নীলাদ্রী সহ সকল ব্লগার হত্যার বিচার চাই, আর সামুতে যারা ব্লগারদের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক পোস্ট দিচ্ছে তাদেরকে ব্যান করা হোক, কারণ এরা কোন ব্লগার নয়, এরা ব্লগকে ধ্বংস করতে ব্লগার সেজেছে, হয়ত এদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে একজন ব্লগার হত্যাকারী, তাই সাবধান! কেউ বলছে যে নীল একজন ইসলাম বিদ্বেষী হিন্দু, কেউ বলছে সে হিন্দু বিদ্বেষী নাস্তিক যে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেছে। হ্যা নীল একজন নাস্তিক ছিল, কিন্তু সেটা সমাজের।চোখে, কারণ সে সমাজের লোকদেখানো, কমার্শিয়ালাইজড ধর্ম পালন করত না, তার ধর্ম ছিল মানব ধর্ম, তাই তাকে খুন করেছে ধর্ম ব্যবসায়ী পাপাচারীরা। ৭১ এ বুদ্ধিজীবীদের মেরে এদেশকে জ্ঞান শূণ্য করতে চেয়েছিল পাকি শুয়ররা। তারা সফল হয়েছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধুই সার্টিফাইড মেধাবী প্রোডাকশনের কারখানা, সেখানে আর মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা নেই, সেখানে আছে লেজুরবৃত্তির আর কিছু পাওয়ার রাজনীতি। তাই মুক্তচিন্তার বিকল্প প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছিল ব্লগ। এখন বাংলাদেশের মানুষ খুবই ধর্মভীরু। তারা একাত্তর নিয়ে কথা বলতে চায় না, তারা পাকিস্তান আর আরবদেশগুলোর অন্যায় অত্যাচার নিয়ে বলতে চায় না। তারা ভারত, চীনকে সমঝে চলে, সেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর যে বৈষম্য চলছে তা নিয়ে তাদের কোন সমস্যা নেই। এদেশের আনাচে কানাচে এখন জামাত শিবির বা হেফাজতের কর্মী সমর্থক পাওয়া যায়। আর সংখ্যাগুরু জনগন এদের উপর খুবই সহানুভূতিশীল। এদেশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে মাদ্রাসা আর বাড়ছে কাঠমোল্লাদের সংখ্যা।মাদ্রাসায় কি পড়ানো হচ্ছে? সেখানে কি কোন বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষনা হয়? সেখানে কি নতুন কিছুর চর্চা হয়? সেখানে তাই করা হয় যা ১৪০০ বছর ধরে করে হচ্ছে। সেখানে নতুন কিছুই হচ্ছে না। মাদ্রাসা ছাত্ররা এই দেশ, এই জাতির ইতিহাস জানে না। সেখানে হুজুররা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোন কথা বলে না। তাদের চোখে এসব হল গন্ডগোল, আজাইরা জিনিস। প্রায় প্রতিটি মাদ্রাসা ছাত্র এদেশে খিলাফত চায়, আই এস চায়, এসব নিয়ে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দ্যাখে। তারা এই দেশকে ইসলামি রাষ্ট্র বানাতে চায়। খিলাফত কায়েম করতে চায়। কিন্তু হুজুর মোল্লারা কি ৭১ এ যুদ্ধ করেছিল? তখন তারা কোথায় ছিল? হ্যা ঠিক ধরেছেন, তখন তারা ছিল খাটের তলায় লুকিয়ে, অথবা তারা ছিল রাজাকার আলবদর বাহিনীর নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। আজ সেই মোল্লা হুজুররা মাইক দিয়ে এলাকা প্রকম্পিত করে, আমাদেরকে চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখায়, জাহান্নামের আযাবের ভয় দেখায়, সব ভুলে মছলেম মোছলেম ভাইভাই স্লোগান দিতে বলে। অথচ ৭১ এ কারা যুদ্ধ করেছিল? কেনো করেছিল? তারা কি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল? তাহলে তো পাকিস্তান নিজেই ইসলামি রাষ্ট্রের তকমাধারী ছিল। আমরা কি সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ইসলামী রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিলাম? নাকি ধর্মীয় রাজনীতি আর ধর্মের রক্তচক্ষু থেকে এই জাতিকে রক্ষার জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম? আর আমি মাদ্রাসায় পড়িনি, কিন্তু হুজুর মোল্লাদের খুব কাছে থেকে দেখেছি। তাদের ভন্ডামী দেখেছি। সত্যি কথা তো এই যে জামাতী ইসলামের বড় বড় নেতাদের কোন ছেলে মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে না, এ থেকে সহজেই বোঝা যায় এই মাদ্রাসা শিক্ষা কতটা লেইম এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। অনেকে নিশ্চয়ই মাটির ময়না ছবিটা দেখছেন। তারেক মাসুদ নিজেই মদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। তাই মাদ্রাসায় কি হয় তা তিনি জানতেন। আবার এমন যদি হয় যে কিছু ভালো মাদ্রাসা আছে, কিন্তু সব মিলায়া মাদ্রাসাগুলা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী এবং তারা মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে খুব ভয় পায় এবং ঘৃণা করে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কাজে লাগিয়ে নিজের আখের গোঝাতে ব্যস্ত। বিরোধী দল রাজাকার পুনর্বাসনের গুরুদায়িত্ব নিয়েছে। জনগন ধর্মভীরু এবং দেশে ইসলামী খেলাফত চায়, সাঈদীর ওয়াজ শুনতে চায়। এই পরিস্থিতিতে ব্লগাররাই ছিল একমাত্র দল যারা নিঃস্বার্থ ভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছিল। কিন্তু এই দেশে সব ভালো কিছুর কবর দেয়া হয়। টাইলসে মোড়ানো সুন্দর কবরস্থান হতে চলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ধর্ম ব্যবসায়িরা জেনে রাখো একজন নীলাদ্রীকে তোমরা মারবে, হাজার নীলাদ্রীর জন্ম হবে, মারতে মারতে তোমরা রক্তের বন্যা বইয়ে দিলেও মুক্তচিন্তার চর্চা এদেশে থেমে থাকবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:০৯