somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় বড় শব্দযুক্ত গল্প

০৬ ই নভেম্বর, ২০০৬ দুপুর ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি প্রকৃতিপ্রেমিক। প্রায়ই পার্কে বসিয়া পাখি দেখি। ছোট পাখি, মাঝারি পাখি, বড় পাখি।

আমার পাশ্বর্ে যখন বৃদ্ধ ভদ্রলোকটি আসিয়া বসিলেন, তখন তাঁহার বিদঘুটে প্রশ্নের জবাবে এই উত্তরই দিয়াছিলাম।

বৃদ্ধ শুধাইয়াছিলেন, "ইয়ং ম্যান, আপনি এই পার্কে নিরালায় বসিয়া কী সন্ধান করিতেছেন?"

আমি উত্তরটি দিয়া ঠোঁটে একটি মৃদুমন্দ হাসির দোলা ফুটাইয়া তুলিয়াছিলাম। যুগের সাথে তাল মিলাইয়া আমি চলি না, এবং তাহা লইয়া আমি গর্বিত। আমার বয়সী যুবারা যেইখানে অবসরে আড্ডা মারে, গুলতানি দেয়, নারী লইয়া ফূর্তি লোটে, কিংবা সামহোয়্যার ইন নামক এক অলীক স্থানে রাজাউজির বধ করে, আমি সেইখানে পার্কে বসিয়া প্রকৃতির রংরূপরস উপভোগ করি।

বৃদ্ধ আমার জবাব শুনিয়া হাসিয়া ফেলিলেন। বলিলেন, "আপনি প্রকৃত রসিক। আমিও এককালে এই কর্ম করিতাম। পাখি দেখিতাম।"

আমি শুধাইলাম, "এখন দেখেন না?"

বৃদ্ধ কহিলেন, "এখন আর দেখিয়া কী হইবে? আমার কী আর সংবিধান সমুন্নত হয়?"

পাখির সহিত সংবিধানের সম্যক সম্পর্ক নির্ধারণ করিতে না পারিয়া বোকার মতো কহিলাম, "মানে?"

বৃদ্ধ চক্ষু টিপিয়া কহিলেন, "দেখুন ঐ ছোট্ট পাখিটির দিকে?" বলিয়া অঙ্গুলি নির্দেশ করিলেন দূরে একটি যুগলের দিকে। তাহারা ঘাসের উপর গাছের ছায়ায় বসিয়া নিরিবিলি প্রেমালাপে মগ্ন। মেয়েটি কিশোরী, তাহার বক্ষ তেমন প্রস্ফূটিত নহে।

বৃদ্ধ একে একে মাঝারি ও বড় পাখিও সনাক্ত করিলেন। তাঁহার ইঙ্গিত বুঝিয়া আমার কর্ণমূল আরক্ত হইলো। বুঢ়া তো অতিশয় ফাজিল প্রকৃতির। গুরুজনসুলভ সুশীল নহে।

বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, "তাছাড়া দ্রবমূল্য চড়চড় করিয়া বাড়িয়া গিয়াছে। সংবিধান সমুন্নত হইলেও দামে পোষাইতো না।"

আমি এইবার "সংবিধান সমুন্নত" হইবার ব্যাপারে আবছা একটা আন্দাজ করিতে পারি।

বৃদ্ধ বকিয়া চলেন। "এককালে আমিও আপনার মতোই পার্কে আসিয়া পাখি দেখিতাম। নির্বাচন করিতাম। দরদাম করিয়া পোষাইলে অধিবেশন বসাইতাম। তখন আমি আরো শক্তপোক্ত ছিলাম, প্রায়ই পাখিরা অনুনয় বিনয় করিতো অধিবেশন মুলতুবি রাখিতে। আমি শুনিতাম না। কড়ি ব্যয় করিয়া অধিবেশন বসাইতেছি, মুলতুবি আবার কী? একেবারে উভয় পক্ষের উন্নয়নের জোয়ার বহাইয়া তারপর ক্ষান্ত দিতাম। কী সব দিন গিয়াছে।"

আমি বাকরুদ্ধ হইয়া যাই বৃদ্ধের স্পর্ধায়।

তিনি স্বপ্নালু চোখে বলেন, "তখন আমার সংবিধান ঘন ঘন সমুন্নত হইতো। তাহার পর বয়স হইলো। সংবিধান মাঝে মাঝে লঙ্ঘন হইতে লাগিলো। বাধ্য হইয়া খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক মিশাইতে হইতো।"

আমি ভাবিলাম, হতভাগাটার গালে প্রকান্ড এক কীল মারিলে কেমন হয়?

বৃদ্ধ লম্পটটি বকিতেই লাগিলেন, "ইদানীং আসি অভ্যাসের টানে। মাঝে মাঝে সমবয়সী বন্ধুবান্ধব আসিয়া আব্দার ধরে। বলে আপনি বাছাই করিয়া দিন। অভিজ্ঞ মানুষ আপনি। আপনিই আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আমি রাগ করি, বলি খবরদার বাজে কথা বলিবেন না, তাহারা হাসে।"

আমি ছটফট করিতে লাগিলাম। ব্যাটা লুচ্চা।

বৃদ্ধ মৃদু হাসিয়া কহিলেন, "প্রার্থীর মান অবশ্য ইদানীং বাড়িয়াছে। তাহাদের আসনও আগের তুলনায় উন্নত। তবে তাহাদের সহিত তাল মিলাইতে গেলে এখন এই বয়সে আমার সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।"

আমি রাগের চোটে উঠিয়া পড়িয়া কহিলাম, "আপনার লজ্জা হওয়া উচিৎ ...!"

বৃদ্ধটি দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, "এই হইলো আপনাদের দোষ। নিজেরা নোংরায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত হইয়া অপরকে নোংরা বলিয়া গালাগালি করেন।"

আমি কী আর বলিবো, চলিয়া আসিলাম পার্ক হইতে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×