মাত্র ছয় ঘন্টার সংক্ষিপ্ত সফরে ভারতের অর্থমন্ত্রী বাংলদেশকে একশত কোটি ডলার দান করতে নয় বরং অতীত পিরিতের দোহাইতে নাম মাত্র সুদের লগ্নিতে উন্নয়ন কাঠামো গড়ে তোলার জন্য সহযোগীতা করতে এসেছিলেন। দেশের রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের আলীবাবা সমাজে বাহা বাহা বা গেল গেল বলে যে সুর উঠালো তা শুধুই রাজনৈতিক ক্যানভাসারদের রুটি রুজির নিমিত্তে। দেশের রফতানী পণ্য নিয়ে ভারতের নয়-ছয়ের কাহিনী কখনো প্রকট ভাবে প্রকাশ হলেও রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে কোনো দেশপ্রেমিকই ভারতের কোন পণ্য আমদানী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে নাই।
শ্রীযুক্ত প্রণব বাবুকে ঘুর্ণিঝড় সিডর পরবর্তী বাংলাদেশের জরুরী অবস্থার সময় চাল-আমদানীর এলসি অস্বীকার করতে দেখেছি। হঠাৎ কোনো ঠ্যাঁকা ছাড়া প্রণব বাবুর মতো মহারথি সঙ্গে কুবেরসহ হাজির ! শতকরা চারের বদলে পৌনে দুই ভাগ সুদে লগ্নি করতে চাচ্ছে , বাকী সুদের টাকা দেবে ভারতের সরকার ! কি এমন বিষয় ঘটলো ? যাতে শ্রী প্রণব মুখার্জ্জী এখানে এসে অবহেলিতজনকে বিনীতভাবে ভ্রাত্য নামে ডাকছেন ?
সেমেটিক সিন্ডিকেটের পরামর্শে এসে হাজির হয়েছেন শ্রী প্রণব মুখার্জি। কারণ মঙ্গলয়েড চীন তিববতের মতো উত্তর-পূর্ব কোনের বিস্তীর্ন পাহাড়ীভূমি অরুনাচল দখলে নিতে চায়। তখন জরুরী প্রয়োজনে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সাজসরঞ্জাম সহজে উত্তর-পূর্ব কোনে পৌছাতে পারবে। বাংলাদেশের সহযোগীতা ছাড়া ঐ ভূ-খন্ড দখলে রাখতে নাও পারতে পারে ভারত। সুতরাং বাংলাদেশের সাথে ট্রানজিট সুবিধা নেওয়া থাকলে বিপদের সময় সামরিক চলাচলে সহযোগীতা পাওয়া সহজ হবে।
মনে রাখতে হবে, একদা ভারত-বাংলাদেশ সহযোগীতা চুক্তি ১৯৭২ সালে ইন্দীরা-মুজিব করেছিলেন। কিন্তু সেই চুক্তি ব্রাহ্মণ রাষ্ট্র ভারতের পার্লমেন্ট এখনও অনুমদন করার প্রয়োজন বোধ করে নাই। তেমনি ভারতে বাংলাদেশের পণ্য চলাচলে এখনো ছল-চাতুরীর ভূমিকা বজায় রাখছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বর্কন্দাজদের হরি হরি বলে ঢলে পড়লে চলবে না। ভারতীয় ধৃতরাষ্ট্রের রাজনৈতিক রথী-মহারথী মুনিরা ব্রিটিশদের মতো হিপোক্রেট নেটিভ চরিত্রের পলিটিশিয়ান।
অথচ বাংলাদেশ এখন এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের অধীনে চীনের কাছ থেকে ৭৫৭টি পণ্যের ওপর শুল্কছাড় ভোগ করছে। এ শুল্কছাড়ের মধ্যে রয়েছে ২২ ধরনের নিটওয়্যার ও সমপরিমাণ টেক্সটাইল।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বর্তমান চীন-ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হলেও চীন-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারত সীমান্তে চীন উচ্চপ্রযুক্তির দূরপাল্লার সিএসএস-৫ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। পাশাপাশী সীমান্তবর্তী এলাকায় সড়ক ও রেলপথ নির্মাণসহ ব্যাপক অবকাঠামো গড়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। চীনের দাবী, ভারতের অরুণাচল প্রদেশ তাদের অংশ। এমনকি ২০০৯ সালে চীন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ভারতের জন্য ছাড় করা ঋণ আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে।
অন্যদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অরুণাচল রাজ্যে এখন চীনের পণ্য বর্জনের আন্দোলন চলছে। অরুণাচল সীমান্তে চীনের আগ্রাসী নীতি ও দালাই লামাকে নিয়ে নেতিবাচক অবস্থানের প্রতিবাদে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। এর জের ধরে ভারত-চীন সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করেছে ভারত সরকার।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’র (বিআইডিএস) গবেষনায় বলা হয়েছে, রেলের এই ট্রানজিট বাণিজ্যের জন্য রেলের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। আগরতলা ও শিলচর থেকে ৪০ লাখ টন ভারতীয় মালামাল পরিবহন ক’রে বাংলাদেশ রেলওয়ে বছরে এক থেকে তিন কোটি ডলার আয় করতে পারবে। ২০১০-১১ অর্থবছরের জন্য রেলওয়ের ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ মিলছে না। এই অবস্থায় রেলওয়ের পাঁচটি অবকাঠামো নির্মাণে ভারতীয় ঋণের অর্থ আশার সঞ্চার করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতীয় অর্থে বাস্তবায়নের জন্য ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বড় রেলওয়ের ‘অ্যাপ্রোচসহ দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটি।
সূত্রমতে জানা গেছে, ভারত আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন নির্মাণ করবে বলে জানিয়েছে। দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মিত হলে ঢাকা ও চট্রগ্রাম থেকে ট্রেন সরাসরি আগরতলায় চলাচল করতে পারবে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত ঢাকা-চট্রগ্রাম ডাবল রেললাইনের জন্যও দুটো সেতু সহায়ক হবে। এ ছাড়াও আছে ১০টি ব্রডগেজ লোকোমেটিভ সংগ্রহ, ১২৫টি যাত্রীবাহী বাস সংগ্রহ, জ্বালানী তেল পরিবহনের জন্য ৬০টি ট্যাংক ওয়াগন ও দুটো ব্রেক ভ্যান সংগ্রহ, কনটেইনার পরিবহনের জন্য ৫০টি মিটার গেজ ফ্লাট ওয়াগান ও পাঁচটি ব্রেক ভ্যান সংগ্রহ। অন্যান্যের মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নেওয়া তিনটি প্রকল্পের মধ্যে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে সরাইল-ব্রহ্মণবাড়িয়া-সুলতানপুর-চিনাইর-আখাউড়া সেনারবাদী স্থলবন্দর সড়ক জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ। অপর প্রকল্প রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর সংযোগ সড়ক উন্নয়ন।
ভারতীয় ঋণ ১৪টি বাছাই করা প্রকল্পে খরচ করবে সরকার। যোগাযোগ ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ১২০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তিতাস নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ করা ছাড়াও রেল ইঞ্জিন ও বগি কেনার জন্য ৮৯ মিলিয়ান ডলার, উচ্চক্ষমতার ছয়টি ড্রেজার কেনার জন্য ৭১ মিলিয়ন ডলার ও আশুগঞ্জে আভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপনের জন্য ৩৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করা হবে। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানীর কথাও বলা আছে ইশতেহারে। ঋণের টাকা থেকে ১৫৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বিদ্যুৎ গ্রিড স্থাপন করা হবে। ভারতীয় কোম্পানীর সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানী চুক্তি করেছে পিডিবি। গ্রিড তৈরী হলে প্রথম পর্যায়ে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। বাস ক্রয়ের জন্য ৩৬ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্পসহ মোট ১৪ টি প্রকল্পে সরকার এ অর্থ ব্যয় করবে ।
এখন তো বাংলাদেশ সোনা কিনেছে আইএমএফ-এর কাছ থেকে। তাই আইএমএফ-এর রিজার্ভ পেপারের বদলে সোনায় সমৃদ্ধ হয়েছে। স্থানীয় উৎপাদন ব্যবস্থা বিশেষ করে কৃষিপণ্য বিরাজমান বাজার ব্যবস্থাকে পূর্ণ জোয়ারে সমর্থন করছে। ফলে কৃষি পণ্য প্লাবনের আকারে সরবরাহ করতে যেয়ে হোচট খাচ্ছে উৎপাদকরা। বিশেষ ক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের সংরক্ষণ এবং বাড়তি পণ্যের বাজার ঘাটতি উৎপাদনকে ব্যাহত করছে বছরান্তে। শিল্প পণ্য ও সেবার সম্প্রসারণের জন্য ‘বাজার’ আমাদের উৎপাদনকে পূর্ণগতিতে বৃদ্ধির অন্তরায় বলে ভাবা হচ্ছে। আমাদের দুই ডিজিট সংখ্যা প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য চাই আরও ‘বড় বাজার’।
আর সেই বাজারগুলোর মধ্যে একটা হতে পারে প্রতিবেশী উঠতি বৃহৎশক্তি ‘ভারত’। অবশ্যই ভারতকে সীমান্তে হত্যা বন্ধ, অবাধ বাজার এবং শুল্কমুক্ত বিশেষ সুবিধাভোগীর মর্যদা দান , ১৯৭৪ সালে ভূমি বন্টন ব্যবস্থা ও সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, নদ-নদীর পানি বন্টন, নেপাল ও ভূটানে পণ্য চলাচলে ট্রানজিট সুবিধা , আপাতত এই সকল সুবিধা ভাষন আলোচনা বাক্যে নয়, বরং তা বাস্তবে কার্যকরী করতে হবে। সকল কর্মকান্ড হতে হবে হাতে কলমে। অর্থাৎ উভয় পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়ে। আগামীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসবেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তিদের উচিৎ এই সকল বিষয়গুলোকে প্রাধন্য দিয়ে বাস্তবসম্মত সমাধানের পথে যাওয়া । আর যেতে পারলেই উভয়ে উপকৃত হবে। নচেৎ একতরফা পিরিত দেশের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। যাহা শুধু আভ্যন্তরীণ উৎপাদন , বাজার এবং ভোক্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
**আমার এই লেখাটি পুর্বে খুলনা জার্নাল এ প্রকাশিত হয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



