সন ১৫৩৫...তখন ভারতের রাজপুত সাম্রাজ্য মেবারের সিংহাসনের কর্ণধার রাণী কর্ণাবতী...গুজরাটের সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর রাজপুত সাম্রাজ্য দখল অভিপ্রায়ে আক্রমণ করেন....কর্ণাবতীর ছেলে বিক্রমাদিত্য আগেই গুজরাটের সম্রাট বাহাদুর শাহের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন...পরাজয় নিশ্চিত জেনে চিতোরগড় দূর্গে বন্দী রাণী কর্ণাবতী পার্শ্ববর্তী প্রভাবশালী রাজা-বাদশাহদের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন..
বাদশা হূমায়ুন তখন মুঘল সাম্রাজ্যের অধিপতি...তার কাছেও সাহায্য চেয়ে রাণী কর্ণাবতী আগ্রাতে পত্র পাঠান...তিনি হূমায়ুনকে ভাই বলে সংবোধন করেন এবং 'রাখি বন্ধন' ও পাঠান....বাদশাহ হূমায়ুন তখন বাংলাকে শেরশাহের দখল থেকে মুক্ত করতে রওনা হচ্ছিলেন...বাংলা উদ্ধারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সৈন্য-সামন্ত নিয়ে তিনি চিতোরগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন দূর্গে বন্দী রাজপুতদের রক্ষা করতে...কিন্তু তার পৌছতে অনেক দেরি হয়ে যায়...এছাড়াও বাহাদুর শাহ সম্রাট হূমায়ুনকে নানা ভাবে বিভ্রান্ত করেন...বাহাদুর শাহের সৈন্যদের হাতে নিগৃহিত ও আত্নসম্মান রক্ষার্থে রাণী কর্ণাবতী ১৩,০০০ রাজপুত রমণী সহ আগুনে ঝাঁপিয়ে 'জওহর'/ 'সম্মান রক্ষার্থে আত্নহত্যা' করেন...সেদিন তারিখ ছিলো ৮ মার্চ,১৫৩৫...চিতোরগড় দূর্গে ঘটা তিনটি 'জওহর' এর মধ্যে এটি ছিলো দ্বিতীয় 'জওহর'...১৩০৩ সালে আলাউদ্দীন খিলজীর মেবার আক্রমণ করেন ঠিকই...কিন্তু সেই আক্রমণে রাণী পদ্মাবতীর অস্তিত্ব কিংবা তার 'জওহর' এর ঘটনা ঐতিহাসিক ভাবে কোন শক্তিশালী প্রমাণে প্রমাণিত নয়...সে হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে এটি চিতোরগড় দূর্গের প্রথম 'জওহর' এর ঘটনা...
এরপর অবশ্য বাদশা হূমায়ুন, বাহাদুর শাহ কেও শান্তিতে থাকতে দেননি...পুরো ভারত বর্ষ জুড়ে বাহাদুর শাহকে ধাওয়া করেছিলেন...পরিশেষে ১৫৩৫ সালেই মন্ডু সাম্রাজ্য দখল করে হূমায়ুন রাণী কর্ণাবতীর প্রতিশোধ নেন...
রাজ্য,রাজত্ব দখল,বেদখল হয়...সম্রাট,সিংহাসন ক্ষনে ক্ষনে বদল হয়...কিন্তু বাদশাহ হূমায়ুন ও রাণী কর্ণাবতীর হিন্দু-মুসলিম ভ্রাতৃ-ভগ্নী সুলভ এই 'রাখি বন্ধন' ভারতে এখনো লোকগাথা হয়ে আছে...
তথ্যসুত্র:- উইকিপিডিয়া, 'বাদশাহ নামদার'- হূমায়ুন আহমেদ
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৮ রাত ৯:২৮