somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আই ডোন্ট ওয়ানা বি এ মাদার

১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইছে?
ক্যাথি এপাশ ওপাশ মাথা নাড়ে।
আইসা পড়বো।আমেনা বেগম চোখ কুঁচকে দেয়ালে ঝোলানো ঘড়ির দিকে তাকায়। পাঁচটা প্রায় বাজে! তুমি গেটে গিয়ে খাড়াও।
ক্যাথি মৃদু হেসে বলে, ইয়েস।
হাসতাছো ক্যান! বাংলা কথা বুঝো নাই!ভুল কইরা অন্যখানে চইলা যাইতে পারে, তাড়াতাড়ি যাও, আমেনা বেগম তাড়া দেয়।
ক্যাথির হাসি সারামুখে ছড়িয়ে পড়ে। ভাবখানা এমন যে, বাংলা কথা না বোঝার কী আছে! যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি টাইপের একটা ভঙ্গি করে ও ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
পেছনে আমেনা বেগম বিরক্তিতে গজগজ করে, এতোদিনেও বাংলা শিখতে পারলো না!

এরপর আমেনা বেগম আর কী বলবে, ক্যাথি তা জানে। বলবে, শিখবো কেমনে? এইসব ইংরেজ মাইয়ারা ডাটে বাটে ফিটফাট, কিন্তু মাথায় ঘিলু কম। ঘিলু থাকলে কী আর এতোদিন বিয়া না কইরা বইসা থাকতো! কাউরে না কাউরে ঠিকই খুঁইজা বাইর করতো! গত চার বছর ধরে সে ওকে এসব কথাই বলে যাচ্ছে। প্রথম প্রথম তার কথা শুনে ও হা করে তাকিয়ে থাকতো । কিছুই বুঝতো না। মনে হতো, ওর সামনে কোন এলিয়েন বসে বসে ভিনগ্রহের ভাষায় বকবক করছে। আস্তে আস্তে এই এলিয়েন ভাষার সাথে ও মানিয়ে নিয়েছে। আমেনা বেগমের ভাষা আর ইশারা মিলিয়ে ও এখন ঠিক ঠিক বুঝতে পারে, মহিলা আসলে কী বলতে চাইছে।

মহিলার কথা শুনতে ওর এখন বরং মজাই লাগে। বিশেষ করে আমেনা বেগম যখন ওর বিয়ের বয়স নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় মরে যায়, পারলে নিজেই ছেলে খুঁজে আনে, তখন ওর হাসি চেপে রাখা দায় হয়ে পড়ে। হাসতে হাসতে ও মাঝেমধ্যেই ওর মন খারাপ হয়। ওর নিজের মা কী কখনো ওর বিয়ের কথা ভেবেছে! তুমি এখন অ্যাডাল্ট, নিজের পথ ধরো, সেই আঠারো বছর বয়সে বাড়ির দরজা বন্ধ হবার পর থেকেইতো ও পথে পথে ঘুরছে। মা আরেকজনকে বিয়ে করে সুখে আছে। বাবা তার তরুণী বউকে নিয়ে মেতে আছে। পশ্চিমের দুনিয়ায় কে কাকে নিয়ে ভাবে, যার জীবন তার কাছে। সেইখানে এক অজানা অচেনা মহিলা ওকে নিয়ে এতো দুঃশ্চিন্তা করে! মাতৃত্বের এই অনুভূতির ছোয়ায় হোয়াই আর ইউ সো লাভলি, বলতে বলতে ও প্রায়ই আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে হুড়মুড় করে কেঁদে বুক ফেলে। আমেনা বেগম সন্তানের স্নেহে তখন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দেয়, বোকা মাইয়া এইভাবে কাঁনলে চলবো!

আজকের দিনটা অবশ্য অন্যদিনের চেয়ে আলাদা। আজ কাঁদলে আমেনা বেগম ওকে ধমকাবেন, শুনো মাইয়া কান্দাকাটি পরে কইরো, আইজকা অনেক কাজ। আইজ বাদশা আইবো মনে নাই? বাদশা তার একমাত্র ছেলে। প্রথম দিকে ক্যাথি তাকে প্রতিদিনই ছেলের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখতো। দিন গড়িয়ে আরেক দিন আসতো, ছেলে আসতো না। আমেনা বেগম অপেক্ষা করতেন। শেষে এক মাদার্স ডে তে ফুল হাতে ছেলে এলো। মাত্র একদিন তাতেই আমেনা বেগম কী খুশি! তারপর থেকে আমেনা বেগমের ধারনা হয়েছে অন্যদিন না আসলেও মাদার্স ডে তে ছেলে আসবেই আসবে।

তাই প্রতিবছর মাদার্স ডে তে আমেনা বেগম সেজেগুজে রেডি হন, বলেন, পোলা অনেক ব্যস্ত থাকে সারা বছর, একদিনই সময় পায় বুঝলা, এইদিনে সাজগোজ না করলে চলে কও? যাও আমার নীল কাতান শাড়িটা বের করো, চুল সুন্দর করে আঁচড়াও, চুড়ি আনো, টিপ পরাও- আরো কতো কী তার আবদার। ক্যাথির মনে হয় বড় একটা মানুষ ছোট্ট একটা বাচ্চার মতো বায়না ধরছে, এটা দাও ওটা দাও! না দিলে এখুনি হাত পা ছুঁড়ে কান্না করবে! হাসতে হাসতে ক্যাথি তার সব হুকুম পালন করে। সাজগোজ শেষ হলে টেবিলে চা নাস্তা সাজিয়ে দেয়।ছেলের পায়েস পছন্দ। আমেনা বেগম রান্নাঘরে যেয়ে নিজের হাতে পায়েস রান্না করার আবদারও ক্যাথিকে পাশে দাঁড়িয়ে থেকে মেটাতে হয়। পায়েস কমেন হলো তাও তাকে চেখে দেখতে হয়। এক চামচের বেশি চাখবা না কইলাম, ওকে সাবধান করে দিয়ে আমেনা বেগম প্রতিবার দীর্শ্বানুস ফেলে বলে, পোলাটার বিয়া না হইলেতো তোমার লগেই বিয়া করাইয়া দিতাম। সবই কপাল বুঝলা?
ক্যাথি হেসে মাথা নাড়লে, সে ফোড়ন কাটে, আমার মাথা আর মুন্ডু বঝছো। অহন যাও, দেখো আইসা পড়ছে মনে হয়।তারপর একটু পর পর ঘড়ি দেখে একটু পরপর সে ক্যাথিকে তাড়া দেয়া, আইছে? ফোন দিছিলা?
ক্যাথি তাকে দেখিয়ে ফোনের রিসিভার তুলে কানে লাগায়। প্রতিবার যান্ত্রিক গলায় জবাব আসে, হাই দিস ইস ব্যাশ, আই আ্যাম বিজি রাইট নাউ, প্লিজ লিভ ইয়োর ম্যাসেজ। ক্যাথি ওকে বলে রিসিভার নামিয়ে রেখে বলে, হি ইজ কামিং। কইছিলাম না আসবো! আমেনা বেগমের সারা মুখে বিজয়ের হাসি ছড়িয়ে পড়ে।

প্রতিবারের মতো ক্যাথি আজও দুবার আমেনা বেগমের ছেলেকে কল দিয়েছিল। কোন জবাব আসেনি। আমেনা বেগমের ঘর থেকে বেরিয়ে সে তৃতীয়বারের মতো ডায়াল করে। ওপাশ থেকে ব্যস্ত গলা শোনা যায়-
হ্যালো ব্যাশ স্পিকিং।
হাই দিস ইজ ক্যাথি ফ্রম ওরেঞ্জ ওল্ড হোম। আমেনা বেগম ইজ ইয়োর মাদার। অ্যাম আই রাইট?
ইয়েস। ইজ শি ওকে?
নো একচুয়ালি শি ইজ ভেরি ভেরি সিক, ক্যাথি মুখ শক্ত করে মিথ্যা কথা বলে।
রিয়েলি! হাউ সিরিয়াস?
ইটস ইমার্জেন্সি।
ওপাশে খানিকক্ষন নীরবতা। একটা বচ্চার কণ্ঠ শোনা যায়, হু ইজ ইট পাপা। একটা মহিলা অসহিষ্ণু কণ্ঠ ফিসফিসিয়ে বলে, বাদশা আমি রেডি , তোমার আর কতোক্ষণ? এইতো....সরি, ফারহানের কণ্ঠ ক্যাথির কোছে ফিরে আসে। আই আ্যাম ভেরি সরি টু হেয়ার ইট। বাট আই হ্যাভ এ ফ্যামিলি পোগ্রাম দ্যাট আই মাস্ট অ্যাটেন্ড। আই কান্ট কাম রাইট নাউ, সরি।ইফ এনিথিঙ গোজ রঙ, প্লিজ লেট মি নো।
অফকোর্স।
আই হোপ শি উইল বি অলরাইট।
হোপ ফর দ্যা বেস্ট। হ্যাভ এ হ্যাপি মাদার্স্ ডে, ক্যাথি ইচ্ছে করেই বাক্যটা উচ্চারণ করে।
ইউ টুহ।

ফোন কেটে যাওয়ার পর ক্যাথি চুপচাপ বসে থাকে। চারপাশের রুমগুলোতে কোলাহল। মাদার্স ডেতে মায়ের সাথে সময় কাটাতে এসেছে সবাই। কেবল আমেনা বেগমের ঘরে কোন হাকডাক নেই। আমেনা বেগমের কাছে গিয়ে তাকে তার ছেলের না আসার খবর জানাতে ইচ্ছা করে না ক্যাথির। কিন্তু ও পারে না। কোন এক অদ্ভূত আকর্ষণে নিঃসঙ্গ মহিলাটা ওকে পায়ে পায়ে তার দরজার কাছে নিয়ে যায়। দরজার কাছাকাছি হতেই ও শোনে, আমেনা বগেম বলছেন, কীরে মনি এতো দেরি করলি ক্যান?
জ্যাম ছিল।
আহারে আসতে কতো কষ্টই না হইছে।
বউমা কই? ব্যস্ত?
দাদুভাইরে আনলি না ক্যান?ওরে কতোকাল দেখিনা। কতো বড়ো হইছে? কতা কয়? ইশকুলে যায়? আমার কথা জিগায়?
তুই এতো শুকাইছস ক্যান? খাস না ঠিকমতো? আহারে এতো কষ্ট করস! নে পায়েস রানছি। পায়েস খা। মনে আছে ঈদের দিন নামায থেইকা আইসাই কইতি, মা পায়েস খামু, পায়েস রানছো?
মনে আছে? তয় এই পায়েস অতো মজার না। এইহানে দেশী গরুর দুধ পামু কই? ভালো কথা, দেশে গেছিলি? ক্যামন আছে সবাই? নদী অহনো ভাঙতাছে! তোর বাপের কবরডা.....আমারে কিন্তু এইহানে মাটি দিবি না, খবরদার!মনে থাকবো?
আইজ যাবি? কেবলই না আইলি! মেলা কাম? মাঝে মাঝে আসিস। আমার একলা একলা মন টেকেনারে বাজান। কারো লগে মন খুইলা কথা কইতে পারি না।বাংলা কেউ বোঝে না। এগোর খাবারও আলাদা। আমারে ভাত খাইতে দেয় না, খালি সুপ দেয়। কোনখানে আমাগো পান্তাভাত,কাঁচামরিচ আর কোনখানে সুপ, তুই ক এইগুলা খাওয়া যায়? কতদিন যে পেট ভইরা খাই না বাপ! পরেরবার আইলে এট্টু ডাইলভাত নিয়ে আসিস।আনবি?
হ আনিস। তুই ছাড়া আমারতো আর কেউ নাই বাজান। কেউ নাই। ভাল থাকিস। আর বড় বাসা নিলে আমারে কিন্তু এইখান থিকা নিয়া যাবি।তুই চাকরি করোস, বউমাও চাকরি করে।ঘরদোর ধুইয়া মুইছা রাখার লোক লাগবো না তগো? আমারে নিয়া যাইস, তগোরে রাইন্ধা বাইড়া খাওয়ামু। কতদিন তোরে মুখে তুলে খাওয়াই না!
আইচ্ছা যাইতে চাইতাছোস, যা তাইলে। ভাল থাকিস। শরীরের যত্ন নিস। দাদুভাইরে দেইখাশুইনা রাখিস।আবার যে কবে তোরে দেখমু.....বলতে বলতে আমেনা বেগম হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। তার ডুকরানো কান্নার শব্দ দরজার ফাঁক দিয়ে এসে ক্যাথির চোখ ভাসিয়ে দেয়। দুই হাতে কান চেপে ও উদভ্রান্তের মতো দৌঁড়ে পালায়, ওহ গড, আই ডোন্ট ওয়ানা বি এ মাদার, আই ডোন্ট, ওহ!

১২/০৫/১৪
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×