ঈদের আনন্দের মাঝেই একই দিনে ঈদ করা না করা নিয়ে ফেসবুকে তর্ক, গালাগালি থেকে তা ময়দানে মারামারি পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমরা ১৪০০ বছর পরও বুঝতে সক্ষম হলাম না যে ইসলাম কোন প্রথা বা আচার নয়, ইসলাম বোঝা ও চর্চার জন্য যথেষ্ট পরিমান আই কিউ প্রয়োজন, যেটা আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে মানুষ অর্জন করছে মনে করেছিলেন এবং আসলেও তাই, কিন্তু দুঃখের বিষয় দিন দিন মানুষের ইসলামিক আইকিউ কমছে। যার কারনে ইমাম আবু হানিফার মত মানুষ আজকে পাওয়া যায় না, জাকির নায়েকের মত তোতাপাখি গণ আরবদের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে আজ বিখ্যাত হয়ে গেছেন। আর ইসলামে ঈমানের মৌলিক বিষয় ছাড়া অন্যান্য অনেক বিষয়ে দ্বিমত করার সুযোগ আছে, আল্লাহ ও রাসুল সা। পরমত সহিষ্ণুতার তাগিদ দিয়েছেন, আর অনেক মতের মধ্যে থেকে যে মুহুর্তে সত্য মতটি উদ্ঘাটিত হবে, তা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা আল্লাহর রাহে সত্য অনুসন্ধান বা ইজতিহাদ করবে, আল্লাহ তাদের দুটি নেকি দিবেন, আর যদি তারা সফলকাম নাও হয়, আল্লাহ তাদের একটি নেকি দিবেন।
বলা হচ্ছে একই দিনে ঈদ করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন, উম্মতের মধ্যে ঐক্য অটুট থাকবে। কিন্তু ইসলামে ঈদ পালনের নির্দেশনা কিরকম? রাসুল সা। বলছেন- তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোজা ভাংগ। এখানে মক্কা, মদীনা বা আরবের চাঁদের কথা বলেন নাই, আবার একই দিনে ঈদ কর নাইলে ঐক্য নষ্ট হবে এমন কথাও রাসুলে পাক বলেন নাই। ইসলাম যদি সত্য ধর্ম হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ ও তাঁর নবী নিশ্চয়ই চাঁদের রহস্য সম্পর্কে অবগত ছিলেন। সেক্ষেত্রে চাঁদ যে সব যায়গায় একই দিনে একই সময়ে দেখা যায় না এটা নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর রাসুলকে জানিয়েছেন। আবার অনেক জায়গায় ৬ মাস দিন আর ৬ মাস রাত থাকে। সেখানে তাহলে মুসলমানরা নামায কিভাবে পড়বে? সৌদি সময়ে? আবেগবশত করা যেতে পারে কিন্তু যুক্তির নিরিখে তা সহীহ হয় না। কেউ বলছেন মক্কা মদীনার চাঁদ দেখে ( বা শুনে) ঈদ করলে সওয়াব বেশী হবে। যেমন তারা বলতেন পাকিস্তানের সাথে থাকলে জান্নাত নসীব হবে। আসল কথা হচ্ছে যে সেখানে চাঁদ আমাদের একদিন আগে উঠে বিধায় তাদেরকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যদি ব্যাপারটা উলটা হত, মানে যদি আমাদের এখানে তাদের একদিন আগে চাঁদ উঠত, তাহলে তারা তখন আমাদের সাথে ঈদ করতেন কিনা?? ১২০০ সালে বখতিয়ার খিলজি কোন চাঁদ দেখে ঈদ করেছেন? ১৩০০ সালে খাজা মইনুদ্দীন চিশতি রহ। বা শাহজালাল রহ। কোন চাঁদ দেখে ঈদ করতেন? সেই সময়তো মক্কা মদিনা দূরে থাক আফগানিস্তানে চাঁআদ উঠেছে কিনা তা জানা ও সেই অনুযায়ী ঈদ করার কোন সুযোগ বা প্র্যোজন কোনোটাই ছিল না। এইত টেলিফোন বা টেলিগ্রাফ আসার পর আজকে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য তো এই যে আরবে ওহাবী সৌদ বংশের অনাচারমূলক রাজত্ব শুরুর আগ পর্যন্ত একই দিনে ঈদ করা নিয়ে কোন বিতর্ক হয়নি, ২০ রাকাত তারাবি বিয়ে বিতর্ক হয়নি, মাজার নিয়ে বিতর্ক হয়নি, মাযহাব নিয়ে বিতর্ক হয়নি। কিন্তু এখন তাদের রাম রাজত্বে এই বিতর্কগুলোর চাষ হচ্ছে। আবার শুনলাম তাদের মদদপুষ্ট আইএসআইএল এর মিলিশিয়ারা কাবা শরীফ উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে কারন এটা নাকি পাথর পুজা!! আবার এরাই যৌন দাসী হালাল বলে ফতোয়া দেয়, এদেরকে অন্ধ সমর্থন করে মরক্কো ও তিউনিসিয়ার বহু নারী সেখানে গিয়ে হালাল রেপ এর শিকার হয়েছেন। সত্য তো এই যে, আজ মক্কা মদীনা অবৈধ রাজা বাদশাদের অধীন, সেখানে চলছে অন্যায় শাসন যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ক্ষমতা সেখানো আজ কারো নেই, যে বাদশাদের শিকড় আর আজকে যারা ঈদের দিন গাজায় বাচ্চাদের খেলার মাঠে মিসাইল ছুড়ে শিশু হত্যা করে, তাদের শিকড় এক ও অভিন্ন। তাই উম্মতের ঐক্যের কথা যারা বলে, গাযার জীবিত বা মৃত মানূষগুলার পাশে তাদের পাওয়া যায়না। ফিলিস্তিনের মুসলিমরাও তো অন্য আরবদের সাথে আর আমাদের ওহাবী, সালাফি, লা- মাযহাবী ভাইদের সাথে একই দিনে ঈদ করল, কিন্তু তাদের পাশে কাউকে দেখা গেল না। সৌদিরা এত ইসলাম বুঝে ঐক্য বুঝে তো আজকে তাদের ঐক্য গেলো কই। আমেরিকার কাছ থেকে কিনা দামি দামি ট্যাঙ্ক, ফাইটার, আর্মস দিয়ে তারা কি করে? কারন তাদের আশে পাশে সবাইতো মুসলিম দেশ! তাহলে কি ইসরাইলের বিরুদ্ধে? তাহলে আজকে কেনো তারা নীরব, কেনো তারা সব সময় নীরব?? একই দিনে ঈদ করে এই হল লাভের হিসাব!!
কুরান সুন্নাহর দলিল মতাবেক একই দিনে ঈদ নিষ্প্রয়োজন, তারপরো যদি ঐক্যের খাতিরেও একই দিনে ঈদ করা যেত, আমরা তা করতাম যদি একজন ন্যায়নিষ্ঠ শাসক তথা খলিফা মক্কা মদীনা তথা মুসলিম বিশ্বের জিম্মা নিতেন, কিন্তু এই জাহেল পাপিষ্ট সৌদ "বাদশাদের" অধীনে তা কখনই হতে পারেনা। আর যেহেতু খিলাফত বলবৎ নেই, তাই জাহেলদের অনুসরন করতে আমরা বাধ্য নই, বরং প্রত্যেক মুসলিম দেশের সরকারের ঘোষিত দিনেই রোজা ও ঈদ পালন করার স্বাধীনতা মুসলমানদের আছে। আর যারা বিধর্মী সরকারের অধীন, যেমন ভারতের মুসলিমগন, এ ক্ষেত্রে তারা যার যার অঞ্চলের চাঁদ দেখে ঈদ করবে অথবা যদি সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে চাঁদ দেখার ব্যবস্থা করে, তাহলে তারা সে অনুযায়ী ঈদ করবে। কিন্তু এক্ষেত্রে চাঁদ দেখা মানে একটি ভূ-রাজনৈতিক সীমা মেনে চাঁদ দেখা, যেখানে চাঁদ উঠার কথা রয়েছে। যেমন উপমহাদেশে একই দিনে চাঁদ দেখা যায়, তাই বাংলাদেশে চাঁদ উঠলে যদি তা পাকিস্তানের সরকার ও জনগন অনুসরন করে তাতে দোষ নেই। মোদ্দা কথা হল এখানে আমাদের জ্ঞানের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তা না হলে আমাদের সাথে বানরের কোন পার্থক্য থাকবে না।