তপু আর তিতির.........নিতান্তই দুই অবুঝ কিশোর কিশোরী ( প্রথম পর্ব )
“ওহ তপুউউউউউ,
কত্তদিন পর তোমার সাথে দেখা হলো !!! অনেকক্ষণ থাকতে পারলাম তোমার সাথে থাকতে পারলাম। আমার তো একটুও ইচ্ছে করছিলো না তোমাকে ছেড়ে আসতে। বাসায় আসার পর থেকেই খুব খুব মিস করছি তোমাকে। আসলে এত বেশি খারাপ লাগছে কারণ অনেকদিন পর অনেকক্ষণ তোমার সাথে থাকতে পারলাম। আগে তো কলেজ ছিল তাই অপেক্ষা ছিল শুধু একদিনের। আর এখন আবার কখন একটু সুযোগ আসবে সেই আশায় আজ থেকে বসে আছি। তুমি যে বললে সোমবার আবার আসার জন্য আমি কিন্তু চাইলেই হ্যাঁ বলতে পারতাম। তারপরো কেন রাজি হলাম না জানো ? শুধুমাত্র ওই জায়গাটায় বসতে হবে বলে। আগেতো কলেজ ছিল তাই ওখানে চাইলে সারাদিন বসে থাকতে পারতাম। কিন্তু এখন উনি কি ভাববেন ? উনি হয়তো কিছু বলবেন না, কিন্তু তারপরো আমাদের নিজেদেরতো একটু বোধবুদ্ধি থাকতে হবে তাই না ? সেজন্যই আমি তোমার অনুরোধটা রাখতে পারিনি তুমি হাজার বলা সত্ত্বেও। তুমি প্লিজ রাগ কোরোনা। তুমি কি ভাবছো আমি ইচ্ছে করে আসতে চাইছি না ? তুমি তো এমনটাই ভাববে আমি জানি। কিন্তু আমি কেন না বললাম এটাওতো তোমাকে বুঝতে হবে। মেনে নিতে হবে বাস্তবটাকে। এই ব্যাপারটির জন্যও যদি আমার সাথে রাগ করো তাহলে তো হবে না। শুধু অনেক ভালবাসতে জানলে কি চলবে ? Compromise, Understanding ব্যাপার গুলোওতো থাকতে হবে তাই না? তুমি আমাকে বুঝবে আমি তোমাকে বুঝবো। এমনটাই তো ভালবাসা কে শক্ত করবে !
তপু, ওইদিন তোমার কথা শুনেতো আমি অবাক হয়ে গেছি ! আমার তপু এত্ত সাহসি হয়ে গেল কখন ? সত্যি জানো মনের ভেতর এখন থেকেই ভয় ঢুকে গেছে ! আসলেই কি তুমি যা বলছো তা কি করতে পারবো? আমাদের ভাবনার মত সব সহজ হবে? কিন্তু সময়গুলোতো দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে ! আমার তো এত সাহস নেই ! এমনকি নিপা যে অমন ভাবে বাসা থেকে বের হয়ে গেল এমন কিছু করতে হলেতো আমি ভয়েই মরে যাবো ! আমার খুব ভালো লেগেছে তুমি আমাকে বলেছ আমরা নিপার মত কিছু করবোনা কখনো। মনের ভেতর সাহস আনার চেষ্টা করি যে, নাহ আমাদের অমন কিছু করতে হবে না। আমি বাসায় সব কিছু ম্যানেজ করে ফেলতে পারবো। কিন্তু সত্যি কথাতো তুমি জানো, নিপা কিংবা ঝুমুরের মত আমার ফ্যামিলি এত লিবারেল না। এসব যখন ভাবি তখন অনেক কু-চিন্তা মাথায় আসে। যে বাসার অবস্থা কেমন হবে, আম্মুরতো নিশ্চয় আমার কথা শুনে হার্ট এটাক হয়ে যাবে ! আর আব্বুর সামনে কথা বলার বিন্দুমাত্র সাহসও আমার কোনোদিন ছিল না। কি করবো আমি?
অনেক সময় ভাবি, মানুষ কিভাবে ৫ বছর, ৭ বছর প্রেম করে !!! কিভাবে এতদিন অপেক্ষা করে থাকে !! আমারতো এখনি ভয় হচ্ছে ! আমারতো মনে হয় আমি এতদিন থাকতে পারবো না ! এখনো মাত্র দেড় বছর হচ্ছে। আমাকেও যদি এতটা বছর অপেক্ষা করে থাকতে হয় তাহলে তো আমি মরেই যাবো !! ইচ্ছে করছে কি জানো, এখনই বিয়ে করে ফেলি ! আমারতো আর সহ্য হচ্ছে না। কখন তোমাকে একেবারে সারাজীবনের মত পাবো ? এভাবে দেখা না করে কথা না বলে থাকতে থাকতে বুকের ভেতর জমাট বেঁধে যায়। খুব কষ্ট হয় নিজেকে সামলাতে। খুব খুব মিস করি তোমাকে।
তোমার শেষ চিঠিটা পড়ে মনে হলো, তোমার কি খুব বেশি ইচ্ছে করে আমার গাল দুটো ছুঁয়ে দেখতে ? আমার ভয়ে সাহস পাও না ? ঠিক আছে, আবার যখন দেখা হবে তখন তোমার এই সামান্য ইচ্ছেটা আমি পূরণ করবো। তবে আর কোনো দুষ্টোমি চলবে না ঠিক আছে ??
যখন ঘুমাতে যাই তখন আগের কথা গুলো খুব মনে পড়ে। কতবার সারারাত কথা বলে রাত পার করেছি ! কতদিন আগের মত কথা হয়না ! তাই রাতে খুব বেশি মিস করি। শোনো আমার জন্য বেশি বেশি দোয়া করবে। ভালো করে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবে। নিজের শরীরের প্রতি আমার হয়ে যত্ন নেবে, আমি যেহেতু আগের মত ফোন করার সুযোগ পাইনা তাই ঠিক আগে আমি যেমনটা বলতাম ঐ ভাবে চলবে। আমার জন্য নিজেকে সবসময় সুস্থ রাখার চেষ্টা করবে। মিস করবে কম পরিমাণে যাতে চিন্তা কম হয়, পড়াশোনার ক্ষতি নাহয়। মনে সাহস রাখবা আমি যতদূরেই থাকি শুধু তোমাকেই ভালবাসবো এবং তোমারই থাকবো।
----তিতির (i miss you....i miss you.....miss you......সারাদিন বললেও বোঝানো যাবে না কতটা মিস করি !)
উপসংহার
অনেক দিন পার হয়েছে। কত বছর হবে ? সাত বছর ? তপু Facebook এ কিছু পেইজ খুঁজে পায় যাতে ভালবাসার গল্প, চিঠি পাঠায় পেইজের Follower রা, Admin রা তা পেইজে Post করে। তপুর খুব ভালো লাগে পড়তে, Comment গুলোও ভালো লাগে।
এই ভাললাগা থেকেই তপুর এত বছর পর তিতিরের চিঠিগুলোর কথা মনে পড়ে। মার্ক জুকারবার্গ এর এই দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষের কোনো এক ভীড়ে হয়ত তিতিরেরও একটা আইডি আছে। তপু ঠিক জানেনা, তিতির আসলে কেমন আছে সেটাও সে জানেনা। কখনো কি সে ভেবেছিল তিতির কে ভুলে থাকার অভ্যাস তাকে করতে হবে ? নাহ, তিতিরকে সে ভুলে যেতে পারেনি, শুধুমাত্র ভুলে থাকাটা অভ্যাস করে নিতে হয়েছে। এই অভ্যাসটা করতে তপুর নষ্ট করতে হয়েছে অনেক গুলো বছর, অনেকগুলো নির্ঘুম বীভৎস ভয়ংকর রাত। এই তপু আর কাঁদে না। এই তপুর আর তিতিরকেও খুব একটা মনে পড়ে না। বাস্তবে আসলে এমনটাই ঘটে। বাস্তবের শেষটা কি কখনো সিনেমা, নাটক, উপন্যাসের মত এত সুন্দর হয় ??
তপু তিতিরের চিঠিগুলো বের করে ধূলো পরিষ্কার করে। তিতির কথা রাখতে পারেনি। কিংবা হয়ত তপুই পারেনি ! কে পেরেছে কে পারেনি এই হিসেব তপু আগেও মেলাতে চেয়েছিল। আর প্রতিবারই মনে হয়েছে কতই না ছেলেমানুষ ছিল তারা ! কিন্তু তাদের প্রতিটা অনুভূতি কি আজ যতটা মূল্যহীন মনে হচ্ছে আসলেই এত মূল্যহীন ছিল ??? তিতিরকে আজ হঠাৎ খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, “ তিতির ! এই চিঠিগুলোতো তুমিই লিখেছিলে তাই না ? "
তপু চিঠিগুলো পড়তে শুরু করে। রাত অনেক হয়ে গেছে। এত বছর পর কেন আজ তিতিরকে এত মনে পড়ছে ? এক সময় কত রাতই তো কেটেছে শুধু তার কথাই চিন্তা করে ! তপু অনেক বদলে গেছে, হয়ত তিতিরও। তারপরও সেই তিতিরের জন্য আরেকটা নির্ঘুম রাত নাহয় পার হলই !
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:১৯