somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি

০৯ ই জানুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রূপ-অরূপ
সাজজাদ হোসাইন খান
পাঠ্যপুস্তকে বিকৃতি গ্রহণযোগ্য নয়



অষ্টমশ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক থেকে কবি ফররুখ আহমদকে বাদ দেয়া হয়েছে। সে পুস্তকে ‘ধানের দেশ' শিরোনামের একটি কবিতা সংকলিত ছিল। বাদপড়ার কারণ ‘ধান' শব্দটি, এই ধান শব্দটি নাকি বোর্ড কর্তৃক নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের মনোপুত হয়নি। এরকম ইঙ্গিতই দিয়েছে পত্র-পত্রিকাগুলো। স্মরণযোগ্য পাঠ্যপুস্তকগুলোতে নাকি ‘বিকৃত' এবং ‘মিথ্যা' ইতিহাস রয়েছে, একটি চিহ্নিত শ্রেণীর এমন দাবির প্রেক্ষিতে রিভিউ কমিটি গঠিত হয়েছিল। উক্ত কমিটির সদস্যদের মহান কীর্তি বর্তমানে পাঠকদের হস্তগত হয়েছে। তাই এই কীর্তিনামা পত্রিকায় প্রকাশ পাচ্ছে ক'দিন যাবত। সেখান থেকেই জানা গেল খবরটি। ধানের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশবাসীর প্রধান ফসল ধান। এই ধান থেকেই চাল আহরণ করে আমরা আমাদের খাদ্যতালিকার শীর্ষে স্খাপন করি। তাই কবিদের ধান নিয়ে কাব্য করা স্বাভাবিক। তাছাড়া ফররুখ আহমদ বাংলাসাহিত্যের বড় কবিদের একজন। যে জন্য ধান তাঁর কাব্য চিন্তা থেকে বাদ পড়েনি। যদিও বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক থেকে সযত্নে সড়িয়ে দেওয়ায় একটি চমৎকার কবিতা থেকে বঞ্চিত হলো বালক-বালিকাগণ। এই কবিতাটিতে প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশরকমের ধানের নাম ছিল। যার অধিকাংশই বর্তমানে বিলুপ্তির তালিকায়। স্কুলপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা সেই সুগযুক্ত ধানের সাথে পরিচিত না থাকলেও নিদেনপক্ষে হারিয়ে যাওয়া নামগুলোর সাথে পরিচিত হতে পারত। শিক্ষা বিভাগের অপরিণামদর্শিতার কারণে সেটিও সম্ভব হলো না।

ধান শব্দটির অপরাধ এটি নাকি বাংলাদেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতীক অর্থাৎ ‘ধানের শীষ'। আবিষ্কার বটে। আবিষ্কারকদের ধন্যবাদ দিতেই হয়, তাদের মেধার প্রাচুর্য আর প্রাবল্য দেখে। শিক্ষাবোর্ডের এমন নীতি অনুসরণ করলে তো শেখ ফজলল করিমের ‘গাঁয়ের ডাক' কবিতাটির ওপরও শনির দশা। কবিতাটির শুরুর স্তবকটি এরকম ‘ধানের ক্ষেতে বাতাস নেচে যায় দামাল ছেলের মত। ডাক দে বলে আয়রে তোরা আয় ডাকব তোদের কত।' আমাদের সময় বোর্ডের বাংলা পাঠ্যবইয়ে কবিতাটি সংকলিত ছিল। এই কবিতাটিও কি বাদ পড়েছে? ডিএল রায়ের বিখ্যাত গান ‘ধানে ধন্যে পুে ভরা/আমাদেরই বসুরা'র অবস্খা তাহলে কি দাঁড়ায়! উল্লেখিত নীতিতে তা প্রচারযোগ্যই নয় গানটি, কারণ শুরুতেই ধান শব্দ। শিক্ষাবিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে জিজ্ঞাস্য তারা যাদের নিয়ে ঘরসংসার করেন, যাদের পরামর্শে পথ চলেন, ইদানীং তাদের হুকুমে বা পরামর্শে পাঠ্যবই বা পাঠ্যতালিকা থেকে কি ধান বিষয়ক রচনাটিও বাতিল করবেন? এরা যেভাবে আগে বাড়ছেন কোন দিন না ঘোষণা করে বসেন এখন থেকে বাংলাদেশে আর ধান চাষ করা যাবে না, ভুট্টা চাষ করতে হবে। এমন ঘোষণাকেই হয়তো মান্য করতে হবে আমাদেরকে। এখন যেমন মান্য করছি শিক্ষা বিভাগের অযাচিত অহেতুক মাতব্বরিকে। বাংলা একাডেমীর একটি শিশুপত্রিকার নাম ধানশালিকের দেশে, বাংলা একাডেমীর কাঁধে যে ধানের বোঝা সে বোঝা ফেলে দিলেতো থাকে শালিকের দেশে। একাডেমী কি খন্ডিত নামটি গ্রহণ করবে? কারণ, আমাদের শিক্ষা বিভাগতো ধানের উচ্ছেদ চাচ্ছে। বলাবাহুল্য ধানশালিকের দেশে নামটি পছন্দ করা হয়েছিল সত্তর দশকের শুরুর দিকে। কবি জসীমউদ্দীনেরও একটি কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম ‘ধান খেত'। এখানে ধান বাদ দিলে তো থাকে শুধু ক্ষেত। জসীমউদ্দীন জীবিত থাকলে হয়তো শিক্ষা বিভাগের বিশেষজ্ঞরা প্রতিবাদ জানিয়ে নোটিশ পাঠাতেন। ধানক্ষেতের পরিবর্তে শিমক্ষেত রাখার পরামর্শ দিয়ে বসাও বিচিত্র ছিল না। কারণ কথিত বিশেষজ্ঞদের মস্তিষ্কের উর্বরতা দেখে তো তেমনটাই ধারণা হচ্ছে দেশবাসীর। গ্রাম-বাংলায় একটি রীতি চালু হয়ে আসছে নতুন বধূকে বরণ করে নেয় ধান দুর্বা দিয়ে। এখানেও ধানের বদলে অন্যকোন ফসল ব্যবহার করা যায় কি না শিক্ষাবিভাগের কথিত বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে কী ভাবছেন সে খবরটি জানতেও উদগ্রীব দেশবাসী।

ইতিমধ্যে কমিটি নাকি একশ চার জায়গায় পাঠ্যবই পরিবর্তন-পরিবর্ধন-সংযোজন এবং সংশোধন করেছেন। পত্রিকায় তেমনটাই ছাপা হয়েছে। ভুলের সংশোধন হতেই পারে। কিন্তু সংশোধনের নামে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সংযোজন করাটা কতটা সমীচীন! এ পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, তাতে তো মনে হয় পাঠ্যবইয়ে বিকৃতি কমার পরিবর্তে বৃদ্ধির পাল্লাটাই ভারি হয়েছে। এ জন্যে শিক্ষাবিভাগের বিশেষজ্ঞ কমিটির সস্যদের একদেশদর্শী দৃষ্টিকোণ এবং দলীয় মনোভঙ্গিই দায়ী বলে অনেকের ধারণা। একটি বিশেষ দলের ভাব-ভাবনার প্রতিফলন যেন ঘটানো হয়েছে এই পরিবর্তন-পরিমার্জনের মাধ্যমে। কমিটির সদস্যদের কি সে রকম করেই বাছাই করা হয়েছিল? বোর্ড কর্তৃক সরবরাহকৃত বই পাঠ করবে আমাদের সন্তানরা। তারা আগামী দিনের নাগরিক। জাতির ভবিষ্যৎ। কোমলমতি বালক-বালিকারা ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য শিখবে এটি কেমন করে মেনে নেয়া যায়? শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কি কোনই দায়-দায়িত্ব নেই এ ব্যাপারে! বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছেন, কোন কোন বিষয়ে তাদের আপত্তি নাকি কমিটির সদস্যরা গ্রাহ্য করেনি। চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে জিজ্ঞাস্য তিনি কি সংবাদটি দেশবাসীর দৃষ্টিতে এনেছিলেন? আনেননি। তাই নতুন পাঠ্যবইয়ের ভুল বিকৃতির দায়-দায়িত্ব অবশ্যই তাকেও বহন করতে হবে বৈকি। এখন বলা হচ্ছে শিক্ষকরা নাকি ক্লাসে ভুলটি শুদ্ধ করে পড়াবেন। যারা ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তির জন্ম দিল তাদের ব্যাপারে শীতল থেকে বিড়ম্বনায় ফেলা হচ্ছে শিক্ষক আর ছাত্রদেরকে। বিকৃতি এবং বিভ্রান্তির ফসল বোর্ডের পাঠ্যবই নতুন করে সংশোধনের আগে বাজারে ছাড়া ঠিক হবে না, উচিতও নয়। প্রশ্ন আসতে পারে নতুন করে বই ছাপতে বিপুল অর্থের দরকার। এ অর্থ কে দেবে? দেবে তো জনগণ নামক হাজী মহসীন বা গৌরী সেন। এমনটাই তো হয়ে আসছে বরাবর। যদি ঔচিত্যকে সামনে আনতে হয় তবে পাঠ্যবইয়ের তথাকথিত সংশোধনের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদের কাছ থেকেই সে অর্থ আদায় করতে হয়। শিক্ষামন্ত্রণালয়ও এর সাথে যুক্ত হয়ে যান অবধারিতভাবে।

দেশের শিক্ষাব্যবস্খা থাকবে সবরকম দলীয় এবং ক্ষুদ্রতা থেকে মুক্ত। কিন্তু এই নিচতা আর মূর্খতা আমাদের শিক্ষায়ও তার কালো হাত প্রসারিত করছে। বর্তমানের নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের আমলে পাঠ্যপুস্তকে বিশেষ দলীয় মতাদর্শের প্রতিফলন সত্যিই বেদনাদায়ক অপ্রত্যাশিত। দেশবাসী এর প্রতিকার অবশ্যই চাইতে পারে।



ইনসেট

ইতিমধ্যে কমিটি নাকি একশ চার জায়গায় পাঠ্যবই পরিবর্তন-পরিবর্ধন-সংযোজন এবং সংশোধন করেছেন। পত্রিকায় তেমনটাই ছাপা হয়েছে। ভুলের সংশোধন হতেই পারে। কিন্তু সংশোধনের নামে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সংযোজন করাটা কতটা সমীচীন! এ পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, তাতে তো মনে হয় পাঠ্যবইয়ে বিকৃতি কমার পরিবর্তে বৃদ্ধির পাল্লাটাই ভারি হয়েছে। এ জন্যে শিক্ষাবিভাগের বিশেষজ্ঞ কমিটির সস্যদের একদেশদর্শী দৃষ্টিকোণ এবং দলীয় মনোভঙ্গিই দায়ী বলে অনেকের ধারণা। একটি বিশেষ দলের ভাব-ভাবনার প্রতিফলন যেন ঘটানো হয়েছে এই পরিবর্তন-পরিমার্জনের মাধ্যমে। কমিটির সদস্যদের কি সে রকম করেই বাছাই করা হয়েছিল? বোর্ড কর্তৃক সরবরাহকৃত বই পাঠ করবে আমাদের সন্তানরা। তারা আগামী দিনের নাগরিক। জাতির ভবিষ্যৎ। কোমলমতি বালক-বালিকারা ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য শিখবে এটি কেমন করে মেনে নেয়া যায়?

৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×