somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাঙ্গিয়া সমাচার

০৬ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দাবার সহিত অপরাপর খেলাসমূহের মৌলিক পার্থক্য হইল ইহাতে খেলোয়াড়গণই দর্শক হিসেবে প্রাধান্য পাইয়া থাকে। সাধারণ জনগোষ্ঠী যাহারা দাবা খেলিতে পারে না কিংবা অল্প মাত্রায় বুঝিতে সক্ষম তাহাদের পক্ষে এই খেলা দেখিয়ে উপভোগ করা অনেকটা রাগ সংগীত শুনিয়া সংগীতের মর্ম উপলব্ধি করিবার মতোই দুরূহ ব্যাপার। ইহাতে দাবাকে যদি কেহ নিরামিষ কিংবা বিরক্তিকর খেলা বলিয়া অভিহিত করিয়া থাকেন তাহাতে আমার কোনো আপত্তি নাই কিন্তু একই কারনে যদি দাবা খেলোয়াড়গণকেও আরোপিত করা হয় তাহা কোনো অবস্থাতেই মানিতে রাজী নহে। বরং অন্যান্য সংস্কৃতিমনা মনুষ্য জাতির তুলনায় দাবারুদের সূক্ষ্ম রসবোধের অবস্থান যে অনেকখানি উপরের দিকে তাহা জানাইয়া সবার ভুল ভাঙ্গাইয়া দিতে চাই।
এক খানা ছোট খাটো দাবাড়ু হইবার সুবাধে আমাকে মাঝে মধ্যেই বড় বড় দাবারুদের সহিত দেশ-বিদেশ ছুটোছুটি করিতে হয়। দেশ-বিদেশে নির্মল ভ্রমনান্দের সহিত আরও যাহা মস্তিষ্কের সৃতি ভাণ্ডারে জমা হইয়া আছে তাহা হইল কিছু অকৃত্রিম হাস্যরস্পদ ঘটনা। এই অকৃত্রিম ঘটনাগুলো যেন সময়ের বিবর্তনে হারাইয়া না যায় সেই কারনেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। যাহা হোক দাবারুদের গুণকীর্তন আর বর্ধিত না করিয়া মুল রচনায় ফিরিয়া আসি।
ভারতের এক প্রদেশে বড় একখানা দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় আমরা দেশের কিছু ছোট-বড় খেলোয়াড় ভিন্ন ভিন্ন বাহনে করিয়া গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটিলাম। গন্তব্যে পৌঁছাইয়া আমরা আমাদের পছন্দনীয় সঙ্গী লইয়া কক্ষ ভাগাভাগি করিয়া লইলেও আমাদের এক বড় খেলোয়াড়ের (নাম উল্লেখ করিয়া তাহার সম্মান হানি ঘটাইবার অভিপ্রায় নাই) ভাগ্যে জুটিল বিদেশী এক খানা সঙ্গী। কক্ষ সঙ্গী হিসেবে বিদেশী কাউকে পাওয়ার সুফল এবং কুফল দুইই বিদ্যমান তাহা সম্পূর্ণ নির্ভর করে বিদেশী সঙ্গীর চারিত্রিক বৈশিষ্টের উপর। সেই বিদেশী সঙ্গীর এক খানা অভ্যাস ছিল স্নান করিবার পূর্বে জাঙ্গিয়ার উপর গামছা সদৃশ এক খানা বস্র পরিধান করিয়া অর্ধনগ্ন হইয়া হাঁটিয়া বেড়ানো। ইহাকে অসভ্যতা বলিয়া জ্ঞান না করিয়া নিজ নিজ সংস্কৃতির বাহক বলিয়া মানিয়া লওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হইবে। এদিকে হন্টনের গতির কারনেই হোক আর তীব্র বায়ুপ্রবাহের কারনেই হোক মাঝে মাঝেই বিদেশী সঙ্গীর গামছাখানি উঠিয়া গিয়া সুদৃশ্য অন্তর্ধান বস্রখানি আমাদের বড় খেলোয়াড়ের দৃষ্টিগোচর হইতেছিল। প্রাথমিক অবস্থায় সেইদিকে তেমন দৃষ্টিপাত না করিলেও পরবর্তিতে আমাদের বড় খেলোয়াড়ের সেই অন্তর্ধান বস্রখানি নিজের বলিয়া সন্দেহ হইতে লাগিল। কিয়ৎকাল গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করিয়া বড় খেলোয়াড় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলে যে ভুলবশতই হোক অথবা ইচ্ছাকৃত বিদেশী সঙ্গী তাহার অন্তর্ধান বস্র পরিধান করিয়াছে। অতঃপর আর্কিমিডিসের মতো নগ্ন হইয়া ইউরেকা ইউরেকা বলিয়া চিৎকার না করিয়া বড় খেলোয়াড় খুবি বিনম্র সহকারে তাহার সন্দেহের কথা বিদেশী সঙ্গীর নিকট উত্থাপন করিল। বিদেশী সঙ্গী রম্য করিতেছে ভাবিয়া সন্দেহখানি হাসিয়াই উড়াইয়া দিল। পরবর্তীতে আমাদের বড় খেলোয়াড় যখন একের পর এক যুক্তি আর প্রমানের মিসাইল দাগাইতে লাগিল তখন বিদেশী সঙ্গীর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিল। বিদেশী সঙ্গী তাহার এই বুদ্ধিভ্রষ্টটার কারনে হতভম্ব হইয়া বড় খেলোয়াড়ের নিকট শেষবারের মতো জানিতে চাহিল যাহা বলিতেছে সত্য কিনা? বড় খেলোয়াড় নির্ভরতার একখানা হাসি উপহার দিয়া জানাইল যে সূর্যের পূর্বদিক হইতে উদিত হইয়া পশ্চিমে অস্তমিত যাইবার ক্ষেত্রে যেমন কোনো সন্দেহ নাই তেমনি এই অন্তর্ধান বস্রখানি যে তাহার তাহাতেও সন্দেহের কোনও অবকাশ নাই । বিদেশী সঙ্গী ভাবিল ইহার পর আর কোনও কথা থাকিতে পারে না। অতঃপর অত্যান্ত লজ্জিত আর বারংবার দুঃখিত হইয়া তৎক্ষণাৎ বস্রখানি খুলিয়া উষ্ণ জলে সাবান দ্বারা ধৌত করিয়া ইস্ত্রি করিয়া তাহার দেওয়া জীবাণুগুলোকে উত্তম রুপে মারিয়া বড় খেলোয়াড়ের নিকট প্রদান করিল। বড় খেলোয়াড় তাহার বিদেশী সঙ্গীর প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে বুঝাইল যে অপরের অন্তর্ধান বস্র পরিধান করা এমন কোনও গুরুতর অপরাধ নহে। বিদেশী সঙ্গী বড় খেলোয়াড়ের এহেন উদারতায় চমকিত হইল। বড় খেলোয়াড় অন্তর্ধান বস্রখানি তাহার বাক্সপেটোরায় রাখিবার সময় বস্রখানির এক খানা যমজ ভাইকে উক্ত স্থানে শায়িত অবস্থায় দেখিয়া জ্ঞান হারাইবার উপক্রম হইল। নির্বুদ্ধ জাঙ্গিয়া কোম্পানি কি কারনে একই রকম দেখিতে দুইখানি জাঙ্গিয়া আবিষ্কার করিয়া তাহাকে বিব্রত করিল তাহা ভাবিয়া আর কুল পাইল না। পাছে সত্য উদঘাটনে বিপদ আরও বাড়িয়া যায় এই শঙ্কায় বড় খেলোয়াড় বস্রখানি তাহার বাক্সপেটোরায় তালাবন্ধ করিয়া রাখিয়া দিল। সেই আসরে আতঙ্কে হোক কিংবা অনুশোচনায় আমাদের বেচারা বড় খেলোয়াড়ের সেই সুদৃশ্য জাঙ্গিয়াখানি আর পরা হইল না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৬
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×