somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামায়ণ, 2006

৩১ শে জানুয়ারি, ২০০৬ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হতবুদ্ধি রাম লক্ষণকে বলিলেন, "ভ্রাতঃ, তোমাকে রাখিয়া গেলাম সীতার প্রহরায়, তুমি কী বুদ্ধিতে তাহাকে একাকী রাখিয়া সিনেমা দেখিতে গেলে?"
লক্ষণ অধোবদনে দাঁড়াইয়া রহিলেন। সীতা বউদি নিখোঁজ হইয়াছেন ঠিকই, কিন্তু "নিষিদ্ধ নারী" জমিয়াছিলো ভালো।
রাম রাগিয়া কহিলেন, "দুর্মতি বালক! চাহিয়া দ্যাখো, জটায়ু পর্যন্ত সীতাকে রক্ষার চেষ্টা করিয়াছে, আর তুমি পামর সিনেমায় মজা মারিতেছিলে?"
লক্ষণ নিরুত্তর রহিলেন।

ওদিকে চারদিকে ঢিঢি পড়িয়া গেলো। কেহ কহিলো ইহা বাকশালী তান্ডব, কেহ কহিলো জাতীয়তাবাদী গুন্ডাদিগের কাজ, কিন্তু রাবণকে রাবণ বলিয়া তাহার দিকে আঙ্গুল তুলিবার জন্যও লোকের অভাব হইলো না। অপহরণের সাক্ষী গরুড়কে র্যাব আসিয়া মর্গেলইয়া গিয়াছে, সে জীবিত না মৃত তাহা কেউ তেমন একটা খেয়াল করিতে পারে নাই, তবে এখন তাহার পোস্ট মর্টেম চলিতেছে, আসল ঘটনা কী ঘটিয়াছে কেহই নিশ্চিত নহে।
পত্রপত্রিকা আর টিভি চ্যানেলে দিন কতক উত্তপ্ত স্টোরি ও টকশো চলিলো। একটি ধর্মধ্বজ পত্রিকায় রসপূর্ণ আর্টিকেল বাহির হইলো, কী রুপে সীতা প্রথমে গণধর্ষিত ও পরে গুমখুন হইয়াছেন। ট্যাবলয়েড একটি পত্রিকা সরজমিন তদন্ত করিয়া কহিলো, সীতার গয়নাগাটি কিছুই পড়িয়া নাই, মাগী ওগুলি সঙ্গে লইয়াই কাহারো সহিত চম্পট দিয়াছে। কোন কোন পত্রিকা লক্ষণকে ফাঁসাইবার চেষ্টা করিলো, বেচারা তো আর একটু হইলেই মকদ্দমায় ফাঁসে আর কি, পুলিশ অব্দি তাহাকে আর এক দফা রিমান্ডে লইয়া জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ আঁটিলো। বহুকষ্টে বেচারা তাহার সিনেমার সঙ্গী কতক ইয়ার দোস্তকে সাক্ষী মানিয়া কোনমতে হাজত হইতে দূরে রহিলো। রাম এ সম্পর্কে মন্তব্য করিলেন না, গম্ভীর হইয়া আকাশপানে চাহিয়া রহিলেন।
পাশর্্ববতর্ী গ্রামবাসীগণ কহিলেন, হাঁ, তাঁহারা অপহরণের দিন পুষ্পকরথ গোছের একটি বায়ুযানকে আকাশে চলাচল করিতে দেখিয়াছেন বটে, কিন্তু ঠাকুরমার ঝুলি বলিয়া গোয়েন্দাপুলিশ ইহাকে উড়াইয়া দিলো। তাহারা সীতার অতীত চুলচেরা গবেষণা করিয়া তাহার স্কুল ও কলেজজীবনের প্রেমিকদের খোঁজ করিতে লাগিলেন।
নারীনেত্রীরা চটিলেন। তাঁহারা বিবৃতি দিলেন, সীতার অন্তর্ধানের পশ্চাতে খোদ রামের কোন হাত আছে কি না তদন্ত করিতে হইবে। সীতা মানবেতর জীবনযাপন করিতেছিলেন, সোনার হরিণ তো দূরের কথা তাঁহাকে একটি টেলিভিশন পর্যন্ত কিনিয়া দ্যান নাই রাম, বনবাসে রহিতেন বলিয়া কি সীতা মনুষ্য নহেন? দিবারাত্র স্বার্থপর স্বামী রাম আর বখাটে দেবর লক্ষণের খিদমত খাটিয়াই তাঁহাকে কাটাইতে হইতো। হয়তো এর প্রতিবাদ করিয়াছেন বলিয়াই রাম তাহাকে গুম করিয়াছেন, ইত্যাদি।
মধুর দাম্পত্য জীবনের কথা স্মরণ করিয়া রাম খালি ক্রন্দন করেন। কেহ কহিলো আহা লোকটা, কেহ কহিলো কুম্ভীরাশ্রু।
রাম প্রচুর সাক্ষাৎকারের প্রস্তাব পাইলেন, রাজি হইলেন না। মোবাইল কোম্পানীর বিজ্ঞাপন নির্মাতারা তাঁহাকে ছাঁকিয়া ধরিলো, দূরের মানুষ নিকটে আইসো শিরোনামে বিজ্ঞাপনের সিনেমায় নাম সহি করাইবার জন্য মর্মান্তিক পীড়াপীড়ি করিতে লাগিলো, রাম নিরুত্তরে বাটীর দ্্বার রুধিলেন।
রাম সীতা লক্ষণ লইয়া ব্যাপক তুলাধুনা চলিতে লাগিলো, রাবণের কথা কেউ তুললেও গুজববণিকেরা তাহাদের ঘাড় ধরিয়া বসাইয়া দিলো। সমাধানের দরকার কী, রহস্য একখানা আছে থাকুক না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য মাঝে মাঝে আশ্বাস দ্যান, "উই আর লুকিং ইনটু দি ম্যাটার। সীতা উইল বি রিভিলড সুন। প্লিজ হ্যাভ বিশ্বাস অন আস।"

দিন যায়। বাঙালি এক হুজুগ লইয়া কতদিন পড়িয়া থাকিবে?
একদিন এক পার্টিতে জনৈকা দূর সম্পর্কের আত্মীয়া পান চিবাইতে চিবাইতে বলিলেন, "অ বাছা আমার, রাম, আর কতকাল এমন বিনিদ্র রজনী কাটাইবে? সীতা মাগী তো গয়নাগাটি লইয়া দশমুখো নাগরের কোলে চড়িয়া ভাগিলো, এখন লক্ষী দেখিয়া আরেকটি বিবাহ করো। সম্মতি দিলে পাত্রী দেখি।" তিনি মোবাইল ফোন খুলিয়া সঞ্চিত নানা পাত্রীর ফটো দেখাইতে লাগিলেন, কতক পাত্রীর ভিডিও পর্যন্ত দেখাইলেন। রাম প্রথমটায় নির্বাক ছিলেন, পরে উসখুশ করিতে লাগিলেন। লক্ষণ আসিয়া সব দেখিয়া গোঁধরিলেন, "দাদা, নিজে বিবাহ না করিলে যাও সিনেমা হলে 'গরম মশল্লা' দেখো গিয়া, আমিই বিবাহ করিব। অ পিসি দিনক্ষণ ঠিক করো।"
রাম লক্ষণকে ধমকাইয়া হাঁকাইয়া দিলেন।

শেষ সংবাদ পাওয়া অব্দি শুনিয়াছিলাম, গীতা নাম্নী এক অষ্টাদশীকে রাম পছন্দ করিয়াছেন। গীতা একেবারে পক্কবিম্বাধরোষ্ঠী শিখরীদশনা শ্রোণীভারাদলসগমনা স্তোকনম্রাস্তনাভ্যাং ... এক শব্দে বলিতে গেলে হট। ইহা লইয়া বাঙালির কী প্রতিক্রিয়া হয় জানি না, অপেক্ষায় আছি।

(অশুদ্ধ বানানের জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী।)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×