somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুষ্টিয়ার লালন উৎসব, রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ এবং মেহেরপুরের মুজিবনগরে ২ দিন

২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গতমাসের নেত্রকোণার বিরিশিরি ট্রিপের সময়ই আমরা কুষ্টিয়ার লালন মেলায় যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। সে মোতাবেক এ মাসের ১৮ তারিখ বৃহস্পতিবার অফিস থেকে বেরিয়েই আমরা সন্ধ্যা ৭ টায় গাড়িতে চড়ে বসি। ড্রাইভার রিংকু সুধালো, কোনপথে যাব, স্যার ? আরিচা হয়ে ফেরিতে, নাকি যমুনা সেতু হয়ে ঘুরে ? উল্টো জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কোনপথে যেতে চাও ? সে আমাদের উপরই ছেড়ে দিলো। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আরিচার ফেরী হয়ে পথ কম হলেও ঈদ সামনে রেখে জ্যামের কারনে বিপদেও পড়ে যেতে পারি। বরং অনেক ঘুরা পথ হলেও যমুনা সেতু হয়ে যাওয়াই উত্তম। মার্টিন এবং সালাউদ্দিন ভাইয়ের বদৌলতে গাড়িতে সারারাতের খাবার ও পানীয় মজুত আছে দেখে আশ্বস্ত হলাম। প্রচন্ড জ্যামের কারনে উত্তরা হয়ে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পার হতেই রাত ১০ টা পেরিয়ে গেল। কালিয়াকৈর এর সেখানে গিয়ে শামীম বলল, ১১ টার আগে যদি আরেকটু সামনে যাওয়া যায় তাহলে কালিদাশের বিখ্যাত সন্দেশ খাওয়াতে পারবে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হল, দোকান খোলা পাওয়া গেল। মনে থাকার মত স্বাদ। এই সন্দেশ খাওয়া এবং প্রিয়জনকে খাওয়ানোর জন্য আমাকে আবার সেখানে যেতেই হবে, এসিদ্ধান্ত নিয়েই সেখান থেকে বেরুলাম। গাড়ী আবার ছুটল যমুনার উপর বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে পদ্মার উপর লালন শাহ সেতুর উদ্দেশ্যে।

ঈশ্বরদী পৌঁছেই গ্যাস স্টেশনে থামতে হলো। বাকী পথে আর কোন গ্যাস স্টেশন নেই। পর্যাপ্ত পরিমানে গ্যাস না নিলে অকটেন লাগবে, যেটা ব্যায়বহুল। তাই প্রয়োজনীয় গ্যাস নিয়ে আবার গন্তব্যে ছুটলাম। রাত ৩.৩৫ টায় আমরা কুস্টিয়ায় প্রবেশ করলাম। ব্রিটিশ-এ্যামেরিকান টোব্যাকোর রেষ্টহাউজে আমাদের রাত্রিকালীন অবস্থান পূর্বনির্ধারিত। সেপথে এগুতেই আমাদের গাইড কাম সহযাত্রি কুস্টিয়ারই ছেলে সুজা প্রস্তাব দিলো রুমে না গিয়ে সরাসরি শহরেরই একপ্রান্তের ছেঁউরিয়ার লালন মেলায় যাবার। সবাই একবাক্যে রাজী হলো তার প্রস্তাবে।

বাকিটা নাহয় ছবিতেই বলি....


লালন একাডেমীর অনুষ্ঠানসুচী


রাত ৩.৪৫। বাউল সঙ্গীতের সুরে মাতোয়ারা হাজারো দর্শক


লালন একাডেমীর প্রবেশদ্বার


লালন শাহের মাজার


একাডেমিক ভবন, যেখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে লালন সংগ্রহশালাটি অবস্থিত


অডিটোরিয়াম, যেখানে দুর দুরান্ত থেকে আসা বাউলরা অবস্থান করে থাকেন


লালন মেলার তিলের খাজা


রাত ৪ টায় ভাজা গরম গরম জিলিপি


অনিন্দ্য সুন্দর একতারার ঝাঁক


মেলায় বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা কুষ্টিয়ার বিখ্যাত কুমারখালীর লুঙ্গি-গামছা


লালন শাহ সংগ্রহশালার ভিতরে আমাদের দলের দুজন দর্শনার্থী


আমাদের দলের সদস্যরা একাডেমীর গেইটে

এতটুকু শেষ হতে হতেই মসজিদে ফজরের আজান দিয়ে দেয়। মেলার সবকিছু গুটিয়ে নেয়ার আগেই আমরা বিটিসির রেষ্টহাউজের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। রুমে ফিরেই ঘোষনা হয় সকাল ১০টায় সবাইকে ডাইনিংয়ে উপস্থিত হতে হবে, যে থাকবে না তাকে ফেলেই মেহেরপুরের মুজিবনগর চলে যাওয়া হবে। কুষ্টিয়া থেকে মুজিবনগর প্রায় ৯০ কি.মি. দুরে ভারতীয় সীমান্তে অবস্থিত।

মুজিব নগর যাবার আকর্ষনে ঠিক ১০ টার মধ্যেই সবাইই ঘুম চোখে নিয়ে ডাইনিংয়ে। খাওয়া শেষ করেই মেহেরপুরের উদ্দেশ্যে ছুট।


বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন রাজধানী মুজিব নগর স্মৃতিসৌধের উপর আমরা


বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিব নগর স্মৃতিসৌধ


মুজিব নগর স্মৃতিসৌধ এর আরেকটি ছবি

এক আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতা সুর্য অস্তমিত হয়েছিলো, আরেক আম্রকাননে সেই সুর্য আবার উদিত হয়েছিলো।

এই সেই মুজিব নগরের আম্রকানন, যেখানে ১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহন করেছিলো


মুজিব নগর স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের একাংশ


মুজিব নগর স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের একাংশ


যুদ্ধকালীন বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিস্মারক


মুজিব নগর স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের একাংশ


মুজিব নগর স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের একাংশ, যেখানে বাংলাদেশের মানচিত্রকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে


বাংলাদেশের মানচিত্রের ভিন্ন একটি অংশ


মানচিত্রের মধ্যেই যুদ্ধকালীন বিভিন্ন ঘটনাকে জীবন্ত করে দেখানো হয়েছে। এখানে সীমান্তে শরনার্থীদের দেশত্যাগ দেখানো হয়েছে।

এখান থেকে বেরিয়েই আমরা যাই শিলাইদহের রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ীতে। আমরা পৌছাতে পৌছাতেই প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাই কয়েকটি ছাড়া ছবি তোলা সম্ভব হয় নি। সেখানে আমরা পুরো সন্ধ্যাটা কাটিয়েছি। রবিবাবুর স্মৃতিবিড়ড়িত শানবাঁধানো বকুল তলা, ও পুকুর ঘাটে দারুন আড্ডা জমেছিলো।


কুঠিবাড়ীতে ঢোকার মুখেই রবিন্দ্রনাথের কয়েকটি গানের কলি পাথরে খোদাই করা


শিলাইদহের সেই কুঠিবাড়ী (পোস্টের এই একটি ছবিই নেট থকে নেয়া)


শিলাইদহের সেই কুটিবাড়ী, যেখানে অনেক বিখ্যাত কবিতা ও গানের জন্ম হয়েছিলো


যে ধরনের বজরাতে রবীন্দ্রনাথ এখানে আসতেন তারই মত করে তৈরী একটি বজরা, যেটি বর্তমানে কুঠিবাড়ীর পুকুরের ঘাটে বাঁধা আছে

এখান থেকে আবার রেষ্ট হাউজে, খাওয়া দাওয়া সেরে আবার লালন মেলায় রাত ১২টা পর্যন্ত্য। রাত বারটায় পুনরায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হলো । সকালে ঢাকায় পৌঁছেই শুরু হবে আবার নাগরিক জ্যাম, অফিস, সংসার, টেনশন...........
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৫৬
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল্যাইকা লেন্সে ওঠানো ক’টি ছবি

লিখেছেন অর্ক, ১৭ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৩০




ঢাকার বিমানবন্দর রেল স্টেশনে ট্রেন ঢোকার সময়, ক্রসিংয়ে তোলা। ফ্ল্যাস ছাড়া তোলায় ছবিটি ঠিক স্থির আসেনি। ব্লার আছে। অবশ্য এরও একটা আবেদন আছে।




এটাও রেল ক্রসিংয়ে তোলা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×