somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এন্ড অফ আ লাভ স্টোরি

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নতুন স্কুলের প্রথম দিন।
আকাশের খুব অদ্ভুত লাগছে জায়গাটা, বিশেষ করে তার সহপাঠি গুলোকে। অন্য শহর থেকে এসেছে বলে তার সহপাঠিরা এমনভাবে তাকে লক্ষ করছে মনে হয় এলিয়েন দেখেছে। প্রথম ক্লাস শেষ হতেই শুরু হল আপদ, হঠাৎ একদল তরুণীর আবির্ভাব। তারা আকাশের কাছে এসে ঘিরে ধরেছে তাকে, মনে হচ্ছে কোরবানির গরু জবাই করতে এসেছে তারা। তাদের মধ্যে নেত্রী টাইপ যে মেয়েটা সে আকাশকে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করলো
-কোন স্কুল থেকে আসা হয়েছে?
-- মনিপুর হাইস্কুল
- এতো ভালো স্কুল ছেড়ে এখানে আসার কারন কী?
-- বাবার বদলি হয়েছে এখানে
- হুম!! আমি হচ্ছি এই স্কুলের ফার্স্ট গার্ল, নাম শিমু। নামটা মনে রাখবে,কোন প্রব্লেম হলে আমাকে জানাবে। আর খবরদার আমাকে লাইন মারার চেষ্টা করবেনা। এই পর্যন্ত ৮ জন ব্যর্থ হয়েছে ঠিক আছে।
আকাশ কি বলবে বুঝতে পারছিলনা।তাই মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।

নতুন স্কুলের কাউকে ভালকরে চেনেনা আকাশ, তাই পড়াশুনার বিষয়ে কোন সমস্যা হলে আকাশ শিমুর কাছেই যেতো। শিমুও আকাশকে সাধ্যমতো সাহায্য করতো। আস্তে আস্তে তাদের সম্পর্কটা বই পুস্তকের বাইরে গড়িয়েছে। তারা প্রতিদিন সকাল বেলা ব্যাচ শেষে হাটতে বের হতো। সুখ দু:খ ভাগাভাগি, খুনশুটি আর মান অভিমানের দরুন আকাশ আর শিমু এখন দুজন দুজনের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে তারা দুজুন দুজনকে একদিন না দেখে থাকতেই পারেনা। যেহেতু শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকে, ওইদিনটায় তাদের মন খাচায় বন্দি পাখির মত হয়।

একদিন সকালে ব্যাচ শেষে--

-শিমু একটা কথা বলি তোকে?
-- হুম বল, যা বলার তাড়াতাড়ি বল।
- না মানে...
-- মানে মানে করছিস কেন নতুন বউয়ের মতন (হিহিহি করে হেসে বলতে লাগলো শিমু)
- না মানে তোর আমার সম্পর্কে কি ধারণা
-- ধারনা আবার কি হবে? তুই আমার বন্ধু, ব্যস!!
- আর কিছুনা?
-- আর কি হবে?? তুই কি আমাকে প্রপোজ করেছিস নাকি যে আর কিছু ভাববো
- যদি করি?
-- তোর মাথাটা গেছে, বুদ্ধু কোথাকার চল ক্লাসের সময় হয়ে গেছে ক্লাসে যাই।

কথাটা বলেই উঠে হাটতে শুরু করে শিমু। শিমু জানে আকাশ কি বলতে চেয়েছে।শিমুও আকাশকে নিয়ে এরকম অনেক কিছু ভাবে, অনেক সপ্ন দেখে। শিমু তার নিজের দুনিয়াতে আকাশকে নিয়ে অনেক সপ্ন দেখে। প্রতিনিয়ত দেখে। কিন্তু এস.এস.সি পরিক্ষার আগ মুহুর্তে শিমুর পক্ষে এই ধরনের কিছুর জন্যে একদম সময় নেই। ডক্তার হতে হবে যে, শিমুর একমাত্র সপ্ন যে সে ডক্তার হবে।
এগুলো ভাবতে ভাবতে পিছনে চেয়ে দেখে আকাশ নেই। চোখের কোনায় হঠাৎ করে জমে যাওয়া দু'ফোঁটা পানি মুছে এগিয়ে যায় শিমু।
এরই মধ্যে টেস্ট পরিক্ষার সময় চলে এসেছে। আকাশ আজকাল আগের মতো নেই। খুব বদলে গেছে, অনেকটা বদলে গেছে। আগের মতন আর পড়াশুনায় তার মন নেই। টেস্টের ফলাফল দেওয়া হল, আকাশ কোনরকম একটা মার্কস নিয়ে পাশ করেছে। বাসার থেকে তাই অনেক কথা শুনতে হয় আকাশকে। ওদিকে স্কুল থেকেও ডাক পড়ে। প্রথম সারির একজন ছাত্রের এস.এস.সি পরিক্ষার আগ মুহুর্তে এরকম একটা ফল কেউই আশা করেনি। নানাবিধ চাপ মেনে নিয়ে আকাশ আবার পুরো দমে শুরু করে দিয়েছে পড়াশুনা। ওদিকে শিমুও মনে মনে ব্যাপারটি বুঝছে, কিন্তু ওপাশ থেকে তারও হাত দুটি বাধা।
এস.এস.সি পরিক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে আজ। শিমু আজ অনেক খুশি, আজ শিমু আকাশের কাছে তার মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে একদম প্রস্তুত। আকাশ এবং শিমু দুজনেই ভালো ফল আর্জন করেছে পরিক্ষায়। কিন্তু শিমু আজ চাতক পাখির মতো করে ঘুরেও সারা স্কুলে আকাশের দেখা পাচ্ছেনা। সবাই আনন্দ করছে ফলাফল পেয়ে, কিন্তু শিমুর মনটা ভীষণ খারাপ, কারন শিমু যার অপেক্ষা করছে তার দেখা নেই। পরক্ষনে জানা যায় আকাশরা সেদিনই খুলনা ছেড়ে চলে যায় বরিশালে, তার বাবার পোস্টিং-এর কারনে।
ব্যাপারটা জেনে শিমু হঠাৎই নিস্তবদ্ধ হয়ে যায়।

তারপর অনেক বসন্ত পার হয়ে যায়।শিমুকে এরপর আর আগের মতন হাসতে দেখা যায়নি। আগের মতন করে আর সে দস্যিপনা করেনা। আর আগের মতন কথা বলেনা।
আকাশ আর যোগাযোগ করেনি শিমুর সাথে।

১০ বছর পরে কোন এক সন্ধায় শাগুফতা শপিং সেন্টারে, সাদা শার্ট কালো প্যান্ট পরা একটা ছেলেকে দেখে তার পিঠে হাত দিয়ে দাড়া করায় শিমু।

- শিমু না?
-- হ্যা।আকাশ?
- কেমন আছো শিমু?
-- ভালো আছি, তুমি?
- খুব ভালো আছি
-- এখানে এভাবে দেখা হবে ভাবিনি।
- ফ্যামিলি নিয়ে আসলাম শপিং করতে।

শিমু মা? কোথায় তুমি? এদিকে এসো মা,
বলতেই ফুটফুটে একটা মেয়ে দৌড়ে আসে বলতে লাগল, "এইযে বাবা আমি এখানে"

-- তোমার মেয়ে?
- হ্যা! আজকে ওর জন্মদিন তাই ওকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম, কাজের অনেক চাপ তার ভিতরেও সময় বের করে বের হলাম। ওহ তোমাকে তো বলাই হয়নি বাবার এক বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করেছিলাম ভার্সিটি শেষ করে, আমার শশুর অনেক পয়সাওয়ালা, বলেছিলেন তার মেয়েকে বিয়ে করলে ওনার কম্পানিতে বড় চাকরি পাওয়া যাবে। বাবা প্যারালাইজড ছিলেন তাই এরকম একটা সুযোগ হাতছাড়া করার উপায় আমার হাতে ছিলনা।

- খুব ভালো আছো তাহলে। কি নাম বউয়ের
-- শ্রাবনী

একথা বলেতেই পিছন থেকে শিমুর পাশে এসে দাঁড়ায় একটা ছোট্ট ছেলে "কোথায় ছিলে মা? আমি অনেক খুজেছি তোমাকে"
এইত বাবা আমি এখানেই ছিলাম

-- তোমার ছেলে তাইনা?
- হ্যা
-- নাম কি বাবা তোমার?
-"আকাশ" ওর নাম আকাশ, তোমার মতই হয়েছে, অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলতে খুব লজ্জা পায়।

এরমধ্যে হঠাৎ আকাশের মোবাইলে কল আসে।

-- বউ ফোন করেছে, ও ওইদিকের একটা দোকানের ভিতরে আছে, আমাকে খুজছে। আসি তাহলে শিমু
- ভালো থেকো

এই বলে দুজন দুজনের গন্তব্যের দিকে হেটে চলেছে। আকাশ এবং শিমু দুজনেই পিছন ফিরে তাকাতে চাইছিল। কিন্তু সামনের দিক থেকে কোন এক আকর্ষণ যেন তা আর হতে দেয়নি। তারপর তারা ভীড়ের মাঝে হারিয়ে গেলো অনেক গুলো সৃতি আর কিছু অনুভবকে পিছনে ফেলে
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×