somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কয়েদী নাম্বার ৪৪০

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সকালে ঘুমটা বোধহয় একটু তাড়াতাড়িই ভেঙেছে।মনের ভিতরে একটা অস্থির অনুভূতি কাজ করছে বলে সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। কারন অবশ্য একটাই, আজ আমি মুক্তি পাচ্ছি। সকাল ৯ টায় অন্য সব কয়েদিরা যেমন খাবার পায়, আজ আমার খাবারটা তার থেকে একটু ভিন্ন এবং ভালো মানের।

দুপুর হতে না হতেই পাশের ওয়ার্ডের জহির,কবির ভাই, সালাম চাচা এবং রশিদ ভাই হাজির আমার রুমে।সবাই খুব দু:খ করছে আমার জন্যে। সবথেকে মজার বিষয় হচ্ছে যে জহিরুলের সাথে আমার দা-কুমড়া সম্পর্ক, সেই জহিরুলও আজ আমার পাশে বসে ছোট বাচ্চাদের মতো কাঁদে দিয়েছে। আমারও খুব খারাপ লাগছে কারন দীর্ঘ ৮ বছর যাদের সাথে নিজের জীবনের অনেক গুলো মুহুর্ত ভাগ করে নিয়েছিলাম তাদের থেকে আজ চলে যাচ্ছি অনেক দূরে।

বিকাল বেলায় জেলার স্যার আমার রুমে এসে আমাকে একদম জড়িয়ে ধরলেন, আমাকে আড়াল করে নিজের চোখ মুছলেন। এই জেলখানায় অনেক জেলার এসেছেন আবার বদলি হয়েছেন তবে মনির স্যার সবার থেকে আমাকে বেশি ভালবাসতেন কারন আমার পরিবার বলতে কিচ্ছু নেই। তাছাড়া আমার ব্যবহারের কারনে আমাকে অন্য চোখে দেখেন তিনি একথাটাও সবাই জানে।

পাশের বিল্ডিংএর মুকুল ভাইয়ের কবুতর গুলো আজ বারান্দা ছেড়ে উড়াতে বের হয়নি। একবার মুকুল ভাইয়ের বারান্দায় ১ টা আহত কবুতর এসেছিল, মুকুল ভাই কবুতরটাকে সুস্থ করে। তারপর জেলার স্যারকে বলার পরে জেলার স্যার তাকে আরো কবুতর এনে পালার অনুমতি দেন এবং এরপর থেকে মুকুল ভাইয়ের বারান্দায় এখন প্রায় ৩০ জোড়া কবুতর আছে।

প্রতিদিন বিকালে কয়েদীদের ১ ঘন্টার জন্যে খোলা মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যান্য দিন সবাই এই সময়টায় খেলাধুলা বা গল্পগুজব করলেও আজ সবাই আমার পাশে এসে বসেছে গোল হয়ে। নিজেকে কুরবানির পশু মনে হচ্ছে। জবাই করার আগে যেমন পশুগুলোকে সমাদার করা হয় আমার ক্ষেত্রেও সেরকম কিছুই হচ্ছে। সবাই খুব কাদছে আমার জন্য। কেউ কেউ তো হঠাৎ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরছে। আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে বুকের একদম বাম পাশে। হঠাৎ করে চোখের কোনায় পানি চলে আসছে মাঝে মাঝে। সবাইকে লুকিয়ে পানি মোছার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে আমাদের এখানকার ইমাম রকিব ভাই এসে আমাকে নামাজ পড়ালেন। তারপর অনেক গুলো দোয়া পড়লাম তার সাথে। শুনলাম ওপাশে সব কিছু রেডি করাই আছে। রকিব ভাই বললেন
এইটুকু সময়ে যত পারো কলেমা পড়ে নাও।

রাত ১১:৩০ এ পুরো জেলখানায় কান্নার রোল পড়ে যায়। আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনেক সৃতিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি। পা দুটো আমার মস্তিষ্কের ইশারা শুনতে চাচ্ছেনা। কয়েদি নাম্বার ৪৪০ এর অস্তিত্ব কিছুক্ষণ পরেই হারিয়ে যাবে। আর কখনো আমি ছোট ভাই শিমুলের খাবার চুরি করে খেতে পারবনা।আর কখনো জহিরুলের সাথে আমার গেঞ্জাম হবেনা। শফিকের বাড়ি থেকে আসা আমার প্রিয় পায়েস আর খাওয়া হবেনা। আর কখনো সবার জন্যে রান্না করতে পারবনা। মনের সাথে যুদ্ধ করে হেটে চলেছি আর উপলব্ধি করছি আসলেই জীবন অনেক ছোট।

ফাঁসির মঞ্চে এসে পৌঁছলাম। শুনেছি এটা এই জেলখানার একদম নতুন ফাঁসির মঞ্চ। প্রথম ফাঁসি আমারই হচ্ছে। কতজনের ভাগ্যে এগুলো থাকে?
হাহাহা। ফাঁসির মঞ্চে ওঠার আগে জল্লাদ কবির ভাই আমার মুখে কালো কাপড় পরিয়ে দিলেন। কবির ভাইয়ের হাত কাঁপছিল বুঝতে পারছিলাম। তারপর হাত বাধা হলো। যখন ফাঁসির দড়ির নিচে নেওয়া হলো আমাকে তখন ইচ্ছে হচ্ছিল এগুলো সব ছিড়ে মনে প্রানে ছুটে পালাই। কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে।

সামনে ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকে সময় গুনতে শুনছি। ঘিড়ির কাটার টিক-টক টিক-টক আওয়াজটা কানের ভিতরে বিষ ঢালছে। ৩ ২ ১!!
তারপর ছ্যাত করে একটা শব্দ শুনলাম। আমার হাত পা ছটফট করতে লাগলো। দুই মিনিট পর নিচে নামানো হলো আমাকে। আমি সেগুলো চোখে দেখতে পাচ্ছি তবে কিছু অনুভব করতে পারছিনা। হাত পায়ের রগ কেটে ফেলা হলো। ওপাশ থেকে কালো একটি অবয়ব আমাকে ইশারা করছে। মরার পর মানুষের চোখ সচল থাকে ৭-৮ মিনিটের জন্যে। এইসময়টুকুতে আমি যা দেখার দেখে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। সাথে সাথেই আমার চোখের সামনে কালো অন্ধকারে ছেয়ে যায়। ব্যাসস এটুকুই। তারপর আর কিছু ঠাওর করতে পারিনি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×