ঢাকায় সাম্প্রতিক এক ব্যবসা সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস কথা বলতে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেলেন। তাঁর গলায় ছিল কষ্টের ভার। তিনি ফিরে গিয়েছিলেন ১৯৭৪ সালের সেই দুর্ভিক্ষের সময়ে—যখন এই দেশটা সদ্য স্বাধীন হয়েও সবচেয়ে অমানবিক এক সময় পার করছিল।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল বাংলাদেশের জন্য এক দুঃস্বপ্ন। কিন্তু এই দুর্ভিক্ষের কারণ ছিল না খাবারের অভাব—বরং ছিল ভুল সিদ্ধান্ত, মানুষকে না শোনা, আর ক্ষমতার অহংকার। শহরে রেশন চালু হলেও গ্রামে কেউ খোঁজ নেয়নি। বাজারে খাদ্য ছিল, কিন্তু দামে গরিবের নাগালের বাইরে। মিডিয়ার কণ্ঠ রুদ্ধ ছিল, আর যারা কষ্টে ছিল, তাদের কথায় কেউ কান দেয়নি।
নাওমি হোসেনের বই The Aid Lab এই দুর্ভিক্ষ নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছে। বইটি বলছে, দুর্ভিক্ষ আসলে একটা রাজনৈতিক ব্যর্থতা। শুধু দান-খয়রাত বা বিদেশি সাহায্য দিয়ে সমস্যা মেটে না। যদি সরকার জনগণের কথা না শোনে, তাহলে চাইলেও কিছু বদলানো যায় না।
তবে একটা ভালো দিকও আছে। এই দুর্ভিক্ষের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করেছে। পরে সরকার, এনজিও আর দাতা সংস্থা মিলে অনেক ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে যাতে আর এমন ঘটনা না ঘটে। খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা, এবং স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ—এই তিনটি জিনিস বাংলাদেশে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে।
ড. ইউনুসের বক্তৃতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, উন্নয়নের গল্প তখনই সত্যি হয়, যখন সেটা মানুষের জন্য হয়। শুধু রাস্তা-ঘাট বা বড় বড় প্রকল্প দিয়ে নয়—মানুষের কণ্ঠ শোনা, তাদের সমস্যা বোঝা এবং সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াই উন্নয়নের আসল কাজ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




