পারতেন তেমনি পার্টি দেওয়ার অপরাধে অনেকে গ্রেফতারও হতে পারতেন।

তার মানে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহেরআফরোজ শাওন ও মদ্য পছিলেন?

আমি যেহেতু পার্টিতে উপস্থিত ছিলাম না তাই এটা আমার কথা না। উপস্থিত যাদের কাছ থেকে শুনেছি তাতে তাই মনে হয়। কারণ অ্যালকোহল পান করলে একটি নির্দিষ্ট সময় এর কার্যকারিতা থাকে। এই ভয়ে হয়তো হুমায়ূন আহমেদকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার অবস্থা কারো মধ্যেই ছিল না।

এই কারণেই হয়তো ১১ ঘণ্টা পরে লেখককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাও অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে নয়, গেছেন ব্যক্তিগত একটি গাড়িতে। সে দেশে যে কোনো সময় ৯১১-এ কল করলে অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির হয়। বাসার কাছে থাকা জ্যামাইকা হাসপাতালে গেলে রোগীকে দেরিতে হাসপাতালে নেওয়ার কারণ জানতে চান ডাক্তাররা এবং এই রোগী তাদের আয়ত্তের বাইরে জানিয়ে বেলভ্যু হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ততক্ষণে সেলাই ছেঁড়া ক্ষতস্থানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়ে গেছে।

এ ছাড়াও হুমায়ূন আহমেদকে তার প্রিয় খাবার গরুর মাংস ও ভাত খেতে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে ছিলেন, ঢাকা থেকে যাওয়া প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম, আমেরিকায় বসবাসরত দু’জন লেখকসহ হুমায়ূন আহমেদের শেষ জীবনে পরিচিত হওয়া কয়েকজন ব্যক্তি।

গরুর মাংস ও ভাত খাওয়ার কারণে তার পেটে প্রবল গ্যাস সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি অস্বস্তি বোধ করেন। হাসপাতাল থেকে সদ্য ফেরা একজন পোস্ট অপারেটিভ রোগীকে কীভাবে এতগুলো মানুষের সামনে ভাত ও গরুর মাংস দিয়ে খাবার দেওয়া হয়? হুমায়ূন আহমেদ ভাত ও গরুর মাংস পছন্দ করতেন, কিন্তু তার স্ত্রী কেন হুমায়ূন আহমেদকে বিরত করেননি- এটিও অনেক বড় প্রশ্ন।

ওই পার্টির সময়েই চেয়ার থেকে উল্টে পড়ে যান হুমায়ূন আহমেদ। ওই বাড়ির হাউসকিপারের কাছ থেকে এই তথ্য জানতে পারি। সে সময় এই বিষয়টি মেহের আফরোজ শাওন, মাজহারুল ইসলাম এড়িয়ে যান। পরবর্তী সময়ে জ্যামাইকা হাসপাতালের রিপোর্ট বের হলে পরিষ্কার হয়ে যায় হুমায়ূন আহমেদের চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা। বিশ্বজিৎ সাহার লেখা ‘হুমায়ূন আহমেদের শেষ দিনগুলো’ গ্রন্থের ৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, ‘ফ্যামেলি স্টেটস দ্যাট, পেশেন্ট হ্যাডস এ ফল ফ্রম চেয়ার ইয়েস্টারডে’। জ্যামাইকা হাসপাতালের রিপোর্টে আরও রয়েছে- জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কনস্টিপেশন, ডায়রিয়া ও গ্যাস নির্গত হওয়ার কথা।

প্রশ্ন হচ্ছে, চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি কেন? ডাক্তারের নাম্বারের জন্য মেহের আফরোজ শাওন বিশ্বজিৎ সাহার কাছে ফোন করেছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস তার স্বামী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তার পরও কেন শাওনের কাছে ডাক্তারের নম্বর ছিল না? ২১ জুন সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদকে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে সন্ধ্যায় নেওয়া হয় বেলভ্যু হাসপাতালে। এখানে ২২ জুন ভোর ৫টা ২৭ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার করা হয়।

আরেকটি প্রশ্ন হলো, জ্যামাইকা হাসপাতাল থেকে হুমায়ূন আহমেদকে বেলভ্যু হাসপাতালে নেওয়ার সময় অহেতুক কালক্ষেপণ করা হয়েছিল, তখন শাওন লেখকের সঙ্গে ছিলেন না । সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদকে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেওয়া হয়, মেহের আফরোজ শাওন কেন সঙ্গে আসেননি? লেখককে যখন বেলভ্যু হাসপাতালে ট্রান্সফার করার জন্য স্বাক্ষর লাগবে তখন আসলেন শাওন।



এ দিন জ্যামাইকা হাসপাতাল থেকে বেলভ্যু হাসপাতালে রেফার করা হলে তাকে কীভাবে নেওয়া হবে- এ নিয়েও সময় নষ্ট করা হয়। বিশ্বজিৎ সাহা টেলিফোন করে একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করলে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে অনুরোধ করেন মাজহারুল ইসলাম। এভাবেও সময় নষ্ট হয়। যেখানে হুমায়ূন আহমেদের ত্বরিত চিকিৎসা করাটা জরুরি, সেখানে তুচ্ছ বিষয়ে সময় নষ্ট করার কারণ কী?

চিকিৎসার প্রশ্নে ব্যয় সংকোচন কেন? আমরা দেখেছি, মাজাহারুল ইসলাম হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে তৎপর ছিলেন। অথচ প্রায় ৭০ হাজার ডলার অনুদান সংগৃহীত হয়েছিল এই বরেণ্য লেখকের চিকিৎসার জন্য। উদ্যোগ নিলে আরও বিপুল অর্থ অনুদান সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল।

যে গৃহপরিচারিকার কাছ থেকে পার্টি ও হুমায়ূনআহমেদের চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার কথা জেনেছেন, তিনি কি প্রত্যক্ষদর্শী?

হ্যাঁ, তিনি বাড়িতে ছিলেন।

তার নাম কী?

তিনি বিশ্বাস করে আমাকে বলেছেন। নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

গৃহ পরিচারিকার অন্য কোনো পরিচয়?

এতটুকু বলতে পারি তিনি জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমেই হুমায়ূন আহমেদের বাড়িতে কাজ করতেন। সরকারিভাবেই তাকে দেওয়া হয়েছিল।

তার পরিচয় না বললে আপনার দেওয়া তথ্য গুলো অনেক দুর্বল হয়ে যায়। কারণ আপনিতো প্রত্যক্ষদর্শীনন, তাইনা?

দেখুন পেশাগত কাজের জন্য আমাদেরকে অনেক সূত্রের পরিচয় গোপন রাখতে হয়, এটাই নিয়ম।

কিন্তু এটা তো স্পর্শকাতর বিষয় …

তা ঠিক আছে। তবে সরাসরি ওই গৃহপরিচারিকার পরিচয় না বললেও সে তো আমেরিকাতে সরকারিভাবেই নিয়োগপ্রাপ্ত এবং একমাত্র গৃহপরিচারিকা হিসেবে তাকে হুমায়ূন আহমেদের বাসায় পাঠানো হয়েছিল। নাম না বললেও তাকে পেতে খুব সমস্যা হবে না।

তা ছাড়া চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিশ্বজিৎ সাহার লিখিত ‘হুমায়ূন আহমেদের শেষ দিনগুলো’ বইতেও প্রমাণসহ আছে। কারণ আমেরিকাতে হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসার লোকাল গার্ডিয়ান ছিলেন বিশ্বজিৎ সাহা। এ কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সকল তথ্য দিতে বাধ্য।

মৃত্যুর পর হুমায়ূন আহমেদকে কবর দেওয়া নিয়ে ও বিতর্ক হয়েছিল …

আমেরিকায় হাসপাতাল থেকে লাশ আনার সময়ে সব তথ্য দিতে হয়। লাশ কোথায় কবর দেওয়া হবে তাও লিখতে হয়। হাসপাতালের ফরমে হুমায়ূন আহমেদের লাশ ঢাকার বনানীতে কবর দেওয়ার কথা লিখেছিলেন শাওন।

আমেরিকার জেএফকে এয়ারপোর্টে সাংবাদিকরা শাওনকে প্রশ্ন করেছিল কবর দেওয়ার বিষয়ে হুমায়ূন আহমেদের কোনো ইচ্ছা ছিল কি না? জানিয়েছিলেন, তিনি জানেন না। অথচ ঢাকায় প্লেন থেকে নামার পর বললেন হুমায়ূন আহমেদ তাকে নুহাশপল্লীতে কবর দেওয়ার জন্য বলে গেছেন ।

হুমায়ূন আহমেদের প্রথমপক্ষের সন্তানরা নুহাশপল্লীতে কবর দিতে আপত্তি জানালেন। তখন মেহের আফরোজ শাওন নুহাশপল্লীতেই অনড় থাকলেন। প্রয়োজনে তিনি আদালতে যাবেন। আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ বারডেমের হিমাগারে পড়ে থাকবে।

ঢাকায় লাশ নিয়ে আসতেও একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল …

আমেরিকা থেকে ঢাকাতে লাশ নিয়ে আসার বিষয়েও অনেক সমস্যা তৈরি করেন মেহের আফরোজ শাওন। তিনি চাইছিলেন প্লেনের বিজনেস ক্লাসে আসতে। জাফর ইকবাল সাহেব বলছিলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেভাবেই হোক লাশ ঢাকা নিতে হবে। কিন্তু শাওন বিজনেস ক্লাস ছাড়া যাবেন না। ওই রকম সময়ে শাওনের এমন আচরণ পরিবারের অনেককে ক্ষুব্ধ করেছিল। শেষ পর্যন্ত মাজহারুল ইসলাম ব্যক্তিগত উদ্যোগে শাওনের দাবি মেটান, বিজনেস ক্লাসেই দেশে ফেরেন তারা।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে আপনার সন্দেহের কারণ কী?

হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা জটিলতার একপর্যায়ে জাফর ইকবাল আমেরিকায় যান। তখন তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় যেভাবে কথা বলছিলেন, তাতে অন্য প্রকাশের মাজহারুল ইসলাম অস্বস্তিবোধ করছিলেন। তিনি চাইছিলেন, হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা নিয়ে শাওন যে সব তথ্য মিডিয়াতে দিচ্ছেন জাফর ইকবালও যেন সেইভাবে কথা বলেন। তখন বিষয়টাতে আমার সন্দেহ হয়। এই বিষয়গুলো খুব কাছে থেকে দেখেছেন জাফর ইকবাল স্যার। তিনি সব জানেন।

মিডিয়াতে শাওন ও মাজহারুল ইসলাম কী তথ্য দিয়েছিলেন?

তারা বলছিলেন হুমায়ূন আহমেদের অবস্থা স্থিতিশীল আছে। তিনি ভাল হয়ে উঠবেন। মৃত্যুর ঘণ্টা দুয়েক আগেও মেহের আফরোজ শাওন ভয়েস অব আমেরিকায় বলেছেন হুমায়ূন আহমেদ ভাল আছেন। একদিন আগে মাজহার ভাইও আমাকে বলেছেন পত্রিকাগুলো ভুল তথ্য লিখে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অথচ এর পরই মারা গেলেন প্রিয় লেখক। এগুলো আমাদের সন্দেহ বাড়িয়েছে। কারণ কয়েকটি পত্রিকা রিপোর্ট করেছে ৭২ ঘণ্টা আগেই ডাক্তারের পক্ষ থেকে লেখকের পরিবারকে মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়। তার পরও তথ্য লুকানোর চেষ্টা কেন?

আবার জাফর ইকবাল সাহেব আমাদেরকে বলেছেন এই মুহূর্তে মাকে আনতে পারলে ভাল হতো। আমরা বললাম, আপনার আম্মাকে নিয়ে আসেন। তিনি বললেন, এখন তো সময় নেই। তার মানে ওই সময়েই একটা বার্তা ছিল যে, হুমায়ূন আহমেদ আর বেশিক্ষণ নেই।

অথচ মাজহার সাহেব চাইছিলেন এই তথ্যটা যাতে আমরা জানতে না পারি। এমন লুকোচুরির অর্থ কী? স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, তাই না?

এর পর আমি নিয়মিত যোগাযোগ রাখি জাতিসংঘের বাংলাদেশ প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে থেকে শাওন কিংবা মাজহার কেউ ফোন ধরছিলেন না। মোমেন সাহেবকে ফোন দিলে তিনি জানান ততক্ষণে হুমায়ূন আহমেদ আর নেই।

এই প্রশ্নগুলো শুধু আমাদের নয়, লাখ লাখ পাঠক এবং তার পরিবারের সদস্যদের মনেও আছে। এই প্রশ্নগুলো লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের কাছে করতে চেয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের অন্য সদস্যরা। আমি জেনেছি আলোচনা করে একটি দিনও নির্ধারণ করা হয়েছিল। কথা ছিল পরিবারের সকল সদস্যের সামনে হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসার বিষয়ে শাওনের কাছে প্রশ্ন করা হবে। শাওন এ ধরনের পারিবারিক বৈঠকে আসতে সম্মত হননি। ফলে পারিবারিক বৈঠকটি হয়নি। ফলে হুমায়ূন আহমেদের মা, ভাইবোন ও সন্তানরা প্রশ্নগুলোর জবাব শাওনের কাছ থেকে পাননি। এ থেকে তাদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে।

মৃত্যুর কারণ নিয়ে আমেরিকায় মামলা হওয়ার প্রসঙ্গ এসেছিল …

এই ক্ষেত্রে হয়তো হুমায়ূন আহমেদের পরিবার থেকেই বিষয়টিকে আর বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়নি। কারণ, যতই খোঁজাখুঁজি করুক হুমায়ূন আহমেদকে তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। হয়তো ওই দিনের পার্টিতে মদ পানের বিষয়টি উঠে আসবে। তখন লেখকের ব্যাক্তিগত ইমেজ যেমন মানুষের কাছে খারাপ হবে, অন্যদিকে পারিবারটি মিডিয়াতে নেতিবাচক আলোচনায় থাকবে। তবে চাইলে এখনও সেই সব রহস্য বের করা যাবে। কারণ আমেরিকাতে তদন্ত করলে কোনো বিষয় লুকানোর উপায় নেই। বের হয়ে আসবেই।

আমেরিকাতে হুমায়ূন-শাওনের সম্পর্ক অবনতির বিষয়টিও অনেকে তুলেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের বই ‘মেঘের ওপর বাড়ি’র কাহিনী ও আবর্তিত হয়েছে একজন ক্যান্সার রোগীকে কেন্দ্র করে। যেখানে সেই রোগীর স্ত্রী ও স্ত্রীরবন্ধুর কারণে চিকিৎসার অবহেলাহয়। রোগীটি মারা যায় এবং লাশ কবর হয় না। এর সঙ্গে কি হুমায়ূন আহমদের নিজের জীবনের কাহিনীর কোনো মিল পাওয়া যায়?

বইটা আমার পড়া হয়নি। হয়তো হতেও পারে। হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে জেনেছি, এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হুমায়ূন আহমেদ শাওনকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলেন। এর পর শাওনের মা তোহুরা আলী সেই সমস্যার সমঝোতা করেছিলেন।

কার মাধ্যমে জেনে ছিলেন?

হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিনের কাজিনের হাজব্যান্ডের মাধ্যমে জেনেছি। উনি হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা কাজ খুব কাছে থেকে তদারকি করেছেন। ঠিক কী কারণে সমস্যা হয়েছিল তা আমি জানি না। এটা হুমায়ূন আহমেদের অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে হয়েছে কি না, তাও জানি না।

তার নাম কী?

জামাল আবেদীন। তিনি হুমায়ূন আহমেদের লাশের গোসল করিয়েছিলেন।

বিস্তারিত
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×