somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাকে এক ডজন মিডিয়া দাও, আমি তোমাদের খৃষ্টান জঙ্গি উপহার দিবো!

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯৫ সালের ১৯ এপ্রিল আমেরিকার ওকলোহামা সিটিতে একটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেই বোমা হামলায় ১৬৮ জন নিহত হয়। প্রথমবস্থায় মিডিয়া সেটাকে মুসলিমদের ঘাড়েই চাপানোর চেষ্টা করে। মিডিয়া বলে, হামলাকারীর গতিবিধি মুসলিম জঙ্গিদের ন্যায়।
কিন্তু পরবর্তিতে জানা যায়, সে আমেরিকান সেনাবাহিনীর সাবেক একজন কর্মকর্তা। ১ম ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেই সৈন্য ছিল হতাশাগ্রস্থ। সেই হতাশা থেকেই বোমা হামলাটি করেছিল। সেই হামলাকারীর নাম টিমোথি ম্যাকভে (Timothy mcveigh)

ঠিক এভাবেই ইউরোপ আমেরিকার সমস্ত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার সাথে মুসলিমদের নাম জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা দেখা গেছে। হামলার সূচনাতে হামলাকারীর মুসলিম হবার সমূহ সম্ভাবনা নিয়ে মিডিয়াওয়ালারা যে জোর প্রচারনা এবং উৎসাহ দেখিয়েছিলেন, হামলারকারীর পরিচয় পাওয়ার পর মিডিয়াওয়ালারা সামান্যতমও উৎসাহ প্রকাশ করেন নি। তাদের সেই উৎসাহহীনতার দৈন্যতায় আমলাকারীর আসল পরিচয় এবং তার ধর্মীয় পরিচয় আড়ালেই থেকে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত হামলাকারীর ধর্মীয় পরিচয়টাই মূল ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মুসলিম মানে সন্ত্রাসী বানানো তাদের সেই চেষ্টার ফলাফল আজকে বেশ ভালভাবেই লক্ষ করা যাচ্ছে। গুগল মামাতে ‘Terrorist' লিখে সার্চ দিলে দাঁড়ি টুপি ওয়ালা ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। এসবই সেই প্রচারনার ফলাফল। স্ক্রীনশর্ট দিলাম দেখে নিন।



পৃথিবীতে এখন সন্ত্রাসী বললে সবাই এক বাক্যে ‍মুসলিমদের নির্দেশ করে। যেন পৃথিবীর সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড মুসলিমরা একাই ঘটাচ্ছে। হাতে মিডিয়া থাকলে যে মিথ্যাকেও সত্যরূপে প্রতিষ্ঠা করা যায় তাতো হিটলারের তথ্যমন্ত্রী এবং মিথ্যাচারের জনক গোয়েবলস অনেক আগেই শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। সেই শিখিয়ে দিয়ে পথেই আজকে সারাবিশ্বের বুকে মুসলিমদেরকে সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। আর এই প্রচারণা ইউরোপ এবং আমেরিকার মিডিয়াগুলোতে বেশি দেখা যায়। ব্রিটিশ মিডিয়াও খুব একটা পিছিয়ে থাকে না। বরঞ্জ কিয়দাংশ সময় ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসিকে মুসলিমদের নিয়ে একটু বেশিই মাতামাতি করতে দেখা যায়। যাইহোক, মিডিয়া মাতামাতি করলেও সত্য পরিসংখ্যানটা অনেকটা নীরবে নির্ভিতে বের হয়ে আসে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সেই পরিসংখ্যানই আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

আমেরিকান ‘ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন’(FBI) এর রিপোর্টে দেখা গেছে, আমেরিকায় যতগুলো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনা ঘটে তার মধ্যে ৬% উগ্র মুসলিমদের দ্বারা হয়ে থাকে। বাকি ৯৪% বিভিন্ন খৃষ্টান উগ্রবাদী গোষ্ঠি এবং পেশাদার সন্ত্রাসীদের দ্বারা হয়ে থাকে। (সূত্রঃ টাইম ম্যাগাজিন)

পরিসংখ্যানটা ভাল করে খেয়াল করে দেখুন, মাত্র ৬% মুসলিমদের দ্বারা হয়ে থাকে। কিন্তু আমেরিকান মিডিয়াজুড়ে এই ৬% সন্ত্রাসী কর্মকান্ডই জাবর কাটার মত জপতে থাকে। এই ৬% হয়ে যায় জঙ্গি কর্মকান্ড। এদের আবার ধর্মীয় পরিচয়টাই সবচেয়ে বেশি হাইলাইট করা হয়। ভিন্নদিকে ৯৪% সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কথা আসলেও সেখানে ধর্মীয় পরিচয়টা আর মূল ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়ায় না। যেমন, আপনাদের জ্ঞাতার্থে আমি আরো একটি ঘটনা তুলে ধরছি।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে নরওয়ের রাজধানী শান্তির শহর অসলোতে একটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। সেই সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ৮৪ জন নিহত হয়। সেই হামলার ঘটনাটি সংগঠিত হবার সঙ্গে সঙ্গে বিবিসি সিএনএনসহ পশ্চিমা মিডিয়ারা এটাকে মুসলিমদের কাজ বলে প্রচার করতে থাকে। কিন্তু পরবর্তিতে জানা যায়, সে একটি উগ্র খৃষ্টান জঙ্গি গোষ্ঠির সদস্য। হামলাকারীর এই পরিচয় প্রকাশ হওয়ার পর সেই ঘটনা নিয়ে মিডিয়ার লাফালাফি রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায়।

যাইহোক, আপনাদের জন্য আরো কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরছি দেখে নিন।

ইউরোপেল নামের একটি সংস্থা একটি প্রতিবেদনে জানায়, ২০০৬-২০০৮ সময়কালে ইউরোপে যতগুলো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে মাত্র ০.০৪% হামলার সাথে কট্টোরপন্থি মুসলিমরা জড়িত রয়েছে। বাকি ৯৯.৬% সন্ত্রাসী কর্মকান্ড উগ্রবাদী খৃষ্টান গোষ্ঠিগুলো এবং পেশাদার সন্ত্রাসীদের দ্বারাই সংগঠিত হয়েছে।

২০০৬ সালে ইউরোপে ৪৯৮টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৪৯৭ টি হামলাই ঘটিয়েছে খৃষ্টান উগ্রবাদী গোষ্ঠিরা। ২০০৭ সালের ৫৮৩ টি হামলার ঘটনার মধ্যে ৫৭৯ টি ঘটিয়েছে খৃষ্টান সন্ত্রাসীরা। ২০০৮ সালে ৫১৫ টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার মধ্যে সবগুলোই খৃষ্টান উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও এই খৃষ্টান জঙ্গিদের কথা মিডিয়ায় আসে না। যতদোষ ঘুরে ফিরে সেই মুসিলমদের ঘাড়েই চলে আসে। তাই বলছি, আপনারা আমার হাতে একডজন শক্তিশালী মিডিয়া দিন আমি আপনাদের জঙ্গি ইউরোপ আমেরিকা এবং খৃষ্টান ও ইহুদী সম্প্রদায়কে উপহার দিবো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০১
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×