somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নীল-দর্পণ
আস্ সালামু আলাইকুম্

পাঠ প্রতিক্রিয়া

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি দুটি বই পড়ে শেষ করেছি সে সম্পর্কেই কিছু লিখতে বসেছি আজ। খুবই সাধারন পাঠক আমি বই রিভিউ বলতে যা বোঝায় তা হয়ত লিখতে পারি না তবে পাঠের পরে নিজের প্রতিক্রিয়া, নিজের উপলব্ধিটুকু প্রকাশ করতে পারি।
বন্ধু ব্লগার মলাসইলমুইনার দুটি বই বের হয়েছে একুশে বইমেলা ২১ এ। মার্জিত এবং চিন্তাশীল লেখার জন্যে আলাদা পরিচিতি আছে উনার যার প্রতিচ্ছবি বই দুটিতেও প্রকাশ পেয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে হাতে পেলেও বিভিন্ন কারনে পড়তে পড়তে বছর প্রায় শেষ হবার পথে! কথা না বাড়িয়ে আমার প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করছি বই দুটি সম্পর্কে-
বইয়ের নাম: অলৌকিক কুরআন বিস্ময়কর হাদিস
লেখক: ড. খন্দকার নাইমুল ইসলাম
প্রকাশনী: মুসলিম ভিলেজ
ধর্মকে আমরা সাধারনত উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকি। পারিবারিক পরিমন্ডল থেকেই শুরু হয় এর শিক্ষা এর পরে আস্তে আস্তে জীবনের প্র‌য়োজনে, নিজের আগ্রহে আমরা এর সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে থাকি। আমি এমন একটি পরিবেশে বেড়ে উঠেছি যেখান থেকে প্রথমে বেসিক বিষয়গুলো শেখানো হয়েছে আমাকে। হ্যাঁ প্রথমে আমি মুখস্তই করেছি "আমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আনলাম, তাঁর (আল্লাহর) ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস আনলাম, আরো বিশ্বাস আনলাম তাঁর নাযিলকৃত কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর প্রেরিত রাসূলদের প্রতি, শেষ দিবসের (হাশরের) প্রতি, ভাগ্যে লিখিত ভালো ও খারাপের প্রতি এবং পুনরুথ্থানের প্রতি।" যখন মুখস্ত করেছি তখন হয়ত বুঝিনি কিন্তু আস্তে আস্তে বয়সের সাথে সাথে বিশ্বাসটা মজবুত হয়েছে। আল্লাহকে দেখতে পাইনা বলে কখনো তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি মনে, কুরআন মানব লিখিত নাকি আল্লাহ প্রেরিত তার বৈজ্ঞানিক প্রমানের দরকার হয়নি, তবে আমার দরকার হয়নি বলে কারো দরকার হবে না এমন কথা কোথাও নেই। কেউ যদি চিন্তা করতে চায় সেই স্বাধীনতা তার র‌য়েছে।
আমার পঠিত উপরে উল্লেখিত বইটি এমন একটি বই যা এই চিন্তাকে গতিশীল করবে, আরো অনুসন্ধিৎসু করে তুলবে মনকে। নতুন করে ভাবতে শেখাবে পবিত্র কোরআন ও হাদিস সম্পর্কে।
আগেই বলেছি চিন্তাশীল লেখার জন্যে আলাদা পরিচিতি রয়েছে লেখকের যার পুরো প্রতিফলন ঘটেছে এই বইটিতে। ১০টি অধ্যায়ে বিভক্ত করে আলাদা ১০টি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এখানে। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং রাসূল (স) এর হাদিসের বৈজ্ঞানিক এবং বিস্ময়কর ব্যাখ্যা লেখক এখানে দিয়েছেন।

আমার কাছে মনে হয়েছে যারা সত্যিকার অর্থেই চিন্তা করতে পছন্দ করেন তাদের জন্যে চমৎকার একটি বই "অলৌকিক কুরআন বিস্ময়কর হাদিস"।

আমার পূর্বে এই ব্লগের আরো ব্লগারগণ বইটি পরেছেন এবং এর সম্পর্কে আরো সুন্দর বর্ণনা করেছেন। প্রিয় ব্লগার ওমেরার লিখিত রিভিউ পোস্টটিটে বইটির কন্টেন্ট সম্পর্কে রয়েছে যেটার লিংক আমি দিয়ে দিলাম চাইলে যে কেউ দেখে নিতে পারবেন।
*** অনেক প্রত্যাশার সুখবর ***

-----------------------------

বন্ধু ব্লগার মলাসইলমুইনা অত্যন্ত গুণী লেখক, তা না হলে একই সাথে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার দুটি বই লেখা সম্ভব নয়, কিন্তু একাজটিই তিনি সম্ভব করেছেন। একুশে বইমেলা-২১ এ তার আরো একটি বই প্রকাশ পেয়েছে। ১২টি গল্পের সমন্বয়ে সাজানো বইটি।

বইয়ের নাম: আকাশ গঙ্গার তারা
লেখক: খন্দকার নাইমুল ইসলাম
প্রকাশনী: চৈতন্য

সাধারনত আমরা কোন গল্প না উপন্যাস সংকলনে দেখি যে গল্পের নামে নামকরণ করা হয় বইটির তা প্রায় শেষ দিকে থাকে। এক্ষেত্রে আমি এক দুটো গল্প পড়েই আবার সূচীতে যাই যে আসল গল্পটি কোথায় এবং সেটা পড়ে অনেক সময় হতাশও হতে হয় যে কাঙ্খিত গল্পটির তুলনায় অন্যগুলো বেশি উপভোগ্য থাকে বলে। এখানে একদম তার বিপরীত ঘটনা ঘটেছে। পাতা উল্টাতেই প্রথম গল্পটিই হল
আকাশ গঙ্গার তারা। একটি স্টেশনে গল্পের নায়ক ২০ বছর আগের এবং পরের স্মৃতিচারণ করেন নায়কের সাথে সাথে আমিও মনে হচ্ছিল চোখের সামনে দেখতে পারছিলাম সেই সময়কে। তবে লেখকের প্রতি আমার অভিযোগ হল এত অল্পতেই নায়িকাকে আত্নহত্যা করানো ঠিক হয়নি। নায়িকা তার ইচ্ছে অনুযায়ী আকাশ গঙ্গার তারা হয়েই রয়েগেছে কিন্তু আমার মত পাঠকের আত্না অতৃতপ্ত করে লেখক এখানে স্বার্থক হয়েছেন।

লেখক যে নায়িকাকে মেরে ফেলতে ওস্তাদ সেটার প্রমান পেয়েছি ঠিক পরের গল্প জ্যোতিষী'তে! কখনো আর ফিরে আসবে না নিশ্চিত জেনেও নায়ক করিম সাহেব সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে বসে থাকেন, ভালোবাসার মানুষটিকে ফিরে পাবার তীব্র আকুলতাই প্রকাশ পায় এখানে।

বিদেশের পটভূমিকায় লেখা জাঙ্কইমেইল গল্পটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমি এর ভেতরে ডুবে ছিলাম কিছুক্ষণ! একই গল্পে একাধিক ফ্লেভার পাওয়া যাবে।

আমাদের নিত্য জীবনের সাথে অত্যন্ত মিল পাওয়া যায় ভেজাল গল্পটিতে, যেখানে দেখা যায় বিষে ভেজাল থাকে ফলে তা খেয়েও মারা যায় না কিন্তু ভেজাল মেশানো খাবার খেয়ে ঠিকই মারা যাচ্ছে মানুষ। এছাড়াও দালালের খপ্পরে পড়ে গ্রামের সহজ সরল নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তরা যে সর্বশান্ত হয়ে যা তার নির্মম কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখা যায় এখানে।

উৎসব গল্পটি নিয়ে এক বাক্যে প্রতিক্রিয়াব্যক্ত করতে বললে বলা যায়, অত্যন্ত চমৎকার একটি স্যাটায়ার হয়েছে এটি।

আরেকটি চমৎকার গল্প হ্যালুসিনেশন। অসুস্থ ছাত্ররাজনীতির নির্মম পরিনতির মাধ্যমে শেষটা দেখা যায় এখানে।

লেখক নায়ক-নায়িকাকে মেরে ফেলতে ওস্তাদ হলেও ব্যতিক্রমী এবং অত্যন্ত চমতকার একটি গল্প ভালোবাসার ঘ্রাণ
দিয়ে বইটি শেষ করেছেন। হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার গল্প করতে করতে ভালোবাসার ঘ্রান ছড়িয়ে শেষ হয়েছে গল্পটি। অবাক, কষ্ট এবং ভালোলাগা সব মিলিয়ে মিশ্র এক আবেশ ছিল পড়ার অনেক্ষণ পরেও।

আমি এখানে যে গল্পগুলোর কথা উল্লেখ করেছি তার বাইরের গল্পগুলোও ছিল অত্যন্ত উপভোগ্য যার আমেজ পেতে পাঠককে বইটি কিনতে হবে এবং পড়তে হবে।

*****************************

দুটো বই-ই রকমারি.কম এ পাওয়া যাচ্ছে, আগ্রহী পাঠকগণ সেখান থেকে অর্ডার করে নিয়ে পড়তে পারবেন। লেখকের প্রতি অনেক অনেক শুভকামনা রইল যাতে ভবিষ্যতে আরো এরকম বই আমরা পেতে পারি এবং আন্তরিকভাবেই বই দুটির সাফল্য কামনা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:২৪
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×