"শিক্ষা" একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার কিন্তু সেই শিক্ষার মানটা কতটুকু পর্যন্ত মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে থাকে তা স্পষ্ট নয়।যদি এমন হয় যে, হাইস্কুল বা প্রাইমারী পর্যন্ত তাহলে আমার কিছু বলার নেই আর যদি বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তাহলে আমি কিছু বলতে চাই।এই মৌলিক অধিকার আদায়ে কি আমাদের নিম্নবিত্তগরীব শ্রেণী পিছিয়ে পরছেনা বা আমাদের সিস্টেমগুলো তাঁদের পিছিয়ে পড়তে বাধ্য করছেনা? এইচ এস সি তে আমরা এখন ক্রিয়েটিভ দিয়েছি,আমি বিশ্বাস করি এই ক্রিয়েটিভ সলভ করার জন্য আমাদের মন্ত্রী মহোদয় পড়াশুনা করলে ওনাকেও স্যারদের বাসায় বাসায় যেতে হত।বাসায় গিয়ে গিয়ে পড়লেও প্রতি সাবজেক্ট ১০০০ টাকা।প্রতিমাসে ৪০০০/৫০০০ টাকা কিভাবে সম্ভব নিম্নবিত্তের পক্ষ্যে একজনের পিছেই?? তারপর ভর্তি পরীক্ষার সময় সাধারণত মধ্যবিত্ত,নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত এই তিনটি শ্রেণিকেই দেখা যায় পুরো দেশ ঘুরেঘুরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা দিতে।এদের একটাই লক্ষ্য থাকে যে করেই হোক একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকতে হবে কারন এরা না চায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জটের অভিশাপ নিতে না পারে/কষ্টসাধ্য হয় প্রাইভেটের মোটা অংকের টিউশন ফি গুনতে।উচ্চবিত্তরা সাধারণত শুধু পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই পরীক্ষা দিয়ে থাকেন চান্স না হলে প্রাইভেটে পছন্দের সাবজেক্টে ভর্তি হয়ে যায়।যেই ছেলেটা এবার ১০টি ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে তাকে গুনতে হয়েছে কমপক্ষে ৫০০০ টাকা এবং তার যাতায়াত ও খাবার জন্য(ধরে নেন সে রাস্তায় বা মসজিদে থাকবে) আরও গুনতে হবে সর্বনিম্ন ১৫০০০ টাকা তবে খরচটা দ্বিগুণ হয়ে যায় একটা মেয়ের জন্য।এর সাথে আমরা যতোই চেচাই কোচিং উঠিয়ে দিবো কিন্তু প্রত্যেকটা ছাত্রকেই এখন ভর্তি কোচিং এর জন্য ১৫০০০টাকার মত গুনতে হয়।এই ৩৫০০০ টাকার মত গুনতে একটা নিম্নবিত্ত/নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারকে কতটা কষ্ট পেতে হয় তা শুধু ঐসব পরিবারের সদস্যরাই বোঝে একবার হলেও হয়তো বাবা বিড়বিড় করে বলেন কি ভুলটাই না তিনি করেছেন সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করতে চেয়ে ।সমস্যা আরও আছে আজ ধরুন রাজশাহীতে পরীক্ষা কাল আবার আমাদের সিলেটে! কি এক অনিশ্চয়তা আর ভয় নিয়ে এই ছেলেমেয়েদের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে হয় তা বোঝানো যাবেনা,যেই ছেলেটা আগে একা কোথাও যায়নি সে আজ এখানে তো কাল ওখানে যাচ্ছে তাঁর জন্য তাঁর বাবামায়ের যে ভয় আর দুশ্চিন্তা তা আমরা বুঝবোনা।২০১২ সালেতো একটা ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাই যায় সাস্টে পরীক্ষা দিতে এসে! আমরা কি পারিনা এই প্রত্যেকটা পরীক্ষার্থী ও তাঁর পরিবারকে এই দুশ্চিন্তা ও আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে ? চাইলেই আমরা পারি মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষার মত করে একটা পরীক্ষা নিয়ে ভার্সিটিগুলোর মানদণ্ড অনুযায়ী মেধাক্রম থেকে ভর্তি করতে।কত সুন্দর একটা সিস্টেম! এই সিস্টেমটার নামই হল "সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা"। এই দাবি নিয়েই জাফর ইকবাল স্যার গত কয়েকবছর ধরে কাজ করছেন তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি কারন আমরা হতে দেইনি। কেউ বিরোধিতা করেছে স্বার্থের জন্য কেউ বিরোধিতা করেছে না বুঝেই আবার কেউ বিরোধিতা করেছে ঈমানি দায়িত্ব ভেবে। আফসোস এই দেশে খারাপ কাজের প্রতিবাদ করার লোক না পাওয়া গেলেও ভালো কাজ বন্ধের জন্য লোকের অভাব হয়না।এরপর এখন বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১২০০০ এর উপরে লাগে ভর্তি হতে। শিক্ষা কি এখন ধরাছোঁয়ার বাইরের কোন বিলাসী পন্য হয়ে যাচ্ছেনা গরিবদের জন্য?
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৯