আমি বাঙ্গালী নাকি বাংলাদেশি সেই জাতিতত্বের দিকে না গিয়ে আপাতোত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু কথা বলি। কারণ বাংলাদেশ টিকে থাকলে বাঙ্গালী বাংলাদেশি তত্ব বেঁচে থাকবে। আর বাংলাদেশ না থাকলে বাঙ্গালী তত্ব শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের একার সম্পত্তি হয়ে যাবে। তাই সেইসব ভাবের কথা আকাশে তুলে রেখে জমিনের বাস্তবতা নিয়ে কিছু কথা বলি।
কিছুদিন আগে আমার পূর্ব পরিচিত একজন প্রফেসারের কথা শুনলাম। তিনি একটি নামকরা কলেজের ইংরেজি প্রভাষক। তার মেয়ে এবার এডমিশন টেষ্ট পরীক্ষা দিচ্ছে। ইন্টারের রেজাল্টে জিপিএ ৫ দেখা হলেও ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে তেমন সুবিধা করতে পারে নি। এরপর প্রফেসার সাহেব ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে চাইলেন। তিনি তার ছেলের মাধ্যমে তার প্রাক্তন এক ছাত্রের সাথে যোগাযোগ করলেন। সেই ছাত্রকে জানালেন, আমার মেয়েকে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাবো। যত টাকা লাগে দিবো। তুমি ব্যবস্থা করো। প্রফেসার সাহেবের সেই ছাত্রের মুখে এই কাহিনী শুনে সত্যিই আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এও কি সম্ভব? মানুষ গড়ার কারিগররাও আজ অন্যায়ের পথে পা বাড়াতে কার্পন্য বোধ করছে না! একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি ঠিকই সৎ বাণী আওড়ালেও নিজের বাস্তব জীবনে সেই সৎ বাণীর কোনই প্রতিফলন নেই।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার যখন এই অবস্থা, ভাবতে পারেন আমরা জাতি হিসেবে কোনদিকে যাচ্ছি। চীন দেশে একটি প্রবাদ আছে, ‘যদি তুমি একশ বছরের পরিকল্পনা কর তবে গাছ লাগাও, আর যদি হাজার বছরের পরিকল্পনা কর তবে মানুষ তৈরী কর’। তবে আমরা কি করছি? সরকার ঘটা করে বৃক্ষরোপন অভিযান পালন করে গেলেও এইসব আগাছা দূর করতে মোটেও মনোযোগী মনে হচ্ছে না। উল্টো প্রশ্ন ফাঁস, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি এইসব নিয়ে যেই লিখবে তার বিরুদ্ধেই নাকি রাষ্ট্র থেকে লিগ্যাল এ্যাকশন নেওয়া হবে। এ যেন জোর করে মুখ বন্ধ রাখার পায়তারা। মুখ বন্ধ রাখলেই কি আর সব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে?
এমন দায়সারা ভাবে শিক্ষাব্যবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎে আমরা একটি প্রতিবন্ধী জাতিতে পরিণত হয়ে যাবো। যার কিয়দাংশ বাস্তবতা আমরা বর্তমান সময়েই দেখতে পাচ্ছি। হীরক রাজার মন্ত্রীসভার সেই জি হুজুর নীতি আজ সমগ্র বাংলাদেশকে গ্রাস করে ফেলেছে।
এবার আসি সংস্কৃতি চর্চার দিকেঃ
অতি সম্প্রতি একদল সংস্কৃতি কর্মীকে প্রায়শ রাজপথে বিভিন্ন সভা সেমিনারে দেখা যাচ্ছে। তাদের চেতনা যেন হঠাৎ করেই কোমা থেকে জেগে উঠেছে। মামুনুর রশীদরা এতোদিন স্কয়ার হাসপাতালের শীততাপ নিয়ন্ত্রিন আইসিইউতে অচেতন অবস্থায় পড়েছিলেন। যার কারণে তারা ষ্টার জলসা কিংবা ষ্টার প্লাস অথবা জি বাংলার আগ্রাসন গুলো খেয়াল করেন নি। এসব চ্যানেলের বদৌলতে সন্ধ্যা নামলেই যে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে পশ্চিমবাংলা এবং ভারত বাংলার সংস্কৃতির লালন পালন এবং আদর আপ্যায়ন শুরু হয় তা মনে হয় এই এটিএম শামসুজ্জামান, আবুল হায়াৎ প্রমুখরা জানেনই না।
যারা কথায় কথায় বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন আর ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেন, তারা কি বোঝেন না, ৫২তে উর্দূর বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয়েছিল কি হিন্দিরে আগ্রাসন মেনে নেবার জন্য? উর্দূ আর হিন্দি কিন্তু মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। উর্দূ শুধু আরবী অক্ষরে লেখা হয় আর হিন্দি হিন্দি অক্ষরে লেখা হয়। মূল পার্থক্য এখানেই। আজ যদি আপনারা উর্দূর জ্ঞাতিভাই হিন্দিকে মেনেই নিবেন, আপনার মুখের অন্যতম প্রধান ভাষা বানিয়ে ফেলবেন তবে রফিক জব্বারদের অকালে প্রাণ দেবার কি প্রয়োজন ছিল? কয়েকটি তাজা প্রাণ বেকার চলে গেল না?
এতোদিন থেকে বাংলাদেশের সচেতন সমাজ ষ্টার জলসার বিরুদ্ধে কথা বলে আসছে তাতে সংস্কৃতি কর্মীদের কোনই আগ্রহ নেই। কিন্তু যেই কিনা দীপ্ত টিভি একটি বিদেশী সিরিয়ালকে বাংলাদেশে জনপ্রিয় করে তুলল! অন্ত্যত সুলতান সুলেমান প্রচারিত হবার দিনে বাংলার মানুষ ষ্টার জলসার পানে তাকাচ্ছে না ঠিক তখনই মামুনুর রশীদ গংরা এই দীপ্ত চ্যানেল এবং সুলতান সুলেমান অনুষ্ঠানটির পিছনে লেগে পড়লেন। তবে কি আমরা ধরে নিবো মামুনুর রশীদদের এই আন্দোলনও দাদার দেশের স্বার্থ রক্ষায় আয়োজন করা হয়েছে। তা না হলে চ্যানেল আই এতোদিন থেকে নিয়মিত হলিউডের একশন সিরিয়ালগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রচারিত করে আসলেও মামুনুর রশীদরা কোন প্রতিবাদ করেন নি কেন? অন্তত পত্রিকায় একটি বিবৃতিকো দিতে পারতেন। তবে কেন দেননি? সেই সিরিয়াল ষ্টার জলসাকে টক্কর দিতে পারেনি বলেই কি? হ্যা মূল পয়েন্ট ঠিক এখানেই। ভারতের চ্যানেলের প্রতি সাধারণ মানুষের এই আগ্রহ কমার কারণেই কি ভারতীয় চ্যানেলদের টাকা খেয়ে মামুনুর রশীদরা এই পাগলসম আন্দোলন করছে! জাত কুল সবই গেল তবু ভারতমাতা জিতে রইল। ভারত বাংলাদেশের সবই খেয়ে ফেললেও, তারাই আমাদের প্রধান বন্ধু! ঐ যে একাত্তর সালে পাক বাহিনীর রেখে যাওয়া অস্ত্রগুলো লুট করেই তো প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচয়টা দিয়ে গেছে!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৫