পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আমরা পড়ছি প্রায় বিনামূল্যেই বলা চলে এই খরচটা কে বহন করছে এই কথা আমরা কি কখনো ভেবেছি?
না,কোন রাজনীতিবীদ,কোন বুদ্ধিজীবী,কোন শিল্পপতি বা বিদেশী ধান্ধাবাজ এই খরচ বহন করেনা।তবে কে দেয় এত টাকা?
দেয় #কৃষক,দেয় পোশাক শ্রমিক,দিনমজুর,নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত,রিকশাওয়ালা,ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী,সরকারি ও বেসরকারী চাকরীজীবী প্রমুখ।এরা তাদের কষ্টের টাকা দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদেরকে পুষতেছে তারা কি এদের প্রতি দায়বদ্ধতা স্বীকার করে?
পড়া শোনা শেষ করে একটি চাকরী জুটিয়ে বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চা উত্পাদন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিন্তার সবটুকু জুড়ে এখন।তাহলে কারা ভাববে দেশ ও দেশের নিপীড়িত মানুষের কথা?যাদের টাকায় এখানে বসে আরামে ফাও ফাও পড়ে যাচ্ছে তাদের অর্থনৈতিক,সাংষ্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি কে দেবে তবে?তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোগবাদীদের চেয়ে কোন অংশে নিজেদের আলাদা দাবি করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ?
প্রেম করে বেড়ানোটা যেন বর্তমানে মূখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে।অথচ বাংলাদেশের সামাজিক সাংষ্কৃতিক প্রেক্ষাপটে এটা কেবল অনৈতিক প্রজন্ম তৈরি করছেনা,জাতীয় ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রেমের নামে শারীরবৃত্তীয় খেলায় মজে থেকে দেশের প্রতি দায়বদ্ধতাকে যাদুঘরে পাঠিয়েছে এ প্রজন্ম,দেশীয় সংষ্কৃতি চর্চা ও পন্য ব্যবহারের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে চোর বা চোরনীর মত ভোগবিলাস,মজামাস্তিতে মেতে আছে।ফলাফল খুব বিপদজনক।জাতীয় ইস্যুতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো মুভমেন্টই এখন দেখা যায়না,দেশের সম্পদ অপরে নিয়ে গেলে কারো কিছু হয়না,ভীণদেশী সামান্য সচিবালয়ের এক চাকরানী এসে আমাদের জাতীয় ইস্যুতে নাক গলালেও আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগেনা...
নিজেদের সংষ্কৃতি তথা পোশাকা আশাক,সংগীত,আচরণ ও সম্ভাষণ ছেড়ে অপসাংষ্কৃতি ও অনাচার শিখছে।তৃতীয় শ্রেণীর মানহীন হিন্দি সিনেমা এদের ল্যাপটপ ভরা,বাংলাদেশের চ্যানেল ও এদেশের সিনেমায় এদের অনীহা।দেশকে সামান্য ইতিবাচক দৃষ্টিতে এরা দেখতে অভ্যস্ত নয়।এ কি প্রজাতি গড়ে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়ে?
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সব প্রজাতীর এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশের কাছে বাংলাদেশের পন্য হাসির খোরাক,যেন এদের রক্তে অন্যদেশের অন্য জাতির ধারা প্রবাহিত।এরা মোজো ক্লেমন স্পিড টাইগার ইত্যাদিতে সন্তুষ্ট না।এরা কোক,সেভেন আপ,স্প্রাইট,মিরিন্ডা,ফান্টা বা পেপসি খাওয়া অকৃতজ্ঞ।এরা দেশি পন্য ক্রয় করে টাকা দেশে রাখার কথা ভাবেনা।নেটওয়ার্কের মিথ্যা অযুহাতে টেলিটক ব্যবহার করেনা এরা,অথচ এরাই নাকি জাতির ভবিষ্যত্।এরা জাতির অন্ধকার,এরা জাতীয় শত্রু।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন একটি প্রজাতির সৃষ্টি হচ্ছে যারা কায়িক বা শারিরীক পরিশ্রম করতে অনিচ্ছুক।এমন কি এরা দৈহিক শ্রমের মত জাতি গঠনের কাজকে ছোট কাজ ভাবে,এরা কৃষক হতে চায়না কেউ।যে দেশটি কৃষিপ্রধান সে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠগুলোর কোন ছেলে বা মেয়ে কখনো কৃষক হতে চায়না এটা কতটা দুর্ভাগ্যজনক কথা সেটা বোঝার মত যোগ্যতা এ জাতির কর্ণধারদের নেই,একদমই নেই।কি জাতিবিধ্বংসী শিক্ষায় আমরা শিক্ষিত হচ্ছি সেটা ভেবেছি কখনো?
এসব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের জন্য অশনী সংকেত।একটি জাতীয়তাবোধ ও দেশপ্রেমহীন শিকড়বিচ্ছিন্ন নিম্নমানের প্রজাতির উদ্ভাবের ভয়ানক পূর্বাভাস!এই প্রজাতি একটি জাতি বা দেশকে তার ইতিহাস ও ঐতিহ্যসহ ধ্বসিয়ে দিতে সক্ষম যেকোন মুহূর্তে।
প্রিয় বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ প্রজন্মের হাতে যাওয়ার আগেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে আমাদের,এগিয়ে আসতে হবে এই শিকড়হীন ভোগবাদী আত্মকেন্দ্রিক প্রজন্মকে জাতীয়তা ও দেশপ্রেম শেখাতে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেদিন পরিশ্রমী,সচেতন ও দায়বদ্ধ হবে খেটে খাওয়া গরীব মানুষের প্রতি,জাতি ও রাষ্ট্রের প্রতি তীব্র ভালবাসা ও প্রেম নিয়ে বেঁচে থাকবে সেদিন বাংলাদেশ জাগবে,সেটা হতে পারে আজ,কাল অথবা পরশু...
সেটা নির্ভর করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আপনার জাতীয়তাবোধ ও মানবিকতা কতটা দ্রুত জাগে তার উপর।