somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সঞ্চিতা

২১ শে জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আমরা দুই বান্ধবী ছিলাম যেনো একে অপরের আত্মা । ওর নাম ছিল সঞ্চিতা। সঞ্চিতা আর আমার বাসা পাশাপাশি ছিল একই পাড়ায়। ছোটবেলা থেকেই একই সাথে বড় হয়েছি পাশাপাশি বাসা থাকার সুবাদে।
কারণে অকারণে ওর সাথে বাসায় ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভেজা, বিকেলে ফুচকা ঝালমুড়ি, আইসক্রিম খাওয়া, দুজনেই বাসায় না বলে কত হোটেলে যেয়ে ভাত মাঝেমধ্যে বিরিয়ানি খেতাম।
আমি বলেছি সঞ্চিতার বাসায় যাচ্ছি আর সঞ্চিতা তা বলছে আমার বাসায়---এই বলে কত যে চুরি করে বেড়ানো, তা কি আর ভুলা যায় ? আর এর মধ্যে কলেজ ফাঁকি দিয়ে তো সব বান্ধবীরা মিলে আড্ডা দিতাম।কিন্তু সঞ্চিতা সবার সাথে তেমন একটা মিশতে পারত না ।যে কোনো কারণে ও যে কোন কিছুতে অল্পতেই রেগে যেত এবং ওর প্রচন্ড রাগ ছিলো । ও আমাকেই একটু বেশিই পছন্দ করতো। আর ঐ যে বললাম ,পাশাপাশি বাসা ছিল যার কারণে অনেক কিছুই আমিও মানিয়ে নিতাম । কারণ ওর ভেতরে যে সরলতা ছিল তা আমি অন্য কারো মধ্যে পাইনি । তাই ওর সাথে আমারও ছিল দহরম মহরম সম্পর্ক।
এক রকমের ড্রেস ,পায়ের নুপুর ম্যাচিং কানের দুল, সবকিছুই একরকম পড়তাম। একই সাথে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে, কলেজেও আসা যাওয়া করতাম আসা যাওয়া করতাম।

নতুন নতুন কলেজে উঠে যে কোন মেয়েরই মনে হয় এই বুঝি অনেক বড় হয়ে গেলাম ।তবে সঞ্চিতার ভেতর যেনো একটু বেশি কাজ করতো এই ব্যাপারটা। এ বিষয়ে আমাকে সঞ্চিতা বলল ,
--তুই কি জানিস আমি একজনকে মনে মনে পছন্দ করি
--মানে কি?
--সুদীপ কে আমার ভালো লাগে এটা কিভাবে বলা যায়?
--তুই মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে প্রপোজ করবি?
--তাতে কি?
--তোকে মূল্যায়ন করবে না।
--শোন মুক্তা ওই আগের দিন এখন আর নাই আমি ওকে ভালোবাসি এবং এটা ওকে বলবোই।

আমি থেমে গেলাম। কারণ সঞ্চিত ছিল প্রচন্ড রাগী জেদি ওএকটু উরাধুরা টাইপের মেয়ে। সুদীপ তার বাসা ছিল আমাদের দু'পাড়া পরেই।
সুদিপ দা'র পরিবারের সাথে আমাদের পারিবারিক ভাবে উঠা বসা ছিল অন্যরকম। আমার আব্বার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন সুদিপ দা'র বাবা। সুদীপ দা আমাকে যেখানে নিজের বোনের মত দেখেন ,
সেখানে ওর এই ব্যাপারটা আমার কাছে ভীষণ পাগলামি মনে হচ্ছিল।
দিনদিন ভীষণ লজ্জা পাচ্ছিলাম,
আমার বান্ধবী যদি সুদীপ দাকে প্রপোজ করে তাহলে আমাকে কেমন খারাপ নিয়ে ভাববে ,এই ভেবে ।
সঞ্চিতা কে বললাম, কিছুদিন সময় নেই আস্তে আস্তে বলা যাবে , ধৈর্য্য ধর।
সুদিপ দা'র বিকম ফাইনালে ইয়ারে ছিলো। এদিকে সঞ্চিত একদিন রাগের মাথায় যা করলো তা হলো ইতিহাস। সুদিপ দার বাসায় ফোন করে, সুদীপ দা'র মা কে বলল , আপনার ছেলে আজেবাজে মেয়েদের সাথে প্রেম করে একটু খেয়াল রাখবেন। আবার হলুদ খামে করে, সেখানে পরিচয় বিহীন চিঠি দিল দুই তিনটা। এরপর শুরু হলো সঞ্চিতার সাথে এই প্রথম আমার দ্বন্দ্ব। তখন আমি সঞ্চিতাকে বললাম, তুই প্রপোজ কর কিন্তু বলবি আমি (মুক্তা)এসব কিছুই জানে না ।
একদিন সঞ্চিতা সুদীপ কে ফোনে প্রপোজ করে। সুদীপ'দা বলে আমিও তোমাকে পছন্দ করি কিন্তু মুখে বলতে পারছিলাম না।

--কেন?
--তোমরা ভট্টাচার্য্য আর আমার টাইটেল দাস।
--আমি জাত কুল মানি না
--সব শেষ পর্যন্ত আমার হাত ধরে রাখতে পারবে তো !!!
--ফোনে কি হাত ধরা যায় ?
সুদীপ দা ও সঞ্চিতার মধ্যে খুব ভালো রমরমা প্রেম কাহিনী শুরু হয়ে গেলো । দুজনে নতুন প্রেমে সুখের সাগরে হাওয়া খেয়ে নব্য প্রেমের দিন কাটাতে লাগলো । এদিকে শুনছি তা প্রায়ই বলতো ওর মাথা ব্যথা করে এবং চোখে ঝাপসা দেখে। সঞ্চিতা তাকে নিয়ে মাসি চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা দিয়ে দিলেন। যখন কলেজ বন্ধ থাকতো, সঞ্চিতা প্রায় দিন দুপুর বেলায় আমাকে বলতো ওর মাথার ভেতরটা কেমন যেন ব্যথা করে। আমি মাঝেমধ্যে ওকে মাথা টিপে দিতাম ও কপালে ভিক্স দিয়ে দিতাম ।
এদিকে সঞ্চিতার মাসি (খালা) কানাডা থেকে বাংলাদেশে এসেছেন।
ওত আনন্দের শেষ নেই এদিকে কলেজেও জানান দু চার দিন যাবত।

সেদিনও আমি একাই গেলাম কলেজে সঞ্চিতা যায়নি । কলেজ থেকে আসার পর আমার আম্মা বেশ তাড়াহুড়ো করে আমাকে গোসল ও ভাত খাওয়ার জন্য চাপ দিলেন। আমি তখনও জানতাম না সঞ্চিতা হাসপাতালে এবং ব্রেন স্ট্রোক করে মারা গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর আম্মা বললো , সঞ্চিতা হাসপাতালে ভর্তি চল দেখতে চাই ।
এদিকে আমি আর আম্মা বাসা থেকে বের হয়ে দেখি একটা অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে আমাদের বাসার গলি দিয়ে। তারপর আমরা সঞ্চিতা দের বাসায় গেলাম । ততক্ষণে সব শেষ আমার। সঞ্চিতার মৃতদেহ অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো দেখে একদম চুপ হয়ে গেলাম এবং সমস্ত শরীর মুহূর্তে ঠান্ডা হয়ে গেলো । কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকালাম, তারপর এই প্রথম জীবনে কোন মৃত মানুষকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদলাম। রাতেই সঞ্চিতা কে নিয়ে যাওয়া হল ওদের গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই ওর শেষকৃত্য হলো। আর আমি হয়ে গেলাম একা একদম একা। স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লেগেছিল আমার। শুধু ভাবতাম সঞ্চিতাকে ছাড়া সকাল, দুপুর, বিকেল সন্ধ্যা --এই চারবেলা কিভাবে কাটবে। ওই সময়ে যে দুঃখের দিন গুলো কাটিয়েছি তা আমার কাছে নিতান্তই ভয়ঙ্কর ছিল। এরপর ধীরে ধীরে শোক কাটিয়ে উঠতে হলো ।

সঞ্চিতার মৃত্যুর পর পুরো পরিবার কানাডায় চলে গিয়েছিল । সঞ্চিতাও যাওয়ার কথা ছিল । যাই হোক , কয়েকবছর আগে সঞ্চিতার মা'য়ের সাথে দেখা হওয়ার পর উনি আমার কপাল হাত মুখ নিজ হাতে স্পর্শ করে বললেন , আমার সঞ্চিতাও আজ ঠিক তোর মতই হতো। তোকে দেখে আমার অনেক শান্তি লাগছে
এবং মনে হচ্ছে শুনছি তার গায়ের ঘ্রাণ পাচ্ছি" ।
ওই বার ছিলো মাসির সাথে আমার শেষ দেখা ।

আজ ২১ শে জুন সঞ্চিতার জন্মদিন। আজ সঞ্চিতা' বেঁচে থাকলে হয়তো সারাটা দিন একসাথে কাটাতাম সেই নীল রঙের ড্রেস পড়ে। প্রতিবছরই দিনটা বুকের ভেতর হু হু করে কেদে উঠে তোর জন্য। শূন্যতায় থাকি- তো সারা বছরই তোকে ছাড়া। তুই ওপারে ভালো থাকিস , শান্তিতে থাকিস।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৯ রাত ১১:৪০
৩০টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×