somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার অস্বস্তির গল্প

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-কোন শাড়ির কথা বলছ?
.
আমি মৌরির কথা শুনে অবাক হলাম।
ও কি সত্যিই শাড়িটা দেখেনি। নাকি মিথ্যা বলছে।আমি বললাম,
-তুমি কোন শাড়ি দেখোনি?
-নাহ,,
-অসম্ভব,
.
এটা অসম্ভবই। আমি শাড়িটা বিছানায় রেখেই ফ্রেশ হতে গিয়েছিলাম।আর মৌরি তখন বিছানায় বসে বই পড়ছিল।তাহলে কিভাবে দেখল না?
.
আমি ভেবেছিলাম ফ্রেশ হয়ে এসে দেখবো মৌরি শাড়িটা হাতে নিয়ে নাড়া চাড়া করছে। খুশি হয়ে আমাকে ধন্যবাদ দিবে।
তবে এমন কিছু হলো না।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম ও আগের মতই বই পড়ছে। আমাকে দেখে বলল,
-তোমার খাবার দিচ্ছি এসো,,
.
আমি ওর কথা শুনে অবাক হলাম। তখনি মনে হয়েছিল কোন ব্যাপার আছে। তবুও
আমি চুপ চাপ খেতে বসলাম।দুদিন ধরে বাসায় আমি আর মৌরি দুজন।
বাবা মা নানার বাসায় গেছে।বাবা মা থাকলে খেতে বসে হালকা কথা হয় কিন্তু মৌরির সাথে কোন কথাই হয়না।
শাড়িটা ওই জন্যই আনা যেন আমাদের সমর্পক টা একটু স্বাভাবিক হয়।
.
আমি আবার বললাম,
-তুমি বিছানায় কোন শাড়ি দেখোনি?
.
মৌরি ওর খাওয়া বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকাল। বললো,
-হুম,, কিন্তু কেন?
-কেন আবার তোমার ভাল লাগার ব্যাপার আছে না,,
-কার জন্য আনছ ওটা?
.
আমি ওর প্রশ্ন শুনে আবার অবাক হলাম।
কার জন্য আনবো শাড়ি? আমার কটা বউ। আমি স্বাভাবিক ভাবেই বললাম,
--কার জন্য আনবো আবার? তোমার জন্যই,
-আমাকে বলোনি তো,,
-বলিনি কিন্তু বিছানায় রেখেছিলাম,,
-অন্য রা তো নিজেদের বউকে এভাবে কিছু দেয়না,, বিছানায় এমন ভাবে রেখোছো তাতে কি ভাবব? যে কারোরই জন্য আনতে পারো?
-আসলে অভিজ্ঞতার অভাব,,
.
মৌরি আমার কথা শুনে একটু হেসে বলল,
-দ্বিতীয় বিয়ে করার চিন্তা ভাবনা আছে দেখছি?
-নাহ,তা কেন?
-আমার সাথে অভিজ্ঞতা অরজন করে অন্য কারো প্রতি সেটা কাজে লাগাবা,
-আমি তা বলিনি,,
-শোন,, মন থেকে চাইলে সব হয়,,
.
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই মৌরি আবার বলল,
-তুমি চাইলে আমরা এখানেই সব শেষ করতে পারি,,
.
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মৌরি খাওয়া ছেড়ে উঠে গেল।এই সামান্য ব্যাপারে মেয়েটা এত মন খারাপ করবে ভাবিনি।
.
দোষটা অবশ্য আমারই,, আমি কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারিনা মৌরি সাথে । আজ ২১ দিন হয়েছে আমাদের বিয়ে হওয়ার।খুব যে কম সময় তা নয়, অনেক দিনই।
আর আমরা যে আলাদা থাকি, তাও না।
এক রুমে, এক বিছানায় থাকি।
.
তবে আমাদের বিয়েটা একটু অন্যভাবেই হয়েছিল।
মৌরির মা আর আমার মা দুজন প্রাণের বান্ধবি। আর দুজন বান্ধবী সূত্রে আমাদের যে বিয়ে হয়েছিল,তা নয়। মৌরির বিয়ে ঠিক হয়েছিল এক ডাক্তারের সাথে,সেই বিয়ে খেতেই সপ্তাহ খানেক আগে মায়ের মৌরি দের বাসায় যাওয়া।সাথে অবশ্য আমিও গিয়েছিলাম।
আমি মাকে রেখে ফিরে এসেছিলাম। কথা ছিল বিয়ের শেষে গিয়ে আবার নিয়ে আসবো।
.
তবে সেই বিয়েটা মৌরির হয়নি, বিয়ের দুদিন আগেই ওর হবু বর বিয়ের জন্য মানা করে দেয়,, ছেলের নাকি আগের বউ আছে।সবার কাছ থেকে লুকাইছে।পুরাতন বউ কেস করছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
.
এদিকে ওর বিয়ের সব ব্যাবস্থা ও হয়ে গিয়েছিল।
ছেলের এ খবর শুনে মৌরির বাবা একটা ছোট খাট হারট এট্যাক ও করে ফেললেন।
ওদের বাসায় একটা খারাপ পরিস্থিতি চলে এলো। মৌরিও মানষিক ভাবে ভেঙে পরেছিল।
এত সব বিপদে এগিয়ে আসেন আমার মা। আমাকে না জানিয়ে উনি আমার সাথে মৌরির বিয়ে ঠিক করে ফেলেন।
সেদিন রাত্রে আমাকে আর বাবাকে জরুরী তলবে মৌরিদের বাসায় যেতে হয়।
.
বিয়ের ব্যাপারে আমার কোন মতামত ছিল না।
বিয়ে করা দরকার তাই করেছি,, আর মা বাবার অবাধ্য হওয়ার এত সাহস নিজের ছিল না।
ছোট খাটো একটা জব করি,এই জবে এমন বড়লোক বাসায় বিয়ে করা অনেক বড় ব্যাপার,, বাবা বুঝালেন।আমি অবশ্য কখনো অমত করিনি।
.
মৌরি আমার অনেক পরিচিতই ছিল।তুমি করেই বলতাম। ও কয়েক বার গিয়েছিল আমাদের বাসায়।
.
তবে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর মৌরির সাথে আমার কথা হয়েছিল একবার, সেটাও মিনিট পাঁচেক এর জন্য। ওদের ছাদে বসে কথা হয়েছিল।
পাঁচ মিনিটে আমাকে মৌরি শুধু একটা কথাই জিজ্ঞেস করেছিল
-বিয়েতে তুমি রাজী তো?
.
আমি একটু হেসে উত্তর দিয়েছিলাম,
-আমি রাজী, তুমি রাজী তো?
.
মৌরি অবশ্য আমার প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।ওর
উত্তর হ্যাঁ বা না, কোন কিছুতেই কোন সিদ্ধান্ত চেঞ্জ হবেনা তাই হয়ত।
ও হয়ত ওই ডাক্তার ছেলেটার সাথে প্রেম করেনি তবে ভেবেছিল ওর ডাক্তার স্বামী হবে। ছেলেটাকে নিয়ে একদিন হলেও স্বপ্ন দেখেছিল। এটাই আমার অস্বস্তির প্রধান কারণ ছিল।
.
এমন টা কন্টিনিউ ছিল বিয়ের রাত্রেও।
বিয়ের রাত্রেও আমাদের তেমন কথা হয়নি। বিশেষ কথার মধ্য আমি শুধু বলেছিলাম,
-কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবা, আমি তোমার সমস্যা টা বুঝি।তুমি যতদিন চাওনা আমরা ততদিন আলাদাই থাকবো।
মৌরি জবাব দিয়েছিল,
-আচ্ছা।
.
বিয়ের পর থেকে মৌরি মন মরাই থাকত। আমিও তেমন কথা বলতে পারতাম না।
তাই ওকে খুশি করার জন্যই আজকের শাড়িটা আনা।কিন্তু সেটা যে হিতে বিপরীত হবে ভাবিনি।আমার মৌরিকে ভাল্লাগে,হয়ত ভালওবাসি।
.
আমি খাওয়া দাওয়া শেষ করে শোবার ঘরে গেলাম। দেখি মৌরি শুয়ে পরেছে। মনে হল এখনো ঘুমায়নি।আমি লাইট অফ করে দিয়ে ওর পাশে শুয়ে বললাম,
-সর‍্যি,,
.
মৌরি কিছু বলল না।
আমি সারারাত এপাশ ওপাশ করেই কাঁটালাম। বার বার মনে হচ্ছিল ওকে কিভাবে ইমপ্রেস করা যায়?
আমরা এক বিছানায় থাকার ফলেও কেউ কখনো কাওকে ছুয়েও দেখিনি।
আমাদের মনের দুরত্তর কারণেই হয়ত এটা।।
.
এসব চিন্তা করতে করতে ঘুম কখন ধরেছে মনে নেই,, তবে ভোরের দিকে এটা স্পষ্ট।
তাই ঘুম ও ভাঙলো একটু দেরীতেই।
.
ঘুম ভাঙতেই দেখি মৌরি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে। আমার দেওয়া শাড়িটা পরেই। আমি জেগে উঠেছি দেখে ও মুখ ঘুড়িয়ে আমার দিকে তাকালো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।বেশ লাগছে ওকে শাড়িটাতে।
ওর চুল গুলোও ভেজা মাত্রই মনে হয় গোসল সেরে এসেছে।ওর চুলের দিকে তাকাতে আমার নজর গেল বেলী ফুলের মালাটার দিকে।এটা কাল এক বাচ্চার কাছ থেকে নিয়ে ছিলাম। পলিথিনে পেচিয়ে পকেটে রেখেছিলাম। মৌরিকে দেয়ার কথা মনেই নেই।
.
আমি মুখ খুলে বললাম,
-এটাও দেয়ার কথা মনে নেই,
.
ও একটু হেসে বলল,
-আচ্ছা,সমস্যা নেই,,
-হুম,
-উঠো,নাস্তা করি,,
-আচ্ছা।
.
খাবার টেবিলে বসে মৌরি বলল,
-এত অস্বস্তি থাকলে কিভাবে হবে?
-হুম, আমিও তাই ভাবছি,,
.
আমি একটু ভেবে নিয়ে বললাম,
-মৌরি আজ ঘুরতে যাবে?
-কোথায়?
-এই আরকি বাহিরে।ঘোরাফেরা করে খাওয়া দাওয়া করলাম।শ্যামলীতে একটা মুভি দেখলাম।
-টিকিট কেটে আনছ?
.
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
-হুম, আসলে কাল বলতে চেয়েছিলাম পারিনি,,
মৌরি একটু হেসে বলল,
-আচ্ছা, রেডি হয়ে আসছি,,
.
ঘন্টা খানেক পর মৌরি রেডি হয়ে বের হলো।
শাড়ি চেঞ্জ করেনি শুধু চুল টা বেধেছে।
আর একটু গহনা।
তবুও কি সুন্দর লাগছে !
.
মৌরি আমার সামনে এসে বলল,
-কেমন লাগছে?
-ভাল,
-শুধু ভাল?
-অনেক ভালই,,
.
আমি আবার বললাম,
-মৌরি একটা কথা বলব?
-হুম বলো,
-না থাক?
-কি বলো?
-বাদ দাও,,
-কি চুমু খেতে ইচ্ছে করছে?
.
আমি কিছু বললাম না। মেয়েটা কিভাবে বুঝল কে জানে?
মৌরি আবার বলল,
-এত অস্বস্তি থাকলে সব মিস করবা,
.
আমি হুম বলে ওর গালে একটা চুমু দিয়ে বললাম,
-হুম,কিছু মিস করতে চাইনা।চলো বের হই,,
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:১৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×