খুবই ছোট আর সাধারন একটি ঘটনা।বেশ কিছুদিন আগে বাসে করে আমার ভার্সিটি এমআইএসটি হতে বাসায় ফিরছিলাম।যথাসময়ে বাসের কনট্র্যাক্টর ভাড়া চাইতে এল।আমি ছাত্র হিসেবে সাধারনত অর্ধেক ভাড়া দেই।আমার পাশের সিটে একজন বয়স্ক লোক বসে ছিলেন।তিনি ভাড়া দেওয়ার সময় কিছুটা ইতস্ততঃ করতে লাগলেন।কনট্র্যাক্টরকে বললেন আমার কাছে পুরো ভাড়া নেই।অর্ধেক নেওয়া যায়না ?’’ কিন্তু কনক্ট্র্যাক্টর কি তা আর শুনে ? এক্ষেত্রে তারা সাধারনত যা করে, সেই দুর্ব্যবহার শুরু করল।“ভাড়া নাইতো বাসে চড়তে গেলেন ক্যান ?সামনে নাইম্যা যান ’’ ইত্যাদি ইত্যাদি।শেষে আর না পেরে ওই লোকটি হঠাৎ বললেন ‘বাবা আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা,আমার ভাড়া একটু কম রাখনা ।” এরপর বলা বাহুল্য বাস কনট্র্যাক্টর এর আচরন আরও খারাপ হল।‘ইহ ! ভাড়া নিয়ে বাসে উঠতে পারেনা,আবার মুক্তিযোদ্ধা সাজে !’’ আরও অনেক কিছু বলে গালাগাল শুরু করল।লোকটার অসহায় অবস্থা দেখে সত্যি আমার কষ্ট লাগছিল।আশেপাশের লোকজন চেয়েচেয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করছিল।আরে!বাস কনট্র্যাক্টর না অশিক্ষিত,তৃতীয় শ্রেণীর মানুষ।কিন্তু বাসের সব যাত্রীতো আর নয়? তাদের কি কোন অনুভূতি নেই ?হয়ত আমার মত অনেকেরই খারাপ লাগছিল।কিন্তু তারা কেউ কিছু বলল না।আমি এখানে পরে কি ভূমিকা পালন করেছিলাম তা নাই বললাম।অন্তত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নয়,একজন বয়স্ক লোককে এভাবে অপমানিত হতে দেখলে যে কারোই খারাপ লাগার কথা।আমিও তার ব্যতিক্রম নয়।
সত্যি !কি আজব দেশে বাস করি আমরা ?এ দেশে রাজাকার,দেশদ্রোহীরা বীরদর্পে মাথা উচু করে সসম্মানে(মেকি বা আসল যাই হোক) দেশ শাসন করছে,দেশ ধ্বংস করছে আর দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা এভাবে দরিদ্র জীবন-যাপন করছে আর এভাবে অপমানিত অসম্মানিত হচ্ছে ?
স্বাধীনদেশে,স্বাধীনভাবে আমরা যে চলাচল করতে পারছি তা একমাত্র তাদের জীবনপণ যুদ্ধের কারনেই,না হলে আমাদের এখনও পশ্চিম পাকিস্তানিদের গোলামি আজও করতে হত।শুধুমাত্র মাত্র আমরা যেন স্বাধীন দেশে মাথা উচু করে চলতে পারি,আমাদের মৌলিক অধিকারগুলি পেতে পারি তার জন্য তারা জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে প্রস্তুত ছিলেন।আমরা কি পারিনা তাদের যথাপযুক্ত সম্মান দিতে ?তাদের বর্তমান অসহায়,দরিদ্র অবস্থা কাটাতে ? জাতি, তোমার বিবেকের কাছে আমি এই প্রশ্ন রাখছি ।
যদি উত্তর না মিলে তাহলে আলেকজান্ডার এর সেই বিখ্যাত উক্তিটিই পুনরাবৃত্তি করলাম “সত্যিই সেলুকাস! কি বিচিত্র এই দেশ !!”