somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের একটি জাতীয় শপথ থাকা জরুরি

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি ভাবে নির্ধারিত কোন শপথ আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করতে গিয়ে কথা বলেছি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক গণের সাথে। ফোন করেছি বিভিন্ন দপ্তরে ও প্রতিষ্ঠানে। কেউই দিতে পারেননি নিশ্চিত তথ্য। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদশর্ক জানান- স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত কোন শপথ আছে এমনটি তাঁর জানা নেই। ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার বলেন- আমার অফিসে এই মর্মে কোন সার্কুলার আদৌ আছে কি না আমি বলতে পারবো না।

এমতাবস্থায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তব্যে ও ভাষায় শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য পাঠ অস্বাভাবিক নয়। হয়ত সে কারণেই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ডায়রিতে বিভিন্ন রকম শপথ বাক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধু বা চলিত অথবা মিশ্র ভাষায় লিখিত বাক্য গুলো মোটামুটি নিম্নরূপ: “আমি অঙ্গীকার করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সব সময় নিজেকে নিয়োজিত রাখিব। দেশের প্রতি অনুগত থাকিব। দেশের একতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখিবার জন্য সচেষ্ট থাকিব। হে আল্লাহ্, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন দেশের সেবা করিতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি আদর্শ ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তুলিতে পারি। আমীন।” অথবা “আমি শপথ করছি যে, কলেজের সকল নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলব। নিষ্ঠা ও মনোযোগসহকারে লেখাপড়া করব। কলেজের সুখ্যাতি ও মান-উন্নয়নে সচেষ্ট থাকব। দেশ ও মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখব। স্বধর্মের সকল বিধি-বিধান মেনে চলব। হে আল্লাহ্, আমাকে শক্তি দিন। আমি যেন কলেজের ভাবমূর্তিকে উজ্জল করতে পারি। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের সেবা করতে পারি। আমীন।”

আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের ডায়রিতে কোন শপথ বাক্য নেই। দেশের লাখো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন ডায়রি নেই। অন্য কোথাও লিখিত কোন শপথ বাক্য নেই। শপথ বাক্য পাঠের কোন আয়োজন নেই। সুনির্দিষ্ট শপথ বাক্য পাঠের কোন বাধ্য-বাদকতা নেই। এমতাবস্থায় বিশেষ করে যেসকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সদা মারতে ও মরতে প্রস্তুত, তারা কী (সৃজণশীল?) শপথ গ্রহণ করে তা গভীর ভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন।

সচেতন ও দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ মনে করেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান, যেমন ইচ্ছে তেমন শপথ দেশ ও জাতির জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়। প্রথমত: এতে করে ভিন্ন ভিন্ন মন-মনসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠছে নতুন প্রজন্ম। ক্রমে বেড়েই চলছে আমাদের ও আমাদের উত্তরাধিকারদের বিভক্তি। আদর্শ হীন, দয়ীত্ব-কর্তব্যহীন, দেশপ্রেমহীন, মানবতাহীন, চরিত্রহীন হচ্ছে আমাদের অধিকাংশ সন্তান।

দ্বিতীয়ত : আমাদর সকল ক্লাসের পাঠ্য বই ও সাহিত্য চলতি ভাষায় রচিত। বি.সি.এস. পরিক্ষাসহ সকল পরিক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর চলতি ভাষায়। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ও রণ সঙ্গীত চলতি ভাষায়। জাতীয় সংসদ সদস্যদের শপথ হয় চলতি ভাষায়। ছড়া, কথা, গান, কবিতা, বিতর্ক, বক্তৃতা সবই হয় চলতি ভাষায়। অথচ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য হবে তাদের অপরিচিত দুর্বুদ্ধ সাধু ভাষায় তা মেটেও যৌক্তিক নয়। যার ভাব/বক্তব্য ও দায়িত্ব/কর্তব্য প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী; এমন কি এস.এস.সি. পাস প্রাথমিক শিক্ষক গণের পক্ষেও অনুধাবন করা কঠিন। তৃতীয়ত: এই শপথ বাক্য গুলো মনে হয় সামরিক বাহিনীর জন্য অধিক উপযোগী।

জীবনের শুরুতে সকলের জন্য চাই- সুশিক্ষা অর্জনের শপথ। সঠিক ভাবে নিজেকে ও নিজের বিবেককে তৈরি করার শপথ। সৎ ও নীতিবান থাকার শপথ। দুর্নীতি মুক্ত থাকার শপথ। জাতীয়তা বোধ তৈরির শপথ। যেই মজবুত শপথ বুকে নিয়ে সহজেই সম্ভব দেশ, জাতি ও মানুষের সত্যিকার কল্যাণ।

শুধু মাত্র নিচের ক্লাসের অবুঝ শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের পাঠের জন্যই নয়, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শ্রেণি-পেশা-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্যই বাধ্যতামূলক থাকা চাই একটি সহজবুদ্ধ অর্থবহ নিরপেক্ষ শপথ। যা হবে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের মতই জতীয় শপথ। এই শপথ থাকতে পারে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পাঠ্য বইয়ের শুরুতে। সরকারি-বেসরকারিসহ সকল প্রতিষ্ঠানের প্রোসপেকটাস ও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ম্যাগাজিন, পত্র, পত্রিকায়। সকল প্রশিক্ষণ একাডেমিতে। আমাদের রাষ্ট্রীয় সংবিধানে। বিভিন্ন জাতীয়দিবসে আমাদের জাতীয় সংগীতের আগে/পরে ছাত্র, শিক্ষক, চাকুরে, সাংসদ, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রষ্ট্রপতিসহ সর্বস্তরের মানুষ খুলা ডানহাত বাম বুকে(হৃদয়ে) অথবা ভূমির সমান্তরালে(ভূমিতে) রেখে বার বার গ্রহণ করতে পারেন আমাদের নির্ধারিত জাতীয় শপথ। নবীন বরণ, বিদায়, সমাবর্তনসহ বিভিন্ন ছোট-বড় অধিবেশন ও অনুষ্ঠানের শুরুতে ধর্মগ্রন্থ পাঠের পর পরই হতে পারে, ভালো হওয়ার ও ভালো করার সুদৃঢ় শপথ। যাতে বার বার জাগ্রত হয় আমাদের বিবেক, শানিত হয় আমাদের চেতনা, উজ্জীবিত হয় দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ। সঞ্জীবিত হয় প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অসীম শক্তি। সেই শপথটি হতে পারে এই রূপ: [‘আমি শপথ করছি যে, -সদা সত্য কথা বলবো ও সৎ পথে চলবো। ছোটদের স্নেহ ও বড়দের মান্য করবো। সুশিক্ষা অর্জনে আমরণ আন্তরিক থাকবো। প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র ও স্বধর্মের সকল বিধি-বিধান মেনে চলবো। ভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবো। আমাদের জাতীয় চেতনা, একতা ও স্বাধীনতা সুরক্ষায় সর্বদা সক্রিয় থাকবো। হে সর্বশক্তিমান, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন সুনাগরিক হয়ে- প্রতিষ্ঠান, মাতৃভূমি ও মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে পারি।’ -আমিন।]

[ এই লেখাটি এমদাদ উল্লাহ স্যারে মতামত অনুসরনে লিখিত]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×