somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাম দিয়েছি তার অবনীতা

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শেষমেষ তার নাম রাখলাম আমি 'ষোড়শী'। নামটা এখন আমার কাছে বেখাপ্পা লাগছে! অষ্টাদশী একটা মেয়ের নাম ষোড়শী রাখাটা ঠিক হয়নি। তবে এ নিয়ে সে কখনো মন খারাপ করেনি বা আমার সাথে কোনোরূপ বিবাদ বা বিতর্কে জড়িয়েছে বলে আমার মনে পড়েনা।

ষোড়শীর সাথে প্রথম দেখা, পরিচয়, পরিণয় কিছুই আমার স্পষ্ট মনে নেই। শুধু এটুক মনে আছে মাঝের কিছুটা সময় আমরা হাওয়ায় উড়েছি। বিষণ্ণ কিছু বিকেল আর মন খারাপের সন্ধ্যাবেলা ভাগাভাগি করেছি দুজন মিলে। কথা নিতে গিয়ে বেখেয়ালে কথা দিয়ে ফেলেছি 'ভাল থাকব'। অথচ কি আশ্চর্য! আমাদের কতটুকু ভাল থাকা হয়েছে বা হয়নি তাও আমার খেয়াল নেই!

গত বর্ষার আগের বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে ষোড়শীর সাথে আমার শেষ কথা হয়। আধা বর্ষার সবটা জল চোখে মুখে ধারণ করে শেষ দুইটা লাইনে সে বলল, 'আমি চলে যাচ্ছি, তুমি মন খারাপ করোনা। নিজের প্রতি খেয়াল রেখো, ভাল থেকো।"

আরো কিছুদিন থেকে যাওয়ার জন্যে তাকে কোনোরূপ মিনতি বা অনুগ্রহ করেছিলাম কিনা এই মুহুর্তে আমি মনে করতে পারছিনা। সে চলে যাওয়াতে আমার কতটুকু মন খারাপ হয়েছিল বা আদো হয়েছিল কিনা তাও মনে নেই।

এখন আমার খুব আপশা ভাবে মনে পড়ছে গত পরশু/কাল অথবা আজ সে আমাকে ফোন দেয়। আগের মতই দুই লাইনে বলল, "আমি আসছি, দরজা খোলা রেখো।"

ব্যাপারটা ঐটুকুতেই শেষ হতে পারত! কিন্তু কেউ একজন চাইছে, খুব করে চাইছে আরো কিছুদূর যাক। আমার রুমের দরজায় মৃদু শব্দে দুবার টোকা দিল কেউ। ঘোরের মধ্যে অবচেতন মনে আমি নিশ্চিত বুঝতে পারলাম ষোড়শী এসেছে, ষোড়শীরই তো আসার কথা। মনের মধ্যে কম্পন জাগানো শিহরণ অনুভব করলাম, অনেকদিনের জমিয়ে রাখা কতশত অভিমান গলে গিয়ে পানি হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই। ভাবলাম এও কি সম্ভব!! তড়িঘড়ি দরজা খুলতে যাব এসময় আগের চেয়ে একটু জোরে টোকা পড়ল। এবার আর শিহরণ নয় চরম পর্যায়ে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল আমার। ঘোর কেটে গিয়ে বাস্তবতা অনুভব করলাম আমি।

'মেয়েটার নাম ষোড়শী রাখা থেকে শুরু করে প্রথমবার দরজায় টোকা পড়া আর মনে শিহরণ জাগা পর্যন্ত সময়টুকুতে আক্ষরিক অর্থেই আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। এখন অল্প কিছুটা সময় পাওয়া গেলে ষোড়শী নামের মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে পারতাম। মেয়েটা কে, তার সাথে কিভাবে পরিচয়, পরিণয় ইত্যাদি বিষয় আসয় নিয়ে চিন্তা করা দরকার। কিন্তু তৃতীয় বারের বার বাইরের মানুষটি দরজা ভেঙে ফেলার প্রস্তুতি নিয়েছে বুঝতে পেরে আর দেরী করলাম না।'

দরজা খুলে দেখি বাইরে বাসিমুখে 'মনে সুখ নেই' টাইপের হাসি নিয়ে সন্দীপ দা দাঁড়িয়ে আছে। সন্দীপ দা আমার পাশের রুমে থাকে। জীবনে যত বেরসিক মানুষ দেখেছি বাজি ধরে বলতে পারি সবাইকে এক এক করে হার মানিয়ে দেবে আমার এই সন্দীপ দা। বেরসিক মানুষরা ঘুম পাতলা স্বভাবের হয়। সন্দীপ দাও তাই। প্রতিদিন আযান দেয়া ভোরে ঘুম থেকে উঠে জানলার কাচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সকাল হওয়া দেখে সে। সকাল হলেই আমার রুমের দরজায় নক করে আমাকে জাগিয়ে বলবে, "চল্ নাস্তা খেতে যাব, খিদা লাগছে খুব।" আমি বলি, "দাদা এইভাবে প্রতিদিন সকাল সকাল একটা মানুষের ঘুম ভাঙানো কি ঠিক?" সে আর কোনো এক্সকিউজ দেখায় না। শুধু বলে 'সরি'।

অনেকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু এই মানুষটার সাথে আমি রাগ করতে পারিনা। এই একটা মানুষের সাথে আমাকে রাগ করা মানায় না। তাকে দেখলেই কেবল মনে হয় সে একটা মাল। একপিস একটা মাল সে!

বাইরে থেকে নাস্তা খেয়ে এসে মেয়েটাকে আমি পুরোপুরি স্মরণ করতে পারলাম। তার জন্যে সত্যি একটা নাম রেখেছিলাম আমি। ষোড়শী নয়, তার নাম দিয়েছিলাম আমি 'অবনীতা'।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩১
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×