১৯৯৫ সালের ১৯ এপ্রিল আমেরিকার ওকলোহামা সিটিতে একটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেই বোমা হামলায় ১৬৮ জন নিহত হয়। প্রথমবস্থায় মিডিয়া সেটাকে মুসলিমদের ঘাড়েই চাপানোর চেষ্টা করে। মিডিয়া বলে, হামলাকারীর গতিবিধি মুসলিম জঙ্গিদের ন্যায়।
কিন্তু পরবর্তিতে জানা যায়, সে আমেরিকান সেনাবাহিনীর সাবেক একজন কর্মকর্তা। ১ম ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেই সৈন্য ছিল হতাশাগ্রস্থ। সেই হতাশা থেকেই বোমা হামলাটি করেছিল। সেই হামলাকারীর নাম টিমোথি ম্যাকভে (Timothy mcveigh)
ঠিক এভাবেই ইউরোপ আমেরিকার সমস্ত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার সাথে মুসলিমদের নাম জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা দেখা গেছে। হামলার সূচনাতে হামলাকারীর মুসলিম হবার সমূহ সম্ভাবনা নিয়ে মিডিয়াওয়ালারা যে জোর প্রচারনা এবং উৎসাহ দেখিয়েছিলেন, হামলারকারীর পরিচয় পাওয়ার পর মিডিয়াওয়ালারা সামান্যতমও উৎসাহ প্রকাশ করেন নি। তাদের সেই উৎসাহহীনতার দৈন্যতায় আমলাকারীর আসল পরিচয় এবং তার ধর্মীয় পরিচয় আড়ালেই থেকে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত হামলাকারীর ধর্মীয় পরিচয়টাই মূল ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মুসলিম মানে সন্ত্রাসী বানানো তাদের সেই চেষ্টার ফলাফল আজকে বেশ ভালভাবেই লক্ষ করা যাচ্ছে। গুগল মামাতে ‘Terrorist' লিখে সার্চ দিলে দাঁড়ি টুপি ওয়ালা ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। এসবই সেই প্রচারনার ফলাফল। স্ক্রীনশর্ট দিলাম দেখে নিন।
পৃথিবীতে এখন সন্ত্রাসী বললে সবাই এক বাক্যে মুসলিমদের নির্দেশ করে। যেন পৃথিবীর সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড মুসলিমরা একাই ঘটাচ্ছে। হাতে মিডিয়া থাকলে যে মিথ্যাকেও সত্যরূপে প্রতিষ্ঠা করা যায় তাতো হিটলারের তথ্যমন্ত্রী এবং মিথ্যাচারের জনক গোয়েবলস অনেক আগেই শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। সেই শিখিয়ে দিয়ে পথেই আজকে সারাবিশ্বের বুকে মুসলিমদেরকে সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। আর এই প্রচারণা ইউরোপ এবং আমেরিকার মিডিয়াগুলোতে বেশি দেখা যায়। ব্রিটিশ মিডিয়াও খুব একটা পিছিয়ে থাকে না। বরঞ্জ কিয়দাংশ সময় ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসিকে মুসলিমদের নিয়ে একটু বেশিই মাতামাতি করতে দেখা যায়। যাইহোক, মিডিয়া মাতামাতি করলেও সত্য পরিসংখ্যানটা অনেকটা নীরবে নির্ভিতে বের হয়ে আসে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সেই পরিসংখ্যানই আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
আমেরিকান ‘ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন’(FBI) এর রিপোর্টে দেখা গেছে, আমেরিকায় যতগুলো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনা ঘটে তার মধ্যে ৬% উগ্র মুসলিমদের দ্বারা হয়ে থাকে। বাকি ৯৪% বিভিন্ন খৃষ্টান উগ্রবাদী গোষ্ঠি এবং পেশাদার সন্ত্রাসীদের দ্বারা হয়ে থাকে। (সূত্রঃ টাইম ম্যাগাজিন)
পরিসংখ্যানটা ভাল করে খেয়াল করে দেখুন, মাত্র ৬% মুসলিমদের দ্বারা হয়ে থাকে। কিন্তু আমেরিকান মিডিয়াজুড়ে এই ৬% সন্ত্রাসী কর্মকান্ডই জাবর কাটার মত জপতে থাকে। এই ৬% হয়ে যায় জঙ্গি কর্মকান্ড। এদের আবার ধর্মীয় পরিচয়টাই সবচেয়ে বেশি হাইলাইট করা হয়। ভিন্নদিকে ৯৪% সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কথা আসলেও সেখানে ধর্মীয় পরিচয়টা আর মূল ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়ায় না। যেমন, আপনাদের জ্ঞাতার্থে আমি আরো একটি ঘটনা তুলে ধরছি।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে নরওয়ের রাজধানী শান্তির শহর অসলোতে একটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। সেই সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ৮৪ জন নিহত হয়। সেই হামলার ঘটনাটি সংগঠিত হবার সঙ্গে সঙ্গে বিবিসি সিএনএনসহ পশ্চিমা মিডিয়ারা এটাকে মুসলিমদের কাজ বলে প্রচার করতে থাকে। কিন্তু পরবর্তিতে জানা যায়, সে একটি উগ্র খৃষ্টান জঙ্গি গোষ্ঠির সদস্য। হামলাকারীর এই পরিচয় প্রকাশ হওয়ার পর সেই ঘটনা নিয়ে মিডিয়ার লাফালাফি রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায়।
যাইহোক, আপনাদের জন্য আরো কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরছি দেখে নিন।
ইউরোপেল নামের একটি সংস্থা একটি প্রতিবেদনে জানায়, ২০০৬-২০০৮ সময়কালে ইউরোপে যতগুলো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে মাত্র ০.০৪% হামলার সাথে কট্টোরপন্থি মুসলিমরা জড়িত রয়েছে। বাকি ৯৯.৬% সন্ত্রাসী কর্মকান্ড উগ্রবাদী খৃষ্টান গোষ্ঠিগুলো এবং পেশাদার সন্ত্রাসীদের দ্বারাই সংগঠিত হয়েছে।
২০০৬ সালে ইউরোপে ৪৯৮টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৪৯৭ টি হামলাই ঘটিয়েছে খৃষ্টান উগ্রবাদী গোষ্ঠিরা। ২০০৭ সালের ৫৮৩ টি হামলার ঘটনার মধ্যে ৫৭৯ টি ঘটিয়েছে খৃষ্টান সন্ত্রাসীরা। ২০০৮ সালে ৫১৫ টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার মধ্যে সবগুলোই খৃষ্টান উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও এই খৃষ্টান জঙ্গিদের কথা মিডিয়ায় আসে না। যতদোষ ঘুরে ফিরে সেই মুসিলমদের ঘাড়েই চলে আসে। তাই বলছি, আপনারা আমার হাতে একডজন শক্তিশালী মিডিয়া দিন আমি আপনাদের জঙ্গি ইউরোপ আমেরিকা এবং খৃষ্টান ও ইহুদী সম্প্রদায়কে উপহার দিবো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০১