somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কড়া নাড়ছে এভারেস্ট

১৬ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসা ইব্রাহীম

মে মাস, ২০০৪ সাল। একটা দল যাবে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প। চাইলে যেতে পারি। সদ্যই -- মাত্র মাস দুয়েক আগে -- তখন হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং ট্রেনিং নিয়ে এসেছি। সুতরাং আবার পর্বতের কোলে চড়বার ডাক! উপেক্ষা করব, না কি যাব? শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম যে যাব।
ঢাকা থেকে নেপালের কাঠমান্ডু, সেখান থেকে লুকলা পর্যন্ত উড়ে গিয়ে এভারেস্টের মহাসড়কে নিজের কোর্স সেট করে একে একে ফাকদিং, নামচেবাজার, মিলিঙ্গো, ফুঙ্গিটেঙ্গা, পেরিচে, লোবুচে ইত্যাদি গ্রাম পর হয়ে গিয়েছিলাম নিজের সাধ্যকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে।
কারণ এই ট্রেইলে আগে কখনো আসিনি। আর বাংলাদেশী বলে সেই মহাসড়কের বাসিন্দাদের মধ্যেও কেমন একটা তাচ্ছিল্য ভাব - একান্তই নভিস, এমন যুক্তি দাঁড় করিয়ে। সুতরাং, চ্যালেঞ্জটা তখন নিজের সাধ্যটা পার হয়ে যাওয়ার।
সেবার নবম দিনের ট্রেকিং শেষ যেদিন গোরকশেপ- এ পৌঁছাচ্ছি, তখন পর্যন্ত এভারেস্ট নিজেকে তার পূর্ণরূপে নিবেদন করে নি।
হঠাৎ একটা রিজ পার হতেই যেন কেউ সামনে থেকে একটা পর্দা ঝা- সরিয়ে দিল।
এভারেস্টকে দেখলাম।
মনে হল যেন - এই তো সেই, যার জন্য এতোদিন অপেক্ষা। সেই অপেক্ষাকে আরেকটাদিন পর্যন্ত গড়াতে দিয়ে পরদিন চললাম এভারেস্ট বেস ক্যাম্পের দিকে।
বেশ কয়েকটা ডায়নামিক মোরেন আর হিমবাহ গলা পানি-সৃষ্ট ছোটখাটো হ্রদ পার হয়ে বেলা এগারটা নাগাদ সেখানে পৌঁছাতেই দেখলাম এক এলাহি কান্ড। বিশালকায় খুম্বু হিমবাহের ওপর বেশিরভাগই এভারেস্টফেরতা পর্বতারোহী ও শেরপাদের এক মহাশোরগোল। কেউ এভারেস্ট জয় করে সগর্বে ফিরছেন, আবার কেউ এভারেস্ট অভিযানে যাওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লাল, নীল, হলুদ, কমলা রংয়ের তাঁবুর এক মহাসমাবেশ যেন।
মন চাইছিল যেন এখনই রওয়ানা দেই সেই এভারেস্ট পানে। যার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি দিনকে দিন। কিন্তু নিয়মের বেড়াজাল বাঁধ সাধল সেই চাওয়ায়। এই বেস ক্যাম্প থেকে আর এক পা এভারেস্টের দিকে বাড়ালেই নেপাল সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। যা কাঠমাণ্ডু থেকে নিতে হয়। আরও প্রয়োজন পোশাক-পরিচ্ছদ ও পর্বতারোহণ সরঞ্জাম এবং শেরপা ও সহকারী দলের সহযোগিতা এবং সর্বোপরি অভিজ্ঞতা।
তো সংকল্পবদ্ধ হলাম, একদিন ঠিকই নিয়ম মেনে এই এভারেস্ট অভিযানে নামব।
এরপর বহু সময় গড়িয়েছে। অ্যাডভান্স মাউন্টেনিয়ারিং ট্রেনিং নিয়েছি। ২০০৫ সালে নেপালে মেরা পর্বতাভিযানে, ২০০৬ সালে সিকিমে ফ্রে পর্বতাভিযানে (১৯,১২৫ ফুট) এবং ২০০৭ সালে চুলু ওয়েস্ট পর্বতাভিযানে অংশ নেয়ার পর গড়ে তোলা হল নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশ - এনএসিবি।
২০০৭ সালের ২৯ অক্টোবর এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা থেকেই সেই সংকল্পের একটা খসড়া রূপরেখা সবার কাছে উপস্থাপন করে বলেছিলাম, বাংলাদেশ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে এভারেস্ট অভিযান পরিচালনা করতে চাই। এরপর নেপালে ২০০৮ সালে লাংসিসা রি পর্বত (২০,৭০০ ফুট) এবং ২০০৯ সালে অন্নপূর্ণা ফোর পর্বত (২৪,৬৯০ ফুট) সফলভাবে আরোহণ করার পর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হল এভারেস্ট অভিযানের।
এটা ২০১০ সাল। এখন দিন গুনছি এভারেস্ট অভিযানের। এর মাঝে কি কি ঘটেছে? অভিযাত্রীরা কঠিন সব পর্বতারোহণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। পর্বতে যাচ্ছ, ভয় লাগে না - এমন বহু প্রশ্নকে জয় করেছে সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মাধ্যমে। পাল্টা প্রশ্ন করি - আপনি বা আপনারা যে প্রতিদিন বাসা থেকে কর্মস্থলে যান, তাতে ভয় লাগে না?
বিষয়টি আসলে তাই। পর্বতারোহণকে একেবারে আপন করে নিতে হবে এর পরিবেশ, প্রকৃতি, লোকজনের সঙ্গে সখ্য স্থাপন, শেরপা ও মালবাহকদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার এবং পর্বতের আবাহণকে আলিঙ্গন করার সামর্থ দিয়ে। এদেশের তরুণদের সেই সামর্থ তো আছেই। এখন দরকার ভালো কাজে, এভারেস্ট অভিযানে তাদের জাগিয়ে তোলার।
অনুকূল পরিবেশে তাদের সামর্থের প্রতি যদি আরো আগেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া যেত, তাহলে আরও আগেই এভারেস্টে উড়ত বাংলাদেশের পতাকা, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সুতরাং, দৃঢ় সংকল্প + অদম্য স্পৃহা + সহযোগিতা ও শুভেচ্ছা + টিমওয়ার্ক + চ্যালেঞ্জ জয় + অভিজ্ঞতা + সামর্থ্য = এভারেস্ট অভিযান।
আর এই সমীকরণ মেলাতে আমরা সবার দোয়া চাই। চলতি মার্চ মাসেই যে এভারেস্ট অভিযানে নামছি, তখন যেন বাংলাদেশের মর্যাদাকে এভারেস্টের সমান উচ্চতায় নিতে পারি, বাংলাদেশের পতাকা এভারেস্টের চূড়ায় নিতে পারি।
কড়া নাড়ছে এভারেস্ট।
তাকে আমরা করবো জয় একদিন।
৪৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×