somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিক্য হত্যা বা ব্লগার হত্যা নিয়ন্ত্রনে রাষ্ট্রীয় আইন জরুরী।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাসুল (সাঃ) এর নামে কুৎসা রটানো এবং এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার অথবা প্রতিক্রিয়া নিয়ে কিছু কথা বলবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

বিসমিল্লাহের রাহমানির রাহীম।
কাব বিন আশরাফ ছিলো একজন ইহুদী নেতা এবং খুবই প্রভাব সৃষ্টিকারী জ্বালাময়ী কবি। যখন বদরে মুসলমানদের বিজয়ের সংবাদ মদীনায় পৌঁছালো, তখন কাব বিন আশরাফ সেই সংবাদ শুনে বলল, "যদি এই সংবাদ সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জন্য মাটির নিচে থাকাই তার উপরে থাকার চেয়ে উত্তম। অর্থাৎ মৃত্যুই আমাদের জন্য শ্রেয়। কুরাইশদের পরাজয়ের পর আর বেঁচে থেকে কি লাভ!"
.
এরপরেই সে শুরু করলো রাসুল সাঃ ও নবীদের নিয়ে কুৎসা রচনা। সে সময় কবিতার প্রচলন ও প্রভাব ছিলো খুব। সে কবিতা ও তার লেখার মাধ্যমে কুৎসিত সব কুৎসা রটিয়ে দিতে লাগলো মক্কায়। এমনকি মুসলিম নারীদেরকে নিয়েও নোংরা কথা বলতে শুরু করলো। সে বুঝেছিলো কী ভাষায় লিখলে এর প্রচার ভালো হবে।
.
তখন একজন সাহাবী যার নাম মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাঃ ঠিক করলেন যে তিনি কাব বিন আশরাফকে হত্যা করবেন রাসুল সাঃ এর নামে কুৎসা রটনার জন্য। এবং তিনি এই কাজের জন্য রাসুল সাঃ এর কাছে অনুমতি চাইলেন। রাসুল সাঃ অনুমতি দিলেন এই বলে, তোমার কাজ কেবল চেষ্টা করা এবং বাকিটা আল্লাহ তায়ালার উপর ছেড়ে দাও।
.
বিভিন্ন ঘটনার পরিক্রমায় তিনি কাব বিন আশরাফকে হত্যা করতে সফল হলেন। এটি একটি খুবই শক্তিশালী এবং বিশেষ অভিযান ছিল এবং এর ফলাফলও ছিল ব্যাপক। এর ফলে মদীনার চারপাশের ইহুদী গোষ্ঠী এবং কাফির সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। ইহুদীরা মুশরিকদের সাথে নিয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমাদের মধ্যে একজন শীর্ষ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে গত রাতে হত্যা করা হয়েছে। কেন তাকে হত্যা করা হল?
.
জবাবে রাসুল সাঃ যা বলেন তার সারমর্ম হল, তোমরা আমাকে অনুসরণ করনা, তবুও কি আমি তোমাদের হত্যা করবার আদেশ দিয়েছি? কেননা, তোমরা শান্ত ছিলে এবং ফ্যাসাদ সৃষ্টি করছিলেনা, আমাকে মানহানী করছিলে না, নিজ নিজ ধর্ম পালন করছিলে। কাব ইবনে আশরাফরে মতো আরো অনেকে আছে যারা অন্তরে আমার বিরুদ্ধে এইধরনের বিশ্বাস ধারণ করে কিন্তু তাদেরকেতো হত্যা করা হয়নি। তাকে এই জন্য হত্যা করা হয়নি যে সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঘৃনা করত, এই জন্যও না যে সে মুসলমিদের ঘৃনা করত।
.
এরকম অনকেইে আছে, যাদের অন্তরে এই ব্যাধি আছে কিন্তু আমরা তাদরেকে ছেড়ে দিয়েছি। সে যদি শান্ত হয়ে যেত নিজ বিশ্বাসের পরেও অন্যদের মত, আমরা তাকে হত্যা করতাম না। কিন্তু সে কবিতা কিংবা লেখার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক যুদ্ধের অথবা দাঙ্গা হাঙ্গামার সূচনা করতে চেয়েছিলো। যা ছিলো কুৎসা এবং মিথ্যায় পরিপূর্ণ। কাব ইবনে আশরাফ যা করেছিল তার সবকিছুই ছিল আকর্ষণীয় কথার দ্বারা ক্ষতিসাধন, মানহানী। সরাসরি যুদ্ধের আহ্বান নয়। যা আমার উম্মতেরা সহ্য করবে না।
.
এরপর তিনি ইহুদীদের কাছে বিষয়টি পরিস্কার করে দিলেন। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কোন ইহুদী বা মুশরিক যদি কথার মাধ্যমে, কবিতা বা মিডিয়ার মাধ্যমে আমার মানহানি করার চেষ্টা করো, তোমাদের আর আমাদের মধ্যে তলোয়ার ব্যতীত আর কিছুই থাকবে না! এরপর তিনি তাদেরকে ডেকে একটি দলীলের স্বাক্ষর করতে বললেন, যেখানে তারা সবাই সম্মতি জানাল যে তারা তাঁর বিরুদ্ধে আর কোন কথা বলবে না।
.
পাঠক,
এই ঘটনায় দেখা যাচ্ছে বদর যুদ্ধের আগুণ শেষ হতে না হতেই আরেকটি যুদ্ধ লেগে যাবার সম্ভাবনা ছিলো। আরও দেখা যাচ্ছে, ইহুদীদের নবী নিয়ে কোনো প্রকার কুৎসা রটনা করা কিংবা কবিতা রচনা করা হতোনা। এরকম উদাহারণ নেই। শান্তি বজায় রাখবার প্রয়াস ছিলো। তাদেরকে তাদের ধর্ম থেকে জোর করে ইসলামে আনার উদাহারণ ও নেই। আরেকটু ভাবলে বুঝতে পারবেন যে, ঐ সময় রাসুল সাঃ এর কথাই ছিলো আইন। অর্থাৎ তিনিই আইন প্রণয়নকারী। এবং শান্তি রক্ষার্থে, দাঙ্গা কিংবা যুদ্ধ না বাঁধাতে এই হত্যার প্রয়োজনীয়তা ছিলো। এবং সরাসরি মানহানীর ব্যাপারটিও জড়িত।
.
এখন কথা হচ্ছে গিয়ে, মুসলমান যেহেতু রাসুল সাঃ এর কথাকেই আইন মনে করে এবং এইদেশে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ সেহেতু তাদের দ্বারা কুৎসা রটনাকারীদের নিহত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। এখন রাষ্ট্র এবং সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে কিভাবে এই পরিস্থিতি ঠেকানো যায় শান্তি রক্ষার্থে। যেন দাঙ্গা না লাগে, হত্যা না হয় এবং বিভিন্ন ধর্ম একই সাথে সহাবস্থানে থাকতে পারে। আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগের মাধ্যমে যদি দেশের সার্বিক অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হয় তবে এই আইন কেন প্রণয়ন করা যাবেনা যে, রাসুল সাঃ কে নিয়ে কোনো মতেই কুৎসা রটনা করা যাবেনা।
.
মানুষের ভেতরের ঘৃণাকে কোনো আইন কন্ট্রোল করতে পারবেনা। পারেনি। আইন প্রকাশ্য ঘৃণাকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। ধর্মান্তরিত কেউ হতে চাইলে সে হয়ে যাবে। কিন্তু রাসুল সাঃ এর নামে কুৎসা গাওয়া মানুষকে যদি কেউ হত্যা করে ফেলে সেই দায়ভার রাষ্ট্রের। কেননা রাষ্ট্র পর্যাপ্ত ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি এবং আদতে এতে হত্যাকেই উৎসাহিত করা হয়েছে। মুসলমান যেহেতু এই অবমাননা সহ্য করবেনা সেহেতু রাষ্ট্রের উচিৎ এই অবমাননা যেন করবার ধৃষ্টতা না করে প্রথম থেকেই সেই ব্যাবস্থা করা। নইলে এইসব ব্লগার কিংবা অসুস্থ লেখক হত্যা থামানো যাবেনা।
.
কারণ, ইসলামে এরকম উদাহারণ রয়ে গিয়েছে। তার প্রেক্ষিত কি ছিলো এবং এই হত্যার ফলাফল রাসুল সাঃ এর সময়ে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে রাসুলের নিজের হাতে এবং এখনকার হত্যার কুফল কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, আদৌ যাবে কিনা এই বিশ্বায়নের যুগে এবং আজকের এই ইহুদী নিয়ন্ত্রিত বিশ্বে তা বেশিরভাগ মুসলিম গভীরভাবে ভেবে দেখবেন না। উগ্রপন্থীরা কিংবা কট্টরপন্থীরা বেশীরভাগ সময়ে গভীরে ভাবেন না। একটি দুটি উদাহারণের মাধ্যমেই বর্তমানকে তারা অতীতের আলোকে দেখে ফেলতে চায়।

#Elora_Zaman

ঈষৎ পরিমার্জিত
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×