২৩ থেকে ২৫ বয়সটি একটি ছেলের জন্য বড়ই অদ্ভুত এক সময় ! যেন কোনো বিশাল ঢেউয়ের উপর ইতিউতি ইতস্ততঃ ভেসে বেড়ানো। কি হচ্ছে সেটা উপলব্ধি করার মত যথেষ্ট জ্ঞানও নেই, কি হবে সেটা সম্পর্কেও কোনো আন্দাজ নেই ! তাদের এক্স গার্লফ্রেন্ডদের একের পর এক বিয়ে হতে থাকে চোখের অসহায় দৃষ্টির সামনে। কারো কারো ক্যারিয়ার মাত্র পথ চলতে শুরু করেছে, আর যাদের এখনো ঢের বাকি ( সামাজিক এবং প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে ) তারা কেমন যেন পরাজিত ঈর্ষাকাতর চোখে ক্যারিয়ার শুরু করা ছেলেটির দিকে তাকায়। ভাবে দোষটা কি তার, নাকি ওই ছেলের নাকি ভাগ্যের ! সিনিয়ররা ভাবেন, "তুমি তো এখনো ততটা লায়েক হয়ে উঠোনি। তুমি আর কিইবা বুঝবে !"। জুনিয়ররা ভাবে "আরে ভাইয়া আপনার দিনতো শেষ, আমগো রক্ত গরম, এখন আমগো দিন, আপনি কি অতশত বুঝবেন? ( মানে মানে কাইটা পড়েন - মনে মনে )"
খবরের কাগজ আর টিভি চ্যানেলের গুরুগম্ভীর সংবাদ গুলো ছেলেটিকে কিঞ্চিত চিন্তিত করে, আবার টম এন্ড জেরি কার্টুন দেখার অভ্যাসটাও পুরোপুরি ছাড়তে পারেনা। ফাস্টফুড শপগুলোর স্বচ্ছ কাচের দেয়াল ভেদ করে বার্গারগুলোর দিকে লোভাতুর দৃষ্টি দিতে দিতে ভাবে, এত অল্প বয়সে ভুঁড়ি বের হলে কি চলবে ? আর কোনো ফ্রীই আসলে ফ্রী না।
কোনো ছেলের সপ্তাহের অলস দিনগুলো যেন ফুরোতেই চায়না, আর কারো নতুন বসের মন যোগাতে ছুটির দিনগুলোতেও গাধার খাটনি খাটতে খাটতে মনে পড়ে, আহা ! আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম !
দেখা হলেই মমতাময়ী আন্টিরা মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে খোঁচা মারেন, " তা বাবা বিয়ে করছ কখন? তোমার মায়ের তো এখন একটু শান্তি দরকার, তোমার বন্ধুরা কিন্তু সব গুছিয়ে নিল !" আর শ্রদ্ধাভাজন আঙ্কলেররা গম্ভীর মুখে ভ্রু কুঁচকে বলেন, " ক্যারিয়ার কে হালকা ভাবে নিলে চলবে? এ বয়সে একটু কষ্ট না করলে কখন করবে? তোমাকে নিয়ে তো তোমার বাবার অনেক আশা ভরসা ! "
ছেলেটি অবাক হয়ে আবিষ্কার করে বুক ভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বসে থাকলেও নিজেকে প্রমাণ করার মত কোনো অর্জনই তার নেই ! সে সুযোগই বা তাকে দিল কে ? কাউকে ইতিমধ্যেই রূঢ় বাস্তবের কড়াল থাবা আঘাত করেছে, কেউ এখনো ভাবছে কখন যে বাস্তব জীবনে নেমে সংসার শুরু করবো ! সবাই অবশ্য ভালো ভাবেই বুঝে ফেলেছে যে জীবনটা স্কুলের গন্ডিতে শেখা ততটা সহজ সরল নয়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার খাতায় লেখা জীবনের তাৎপর্য মানে গুলো নিছকই ফাকা বুলি। সারাজীবন পলিটিক্স কে ঘৃণা করে এসে দেখা যায় এই ব্যাধিটি সমাজের সমাজের প্রতিটি শিরা উপশিরা অনেক আগেই খেয়ে ফেলেছে। এটা ছাড়া কোথায়ও এক পাও ফেলা যায় না। আর রাজনীতির ছত্রছায়ায় গা বাঁচিয়ে চলিয়েরা ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে থাকে, আসলে কি রাজনীতি তাদের কিছু দিয়েছে নাকি সবই ছিল স্বার্থ হাসিলের নির্লজ্জ ষঢ়যন্ত্র ?
এটা বুঝতে তার একটু দেরিই হয়ে যায় যে ভালোবাসা আসলে ততটা অন্ধ নয় এবং বন্ধুত্বের মধ্যেও শর্ত রয়েই যায়। বাবা মা ছাড়া কোনো সম্পর্কই চিরস্থায়ী নয়। অন্যান্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই নিজস্ব কিছু না কিছু ত্যাগ করতেই হবে।
দিন শেষে একাকী জ্যোৎস্নালোকিত তারা ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে সে ভাবে, যেভাবে চেয়েছিল জীবনটা ঠিক সেরকম নাহলেও, কিছু অপূর্ণতার মাঝেও জীবনটা আসলে ততটা খারাপও নয় !
( লেখাটির মূল ভাবনা আমার এক ফেসবুক বন্ধুর ছোট্ট একটা স্ট্যাটাস থেকে। লিখাটি ছিল ইংরেজিতে কয়েক লাইন । সেও তার অন্য এক বন্ধু থেকে কপি করে। আমার পড়ে মনে হল প্রতিটি লাইন যেন আমার কথাই বলছে ! সাথে সাথে আবার মনে হল কথাগুলো অস্বীকার করতে পারবে এমন কয়টি ছেলে পাওয়া যাবে ? তাই ওই বন্ধুর অনুমতি সাপেক্ষে লিখাটি আমি বাংলায় আমার মত করে লিখলাম। আপনাদের সাথে শেয়ার না করলে মনে হচ্ছে বিরাট এক দায় রয়েই যাবে।)