অনেকদিন পর ভার্সিটির এক বন্ধুর সাথে দেখা,মধ্যে প্রায় তিন বছর চলে গেছে। কাছের বন্ধুদের সাথে অনেকদিন পর দেখা হলে যা হয় আর কি,রাস্তার পাশের টঙে বসে চা আর সিগারেটের ধুয়োর সাথে পুরনো দিনের স্মৃতি-গল্প সব একাকার হয়ে যায়। আমি যতই এড়িয়ে যেতে চাই সে ততই চেপে বসে।কেন বন্ধুদের সাথে কোন যোগাযোগ রাখিনি,কেন সবাইকে এড়িয়ে চলি,কেন ফেসবুক আইডিটাও ডিএকটিভেট করে রেখেছি ইত্যাদি ইত্যাদি এমন হাজার প্রশ্ন তাঁর।আমি উঠে যেতে চাইলাম সে জোরাজুরি করল কিছুটা,কিছুটা অভিমানও দেখাল তবুও চলে আসলাম। জানি কাজটা ঠিক হয়নি,জানি এতটা অভদ্রতা দেখানো ঠিক হয় নি।পাবলিক বাসে উঠে পরলাম,কোনরকমে একটা সিটও পেলাম।নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হল,এত ভিড়ের মধ্যে একটা সিট পাওয়া নিশ্চয়ই অনেক বর কিছু আমার কাছে।যথারীতি মগবাজারের জ্যামে আটকা পড়ল বাস,এই ফ্লাইওভারটা হতে আর কত দিন লাগবে আল্লাহ জানেন।এই শহরে কোন কিছুই মনে হয় খুব সহজে শেষ হয় না।আস্তে আস্তে ভার্সিটি লাইফের সবকিছু মনে পড়তে লাগল।আমি,সামি আর রাজ ছিলাম জিগরি দোস্ত্+ক্লাসমেট। আমাদের সবকিছুই ছিল একসাথে।একে অন্যকে ছাড়া ক্লাস করতাম না খেতে যেতাম না। সবাই সবার আত্নার খবর রাখতাম,কত রাত এক সাথে ক্যম্পাসে আড্ডা দিতে দিতে সূর্য ওঠা দেখেছি তাঁর হিসেব নেই।ভালোসময় খুব দ্রুতই শেষ হতে থাকে, অনার্স শেষ হল। সামি স্কলরশিপ নিয়ে কানাডা চলে গেল এমএস করতে আর আমারা দুজন ক্যম্পাসেই রয়ে গেলাম এমএস করতে।এরকিছুদিন পরেই রাজ এর সাথে সুমির সম্পর্ক হল।সুমি ছিল আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে ধনী বাবার মেয়ে।আমি একা হয়ে গেলাম,একাকীত্বতা ভর করল ব্যপক ভাবে।পড়াশুনায় মনোযোগ দিলাম নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করলাম।সবকিছুই ভালো চলছিল যতদিন পর্যন্ত না রাজের বড় বোনের বিয়েতে রেণুকে দেখলাম।এত ভিড়ের মাঝেও আলাদা করা যাচ্ছিলো ওকে,লম্বা রোগা চেহারাতে কি যেন এক মায়া ছিল।পরে রাজকে জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছিলাম,ওরই খালাতো বোন,ঢাকা হোম ইকোনমিক্স কলেজে পড়ে।পড়ে রাজই একদিন পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল,তারপর একটু একটু করে জানাশুনা শুরু। এভাবে একটা সময়ে মোবাইল নম্বর বিনিময় ,রাত যেগে কথা বলা ,দুজনকে জানতে শেখা।জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টা ছিল তখন,দুজনেই ক্লাস শেষ করে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানগুলোর সামনে এসে পড়তাম তারপর নীলক্ষেতের তেহারি খেয়ে রিকশায় করে পুরো ঢকার শহর। কখনো আহসান মঞ্জিল কখনো লাল বাগের কিল্লা কখনোবা বলাকাতে কাঁধে কাঁধ রেখে মুভি দেখা।রেণু বড্ড ভালোবাসতো আমায়,আমিও হয়তো অনেক বাসতাম হয়তোবা ওর চেয়ে বেশী।কতদিন যে বাসায় রান্না করা ভালো খাবারটা আমার জন্য টিফিন বক্সে করে নিয়ে এসেছে তাঁর ইয়াত্তা নাই। যতই ফাজলামি করে বলতাম ,এগুলো দেখলে তোমার বান্ধবীরা আগের দিনের সাবানা বলবে তোমাকে।ও বলতো," বলুক,আমি তোমাকে পুরনো দিনের স্টাইলেই ভালবাসতে চাই"।সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল,আমার মাস্টার্স শেষ চাকুরীর জন্য চেষ্টা করছি দু একটা ব্যংকে ইন্টার্ভিউও দিয়েছি।একদিন ও বলল,বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি ৬ মাস সময় চাইলাম ও কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে হাতটা ধরে রইল আর বিড়বিড় করে বলল কখনো যেন আমি এই হাত না ছাড়ি।এরপরে যা হয়েছে তা দুঃস্বপ্ন দেখার মত,দুদিন ওর মোবাইল অফ।ফেসবুকে ঢুকে দেখি কানাডা ফেরত সামি নতুন ছবি দিয়েছে।ছবির ক্যপশনে "আমাদের জন্য দোয়া করবেন" আর পাশে বসা মেয়েটা আমার রেণু। "খিলগাঁও কারা নামবেন, নামেন" হেল্পারের কণ্ঠ শুনে তন্দ্রা ভেঙ্গে গেল ,নেমে পরলাম আবার চলতে শুরু করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১