somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ থেকে এভারেস্ট জয় : বাস্তবতা কতটুকু?

১৯ শে মে, ২০০৯ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা এভারেস্ট জয় করেত চাই৷ এ কথাটি বলার পরই বহুবার প্রম্নের সম্মুখীন হয়েছি - কেন? বহু মানুষকে বলতে শুনেছি, ভয় লােগ না? এই প্রশ্নরে উত্তর যদি নিচের কয়েকটি সম্ভাব্য বিকল্প থেকে বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে কোনটি বেছে নিবেন?
১. এভারেস্টের চেয়ে উঁচু কোনো জায়গা এ পৃথিবীতে নেই৷ তাই মানুষ তার জীবদ্দশায় এভারেস্ট জয় করতে চায়৷
২. এভারেস্ট আরোহণ করা খুবই খরচরে ব্যাপার, বিশাল বিনিয়োগের ব্যাপার। আর মানুষ একটা অর্জনের জন্য , সেদেশের মর্যাদা আরো উঁচুতে নিয়ে যেতে এবং সার্বিক তৃপ্তিবোধের জন্যই বিনিয়োগ করে।
৩. যখন কেউ বেশ কিছু ছোট ছোট পর্বত জয় করে, তখন সে সবচেয়ে বড় পর্বতচূড়া জয়ের জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করে তোলে।
৪. একাগ্রাতা আর ভালোবাসাই মানুষকে এভারেস্টের দিকে নিয়ে যায়।
৫. কেউ কেউ এভারেস্ট অভিযানে যায়, সেই পর্বতের স্বর্গীয় সৌন্দর্য ধারণ করে এনে সবার সঙ্গে আনন্দটুকু ভাগ করে নিতে।
আপনার উত্তর এসবের এক বা একাধিক হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে 'আমরা কতক থামতে না জানা তরুণ' বলি, হিমালয়ের খুব কাছের দেশ বাংলাদেশ। অথচ এ শে থেকে এখনো কেউ এভারেস্ট জয় করেনি, এ হতে পারে না। তাই আমরা এভারেস্টে যেতে চাই। বাংলাদেশের পতাকাকে আরও একটি নতুন মর্যাদার আসনে উন্নীত করতে চাই। সুতরাং ওপরের পাঁচটি ধারণাই আমাদের জন্য প্রযোজ্য।
'আপনি কেন এভারেস্ট জয় করতে চান?' - এর উত্তরে বিখ্যাত পর্বতারোহী ব্রিটিশ জর্জ ম্যালরি বলেছিলেন- 'কারণ এটা সেখানে' (বিকজ ইট ইজ দেয়ার)।
চার শব্দের একটা উত্তর। কিন্তু সুবিশাল তার ব্যাপ্তি।
তারপরও অনেকে বলেন, তা তো বুঝলাম। কিন্তু আমাদের কী দরকার এভারেস্টে যাওয়ার?
এবার আসলে বুঝতে পারি আমরা মনের দিক থেকে আসরে ঠিক কতখানি দেউলিয়া। কারণ এটা যে একটা জাতির স্বপ্ন , এই দেউলিয়ায় ভুগতে থাকা মানুষ তা উপলদ্ধি করতে পারে না। এ দেশবাসীর সামনে উপলক্ষ তৈরি করে দিতে হবে। তারপর তারা উৎসব করবে , উচ্ছ্বাস প্রকাশ করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে গিয়ে। এ দেশবাসী কি নিজেই সেই উপলক্ষ তৈরি করে নিতে পারে না? আমরা কি পারি না আমাদের বোধকে জাগাতে?

আসলে দিন, সময় ও বোধ পাল্টিয়েছে। এ দেশ অপার সম্ভাবনার দেশ। অসীম উৎসাহের দেশ। এখনকার তরুণেরা অসম্ভবকে সম্ভব করতেই কাজে নেমেছে। এভারেস্টজয়ী কিংবদন্তী স্যার এডমন্ড হিলারী বলেছিলেন, (এভারস্টের) চূড়ায় নিজেকে নিয়ে যেতে শক্তিশালী প্রণোদনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর আমরাও স্বপ্রণোদিত। সে কারণেই ২০০৪ সাল থেকে পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ নেওয়া, হিমালয়ে পর্বত অভিযানে যাওয়া ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে এ দেশের তরুণদের মধ্যে এই উন্মাদনাটুকু ছড়িয়ে দিতে পেরেছি। বহু তরুণ এখন এভারেস্টে যেতে চায়। আমরা তাদের সঙ্গী করে নিই।

উল্টোপিঠ
অনেকে আবার বলেন, এত সময় নিচ্ছ কেন? এভারেস্টে চলে গেলেই তো পার।
তাদের এক গাল হেসে উত্তর দিই, কাউকে ব্যাট-বল হাতে তুলে দিলেই যেমন সে পরদিন থেকে জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলতে পারবে না, তার যেমন স্কুলিং প্রয়োজন আছে, পর্বতারোহণ বা এভারেস্টে যাওয়ার ব্যাপারটাও সে রকম। পর্বতকে বোঝা, সেখানকার মানুষজনের সাইকোলজি জানা, হিমালয়ের আবহাওয়া, সুযোগ-সুবিধা বা সমস্যা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা সংগ্রহ করে তবেই এভারেস্টে যাওয়া উচিত।
আমরা এখন সেই ধাপগুলো পার করছি। ক্রমাগত একের পর এক পর্বতাভিযান চালিয়ে এভারেস্টে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ঝুলিতে পুরছি। চলতি ২২ মে তারিখেই অন্নপূর্ণা ফোর (উচ্চতা ২৪ হাজার ৬৮২ ফুট) পর্বত অভিযানে নামছে নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশের (এনএসিবি) দল। এরপর আট হাজার মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট আরেকটি অভিযান পরিচালনা করলে হয়তো এনএসিবি দল ২০১০ সালের মধ্যেই এভারেস্ট জয়ের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।
এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। পর্বতারোহণে প্রয়োজন বেশ বড় অঙ্কের অর্থ। এনএসিবি দলের এখন সেই সহায়তা দরকার। টাকার অঙ্কে সেই পরিমাণটা কত? পরিমাণটা শুনে অনেকেই ভিমড়ি খান। শুনে বলেন, এত টাকা কে দেবে?
তাদের জন্য উত্তরে বলি, এই ক্লাবের তরুণরা তাদের সামর্থের প্রমাণ রেখেছে সর্বশেষ লাংসিসা রি পর্বত জয়ের ক্ষেত্রে। নেপালের লাংটাং হিমালয়ের ২০ হাজার ৭০০ ফুট উঁচু এই পর্বত জয়ের সময় একাট্রা তরুণেরা সেদিন বহু বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে গিয়েছিল। সে সময়েও অর্থটা সবচেয়ে বড় বাধা হিসাবে সামনে চলে এসেছিল। কিন্তু বন্ধুদের সহায়তায় সেদিন আমরা যোজন পাড়ি দিয়ে লাংসিসা রি পর্বত চূড়ায় দেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছিলাম। অর্থের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও আমরা থেমে যাই নি।
কারণ আমরা বিশ্বাস করি, শুধু অর্থের অভাবে অন্নপূর্ণা ফোর বা এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা উড়বে না, তা হতে পারে না। এখানে অর্থের সহায়তা যেমন দরকার, তেমনি প্রয়োজন সবার সহযোগিতা, সদিচ্ছা ও অকুণ্ঠ সমর্থন। জানি যে পর্বতারোহণে প্রতিবারই সফল হওয়া কঠিন। তার পরও আমা আশাবাদী। এ দেশের তরুণদের হাত দিয়েই লাল-সবুজ পতাকা এভারেস্টের চূড়ায় উড়বে।
কারণ এভারেস্ট হলো একটা স্বপ্ন অর্জনের ক্ষেত্রে বহু ধরনের বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার। আমাদের জন্য শারীরিক , মানসিক এবং কিছুটা হলেও এক ধরনের প্রতীকী অঙ্গীকার। যা এ জাতিকে আবারও একটা আনন্দের ক্ষণ এনে দেবে। এ দেশের ১৫ কোটি মানুষ চেষ্টা করলে এটা কি অসম্ভব? আমরা তা বিশ্বাস করি না।
মুসা ইব্রাহীম, সাংবাদিক ও পর্বতারোহী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০০৯ রাত ১০:২৬
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×