দুঃখিত! মাঝে মাঝে মনে হয় বাংলাদেশী হয়ে বড় পাপ করেছি। যখন চারিপাশে দুটি দেশের পক্ষে পরস্পর গালাগাল করে আত্মসম্মান হানি করার লোকের অভাব নেই তখন খুঁজছি নিরেট বাংলাদেশীকে। নিছক বকধার্মিকের বাইরে থাকা কিছু মানুষ খুঁজে বার করতে চেষ্টা করছি। আমি দুঃখিত। আমার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমি দুঃখিত। সত্যিই দুখের সাথে বলতে হয়, আমি পাইনি। আমি বাংলাদেশীদের খুজে পাইনি বাংলাদেশে।
তবে বাংলাদেশী সাজা রঙচোরা লোকের অভাব অন্তত নেই। যারা ঈদ/পূজোয় ধার্মিক, একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারের বেদিতে যায়, বিজয় দিবস এলে নতুন পকাতা হাতে নেয়, পহেলা বৈশাখে উচ্চ মূল্যে পান্তা-ইলিশ ভোজনে ব্যাস্ত হয়। এর বাইরে সারাটা বছর এরা বাংলাদেশী থাকেনা। থাকেনা ধার্মিকও। সবসময় ভারত-পাকিস্তান হয়ে বকধার্মিক সেজে যায় মুহুর্তেই।
সত্যিই। চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি হল এই দালাল-রাজাকার ব্যাপারটি। একপক্ষ দালাল অন্য পক্ষ রাজাকার। মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে কেউ নাই।
কেন নাই?
কারন একটাই। বাংলাদেশী খুজে পাওয়া যায়না বাংলাদেশে। আজ রঙচোরদের বাড়ন্ত এত অত্যধিক যে, খোদ দেশাত্ম দিবসের একটা দিনও আর রঙ বদল করে থাকতে পারছে না। এটা উদ্বেগের বিষয় নয়। এটাই আনন্দের বিষয়। একই সাথে বাংলাদেশে সত্যিকার দেশাত্মবাদীর অভাবকে প্রমাণ করে দেয়। দুপাশ থেকে ঘৃনীত উচ্চারন, 'ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ'। এর মাঝে বাংলাদেশীর চঞ্চলতায় কী লাভ? কী লাভ মধ্যখানে ঘৃণার থুথু ফুরিয়ে? ওসব তো মানুষই ছিলোনা! অমানুষের জন্য শুধু দরদ। মানুষ হোক। মানুষের সহযোগী হোক।
আজ সারা বছর ইংলিশ আর হিন্দি চর্চা করে দেশাত্মবোধের স্থানগুলোও বিদেশী সংস্কৃতি চর্চার জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে।
বাংলাদেশী যারা আছে তাদের জন্য এখন ঘোর অমানিশা। দালাল ও রাজাকারের যুগ এটা। সব কথায় সায় দিয়ে লাভ কি? সব কথায় উদ্বেগ করে কী লাভ? তারচেয়ে চুপটি করে দুদন্ড মুক্তি সংগ্রামের পংক্তি শুনি।
স্বাধীনতা তুমি বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
কবিতা- 'স্বাধীনতা তুমি'