সাম্প্রতিক মানব পাচার নিয়ে অনেকে অনেক কথা বললেও কেউই আসল কথাটা বলছেন না। এই বিপর্যয়ের আসল কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের হিসাব ছাড়া জনসংখ্যা। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন দিনই বিশ্বাস করিনি যে দেশের জনসংখ্যা ১৫-১৬ কোটি। কারণ গত দশ বছরে সরকার এমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি যাতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। টিভি বা প্রিন্ট মিডিয়াতে চোখে পড়ার মত কোন সচেতনতামূলক প্রচারণা দেখিনি। এই সুযোগে উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো গড়ে ৩-৪ টা করে বাচ্চা নিচ্ছে। আর নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো গড়ে ৫-৭ টা করে বাচ্চা নিচ্ছে। এরকম অবস্থায় জনসংখ্যা কোন মতেই ১৮ কোটির নীচে নয়। চিনে এক সন্তান নীতি প্রবর্তন হয়েছে সে অনেক বছর হয়েছে, এখন সেখানে জনসংখ্যা ১৩০ কোটি, অথচ আমাদের মত ফ্রি স্টাইলে বাচ্চা উৎপাদন করলে তাদের জনসংখ্যা এখন ২০০ কোটি হয়ে যেত। অন্য দিকে ভারত এক সন্তান নীতি না নেয়ায় তাদের জনসংখ্যা প্রায় ১২০ কোটি। এক সন্তান নীতি আমাদের জন্য সুবিধাজনক না হলেও পরিবার প্রতি গড়ে ৪-৭ টি সন্তান কোন ভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। এরই মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতি পূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে। জনসংখ্যার এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারনে দেশে কোন সিস্টেমই ঠিকমত কাজ করছে না। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী হয়ে যাচ্ছে বেকার আর অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী হয়ে যাচ্ছে অপরাধ জগতের বাসিন্দা। এভাবে চলতে থাকলে একদিন আমরা ঘুম থেকে উঠে হয়ত নিজেদের সাগরের মধ্যে আবিষ্কার করব। কিন্তু সরকার বা সুশীল সমাজ কারোই এদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। বেশী মানুষ মানেই সরকারের জন্য বেশী ভোট আর রেমিটেন্সের যাদুর বাক্স। আর বেশী বেশী গরীব মানুষ মানেই এনজিওগুলোর পোয়াবারো। কারণ জনসংখ্যা কমে গেলে বা মানুষ স্বচ্ছল হয়ে গেলে এনজিও ব্যবসা লাটে। আবার সমাজে প্রতিষ্ঠিত অনেকেই আছেন যাদের পরিবারে ১০-১২-১৪ জন ভাই বোন ছিল। এদের মা রা আবার রত্নগর্ভা পুরষ্কারও পেয়েছেন, যা অত্যন্ত দুঃখ জনক। কারণ এদের এই সব ফুটবল টিমের জন্যই আজকে বাংলাদেশের এই লজ্জাকর জনসংখ্যা পরিস্থিতি। এটাকে কোনভাবেই উৎসাহ প্রদানের কোন সু্যোগ নেই। যেখানে সারা পৃথিবী আমাদের এই নিয়ম ছাড়া বাচ্চা উৎপাদনকে ব্যঙ্গ করছে, সেখানে এটাকে পদক পুরষ্কার দিয়ে মহিমান্বিত করা কোন ধরনের আহাম্মকি? অনেক আল্লাহর বান্দাই মনে করে যে বীর্য নষ্ট করা মহা পাপ, আল্লাহ পরকালে সাইজ করবেন এই ভয়ে তারা প্রতিবছরই আন্ডা বাচ্চা উৎপাদন করতে থাকে, আর যেহেতু এদের কে বানিয়েছেন আল্লাহ, তাই তিনিই এদের ব্যবস্থা করবেন। আবার আল্লাহ মেয়ে বাচ্চা জন্মকে উৎসাহ দিলেও, এদেশের জমিদার থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা সবাই বংশের একটি বাতির আশায় পোস্ট পেইড মিটারের মত বাচ্চা জন্ম দিতে থাকে, একেবারে আনলিমিটেড!! এদিকে গরীবরা ৮-১০ টা বাচ্চা দেয়ার পর যখন এদের মানুষ করতে পারেনা, তখন পরকালে সুখের আশায় বাচ্চাগুলোকে পাঠিয়ে দেয় জঙ্গি- জামাত পরিচালিত মাদ্রাসাগুলোতে, যেখানে ওহাবী আরবদের অর্থায়নে থাকা-খাওয়া এবং নূরানি শিক্ষা ফ্রি, যেখান থেকে প্রতি বছর বেরুচ্ছে আল্লাহর সৈনিক যারা ঈমানি জোশ নিয়ে বাংলাদেশকে বাংলাস্তান বানাতে বদ্ধ পরিকর। সরকার এই সবগুলো দিকে জরুরী ভিত্তিতে দৃষ্টি না দিলে হয়ত কোনদিন ঐসব সাগরে ভাসা হতভাগ্যদের মত পুরো দেশটাই সমুদ্রে ভাসতে শুরু করবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫