আচ্ছা, চট করে একটা প্রশ্নের জবাব দিন তো।
ধরুন আপনাকে বলা হল,"তুমি এখন থেকে পুর্নাঙ্গ স্বাধীন।কেউ তোমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা.তোমাকে কোন কিছু বাধ্য করতে পারবেনা,জনগনের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন কিছু করতে কেউ বাধা দিতে পারবেনা।তবে....তুমি কোনভাবেই বাম হাতে লিখতে পারবেনা,ভাত ছাড়া অন্য কিছুই খেতে পারবেনা।
এটাকে আপনি কেমন স্বাধীনতা বলবেন?উহু,এত জলদি উত্তর দিবেনননা।একটু সময় নিয়ে ভাবুন।আমরা এই ফাকে একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই।
ধর্মনিরপেক্ষতার মানেনটা নিশ্চয়ই জানেন।তবুও চলুন আরো একবার এর মানেটা জেনে নেই।
আমাদের দেশীয় মানে দিয়েই শুরু করি।গল্পটা আমার এক শিক্ষকের মুখ থেকে শোনা,সত্য মিথ্যা জানিনা।একবার, আওয়ামীলীগের সাবেক স্পিকার আব্দুল মালেক উকিল এক মাদ্রাসায় গেলেন সফরে।মাদ্রাসার কামেল (মাষ্টার্স) ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের তিনি বুঝালেন "বুখারী শরীফে আছে, লাকুম দিনুকুম ওয়াল ইয়াদীন।অর্থাৎ যার যার ধর্ম তার তার।কেউ কাউকে ধর্ম পালনে বাধ্য করতে পারবেনা"
কোরআনের বানীকে হাদিসের উক্তি বলায় ছাত্রদের তখন হাসি চেপে রাখা দায়।পিছন থেকে হুজুরেরা ঠোটে আঙ্গুল চেপে ইশারা দিচ্ছিলেন"চুপ,একদম চুপ।কেউ হাসবিনা"।
আমরা হরহামেশাই রাজনীতিবীদদের মুখে কোরানের এই আয়াত শুনে বুঝে নেই,ধর্মনিরপেক্ষতার স্বরুপ কি।তবে সহজ করে বলতে গেলে,ধর্মনিরপেক্ষতা হল রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন ধর্মের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা।ধর্মীয় বিধান প্রত্যেকে যার যার পছন্দ অনুযায়ী পালন করবে।রাষ্ট্র বাধ্যও করবেনা,বাধাও দিবেনা।
এবারে মুল প্রসঙ্গে আসি। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে ধর্মনিরপেক্ষ ফ্রান্সে নিকাব দেয়া বোরকা নিষিদ্ধ।বেলজিয়ামের পর এবার সে পথে হাটতে যাচ্ছে আরেক ইউরোপীয় দেশ ইটালী।নিষেধাগ্গা অমান্য করলে গুনতে হবে মোটা অংকের জরিমানা,সেই সাথে জেল।
ফ্রান্সের কর্তাব্যক্তিদের যুক্তি,বোরকা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে।তাছাড়া,অনেক মেয়েকে বোরকা পরতে বাধ্য করা হচ্ছে যা স্বাধীন ব্যক্তিসত্তার উপর আঘাত।
চমৎকার যুক্তি,কি বলেন?তবে একটু আগের ধর্মনিরপেক্ষতার ধারনার সাথে কোন মিল খুজে পাচ্ছেন কি?এটও কি বলতে পারেন,কিভাবে এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে?
স্বাধীন ব্যক্তিসত্তার উপর আঘাত?১৯৪৮ সালে প্রনীত মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক ঘোষনাপত্রের ১৮ ও ১৯ ধারা অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার মানুষের মৌলিক মানবাধিকার।বোরকার উপর নিষেধাগ্গা কি সে মানবাধিকার কে ক্ষুন্ন করেনি?
তাছাড়া, কেউ যদি বোরকা পরতে জোর খাটায়,তবে কোন ব্যক্তি যাতে কাউকে বাধ্য না করতে পারে সে মর্মে আইন করা যেত।তা না করে সরাসরি বোরকাই নিষিদ্ধ হয়ে গেল..এ যেন দেশে সর্দির প্রকোপ,তাই নাকটাই কেটে ফেলা।
পাশ্চাত্যের লোকেরা অনেক দিক দিয়েই আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত।তারা মানবাধিকারের কথা বলেন,মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেন।পাশাপাশি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন,আমরা মুসলমানের কতটা ন্যারো মাইন্ডের।পরামর্শ দেন বলেন আমাদের মনোবৃত্তিকে উদার করতে।তাদের ভিতর এক প্রবল অহংবোধ আছে, মানুষের মৌলিক মানবাধিকার আর স্বাধীনতা তারা নিশ্চিত করতে পেরেছেন বলে।
হুম..একদম শুরুর দিকের করা প্রশ্নটা মনে আছে তো?এবার বলুন তো,এটা কেমন স্বাধীনতা?