somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঁদুন! হাউমাউ করে কাঁদুন! :((

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাঁদুন। প্রাণ খুলে কাঁদুন। নীরবে অথবা হাউমাউ করে কাঁদুন। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদুন বা ডুকরে ডুকরে কাঁদুন। কান্নাকে মেয়েলী ব্যাপার বা অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার মনে করারও কোন প্রয়োজন নেই। সুস্থ মমতাভরা জীবনের জন্যে কান্না অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনোবিজ্ঞানীরা এখন বিবেচনা করছেন। আর কান্নাকে যত সহজ ব্যাপার মনে করা হয়, কান্না তত সহজ ব্যাপারও নয়। বললেই কাঁদা যায় না। কাঁদতে হলে একজন মানুষকে কোন গভীর বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতাকে মানসিকভাবে পুরোপুরি স্মরণ করতে হয় এবং এর সাথে জড়িত সকল দুঃখ ও আঘাতকে সেই মুহূর্তে মনে একীভূত করতে হয়।

বেদনার্ত অনুভূতি প্রখর হলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে চোখ দিয়ে পানির ধারা প্রবাহিত হতে শুরু করে। চোখের পানি ও কান্না মনের আবেগ প্রকাশের মাধ্যম। তাই মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, দুঃখ ও বেদনার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীর ও শরীরের সিস্টেমকে রক্ষা করার এক প্রাকৃতিক নিরাপত্তা প্রক্রিয়া হচ্ছে কান্না।

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার পল রামসে মেডিকেল সেন্টারের সাইকিয়াট্রি বিভাগের বায়োকেমিস্ট ডা. উইলিয়াম ফ্রাই বলেন যে, দুঃখ, বেদনা, মানসিক আঘাত দেহে টক্সিন বা বিষাক্ত অণু সৃষ্টি করে আর কান্না এই বিষাক্ত অণুগুলোকে শরীর থেকে বের করে দেয়। এ কারণেই দুঃখ ভারাক্রান্ত ব্যক্তি ভালভাবে কাঁদতে পারলে নিজেকে অনেক হালকা মনে করে।

দুঃখজনিত চোখের পানি এবং জ্বালাপোড়ার কারণে চোখে আসা পানির রসায়নে কোন পার্থক্য আছে কি না এ নিয়ে গবেষণার জন্যে ড. ফ্রাই এক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। একদল ভলান্টিয়ারকে দুঃখে ভরা ছায়াছবি দেখতে দেয়া হয়। তাদেরকে বলা হয় ছবি দেখে কান্না পেলে চোখের পানি টেস্টটিউবে রাখতে হবে। কয়েকদিন পর এদেরকেই সদ্য কাটা পেঁয়াজের ঝাঁঝের সামনে বসিয়ে টেস্টটিউবে চোখের পানি সংগ্রহ করা হয়। বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, দুঃখজনিত চোখের পানি আর পেঁয়াজের ঝাঁঝ লেগে আসা চোখের পানির রাসায়নিক গঠন পুরোপুরি আলাদা। মনোবিজ্ঞানীরা অবশ্য রাসায়নিক প্রমাণ ছাড়াই অনেক আগে থেকেই বিশ্বাস করে আসছেন যে, কান্না শরীরের জন্যে অত্যন্ত উপকারী। তারা মনে করেন সমস্যা যে ধরনেরই হোক না কেন, সে সমস্যার সাথে জড়িত অনুভূতির ফলে সৃষ্ট টেনশনকে বের করে দেয় কান্না।

মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর ফ্রেডরিক ফ্লেচ বলেন যে, মানসিক চাপ ভারসাম্য নষ্ট করে আর কান্না ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে। কান্না সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়। না কাঁদলে সেই মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে থেকেই যায়। কিন্তু নগর সভ্যতা আমাদেরকে দুঃখজনিত আবেগ অর্থাৎ কান্না প্রকাশে সবসময় বাধা দিয়ে এসেছে। আমাদের এখন ধারণা হচ্ছে কাঁদা এক ধরনের অভদ্রতা। তাই আমরা শুধু কান্নাকেই চেপে রাখি না এর সাথে সাথে ভয়, উৎকণ্ঠা, ক্রোধ সব কিছুকেই চেপে রাখতে সচেষ্ট থাকি। যা আমাদের দেহে ক্রামগত টক্সিন বা বিষাক্ত অণু সৃষ্টিতে সহায়ক হয়। অথচ কান্না এক সম্পূর্ণ মানবীয় ব্যাপার। কান্না শরীরকে সুস্থ করে। কান্না সহানুভূতি ও মমত্বকে আকর্ষণ করে। অশ্রু মমত্ব বাড়ায়। আর মমতাই মানুষকে মানুষ করেছে।

কিন্তু কান্না না এলে কি করা যাবে? এ সমস্যা অনেকেরই। বিশেষত দায়িত্বশীল পুরুষরা কাঁদতে পারেন না। আপনি কাঁদতে না পারলে প্রথম সচেতন হয়ে উঠুন যে, আপনার কাঁদা প্রয়োজন। আপনার কাঁদা কেন প্রয়োজন একথা ঘনিষ্ঠজনদের বলুন। আপনি ইচ্ছেমত কাঁদুন। কারণ, না কাঁদার মানে হচ্ছে আবেগ প্রকাশের সহজ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখা। তবে অবিশ্বাস্য হলেও দেখা গেছে যে, বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তি সহজে কাঁদতে পারে না। দুঃখ, ক্ষতি বা বেদনার ব্যাপারে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলেই মানুষ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়। আর গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্ণ মানুষ তার বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে শুরু করে কান্নার মাধ্যমে। তাই মনোবিজ্ঞানী ড. গে গায়েরলুম চমৎকারভাবে বলেছেন, সমাজ যাদেরকে না কাঁদতে শিখিয়েছে, তাদের প্রথম কাজ হচ্ছে প্রাণ খুলে কাঁদতে শেখা।

ডা. লুম তার বই ‘ইউর সেকেন্ড লাইফ’-এ কাঁদার কৌশল বর্ণনা করেছেন। একটি ঘরে আরাম করে বসুন। নিশ্চিত হোন টেলিফোন বা কোন লোক আপনাকে বিরক্ত করবে না। এবার বুকের উপর দুই হাত রাখুন। দ্রুত শ্বাস নিন। দ্রুত শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে শিশুর কান্নার মত আওয়াজ করুন। আওয়াজের প্রতি খেয়াল করুন। আওয়াজের পিছনের বেদনাকে অনুভব করুন। চাপা কান্নার মত আওয়াজ করুন। যে বিষয়গুলো আপনার দুঃখ-বেদনার কারণ হচ্ছে সেগুলো নিয়ে ভাবুন। বার বার চাপা কান্নার মতো আওয়াজ করুন। আর এই কান্নার পেছনের দুঃখ-বেদনার কথা ভাবুন। নিজেকে মানুষ হওয়ার অনুমতি দিন। কাঁদতে আর অসুবিধা হবে না। প্রথমবারে সফল না হলে অনুশীলনের পুনরাবৃত্তি করুন। মাথাব্যথা করতে শুরু করলে কাঁদার অনুশীলন করুন। বেশিরভাগ সময়ই মাথাব্যথা আপনার ভেতরে সঞ্চিত টেনশনেরই বহিঃপ্রকাশ। তখন কাঁদতে শুরু করুন। কাঁদতে পারলেই দেখবেন কেমন হালকা লাগা শুরু করেছে। কান্নার মধ্যে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না, হাউমাউ কান্না বেশি উপকারী। ফোঁপানি সারা শরীরে মৃদু ও ছন্দময় তৎপরতা সৃষ্টি করে। এই ধরনের কান্না শুধু কণ্ঠনালীতেই নয়, বুকে, পেটে, নাভিমূলে এমনকি সাইনাসেও কম্পন সৃষ্টি করে এবং ভেতর থেকে আপনাকে প্রশান্ত করে তোলে। মনোবিজ্ঞানী ডা. স্যাভারি বলেন যে, সচেতনভাবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদাও স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী।

★ উপরের লেখাটা কিছুক্ষণ আগে মহাজাতকের "কোয়ান্টাম মেথডে" পড়ছি। পড়ার পর থিক্কাই কাঁন্দনের জন্নি অনেক ট্রাই করতেছি। বাট আমারতো কাঁন্দন আহে না উল্টা হাসি আহে। কী করুম?? :( :(
৮টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×