somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ত্রপা ও একটি কৃষ্ণ গহ্বর{২য় ও শেষ পর্ব}

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ত্রপা ও একটি কৃষ্ণ গহব্বর{১ম পর্ব}

৯।।
রাত ১০টা হতে চলল। ত্রপা তখন ও বুঝতে পারছিল না কি করবে তাই এয়ারপোর্টের বাহিরেই পায়চারি করছিল।
হটাৎ করেই খেয়াল করল এক বিদেশি লোক ওর দিকে তাকিয়ে ছুটে আসছে।


লোকটা এসে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলল, তুমি ত্রপা না?
হ্যাঁ।
তোমাকে আমি কানাডিয়ান এ্যাম্বেসিতে দেখেছিলাম। তুমি হয়ত আমাকে খেয়াল করো নি। তো তুমি একা কেন? তোমাকে পৌঁছে দিতে আর কেউ আসে নি?
ত্রপা এক মুহূর্ত চুপ থেকে মনে মনে একটা মিথ্যে বানিয়ে নিয়ে বলল,
না আমি একাই এসেছি। ও আচ্ছা আপনার নাম তা তো জানা হল না।
(ত্রপার মোটেও লোকটার নাম জানতে ইচ্ছা করছিল না তবে কথা ঘুরিয়ে দিবার জন্যই বলা)
ও আমি রবার্ট। হেসে হেসে বলতে লাগলো, আমেরিকার নাগরিক তবে কানাডায় বসবাস এবং আমি একজন অনলাইন সাংবাদিক। আর তুমি যে পুরস্কারের জন্য কানাডা যাচ্ছো, আমিও সেই প্রোগ্রামের একটা অংশ। তবে প্রতিযোগী হিসেবে নয় কর্মী হিসেবে।
যা হোক, প্লেন ছাড়ার তো আর বেশি দেরি নেই, ভিতরে যাওয়া যাক।
হম। চলুন।
যথা সময়ই প্লেন ছাড়ল। ত্রপার প্রথম প্লেনে চড়ার অভিজ্ঞতা এটি। ত্রপার সিটটা অবশ্য রবার্টের পাশেই পড়েছিল।



১০।।
রবার্টের সাথে ত্রপার আজ কানাডায় বসবাস এক বছর হতে চলল। এক বছর আগের প্লেন জার্নিতেই রবার্ট ত্রাপার সব কথা শুনেছিল। সেখান থেকে অনুষ্ঠানে যাওয়া, পুরস্কার গ্রহন, হোটেলে থাকা সহ সব কিছুতেই রবার্ট হয়েছিল ত্রপার একান্ত সহচর। পরবর্তীতে রবার্টই ত্রপাকে কানাডায় একত্রে থাকার আমন্ত্রণ জানায় আর ত্রপাও রাজি হয়ে যায়। যদিও ত্রপা আজ পর্যন্ত জানে না কিসের জন্য রবার্ট তাকে এত করছে। করুনার ব্যাপারটা যে ত্রপার মনে কখন ও আসে নি তা নয়। তবে ত্রপাও যে ভিন্নভাবে ঋণ শোধ করে চলছে।


ত্রপাও আজ একজন বিখ্যাত সমাজ কর্মী ও অনলাইন সাংবাদিক। বিবিসি, সিএনএন এও ওর রিপোর্ট মাঝে মধ্যে দেখা যায় । এখন প্রায়ই তার বাংলাদেশে যেতে হয়। বাংলাদেশেও সে এখন অনেক পরিচিত। ত্রপার এখন বলতে গেলে সবই আছে শুধু নেই পরিবারের সাথে যোগাযোগ । নেই বললে ভুল হবে কারন তার ভাইটাকে সে মাঝে মাঝে বিদেশ থেকে কিছু উপহার পাঠায় তবে কথা বলা না পরিবারের কারো সাথেই।


এবার দেশে এসে ত্রপা তিন মাস হয়ে গেল থাকছে। টিভি খুললেই ত্রপার মুখ দেখা যায়।
একদিন খবর পেল, সাইফের স্ত্রীর হার্টের সমস্যা এবং তারা ঢাকাতেই আছে। হটাৎই ত্রপার যেন পুরনো সব সৃতি মনের ক্যানভাসে রঙ্গিন হয়ে উঠল। সেই রঙ্গিন ক্যানভাসেই দেখা একটি বিষয় ত্রপাকে বেশ নাড়িয়ে দিল। ও যে সাইফের বিয়েতে যায়নি আর এখন চলমান এই ভাল সময়ের একটা মুহূর্তেও যে ওর ওই পুরনো কথা মনে পড়ে নি। তার মানে কি ত্রপা হেরে গেল!!
ত্রপাও যে পুরোপুরি স্বার্থহীন নয়। তবে ত্রপা পুরোপুরি হারতে নারাজ। ত্রপা জানতে পারে টাকার অভাবে সাইফ তার বউয়ের চিকিৎসা করাতে পারছে না। তাই ত্রপা সাইফের বউকে দেখতে গেল এবং সাইফকে বউয়ের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা দিল।
সাইফ বিনাবাক্যে কৃতজ্ঞতার সাথেই টাকাটা নিল কারন সাইফ যে এত টাকা জোগাড়ে অক্ষম। ত্রপার টাকা দিয়ে সাইফ তার বউয়ের চিকিৎসা করাতে লাগলো। ত্রপাও নিজের কাছে কিছুটা হালকা হল কারন কেউ না জানলেও সে জানে, সে আজ জয়ী। এ বিজয় যে সবাই অর্জন করতে পারে না।
এরই মধ্যে ত্রপা খবর পেল, রবার্ট তার নিজ দেশি এক মেয়েকে বিয়ে করে এখন আমেরিকা রয়েছে। খবরটি শুনা মাত্রই ত্রপার সব উলটপালট হয়ে গেল। কারন ত্রপার মাঝেই যে বেড়ে উঠছে রবার্টের সত্তা।

১১।।
ত্রপা পরিবারে থেকেই যুদ্ধ করে বেড়ে উঠেছে। এবার ও ব্যাতিক্রম নয়। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। জীবন চলে তার নিজ গতিতে। কেউ কেউ সেই গতির সাথে তাল মিলাতে না পেরে থেমে যায় কিন্তু ত্রপাকে যে তা পারতেই হবে।

সামিজিক ও আর্থিক বর্তমান অবস্থার কারণে ত্রপা সমাজের কটু কথা অনেক দিন শুনতে পায় না। ওর হটাৎ মনে হল, ওর অনাগত সন্তান নিয়ে আবার ওকে অনেক কিছু শুনতে হতে পারে। কারন রবার্টের সাথে যে ওর কোন আইনি সম্পর্ক নেই।
যদিও ত্রপা মনে করে রবার্টের সাথে বিয়ের সম্পর্ক না হলেও যে সম্পর্ক এত দিন ছিল তা বিয়ের চেয়েও বেশি কিছু।
তবে একটু পরেই তার মনে হল, সে সমাজ বা পরিবার শুধু একটা মেয়ের রুপ ও একাডেমিক রেজাল্টকেই গুরুত্ব দেয়; তাদের কটু কথায় কান দিবার জন্য দায়িত্ববোধ থাকাটা বোধয় উচিৎ নয়।

১২।।
টক শো প্রোগ্রাম টা শেষ হতেই, ত্রপার বেশ কাহিল লাগা শুরু করল। এমনটা কিন্তু তার আগে কখনই হয় নি। কিন্তু হটাৎ কেন হল তা তার মাথায়ই আসছিল না। এর মাঝেই আর একটা কথা মনে পড়তেই, ক্লান্তি ভাবটা যেন চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে গেল। আজ রাত সাড়ে তিনটা বাজে ওর নিউওর্ক গামী ফ্লাইট ধরতে হবে। হাতে সময় মাত্র তিন ঘণ্টা।

সব কিছু ঘুছিয়ে এয়ারপোর্টে আসতে আসতে প্রায় দেড়টা বেজে গেল। এয়ারপোর্টের যাবতীয় কাজ শেষ করা মাত্রই শুনল, ফ্লাইট আধা ঘণ্টা লেট এ ছাড়বে। তো আর কি করা, বসে বসে কাটানো ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু হটাৎই তার চোখ পড়লো একটা বড় আয়নার উপর। ত্রপাকে আপাদমস্তক পুরটাই দেখা যাচ্ছে ওটাতে। ত্রপার চোখ টা যেন একটু স্থির হয়ে গেল। আজ ওকে কেন জানি একটু অন্যরকম সুন্দর লাগছে। কেন লাগছে তা ভাবার আগেই, প্লেনে উঠে পড়ার সময় এসে গেল।



ত্রপার প্লেনে উঠতেই মনে হল, তাকে আজ অন্যরকম লাগছে কারন সে একা নয়। মাতৃত্তেরও বুঝি আলাদা সৌন্দর্য আছে। আর সে আজ আমেরিকা যাচ্ছে রবার্টকে ধরার জন্য নয়। শুধু এইটুকু বলতে, তোমার দ্বিতীয় সত্তাকে নিয়েই বেঁচে থাকব আজীবন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×