somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেণু ও আমি

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন পর ভার্সিটির এক বন্ধুর সাথে দেখা,মধ্যে প্রায় তিন বছর চলে গেছে। কাছের বন্ধুদের সাথে অনেকদিন পর দেখা হলে যা হয় আর কি,রাস্তার পাশের টঙে বসে চা আর সিগারেটের ধুয়োর সাথে পুরনো দিনের স্মৃতি-গল্প সব একাকার হয়ে যায়। আমি যতই এড়িয়ে যেতে চাই সে ততই চেপে বসে।কেন বন্ধুদের সাথে কোন যোগাযোগ রাখিনি,কেন সবাইকে এড়িয়ে চলি,কেন ফেসবুক আইডিটাও ডিএকটিভেট করে রেখেছি ইত্যাদি ইত্যাদি এমন হাজার প্রশ্ন তাঁর।আমি উঠে যেতে চাইলাম সে জোরাজুরি করল কিছুটা,কিছুটা অভিমানও দেখাল তবুও চলে আসলাম। জানি কাজটা ঠিক হয়নি,জানি এতটা অভদ্রতা দেখানো ঠিক হয় নি।পাবলিক বাসে উঠে পরলাম,কোনরকমে একটা সিটও পেলাম।নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হল,এত ভিড়ের মধ্যে একটা সিট পাওয়া নিশ্চয়ই অনেক বর কিছু আমার কাছে।যথারীতি মগবাজারের জ্যামে আটকা পড়ল বাস,এই ফ্লাইওভারটা হতে আর কত দিন লাগবে আল্লাহ জানেন।এই শহরে কোন কিছুই মনে হয় খুব সহজে শেষ হয় না।আস্তে আস্তে ভার্সিটি লাইফের সবকিছু মনে পড়তে লাগল।আমি,সামি আর রাজ ছিলাম জিগরি দোস্ত্+ক্লাসমেট। আমাদের সবকিছুই ছিল একসাথে।একে অন্যকে ছাড়া ক্লাস করতাম না খেতে যেতাম না। সবাই সবার আত্নার খবর রাখতাম,কত রাত এক সাথে ক্যম্পাসে আড্ডা দিতে দিতে সূর্য ওঠা দেখেছি তাঁর হিসেব নেই।ভালোসময় খুব দ্রুতই শেষ হতে থাকে, অনার্স শেষ হল। সামি স্কলরশিপ নিয়ে কানাডা চলে গেল এমএস করতে আর আমারা দুজন ক্যম্পাসেই রয়ে গেলাম এমএস করতে।এরকিছুদিন পরেই রাজ এর সাথে সুমির সম্পর্ক হল।সুমি ছিল আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে ধনী বাবার মেয়ে।আমি একা হয়ে গেলাম,একাকীত্বতা ভর করল ব্যপক ভাবে।পড়াশুনায় মনোযোগ দিলাম নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করলাম।সবকিছুই ভালো চলছিল যতদিন পর্যন্ত না রাজের বড় বোনের বিয়েতে রেণুকে দেখলাম।এত ভিড়ের মাঝেও আলাদা করা যাচ্ছিলো ওকে,লম্বা রোগা চেহারাতে কি যেন এক মায়া ছিল।পরে রাজকে জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছিলাম,ওরই খালাতো বোন,ঢাকা হোম ইকোনমিক্স কলেজে পড়ে।পড়ে রাজই একদিন পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল,তারপর একটু একটু করে জানাশুনা শুরু। এভাবে একটা সময়ে মোবাইল নম্বর বিনিময় ,রাত যেগে কথা বলা ,দুজনকে জানতে শেখা।জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টা ছিল তখন,দুজনেই ক্লাস শেষ করে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানগুলোর সামনে এসে পড়তাম তারপর নীলক্ষেতের তেহারি খেয়ে রিকশায় করে পুরো ঢকার শহর। কখনো আহসান মঞ্জিল কখনো লাল বাগের কিল্লা কখনোবা বলাকাতে কাঁধে কাঁধ রেখে মুভি দেখা।রেণু বড্ড ভালোবাসতো আমায়,আমিও হয়তো অনেক বাসতাম হয়তোবা ওর চেয়ে বেশী।কতদিন যে বাসায় রান্না করা ভালো খাবারটা আমার জন্য টিফিন বক্সে করে নিয়ে এসেছে তাঁর ইয়াত্তা নাই। যতই ফাজলামি করে বলতাম ,এগুলো দেখলে তোমার বান্ধবীরা আগের দিনের সাবানা বলবে তোমাকে।ও বলতো," বলুক,আমি তোমাকে পুরনো দিনের স্টাইলেই ভালবাসতে চাই"।সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল,আমার মাস্টার্স শেষ চাকুরীর জন্য চেষ্টা করছি দু একটা ব্যংকে ইন্টার্ভিউও দিয়েছি।একদিন ও বলল,বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি ৬ মাস সময় চাইলাম ও কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে হাতটা ধরে রইল আর বিড়বিড় করে বলল কখনো যেন আমি এই হাত না ছাড়ি।এরপরে যা হয়েছে তা দুঃস্বপ্ন দেখার মত,দুদিন ওর মোবাইল অফ।ফেসবুকে ঢুকে দেখি কানাডা ফেরত সামি নতুন ছবি দিয়েছে।ছবির ক্যপশনে "আমাদের জন্য দোয়া করবেন" আর পাশে বসা মেয়েটা আমার রেণু। "খিলগাঁও কারা নামবেন, নামেন" হেল্পারের কণ্ঠ শুনে তন্দ্রা ভেঙ্গে গেল ,নেমে পরলাম আবার চলতে শুরু করলাম।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×