আমি যখন এই পোষ্ট লিখতে বসছি তার কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে ২১শে ফেব্রুয়ারী । যখন এই পোষ্ট প্রচার হবে তখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাসা দিবস । প্রাণ দিয়ে যে ভাষা অর্জন তা আমাদের প্রাণের ভাষা, বাংলা ভাষা । আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি লাভ করার পর এখন বাংলা ভাসা অনেক সমৃদ্ধ, কিন্তু সব সময় এমন ছিল না । এই পর্যায়ে আসতে অনেক চড়াই উৎরাই পথ পাড়ি দিতে হয়েছে । বিশ্বে যদি কোন ভাসাকে সংগ্রামী ভাষার স্বীকৃতি দিতে হয় তবে তা হবে বাংলা ভাষা ।

বহু আগে যখন ইংরেজরা এই উপমহাদেশে আসেনি, তারও আগে মোগলরাও আসেনি, যখন এই অঞ্চল অনেকগুলো ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল তখনও এ অঞ্চলের মানুষের ভাষা ছিল বাংলা । সেই সময়ে সংস্কৃত ভাষার ধাপট ছিল অনেক বেশি । সমাজের উচ্চপদস্ত লোক রাজ্যসভা অথবা উচু শ্রেণীর ব্রাম্মনরা সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করত । সমাজের নিচু শ্রেণীর ভাষা ছিল বাংলা । বাংলাতে কোন শিল্প সাহিত্যের চর্চা তো হতইনা এবং হতেও দেয়া হত না । কেউ যদি বাংলায় সাহিত্য চর্চা করতে চাইত তাহলে শিক্ষিত সমাজ তাকে বয়কট করতে ও দ্বিধা করত না ।
পরবর্তীতে যখন মোগলরা উপমহাদেশ শাসন করতে এল তখন তারা প্রথম বাংলাকে স্বীকৃতি দেয় । হতে পারে সংস্কৃত ভাষা কঠিন হওয়াতে তারা এটাকে গ্রহন করেছিল । এই প্রথম বাংলা রাজসভায় ব্যবহারের অনুমতি পায় । কিন্তু এখানে বাংলাকে নিয়ে অনেক কাটাছেড়া করা হয় । মোগলদের সুবিধা মত কিছু আরবী এবং ফারসী শব্দ এই ভাষার সাথে জুড়ে দেয়া হয় । যা পরবর্তীতে বাংলা ভাষার অংশ হয়ে যায় । তবে এই সময়ে মুটামুটি শিল্প সাহিত্যের চর্চা বাংলাতে হয়েছিল ।
যখন ইংরেজ শাসন এল তখন বাংলা মুটামুটি স্বীকৃত একটা ভাষা । তার পরও তারা এই ভাষার উপর কাটাছেড়া করেছে । আরবী এবং ফারসীর যেসকল শব্দ তাদের পছন্দ হয়নি তা বাদ দিয়ে কিছু ইংরেজী ও গ্রীক ভাষার কিছু শব্দ বাংলা ভাষায় ঢুকিয়ে দেয়া হল । ইংরেজদের আশির্বাদপূষ্ট কিছু পন্ডিত তখন এই কাজটি করেছিলেন ।
অনেক কাটাছেড়ার পর যখন বাংলা ভাষা অনেক সমৃদ্ধ, অনেক কবি সাহিত্যিক, পন্ডিত এই ভাষা নিয়ে গভেষনা করছেন । তখন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্টি পূর্ব পাকিম্তানের মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চাইল । যা অনেক রক্তের বিনিময়ে রক্ষা করা হল ।
আজ আমাদের মাতৃভাষা বাংলা, আমাদের লেখার ভাষা বাংলা, আমাদের পড়ার ভাষা বাংলা । আজ ২১শে ফেব্রুয়ারী আমাদের মাতৃভাষার দিন । এই ভাষাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি । এই দিনে আমরা আনন্দ কির । এটা আমাদের অধিকার । কারন এই ভাষার মত সংগ্রামী ভাষা বিশ্বে আর একটাও নেই ।