somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলার স্বরূপ সন্ধানে

০১ লা মে, ২০১১ রাত ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনসংখ্যায় পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতি ‘বাঙ্গালী’রা। বর্তমান বিশ্বে বাংলাভাষা ব্যবহারকারী সংখ্যায় চতুর্থ (চাইনিজ, ইংরেজি, স্প্যানিস ও বাংলা) ন্যাশনাল জিওগ্রাফি পত্রিকা মিলেনিয়াম সংখ্যার মতে।

নৃ’তত্ত্বের সরল বিচারে বাংলার বাঙালীরা সাদা, কালো, বাদমী ও তামাটে বর্ণের শংকরায়ীত জাতি। আনুমানিক ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ কোটি বাংলাভাষা ব্যবহাকারী জনসংখ্যার মোটামুটি হিসাব পাওয়া যায়। যা’রা বাংলাদেশের বর্তমান সীমানার দক্ষিণ-পূর্ব কোন থেকে পূর্বে, উত্তর ও পশ্চিম দিকে বিরাজ করছে অশ্বথ বৃক্ষের শাখার মতো। অর্থাৎ একই বাংলা ভাষাভাষী বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলিক পরিবেশে স্থানীয় ভৌগলিক পরিচয়ে জীবন-যাপন করছে। যার কেন্দ্রস্থল বং থেকে বাঙলায়।

১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ দখলদারীত্বের সময় দুই লক্ষ ছাপান্ন হাজার বর্গ মাইলের যে ‘বাংলা’, তা প্রখ্যাত ত্রি-নেটিভের গোজামিলের জোয়ারে আমাদের তালকানা বাংরেজ অগ্রজদের গা ভাসানোতে, এখন শুধুই ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল সীমানায় বাংলাদেশ নামে পতাকা উড়চ্ছে। উত্তরের হিমালয় পর্বত থেকে উৎপত্তি নদ-নদী ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গার পলিতে গঠিত বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ ভূমি হলো ঐতিহাসিক বঙ্গ বা বাংলা। জম্বু-দ্বীপের প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতের মতে, বাংলা হলো পান্ডব-বর্জিত দেশ। প্রাচীনকাল থেকে আজও বাংলা, হিন্দুস্থানের সর্বাধিক সমৃদ্ধ এবং সর্বোচ্চ ঘনবসতি পূর্ণ ঠিকানার ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। স্থানীয় কৃষি ও কুটির শিল্পের উৎপাদিত বিচিত্র পণ্যের বিনিময়ে বাংলা নিজেকে ভূ-পৃষ্টে সম্পদের ভান্ডার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল। প্রাগ-ঐতিহাসিক আমল থেকে সম্রাট, রাজা, চাকুরে, ভাগ্যান্বেসি, ভবঘুরে এবং অভাবীর আশ্রয়স্থলও ছিল প্রকৃতির দান এই সমৃদ্ধ বাংলায়।

জনপদের উদ্দ্যোগী মানুষের দ্বারা বঙ্গীয় ব-দ্বীপ অঞ্চল, জন্মলগ্ন থেকে পোয়াতি মায়ের মতো ‘সম্পদ সৃষ্টি এবং বিনিময়’ উভয় কর্মে নিয়োজিত ছিল। এ সবকিছু এখন কেবলই ইতিহাস। বাংলাদেশের শাসক শ্রেণীর বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপট মানসিক খয়রাতির থেকে আলীবাবার মুঢ়তায় লাট খাচ্ছে। ‘অদৃষ্টের লেখা’ দোহাইয়ের মধ্যে দেশের জন-জীবন এবং তার সামাজিক পরিমন্ডল কাতারবন্দী হয়ে চুবনীর মধ্যে আছে। অথচ এখনইতো দেশের মধ্যে গড়াপেটার বিভিন্ন কর্মোদ্দ্যাগ এবং প্রাণ চাঞ্চল্যতার ভেলায় ভাসবে সমাজ। কিন্তু কেন এই বদ নসিবি অসারতা ?

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ধন-সম্পদ এবং বৈভবের সুতিকাগার হলো তষ্কর ক্লাইভের দখলকৃত ঐতিহাসিক ‘বাংলা’। সকল ইউরোপীয় পাইরেটদের পরাশক্তির শ্রেষ্ঠ আখড়া ‘ইংল্যান্ড’। তার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দখলকৃত বাংলা মোকামকে দীর্ঘ মেয়াদী লুঠ করতে যেয়ে নেটিভ দাস দালাল সৃষ্টি করলো। নব্য সকল দাস দালালদের বংশ পরম্পরায় প্রভু ভক্তির নিষ্ঠা বজায় রাখতে লুটেরা কাঠামো গড়ে তুললো। লুটেরা ব্রিটিশ শাসকরা স্থানীয়দের মধ্যে দাস দালালীর বীজ রোপন করলো নেটিভ শিক্ষা, ক্যাডার প্রশাসন ও পেনাল কোড ইত্যাদির মাধ্যমে। যাহা দখলকৃত ভারতীয় সমাজে জলদস্যু ব্রিটিশ শাসকদের দীর্ঘ মেয়াদী লুন্ঠন প্রক্রিয়ার হাতিয়ার হিসাবে থাকলো শুধুই নয় বরং সম্রাজ্য বিস্তারে গৌরী সেনের ভূমিকায় ব্যবহার হলো !

বাংলাদেশের জনগনের অর্জিত পিপলস্ রিপাবলিকেও বিরাজ করছে সেই একই লুটের হাতিয়ার ! বাংলাদেশের আলিবাবা রাজ্যের (২০০০-২০০৪) সুনামের ঠ্যাঁক সেই একই লুটেরা এ্যাংলিকান-পোপ রানীর দস্যুবৃত্তের হাতিয়ার। যাহা বাংরেজ নেটিভ শাসকগোষ্ঠী দ্বারা শাসিত হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের দোহাইতে। ‘কানা ছেলের নাম পদ্মোলোচন’ পাঠ করানো হচ্ছে জনগনকে, পিপলস্ রিপাবলিকের জনগনকে বাহারি প্রজার পোষাকে !

ইংরেজদের প্রয়োগকৃত ত্রিমাত্রিক জোয়ালের উপর সওয়ার করে গড়ে উঠলো প্রাচ্যে ভারতীয় সাম্রাজ্যের সকল প্রকার শাসনের নামে লুন্ঠন কর্মসূচীর ধারাবাহিকতা। গজিয়ে ওঠা পরগাছা নেটিভ শ্রেণীর মাধ্যমে স্থানীয়দের মধ্যে ইংরেজরা সরাসরি গড়ে তোলে বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়ীক সমাজ কাঠামো ! যেখানে আগে সমাজে বিরাজ করতো রাজা ও প্রজার রাজস্ব দেওয়া নেওয়ার সীমাবদ্ধতা। দখলকৃত সম্রাজ্যে বিরাজ করতে থাকলো তষ্কর ইংরেজ ও নেটিভ সাংগাৎ পরগাছা শ্রেণীর বালাম লুন্ঠন এবং ইংল্যান্ডে পাচার কার্যক্রম। যাহা নগদ নারায়ণের ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত ‘উৎপাদক সমাজের’ ঘাঁড়ে চেপে সম্পদ ছিনতাই ছিল একমাত্র ধান্দা।

আধুনিক নেটিভ সমাজের জন্মস্থান বলতে ব্রিটিশ দূর্গ ‘ফোর্ট উইলিয়াম’ কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা হরিলুটের নবীন মহানগর ক্যালকাটায়। প্রসিদ্ধ এই লীলাকেন্দ্র নূপুরের ধ্বনীতে ভরপুর ছিল সাদা ও কালা ইংরেজদের বিলাস বৈভবের জীবন্ত কাহিনীর গোলা হিসাবে। ‘ক্যালকাটা’ বা কোলকাতা ! যাহাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিলো একদা ‘প্রাচ্যের লন্ডন’ নামে। মুন্সি, দেওয়ান ও সরকার ইত্যাদি পদবির নেটিভ জনেরা কোম্পানীর লুটেরা ইংরেজ শাসকের পরিচয়ে বাজারে কাটতি ছিলেন। কোম্পানীর নতুন আয়ের উৎস হিসাবে হাজির হয় এই সকল মুন্সি, দেওয়ান ও সরকারদের মাঝে ‘রাজা বা মহারাজা’ পদ বিক্রয়ের মাধ্যমে।

সকল নেটিভই দখলদার কোম্পানীর তল্পিবাহক নিয়োগ পেয়েছিল তষ্কর ইংরেজ সাহেবদের দেওয়ান, মুন্সি বা সরকার ইত্যাদি পদের নামে। সুতরাং নেটিভ সমাজের মাইক্রোফোন তখন নব্য গজিয়ে ওঠা বাবু-মুন্সিদের হাতে। আর সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ উৎপাদক শ্রেণীর পরিচয় ছিল শ্রেফ ‘‘নেড়ে এবং চাড়াল’’ মাত্র ! আর নেড়েদের মধ্যে পতিত শাষকদের সাংগাৎ পরগাছা ধনীদের ডাকতো মুসলমান, কিন্তু ‘বাঙ্গালী’ নয়। এই সকল পরিবার কেন্দ্রিক মুখরিত প্রভাব প্রতিপত্তির প্রতিযোগীতা চলতো গজিয়ে ওঠা মহানগর ক্যালকাটায়। রং-তামাশার ও ভাগ্যাণ্বেষণের লালনক্ষেত্র হিসাবে প্রচারিত হতে থাকলো ভারতবর্ষে থেকে পাশ্চাত্ব্যের তেলেসমাতদের ডেরায়।

ক্লেশ ছাড়া ক্যানিং ইংরেজ শাসকরা সকল নেটিভ সেবাদাসীদের মাধ্যমে নিজ দেশ ইংল্যান্ডের মতো বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়ীকতার সমাজ গঠন করতে সক্ষম হয়। বৃহত্তর জনসংখ্যা ‘নেড়ে-চাড়াল’-দের দাদা-দাদী ও নানা-নানীর নব্বই ভাগের উর্দ্ধে শিক্ষা নামক গোলক-ধাঁধাঁর আশ্রয়তে পৌছাতে পারে নাই। বাংলার উৎপাদকগণের ভাগ্যে শুধু সামাজিক বৈষম্যই নয়, এদের সমাজিক স্বীকৃতি ছিল অনেকটা দুনে দাসের মতো। আর বাবুরা এদের সুযোগ-সুবিধা দেবে বা কেন ?

১৮৩৫ সাল থেকে হিন্দু একাডমী ওরফে হিন্দু কলেজ যাহা বঙ্গীয় ব্রাহ্মণ, বৈদ্য ও কায়েতদের শিক্ষার জন্য কলকাতায় আধুনিক শিক্ষার নামে খোপ খুললো। ‘সবেধন নীলমনি’ এই ইংরেজী শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ থেকে পাস করা ছাত্রদের উপযুক্ত গ্যাটিজ বানাতে ডেপুটির মতো লোভনীয় পদ বিলাতে লাগলো কোম্পানী ! তখন ‘ডেপুটি’ নামক রাজকীয় পদ-পদবীর মাধ্যমেই বাবুদের সকল ইহজগতের ভাগ্যলক্ষ্মীর সাক্ষাত ঘটতো । জাদুকারী হাতিয়ার হিসাবে গন্য হতো এই সকল পদ-পদবি। যাহা সমাজে জন্ম দিত ‘আঙ্গুল ফোলা কলাগাছ’। তখনকার দিনে কেবল মাত্র একজন ডেপুটির বিয়ের বাজারে ‘যৌতুকে’র বাজার দর ছিল ২০,০০০ টাকা এবং মুনসেফের দর ছিল ১০,০০০ টাকা ! এখন বলেন তো ভাগা কেন বাবুরা দেবে ?

গত ব্রিটিশ লুটের রাজত্বে সংখ্যাগরীষ্ঠ উৎপাদক ও সহযোগী সংখ্যালঘু নেটিভ তাবেদার পরগাছা দুইভাগে সমাজকে বিভক্ত ক’রলোই শুধু না ইতিহাস রচনা বা গবেষণার ক্ষেত্রে সামাজিক বিবরণ সংগ্রহের দু’টি ভিন্ন পথের সূত্র সৃষ্টি করেছিল। ক্যালকাটা কেন্দ্র থেকে শাসক শ্রেণীর অতিরঞ্জিত উপাখ্যান গুলো পাঠ্য-পুস্তকের মধ্যমে বিতরণ করল। যাহা গুজোবকেও হার মানাতে বাধ্য। স্বয়ং আর্য ইংলিশ পোষাকে পরিবেশণ করা হয়েছে মহভারতীয় গুরু দ্রোণাচার্যের উত্তর-পুরুষ সাদা খ্রীষ্টান ও ইহুদী পন্ডিতদের মাধ্যমে। যাহা কলকাতায় গজিয়ে ওঠা বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়ীক স্ব (কোম্পানী) ঘোষিত ‘আর্য-হিন্দু’ বাবুদের বাঙ্গালী কালচার গঠনে মূখ্য ভূমিকা রাখলো। সুবিধাভোগী বাবুদের উপচিয়ে পড়া সুযোগের তলানীতে সৃষ্ট রসদেও ভাগা মুসলমান পরিচয়ের চিহ্নিতরাও অংশিদারীত্বের সুত্রে পেতে থাকলো ক্রমশঃই।

নব্য ইংরেজী শিক্ষিত নেটিভ হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই খ্রীষ্টান শাসকশ্রেণীর প্রোরচনায় সাম্প্রদায়ীক এবং বর্ণবাদী মানসিকাতা হৃদয়ে লালন-পালন করতে বাধ্য ছিল। সাম্প্রদায়ীক ও বর্ণবাদী মন মানসিকতা বিপনণ ও পরিচর্যার লালন ক্ষেত্রগুলোর মধে শিক্ষা’কে সহজ ও প্রয়োজনীয় মাধ্যম হিসাবে নেটিভ সমাজের ভিত্তিতে প্রবেশ করালো। তাতেই নেটিভ তালিকায় নাম লিখিয়ে সমাজে চাটামবাজীর সুযোগ পেতেন প্রখ্যাত অতীত গল্পবাজরা। ভাগে কম পড়ার আশংকায় তা বড় তা বড় বঙ্গীয় স্বনামধন্য অগ্রজ গণ কোম্পানীর রং-এ অবস্থান নেয়। সকল তাবেদার মালেরা বৈষয়িক সুবিধা ভোগ করতে কোম্পানীর পালে হাওয়া লাগায়ে গদনারায়ণ চর্চা করে গেছেন। সেখানে মানুষের খবর নেবে কে ? বরং লালন শাহ্’র বানীতে বলা যায়, ‘‘সিরনি খাওয়ার লোভ যার আছে / সে কি চেনে মানুষ রতন / দরগাতে যার মন মোজেছে।’’

লুটেরা ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী যে, জাতির পশ্চাতদিকের ত্যানাটাও খুলে নিচ্ছে। সে রকম উপলব্ধি উনারদের বলতে কলকাতার ভাগাভোগী নেটিভ মালেদের খুব বেশী ছিল না। এসব বিত্তান্ত পাওয়া যাবে নেড়ে-চাড়ালদের কাছে বিরাজমান বাউল, সাধক, চারণকবি ও ফকির ইত্যাদির বিবরণীতে। যাহাকে মূলত বলা যায়, বাংলার সংখ্যাগরীষ্ঠ সমাজের অতীত চালচিত্রের প্রকৃত মুখপাত্র। বাউল ফকির লালন শাহ্, কাঙ্গাল হরিনাথ, বরিশালের মুকুন্দ দাস বা হাসন রাজা ইত্যাদি সেই মুখপাত্রদের মধ্যে উপমা। লালন শাহ্ তাঁর বানীতে বলেছেন, ‘‘আমার ঘরের চাবি পরের হাতে / আমি ঘুরি পথে পথে / আছে ঘরে বোঝাই সোনা / পরে করে লেনাদেনা’’। উনাদের সময়ে বাংলার চালচিত্রের যে বিবরণ ফুটে উঠেছে সমাজের কাপড় খোলার কাহিনীর, সত্যই অপূর্ব !

সেই তুলনায় কলকাতার কাছাখোলা মালেদের কাহিনীতে বেশীর ভাগ প্রশাংসা এবং চোরের সাক্ষি গাটকাটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বরং আমাদের লালন শাহের ‘মানবতার’ অনুসারী হওয়া সব থেকে সহজ। যে সমাজে ‘বর্ণবাদ এবং সাম্প্রদায়ীক’ বিষয়কে জম্বুদ্বীপের ঐতিহ্যের ধারায় অচ্ছুৎ হিসাবে বর্জণ করা হয়েছে ঘৃনায়। আর ‘মানবতা’ হলো আধুনিক পিপলস্ রিপাবলিকের সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। এখনতো বাংলাদেশ কোন পরাধীন রাষ্ট্র নয়। সুতরাং পাশ্চাত্যের গুজবী হিউম্যানিটিকে গুড বাই দিয়ে লালন শাহ্’র মানবতা হতে পারে বাংলার বাঙালীর চিন্তার ভিত্তি। আর বিষয়টা পুরপুরী বাংলার নির্বাণ প্রাপ্ত জ্ঞানী অগ্রজের, বাংলার কনিষ্ঠরা অনুসরণ করলে ‘মনবতা’ জ্ঞানের ঘাটতি পুরোণ হবেই।

ইংরেজ শাসকদের উঁচুদরের ঘোঁড়েল ‘কামলা’ ডাবলু ডাবলু হান্টার তার ‘ব্রিফ হিস্টরি অফ ইন্ডিয়ান পিপলস্’ নামক বইতে বাংলার বিবরণ দিতে যেয়ে বলেছেন, চিরুনিতে পানি ফেললে যেমন পানিটা নিমিষে তলিয়ে যায়। বাংলায় ভূ-প্রকৃতি গঠনে ব-দ্বীপগুলোর সংযোগ ছিলো প্রকৃতির সৃষ্ট খাল, বিল, নদী ও নালার মাধ্যমে সাগরের সাথে মিলেছে। যাহার যোগ সূত্র গোলকের অধীন সাগরের জোয়ার-ভাটার সাথে সম্পর্ক যুক্ত বিষয়। অর্থাৎ সমাজ জীবন ছিল নৌ-যোগাযোগ কেন্দ্রীক ‘‘জলজ সমাজ’’। প্রকৃতির সৃষ্ট এই সকল ব-দ্বীপ অঞ্চল হজম করতো ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গা নদ-নদীর বিলায় দেওয়া জলরাশী এবং পলির ভান্ডার। এই আশীর্বাদের পলির ভান্ডার ভূমিকে শুধুই উর্বর করতো নয় বরং উদয় হতো নতুন নতুন দ্বীপের উর্বর ফসলি ক্ষেত।

সংখ্যাগরীষ্ঠ উৎপাদক সমাজের ঘাঁড়ে ভর করে সম্পদ লুঠ করতো দখলার বৃটিশ শাসক ও তার সহোযোগী নেটিভ কালা ইংরেজগণ। নেটিভ সমাজের উত্তরাধীকার কৃষক ও তাঁতীর বিরাজমান পরিচয় হলো চাষা ও জোলা। আর এদের খাজনার টাকায় যাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয় তারা হলো ‘ভদ্রলোক’ এবং ‘স্যার’ ! এখনও এই রিপাবলিকে কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রয়ের সময় ‘‘পাকি’’ নামক শতকরা দশভাগ ফাও দিতে হয় ওজনে ! অথচ রাষ্ট্রযন্ত্রের বাজারে স্বীকৃত ওজনের হিসাব হলো, ‘কেজি এবং টন’ যাহার মাধ্যমে সকলে ক্রয়-বিক্রয় করতে বাধ্য।

শতকরা দশ ভাগ পাকি অনেকটা ভদ্রলোকদের অফিস টেন পার্সেন্টের মত অলিখিত, কিন্তু বাজারে প্রচালিত নিয়ম ! দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রয়ের সময় অলিখিত পাকি প্রথা চালু আছে হাট বাজারে দুই হাজার এগারো সালেও। কেন দশ ভাগ ফাও দেবে প্রশ্ন করার যেমন কেউ নাই এবং উত্তর পাওয়ার কোনো জায়গা নাই ? সুতরাং . . . ! অন্যদিকে বেচারা কৃষকের উৎপাদিত অর্থকারী কৃষিপণ্য ‘‘পাট’’ রাষ্ট্রীয়ভাবে কৃষিপণ্যের স্বীকৃতি পাচ্ছে না স্বাধীন বাংলাদেশেতেও ! রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিরাজমান বৈদেশিক দাস-দালাল নেটিভ শাসকদের ‘প্রভু ইংরেজ’ মনস্ক রোগের কারণে।

সমৃদ্ধ ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষমতা বর্তমান সময় প্রায় ১.৩৩ ট্রিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ হলো ১১৫ বিলিয়ন, অর্থাৎ ভারতের প্রায় ৮.৮৬ ভাগের একভাগ এবং বাজার ভোক্তার সক্ষমতা ভারত ১২০ কোটি লোকসংখ্যা, এখানে ১৬ কোটি। বাজারের ভোক্তার বেলায় প্রায় ৭.৫ ভাগের একভাগ। আর ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা হলো, প্রতি পাঁচজনে একজন পক্ষান্তরে ভারতে তিনজনে একজন দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে এখনও ! বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থান এখন বাজার অর্থনীতির দোরগোড়ায়, যাহা পাক-ভারতকে অর্জন করতে একযুগ লাগলেও লাগতে পারে।

আগামী ভূবনীকরণে চীন এবং ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান নির্দ্ধারণ নিশ্চিত করার চেষ্টা না করে এমনতরো সুযোগ হেলায় হারাচ্ছে। দেশে সকল কর্মই ভেস্তে যাচ্ছে ‘‘পূঁজি ও রিপাবলিক’’ সম্পর্কে নেটিভদের কান্ডজ্ঞান হীনতার জন্য ! পাশাপাশী ‘নেটিভ বাঙ্গালী’ ও ‘বাঙ্গালী’র পার্থক্য বুঝতে না পারা। এটাই বাংলাদেশের ‘‘রাজনৈতিক’’ অর্থাৎ সামাজিক ট্রাজেডি ও ! এই দুর্ভাগ্যের কারণ ‘নেটিভ ব্রাউন ইংলিশম্যান’ মেকলের শিক্ষাতত্বের ফলে।
‘প্রোজেক্ট’ নামধারী অবোকাঠামো নির্মাণ আগামীর চিন্তার আলোকে পরিকল্পনা করা হচ্ছে না। উন্নয়নের নামে যে সকল তোঘলকি কাঠামো গড়া হচ্ছে। শ্রেফ রাষ্ট্রীয় অর্থ বিভিন্ন উন্নয়ন খাতের নামে বন্টন করা হয় স্যারদের লুন্ঠনের জন্য। ফলে গড়ে উঠছে কংক্রিটের আবর্জনার স্ত্তপ। সমাজ উন্নয়নে যত না সেবার প্রয়োজনে অবোকাঠামো গড়া হচ্ছে , তারচেয়ে বেশী সৃষ্টি করছে জনগনের ভোগান্তির চোরাবালি। অপরিকল্পীত নগরায়ণ ও অবকাঠামো নির্মাণ ফসলি জমিকে ফাঁসির আসামীতে পরিণত করেছে !

পার্বত্য জেলা পরিষদের নামে রিপাবলিকের তিন জেলায় সংবিধান অনুযায়ী (অনির্বাচিত) জেলা চেয়ারম্যান নিয়োগের দ্বারা পরিচালিত হয়। অথচ এই রিপাবলিকে সংখ্যাগরীষ্ঠ বাঙ্গালীদের জেলাগুলো শাসন করা হয় ‘জেলা প্রশাসক’ দিয়ে ! এখন যদি প্রশ্ন করা হয় কে এই ‘জেলা প্রশাসক’ পিপলস্ রিপাবলিকে ! কি জবাব দেবেন জোট বা মহাজোটের নেটিভ শাসকগণ ? বাংলাদেশের ভেড়ার পালের নেটিভ শিক্ষিত সমাজও একই চরিত্র বজায় রেখেছেন, ক্যালকাটার অগ্রজ বাবুদের অন্ধ অনুসরণ করতে যেয়ে। তাইতো দেশ বলতে বিরজমান ‘‘চাকরতন্ত্রে’’র মহা-সমাবেশ। সকলেই কাতারবন্দী হয়ে আছেন সিন্ডিকেট বখরাবাজীর নগদ প্রাপ্তীর আশায় !

স্বাধীনতার পরবর্তী স্থানীয় বাজারে বিপ্লবী রাজনৈতিক মতের সহযোগীতায় একচেটিয়া বাজারের সুবিধাভোগী কোম্পানীগুলো হোলো ব্রিটিশ লিভার, বিএটিসি ও অক্সিজেন ইত্যাদি। গত শতাব্দীর উনিস’শ নব্বইয়ের পরবর্তী সতিনের সন্তানের মতো স্থানীয় বাজারে প্রবল লোকাল প্রতিযোগীর উদয় ঘটেছে। ইতিমধ্যে একচেটিয়া সুবিধাভোগী বহুজাতিক কোম্পানী লিভারের লাক্স সাবানের বিপরীতে কেয়া সাবান, বিএটিসি’র সিগারেটের সাথে নেভী এবং কোক ও পেপসির একচেটিয়া বাজারে স্থানীয় উদ্দ্যোক্তা আকিজের মোজো ইত্যাদি প্রতিযোগীতায় নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারের অংশ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ দেশের উৎপাদকরা পাশ্চাত্বের উন্নত বিশ্বের মতো রাষ্ট্রীয় আশির্বাদ পেলে গোলকের যে কোন দেশ বা জাতির বাজারে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম !

দেশে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত উৎপাদন ও সেবা সেক্টরগুলো (এতিমখানা) দেউলিয়া বা ভুট হওয়ার কারণ পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের স্বীকার। যেমন পাট শিল্প বা আদমজি জুট মিল বন্ধ করা হলো। কারণ রাষ্ট্রের জন্য বোঝা ! অথচ দেশে শ্রমের বাজার পেটেভাতে। বিষয়টা জটিলতার উপ্যাখান শোনা যায়। কিন্তু কেন অর্থমন্ত্রালয় পাটের ভরা মৌসুমে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ বরাদ্দ দেয়নি ? বা কেন আদমজির শ্রমিক তাড়ানো হলো ? ব্যর্থতা যদি তাড়ানোর কারণ হয় তবে পাট সচিব, বিজেএমসির চেয়ারম্যান বা শিল্পগুলোর উর্দ্ধতন কর্মচারীদের বিদায় করা হলো না কেন ? আদত কথা পাটের বাজার হাতছাড়া হতে শুরু হয় ১৯৭৩ সাল থেকে ! পরবর্তী সরকার গুলোর ভূমিকা বলা চলে না ঘরকা না ঘাটকার লেবাসে আচ্ছাদিত নেটিভ স্বদেশী !

স্বাধীনতার পরও শ্রমিকের মজুরী পেটেভাতে ছিল। এখনও সেই একই অবস্থায় রেখেছেন স্বদেশী রাজনৈতিক বরকন্দাজরা। বাংলাদেশের শিল্প, সেবা ও বাজার ইত্যাদি শুরু থেকে বিদেশীদের একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করতে উপহার দিল দেউলিয়া চিন্তার রাজনীতি। বেচারা স্থানীয় পূঁজির শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান দামড়ায়(জাতীয়করন) রূপ দিল বিদেশী সহযোগী সরকার। অথচ কেন পূঁজি ও বাজার থেকে স্থানীয় উদ্দ্যোগকে সহযোগীতা করলেন না ? বরং বলা যায়, পূঁজি ও বাজারকে এখনকার মতো অগ্রসর হতে দিলে, বাংলাদেশের ট্রউজারের দুই পকেটে তিন তিনটি করে মোট ছয়টি মালয়েশিয়ার মতো বাজারে রূপ নিত !

স্থানীয় উৎপাদিত পণ্য ও সেবার ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো দ্বিগুন গতির জন্য চাই আরও বৃহৎ সমৃদ্ধ-ভোক্তার একাধিক বাজার। যাহা আমাদের পূর্ব-পশ্চিমে উঠতি সমৃদ্ধতার হাতছানির ভোক্তার বাজার। যেখানে ব্যাপক পণ্য চলাচলের সুযোগকে ব্যবহার করতে পারলেই হবে। তাছাড়া ভারতের সাথে করিডোর সুবিধার বিনিময়ে তাদের বাজারের অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ পেলে অবশ্যই দেশের বিকাশমান অর্থনৈতিক ফুলের কুড়িতে পাপড়ি খুলতে শুরু করবে দ্রুত। পাশাপাশী আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকা ইত্যাদির মতো মহাদেশেও পণ্যের সচল চারণক্ষেত্র করা সম্ভব। বিশেষ করে আফ্রিকায় বাংলাদেশ সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে পণ্যের চলাচল করানো যায়। বরং বলা যায়, অনেকদিন থেকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে আফ্রিকার মানুষ।

খ্রীষ্টান আমলে ‘দুনেদাস’ ব্যবস্থা দিয়ে আধুনিক শ্রমের হাতেখড়ি, পরবর্তীতে মোল্লাদের পাল্লায় পেলাম ‘ব্যাগার খাটা’। আর স্বাধীনতার পর বাংরেজ আমলে থেকে ‘শ্রমিক’ গড়পড়তা হলো ‘পেটেভাতে’র মজুরির তালিকা ভুক্ত সামাজিক দো-পায়া জীব। ‘শ্রম’ তা কায়িক বা বুদ্ধিভিত্তিক উভয় বাজারই প্রতিযোগীর সংখ্যা চাহিদার তুলনায় কয়েকগুন বেশি সরবরাহ হচ্ছে। সেখানে বাজারে প্রতিযোগীতার প্রশ্ন কোথায় বুঝতে হবে ? রাজনীতিবিদরা পৃষ্টপোষকতা দিয়ে দেশীয় উৎপাদক গোষ্ঠীকে পণ্যের প্লাবন সৃষ্টিতে চীনাদের মতো উৎসাহ যোগাতে পারতো। যাহার ফলে স্থানীয় বাজার থেকে বেকারত্ব হ্রাস পেতো। প্রকারান্তে সবল ক্রেতা সৃষ্টির পথ তৈরী হতো দেশে। বাজারে শ্রমের প্রতিযোগীতা বৃদ্ধির ফলে নিয়োগ বাণিজ্যের নামে বেকার জিম্মি করে লুঠতরাজ দেশ থেকে হারায় যাবে। ‘দারিদ্র বিমোচনে’র নামে মহাজনদের সুদের জাল থেকে সুবিধা বঞ্চিত সাধারন দেশবাসী মুক্ত হতো !

কিন্তু গদ-নারায়ণে আসক্ত রাজনীতিবিদরা প্রকারান্তে হরিনাম জপার মতো নগদ-নারায়ণের ভক্তবৃন্দ। পাশাপাশী প্রকৃত সংবাদ হলো, উনারা নারায়ণের দুর্ভিক্ষ অঞ্চলের বাসিন্দাও। তাই জাতির আশাগুলো নিজেদের মানসিক-ভিখারী মনের খুতিতে গুঁজে রেখেছে। বলিহারী সব অভাব-অনাটন গুলো। দৃশ্যত সকল উলুবনের রাজনৈতিক দেবদেবীদের কন্ঠনালিতে নারায়ণ অভাবের মালা, সুর্বণমালা হিসাবে জড়িয়ে আছে আমৃত্যু। তাই রাজনৈতিক দেবকূল আপন উদোর ভর্তিকর্মের উর্দ্ধে কোন সংবাদ শ্রবণ করতে এই মুহুর্তে নারাজ, বেচারারা !
সমাজ এখন কেবল কলুসিতই নয়, বরং ভেজাল, ওজনে কম ও মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদির বেলায় সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা লাগাম ছাড়া ঘোড়ার মত বিচরণ করছে। এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পুরো দেশটারই জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা এখন আর মাছের বাজারে মাছি থাকে না ফরমালিনের কল্যাণে ! শুধুই বা মাছ কেন ? ফল ও দুধও ফর্মালিনের সংশ্রবে বাজার জাত হচ্ছে। কারবোডাইজ দ্বারা ফল পাকানো বা মুড়িতে ব্যবহার হয়ে থাকে। এমন কি সুন্দরবনের মধ্যে মাছ শিকার হচ্ছে বিষ প্রয়োগে ? এই বিষয়গুলো ফলাও ভাবে পত্র-পত্রিকা ও কেবল নেটওয়ার্কে প্রচার হবার পরও কুম্ভকর্ণ আমির ওমরাহদের দৃষ্টিপাত ঘটেনা। ‘জনস্বাস্থ্য’ জিম্মি হয়ে আছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাস্থ্য সেবা কর্মকান্ডে। কিন্তু কেন ? কেউ কিছুই জানেনা বাহ্ !

বাংলাদেশে ব্যক্তিগত বা দলগত উদ্দ্যোগ এবং বিনিয়োগ অতীত থেকে এখন অনেক বেশী পরিমান এগিয়ে এসেও থমকে যাচ্ছে। শুধুমাত্র ‘জন’র নিরাপত্তার অভাবে ! নিরাপত্তা হীনতা তা যেমন ‘মানুষে’র বেলায় সত্য তেমনি বাজারে ‘পূঁজি ও মজুরী’ উভয়ের বেলাতে বিরাজ করছে মহাকাব্য মহাভারতের ভাষায় ‘‘কংসের রাজত্ব’’ ! কিন্তু কেন এমন হবে ? দেশ এখন নগদ নারায়ণ এবং বিভিন্ন সুযোগ দিয়ে পালছে সামরিক, পুলিশ, বিবিজি, ক্যাডার ও জুডিশিয়াল ইত্যাদি। তারপরেও নিরাপত্তা প্রশ্ন কেন আমাদের মধ্য গগণে অবস্থান নেবে ? এই অর্থ বছরেও এদের পিছনে রাষ্ট্রীয় বাজেটের মোট ব্যয়ের ২৬.৩ ভাগ বারদ্দ দেয়া হয়েছে।

কেন ‘জন’(ব্যক্তি-মানুষ)-এর নিরাপত্তা নাই পিপলস্ রিপাবলিকে ? এই প্রশ্ন করার কোন সরকার জনগণ এখনো নির্বাচিত করতে পারে নাই। কারণ বাংলাদেশে ‘সরকার’ মানেই ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ইজারাদারীর মালিকানা নিয়ে বিভিন্ন দল বা জোটের বিরোধের ফিরিস্তি । দেশের বর্তমান ও আগামী নিয়ে ভাববার এই সকল সংঘবদ্ধ দল বা জোটের আবকাশ কোথায় ? সেখানে মানুষ বা জনের নিরাপত্তা সুদূর পরাহত বিষয়। বরং বলা যায় জন, পূঁজি ও মজুরীর নিরাপত্তা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এক প্রকার তামাদী বিষয় !

গত এক দশকে বাংলাদেশের জিএনপি দ্বিগুনের অধিক হয়েছে ! তাও সম্ভব হয়েছে বিশ্বব্যাপী মন্দার জোয়ারে উন্নত বা অনুন্নত বাজারগুলোর অশনি-সংকেতের মধ্যেই ! কারণ বাংলাদেশের ‘শ্রম-মুজুরী’ পৃথিবীর সর্ব নিম্ন (পেটেভাতে) ! পূঁজির প্রাণ শ্রম এবং সেই শ্রমই উদ্বৃত্ত সৃষ্টি করে ! সস্তা শ্রমের কারণে রফতানী পণ্য ও ব্যক্তিশ্রম এখন বিকোচ্ছে ব্যাপক হারে বিশ্বের দুয়ারে। বৃহৎ উন্নত ঝলমলে বাজারগুলো মন্দার প্রভাবে যখন নতজানু এবং ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় ভোক্তার চাহিদা সংকুচিত হয়েছে। কিন্তু নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে, ‘পেটেভাতে মজুরী’র জন্যে বাংলাদেশের মালতো সস্তায় বিকোবে জগতের সব দূয়ারে। বাংলাদেশের জন্য আবারও প্রকৃতির উষ্ণ আহবান জগতের প্রথম সারীতে উন্নিত হবার ! এখনই সময় দেশের অবস্থানের জন্য পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধভাবে ষোল কোটি মানুষদের নিয়ে অগ্রসর হবার।

‘‘বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ সত্য, কিন্তু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরের সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা তার নেই। নিউইয়র্ক মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের অগ্রগতি নিয়ে সম্মেলন হয়েছে। বাংলাদেশ শিশুমৃত্যুর হার দুই-তৃতীয়াংশে নামিয়ে এনেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ দীর্ঘকালের খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকির পরিমাণ কমিয়ে এনেছে। অধিকাংশ স্কুল ও শ্রম খাতে লিঙ্গবৈষম্য কমিয়ে এনেছে’’। গল্পটা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেইক জুনিয়ারের। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ রেডিমেড গার্মেন্টস রপ্তানিকারক। সুতি বস্ত্র রফতানীতে প্রথম হওয়াও অবাক হবার ব্যাপার নয়। যদি দেশের মধ্যে বিরাজমান সামাজিক উৎপাদন ক্ষেত্র পরিবার কেন্দ্রীক ‘তাঁত শিল্পে’র দিকে প্রকৃত নজর দেওয়া যায়।

বাঙালী জাতিকে আধুনিক রূপে তাদের পূর্বতন সমৃদ্ধ অবস্থানে পৌছাতে হলে, যে বিষয়গুলো যথার্থ ব্যবহার করতে হবে যেমন, জ্ঞান, পূঁজি ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সমাজের সহায়ক অবস্থায় বিরাজ করছে বলাকে ভুল বলা হবে কি ? বরং এই সকল বিষয়কে জাতি গঠনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার না করে মূল্যবান সময়ের অপচয় করা হচ্ছে। প্রকারান্তে রাজনৈতিক হট্টগোল সৃষ্ট চিন্তার দৈণ্যতা, যাহা দারিদ্রকে জিয়ে রাখার ষড়যন্ত্রের কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে ! যে কোন বড় উদ্দ্যোগ, তাহা বিলিয়ন ডলারের হলেও, বাস্তবায়নে দেশে সামাজিক তহবিল ব্যবহারের মাধ্যমে পূঁজি সংগ্রহ করা সম্ভব। সুতরাং বর্তমান জীর্ণ সামাজিক লেবাস পরিহার করে সমাজকে রূপদিতে হবে আগামী বিশ্বে মানবিক অধ্যায় রচনার জন্য। এটাও সম্ভব যদি বাঙালীরা মানুষ হিসাবে তাঁদের লক্ষ্য অর্জন করতে চায় !

বাংলাদেশের সকল উন্নয়ন ও সামাজিক কর্মকান্ড হতে হবে সম্মিলিত ভাবে। কারণ দেশের জন, গণ, গোষ্ঠী ও জাতি ইত্যাদির উৎস সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা কৃষকের ঘর থেকে। তাদের জাত, বর্ণ ও ধর্মের প্রভাব সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যতটা নয়, ততটা রাজনৈতিক ও শিক্ষার বেলায় পাওয়া যায়। তাই বলা যায় কেউ আরবীয় খেলাফতের প্রতিনিধি বা ব্রহ্মার মানস পুত্র হিসাবে সমাজে বিচারণ করছেন না। সমাজতত্বের বিবরণে তালিকায় পাওয়া যাবে, কৃষক, তাঁতী, জেলে ও কামার-কুমার ইত্যাদির উত্তম পুরুষ হিসাবে।

ভিক্টোরিয়ার আইন বিদায় করে নিজেদের জন্য আইন করা। প্রশাসনের পরিবর্তে পরিচালন কাঠামো গড়া, যাহার কর্মপদ্ধতি হবে নির্বাহী ব্যবস্থা। যাহা পরিত্যাগ করবে দাসদাসী পরিবেষ্ঠীত ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর গড়া প্রশাসন কাঠামো। সমাজের জন্য শিক্ষা অর্থাৎ দেশের প্রয়োজনে শিক্ষা সার্বজনীন এবং অবৈতনিক। কিন্তু উচ্চ-শিক্ষা অবশ্যই ‘সংখ্যা’র পরিবর্তে ‘গুন’কেই দেশকে লালনপালন করাতে হবে। বিষয়গুলোর অবশ্যই পরিবর্তন প্রয়োজন, যেহেতু দেশটার নাম দেওয়া হয়েছে পিপলস্ রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। তা না হলে পিপলস্ রিপাবলিকের সাথে রাজনৈতিক উপহাস করা হচ্ছে বলে ধরে নেয়া যায় !

মুসিবতের কারণ দুইটা, দেশের রাজনৈতিক মহল (ইজারাদার সকল) জানে না যে জলদস্যু রানী ভিক্টোরিয়া বাংলার সমাজের জন্য দুর্গন্ধময়, অচল এবং আবর্জনার ভাগাড় মাত্র। এখানে ভিক্টোরিয়া বলতে পেনাল কোড, নেটিভ শিক্ষা এবং ক্যাডার প্রশাসন ইত্যাদি। আর দ্বিতীয় হলো কৈফিয়ত নেওয়ার মতো বেটা-বেটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এখনও এই দেশে ! যে প্রশ্ন করবে ? মাস গেলে যে ভাতা বা বেতন নিচ্ছো তবে কেন মানুষ-জন নিঃগৃহীত হচ্ছে ? সুতরাং অপেক্ষা করতে হবে আমজনতাকে ঘন্টার শব্দের আশায়।

মনেতে চিন্তার জিজ্ঞাসা ? কবে দেশটায় নেটিভ ইংরেজ চিন্তা বর্জন করে সমাজ লালন শাহ’র ‘মানবতা’ জ্ঞানের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে ? যেখানে জন ও গণে বিরাজ করবে মানবিক সম্পর্ক এবং শুনতে পাবো, ‘‘এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে , যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রীষ্টান -জাতি গোত্র নাহি রবে . . . . .’’ ।
লেখাটি খুলনা জার্নালে পুর্বে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১১ সকাল ১১:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×