somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যারিটাল রেপ: একটি জটিল ধারণা ও বাংলাদেশের বাস্তবতা

০২ রা মে, ২০২৫ রাত ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


'
সমাজে নারী-পুরুষের সম্পর্ক, বিশেষ করে বৈবাহিক সম্পর্ক একটি দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক ও নৈতিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। এই সম্পর্কের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সম্মান একটি মৌলিক ভিত্তি তৈরি করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ‘ম্যারিটাল রেপ’—অর্থাৎ বৈবাহিক ধর্ষণ—নামে একটি ধারণাকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে, যা একদিকে যেমন যৌক্তিক প্রশ্নের উদ্রেক করে, তেমনি অপরদিকে সাংস্কৃতিক ও বিচারিক কাঠামোর দৃষ্টিকোণ থেকে তা গভীরভাবে সমস্যাজনক হয়ে উঠছে।

‘ম্যারিটাল রেপ’ ধারণার উৎপত্তি ও বিতর্ক:
পশ্চিমা সমাজে যেখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং ব্যক্তিত্বের আইনি রক্ষা কাঠামো যথেষ্ট শক্তিশালী, সেখানে ‘ম্যারিটাল রেপ’ আইনগতভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজে বিয়ে শুধুমাত্র একটি আইনি চুক্তি নয়, এটি সামাজিক, ধর্মীয় এবং পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের একটি ঘনিষ্ঠ সমন্বয়। এখানে বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে 'ধর্ষণ' শব্দটি প্রয়োগ করা নৈতিকভাবে অসম্পূর্ণ এবং বাস্তবিকভাবে বিপজ্জনক।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও সীমাবদ্ধতা:
বাংলাদেশে ধর্ষণের যে সংজ্ঞা বিদ্যমান, তার কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। হাজার হাজার ধর্ষণের মধ্যে কয়টি মামলা হয়, আর তার মধ্যে কয়টির বিচার হয়—এই সংখ্যাগুলো পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়, আমাদের বিচারব্যবস্থা এখনও ভিক্টিমের পক্ষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অপারগ। এই বাস্তবতায়, যখন বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত শারীরিক সম্পর্ককে ‘রেইপ’ বলে ঘোষণা করা হয়, তখন সেটি বাস্তবায়নের পথে নতুন এক বিপর্যয়ের জন্ম দিতে পারে।

সামাজিক ও আইনি বিপর্যয়ের আশঙ্কা:
ম্যারিটাল রেপ’ এর সংজ্ঞা যদি আইনত প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে তা পারিবারিক বন্ধনকে দুর্বল করবে, অনেক সময় প্রতিশোধমূলক অপব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করবে, এবং সমাজে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি করবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়ার আগেই সংসার ভাঙনের ঝুঁকি বাড়বে। বিশেষ করে নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার যে আইনগত অস্ত্র দরকার, তার অভাব থাকায় এই সংজ্ঞা প্রয়োগে প্রকৃত ভিক্টিমরাও অনেক সময় বিচার বঞ্চিত হবেন।

সমাধান কী?
আইন পরিবর্তনের আগে প্রয়োজন সংস্কার—সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির, শিক্ষার, এবং আইনি অবকাঠামোর। দাম্পত্য সহিংসতা, মানসিক নির্যাতন, বা শারীরিক জুলুমকে ‘রেইপ’ নয়, বরং ‘সহিংসতা’ বা ‘নিপীড়ন’ হিসেবে চিহ্নিত করে আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা যেতে পারে। এতে করে একদিকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে, অন্যদিকে বৈবাহিক সম্পর্কের পবিত্রতা ও সামাজিক ভারসাম্য বজায় থাকবে।

ধর্ষণ নিঃসন্দেহে একটি জঘন্য অপরাধ। কিন্তু ধর্ষণের সংজ্ঞাকে যখন অতি সম্প্রসারিত করা হয়, বিশেষ করে বৈবাহিক সম্পর্কের মতো সংবেদনশীল ও জটিল প্রেক্ষাপটে, তখন তা সমাজে বিভ্রান্তি, নৈরাজ্য ও অবিশ্বাসের জন্ম দিতে পারে। তাই বাংলাদেশে ‘ম্যারিটাল রেপ’ সংজ্ঞায়নের আগে রাষ্ট্র, সমাজ ও বিচারব্যবস্থার সক্ষমতা, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট এবং পারিবারিক কাঠামোর উপর সুস্পষ্ট মূল্যায়ন জরুরি। না হলে আমরা যেটাকে সমাজে ধর্ষণ বলে গণ্য করি, সেটার বিচারই আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০২৫ রাত ১:৫৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×