somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলার আকাশে আজ ‘শকুন’ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন আগে একটি গল্প শুনেছিলাম। একটি রাজ্যে বেশ কয়েকজন রাজা রাণী ছিলেন। সেই রাজা রানীরা আবার নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে খোক্ষস লালন পালন করতেন। সেই খোক্ষসরাও সুযোগ পেলে মানুষ ধরে খেত। তারা নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে লোকালয়ে ঘুরে বেড়াত আর সুযোগ বুঝে মানুষ ধরে খেয়ে ফেলত। খাওয়া হয়ে যাওয়া মাত্রই লম্বা দৌড় শুরু করত। এক দৌড়ে রাজভবনে উপস্থিত। রাজ ভবনে উপস্থিত হলে তাকে আর পায় কে?

এভাবে দিনে দিনে খোক্ষসদের অত্যাচার বেড়েই যেতে লাগল। রাজ্যের মানুষজন ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে রাজা রাণীদের কাছে খোক্ষসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল। তখন রাজা রাণীরা খোক্ষসদের শায়েস্তা করতে রাক্ষসদের মাঠে নামাল। তারা বলে দিল, খোক্ষসদের মত কাউকে দেখলেই ধরে খেয়ে ফেলতে। মানুষজন খুশি হয়ে গেল। আর খোক্ষসরা দিনে ১০ ট করে মানুষ খেতো। আর এখন রাক্ষসরা খাওয়ার জন্য খোক্ষস না পেলে একটি করে মানুষ খায়। ভালই তো! আগে যাইতো ১০ জন! এখন যায় ১ জন।

সেই গ্রামে হাড় জিড়জিড়ে বুড়ি বাস করতেন। একদিন বনের ধারে বসে সেই বুড়ি কান্না করতেছেন। কান্নার কারণ জানতে চাইলে সেই বুড়ি বলে, তার একমাত্র ছেলে বনে গেছে কাঠ কাটতে। কিন্তু এখনো সে ফিরে আসেনি। হয়তো তাকেও রাক্ষসরা খেয়ে ফেলেছে। সেই দুঃখে বুড়ি কান্না করতেছে। সেই বুড়ি আজও কান্না করতেছে। একটু কান পেতে শোনার চেষ্টা করুন। যদি মানুষ হয়ে থাকেন, তবে সেই বুড়ির কান্না শুনতে পাবেন।

ইংরেজ শাসনকাল। বাংলার মানুষের কপালে ন্যায্য বিচার জোটেনি। তাদেরকে পদে পদে নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে। তাদের উপর নেমে এসেছে নীল করদের অত্যাচারের স্টিমরোলার। তাদের উপর শোষকের লম্বা চাবুক হানা দিয়েছে। তাদের পিঠে সেই দাগ আমৃত্যু পর্যন্ত সেই নির্মম অত্যাচারের সাক্ষ বহন করে গেছে। সেই অত্যাচার ২০০ বছর মুখ বুঝে সহ্য করার পর আসল, স্বাধীন পাকিস্তান। দেশ শাসনের ভার ভিনদেশীদের হাত বদল হয়ে তা স্থানান্তরিত হল এই ‍উপমহাদেশীয় বংশদ্ভূদ মানুষদের হাতে। বাংলার দুঃখী মা আশ্বস্ত হলেন, ভিনদেশী সাদা চামড়ার নরপিশাচরা বিদায় হয়েছে। আর ভয় কি সে! এইবার সুখের দরিয়ায় বাস করবার পালা।

কিন্তু প্রথমেই ভাষার উপর আঘাত। সেই আঘাতে জীবন দিল সালাম,বরকত,রফিক,জব্বারসহ আরো অনেকে। তারপর শাসকের শোষনে নিষ্পেষিত হয়ে গর্জে উঠল বাংলার মানুষ। হাতে তুলে নিল অস্ত্র। বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা। রনাক্ষনে বাংলার অকুতোভয় দামাল ছেলেরা। আর ভিন্নদিকে নিজেদের এবং সন্তানদের জীবন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ভারত অভিমুখে নারী শিশু সর্বপরি জনতার ঢল। ভারত সীমান্তে গড়ে উঠল মুক্তিসেনাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। তারপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে, অগনিত মানুষের জীবনের বিনিময়ে বাংলার মানুষরা পেল স্বাধীনতা। এইবার দেশ শাসনের ভার স্বয়ং বাংলাদেশের মানুষের হাতেই। ঠিক এইবার! এইবারই সুখ নামক হরিণটি বাংলার মায়ের প্রতিটি ঘরের দুয়ারে উঁকি দিবে নিশ্চয়ই।

কিন্তু সুখ নামক সোনার হরিণটি বাংলার মায়েদের কাছে অধরাই রয়ে গেল। সেই সুখের দেখা বাংলার মায়েরা আজ অবধি পেলেন না। স্বাধীন দেশে নিজ দেশের মানুষের শাসনের তলায় পিষ্ঠ হতে লাগল বাংলার মানুষ। বাংলাদেশের মানুষের টাকায় কেনা বন্দকু দিয়ে নিহত হতে লাগল বাংলাদেশরই মানুষ। গনবাহিনীর ৩০ হাজার কর্মীকে শুধু বাংলাদেশ থেকে নয় সৌন্দর্য্য মন্ডিত এই ধরনীর বুক থেকেই বিদায় করে দিলেন বঙ্গবন্ধুর রক্ষী বাহিনী। তারপর বিক্ষিপ্ত সরকারের পরিবর্তনের পর শাসন ক্ষমতায় আসীন হলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনিও ক্ষমতায় অধিগ্রহণ করার পরপরই কর্ণেল তাহেরসহ কথিত আছে ১১ হাজার সিপাহীকে কোর্ট মার্শালে হত্যা করেছেন। এতোদিন ইংরেজ বর্গি এবং পাক হানাদার শাসকদের হাতে বাংলার মানুষরা ধবলধোলাই হয়েছেন। এইবার আপন দেশের শাসকদের হাতে বাংলার মানুষ ধবল ধোলাই হতে লাগল। এরপর আসল স্বৈরাচার জেনারেল এইচ এম এরশাদ এর একনায়কতন্ত্র। সেই সময়েও গুম হত্যার রাজনীতি আরো বৃদ্ধি পেয়ে যায়।

এরপর ১৯৯১ সালে আসল গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচিত বিএনপি সরকার। সরকারে আসা মাত্রই বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার আওয়ামিলীগকে সাইজ করা শুরু করলেন। সেই সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তুলনামূলক গুরুত্বহীন জামায়াতের সহযোগিতায় বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও ক্ষমতা পাওয়ার পর সেই জামায়াতকেও জেলের ভাত খাওয়াতে বিএনপি সরকার মোটেও ভুল করল না। তৎকালীণ জামায়াতের আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম কে জেলে বন্দি করে রাখলেন। এরপর ১৯৯৭ সালে আসল আওয়ামিলীগ সরকার। সুযোগ বুঝে পাল্টা প্রতিশোধ নিতে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামিলীগ সরকার একটুও ভুল করল না। বিএনপিকে কড়ায় গন্ডায় সুদ সমেত আসলটাও বুঝিয়ে দিল। সেই সাথে বোনাস হিসেবে জামায়াতকেও নির্যাতন সইতে হল।

২০০১ সালে আসল চারদলীয় ঐক্যজোটের সরকার। বিএনপি জামায়াতের এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ নামে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড শুরু করল। বড়বড় সন্ত্রাসীদের সাথে সেই সময় বেশ কিছু আওয়ামি নেতাদেরকেও সন্ত্রাস দমনের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। সেই সময় থেকে বাংলাদেশে শুরু হল ক্রসফায়ারের রাজনীতি।

এরপর ২০০৮ সালে আবারো ক্ষমতায় আসীন হল, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামিলীগ সরকার। এই সরকার বসল তো বসলই আর ওঠাওঠির নাম গন্ধও নেই। ৫ জানুয়ারীর প্রিপ্ল্যানেড নির্বাচন করে কোন রকমে হাসিনা দাম্ভিকতা দেখিয়ে সরকার চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই সরকার চালিয়ে নিতে হাসিনা কে খালেদার দেখানো পথটাকেই বেছে নিতে হয়েছে। চারদিকে বিএনপি জামায়াতের নেতা কর্মীদের ধরে ধরে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হচ্ছে। এই ক্রসফায়ারের সাথে এইবার যোগ হয়েছে গুমের রাজনীতি।

সেই গুমের রাজনীতি দির্ঘ থেকে দির্ঘতর হচ্ছে। এখন সেই গুমের সারিতে যোগ হয়েছে ব্যারিষ্টাররাও। যুদ্ধাপরাধের অপরাধে ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত মীর কাশেম আলীর পুত্র ব্যারিষ্টার আরমানকে গুম করে রেখেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের কয়েকদিন আগে তার নিজ বাসা থেকে ব্যারিষ্টার আরমানকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ।

অন্যদিকে সিএমএম কোর্টে হাজিরা দিতে এসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন যুদ্ধাপরাধের অপরাধে ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদেরকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। ভিন্নদিকে, জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহি আমান আযমীকেও একই কায়দায় উঠিয়ে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

প্রথমে যে গল্পের বুড়ির কথা বললাম, মনে আছে তো? সেই বুড়ির কথা স্মরন করুন। সেই বুড়ির কান্না যেমন থামেনি বাংলার মায়েদের কান্নাও থামেনি। আজও কোথাও না কোথাও বাংলার মায়েদের বুক খালি হচ্ছে। আবার এই সরকারের পালা বদল হয়ে যখন বিরোধী দলে যাবে তখন তারাও একই কায়দায় নির্যাতনের স্বীকার হবে। বাংলার বুকে ক্ষমতা দখলের এই অসুস্থ সংস্কৃতি চালু হবার পর থেকে সুখ নামক পাখিটি চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে। বাংলারভাগ্যাকাশে স্নিগ্ধময় মেঘের কোন ভাব দেখা যায় না। যেদিকেই তাকাবেন, শুধু কালো মেঘ এবং শকুনের বড় ডানা ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। এই ক্ষমতা নামক শকুনের লোভ কবে কাটবে? আদৌও কি কাটবে?
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×