somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী জাগরনের মূল কারিগররাই আজ ‘আসামীর’ কাঠগড়ায়।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকটা সময় গড়িয়ে গেছে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে ঘটেছে হাজারো বিপ্লব। সেই বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষের জীবনের নানান ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটেছে। যেমনি পরিবর্তন ঘটেছে, নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত নারীরাই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। যেমন এক নারীর কারণে ট্রয় নগরীর পতন থেকে শুরু করে বিষ্ময় নারী মোনালিসার থেকে শুরু করে প্রিন্সেস ডয়ানার কথাও বলা যেতে পারে। যাদের কারণে পৃথিবীর ইতিহাসে নারীর বারবার আলোড়িত এবং আলোচিত হয়েছে।

একটা সময় ছিল যখন নারী শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া হত। সেই জীবন্ত কবরের প্রধা না থাকলেও ভ্রুন হত্যার মাধ্যমে নারী শিশুকে হত্যার প্রচলন আজও দেখতে পাওয়া যায়। পরিসংখ্যান বলে মানুষের সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে এই নারী শিশুর হত্যার পরিমানওটিও বেড়ে যাচ্ছে।

ভারতে প্রতি বছর ১১ মিলিয়ন (১১০ লক্ষ) গর্ভপাত ঘটে। ইন্ডিয়ার জনপ্রিয় পত্রিকা Times of India তেও একই (১১ মিলিয়ন) তথ্যই দেওয়া আছে। গর্ভপাতজনিত প্রতিবছর মায়ের মৃত্যুর সংখ্যা বলা হয়েছে ৮০,০০০। Guttmacher রিপোর্টে ১৯৯৮ সালের রেফারেন্স উল্লেখ করে বলা আছে যে প্রতিবছর ভারতে ৬৭ লক্ষ বা ৬.৭ মিলিয়ন গর্ভপাত (induced বা ইচ্ছাকৃত) করা হয়। অন্য এক জার্নালে প্রকাশিত তথ্যে শুধুমাত্র রাজস্থানে ১৯৯৪ সালে সাড়ে তিন লক্ষের বেশী গর্ভপাত (induced বা ইচ্ছাকৃত) করা হয়েছে (রেফারেন্স- Chhabra R. 1996. Abortion in India: An overview. Demography India 25(1): 83-92)। প্রসংগত, সাধারণ গর্ভপাত বা এবোরশনকে induced বা ইচ্ছাকৃত বলা হয়ে থাকে। Abortion is the intentional termination of a pregnancy after conception, অন্যদিকে A miscarriage is the spontaneous loss of a fetus before the 20th week of pregnancy।

ভারত যেহেতু আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং আগামী দিনে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র হবার সম্ভাবনা রয়েছে সেকারণেই ভারতের পরিসংখ্যান দিলাম। ভারতে শুধু ভ্রুণ হত্যার মাধ্যমেই নারী শিশুকে হত্যা করা হয় না, নারীদেরকে ডাইনী অপবাদ দিয়ে হত্যাও করা হয়। সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, গত এক দশকে ভারতে ডাইনী অপবাদ দিয়ে ২৫০০ নারীকে হত্যা করা হয়েছে।

অন্যদিকে ধর্মীয় দিক থেকে ইহুদী ধর্মে নারীদেরকে সবচেয়ে বেশি হীনকর হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইহুদী ধর্মে বলা হয়, নারীরা জান্নাতে যাওয়ার অধিকার রাখে না। নারী মানেই শয়তানের চক্রান্ত। তাই নারীর একমাত্র স্থান জাহান্নামের আগুন। ভিন্নদিকে ইসলাম নারীদেরকে নিয়ে বলে ভিন্ন কথা। ইতিমধ্যে নারীবাদিরা বারংবার বলে থাকেন, ইসলাম নারীদের অধিকার খর্ব করেছে। ইসলাম নারীদেরকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। আসুন দেখে নেই এই নারীবাদিদের এসব অভিযোগের কতটুকু সত্যতা রয়েছে। ইসলাম নারীদেরকে কিভাবে দেখেঃ

হুদায়বিয়া সন্ধির পর রাসূল (সাঃ) মক্কায় আসলেন ওমরাহ পালন করার জন্য। ওমরাহ পালন শেষে তিনি মক্কা ত্যাগের প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন। এমন সময় এক এতিম শিশু চাচা চাচা বলে তাঁদের দিকে দৌড়ে এলেন। বাচ্চাটি ছিল আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) চাচা হযরত হামযা (রাঃ) এর কন্যা। হযরত আলী (রাঃ) এগিয়ে গিয়ে বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিলেন এবং বাচ্চাটিকে হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর কোলে দিলেন। এসময় রাসূল (সাঃ) এর সঙ্গে হযরত জাফর ও হযরত যায়েদ (রাঃ) ও ছিলেন। এসময় হযরত আলী, হযরত জাফর এবং হযরত যায়েদ (রাঃ) মেয়েটিকে নিয়ে পরস্পর ঝগড়া শুরু করে দিলেন।

হযরত যায়েদ (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলল্লাহ! বাচ্চাটির বাবা আমার চাচা। তাছাড়া বাচ্চাটির খালা আমার স্ত্রী। মেয়েটি আমারই প্রাপ্য। মেয়েটিকে আমার কাছে দিন। এরপর হযরত জাফর (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলল্লাহ বাচ্চাটিকে আমার হাওলায় দিন। ওর বাবা আমা দ্বীনি ভাই।

এরপর হযরত আলী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলল্লাহ ! বাচ্চাটির হকদার আমিই বেশি। সে প্রথম আমার কাছেই এসেছে এবং সে এখন পর্যন্ত আবার বিবির কোলেই রয়েছে। আল্লাহর প্রিয় হাবীব রাসূল (সাঃ) বললেন, মায়ের পর খালারই হক বেশি। তাই বাচ্চাটিকে হযরত যায়েদ এর কাছে দিয়ে দাও। সেই বাচ্চাটি হকদ্বার বেশি।

আপনি একবার ভেবে দেখুন তো, যে সমাজের মানুষেরা নারী শিশুদেরকে জীবন্ত হত্যা করত তারাই কিনা আজ নারী শিশুর জন্য পাগল প্রায়। এক সময় কন্যা শিশুদেরকে হত্যায় অনুপ্রাণিত করতে আরবে কবিতা রচিত হতো। যেমন,

“সে আমার জীবনের আকাঙ্খা করে এবং আমি তার উপর স্নেহের খাতিরে তার মৃত্যুর আকাঙ্খা করি। এজন্য যে, মহিলাদের জন্য সবচেয়ে বেশী মর্যাদাবান মেহমান হলো তার মৃত্যু”।

“ প্রকৃতপক্ষে নারীরা হলো শয়তান। তাদেরকে আমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। লাত এবং মানাত আমাদেরকে এসব শয়তানের খারাপ থেকে পরিত্রাণ দিক”।

যারা এই ধরনের কবিতা লিখত তাদের মনেই কিনা নারী সন্তানের জন্য ভালোবাসায় বেকুল হয়ে উঠত। নারী সন্তান প্রতিপালনে ফজিলত সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বারংবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ যে ব্যক্তি দু’কন্যা প্রতিপালন করলো। এমনকি তারা দু’জনে উভয়ে বালেগ এবং জওয়ান হয়ে গেল। কিয়ামতের দিন এমনভাবে আসবে যে সে এবং আমি এ দু’আঙ্গুলের মতো এক সাথে হবো এবং রাসূল (সাঃ) নিজের আঙ্গুলগুলোকে মিলিয়ে দেখালেন”। (সহীহ মুসলিম)

হযরত জাবিরবিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ যে ব্যক্তির তিনটি মেয়ে। সে তিন মেয়েকেই নিজের অভিভাকত্বে রেখেছে। তাদের প্রয়োজনাবলী পূরণ করেছে এবং তাদের প্রতি রহম করেছে। তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে”। (আল আদাবুল মুফরাদ)

মূলত এই আরব বিপ্লবের পর থেকেই নারীরা তাদের স্বধিকার ফিরে পেতে শুরু করেছে। আগে যেখানে তাদের জীবনই বাঁচতো না সেখানে তাদেরকে পিতা এবং স্বামীর সম্পদের অংশিদ্বার করা হয়েছে। তাকে একজন নারী হিসেবে তার যোগ্যতানুসারে স্বাধীন জীবনযাপন করবার অধিকার দেওয়া হয়েছে। আর এইসব কিছুর পিছনে ইসলামীক বিপ্লব কিংবা রাসূল (সাঃ) কতৃক আরব বিপ্লবের মাধ্যমেই ঘটেছে। অথচ তথাকথিত নারীবাদিরা বলে থাকেন ইসলাম নারীর অধিকার খর্ব করেছে। বলতে দ্বিধী নেই এই কথাগুলো যারা বলে থাকেন বাস্তবিক অর্থে তারা পাগল ছাড়া আর কিছুই নন। আর পক্ষান্তরে আমাদের দেশে যেসব নারীবাদিদের দেখতে পাই তারা যে বিশেষ একটি গোষ্ঠির পেইড এজেন্ট তা একটি শিশু বাচ্চাও জানে। তাই আসুন আমরা প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে জানি। আমাদের আশে পাশের মানুষদেরকে সেই ইসলাম জানাতে সামান্য হলেও ভূমিকা পালন করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×