somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাধবী

১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে, যেই দিনগুলোতে মাধবীর সাথে হেটেছি অনেকটা পথ । শাহবাগ,চারুকলা,ছবিরহাট,টিএসসি,বাংলা একাডেমী,দোয়েল চত্বর,শহীদ মিনার,ফুলার রোড,পলাশী,নীলক্ষেতের রাস্তার প্রত্যেকটি ধূলিকণা মাড়িয়ে এগিয়ে চলতাম আমি আর মাধবী । রাস্তার দুই ধারের গাছপালা সাক্ষী দীর্ঘ সাড়ে চার বছর একসাথে হাটলেও আকোনদিন কেউ কারো হাত ধরিনি ।

মাধবীর সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল টিএসসিতে । বুথ থেকে টাকা তুলে বের হচ্ছি তখন মাধবীর ডাক "ভাইয়া একটু হেল্প করবেন ? "
মাথা তুলে যখন মাধবীর দিকে তাকালাম তখন মনে হলো আরেকটু হলে মাথা ঘুরে পরেই যেতাম । কোন মানবী এত সুন্দর হয় কিভাবে ! বিধাতা মনে হয় স্বর্গের অপ্সরী বানাতে গিয়ে ভুল করে নারীতে রূপান্তরিত করে ফেলেছেন । পড়নে ছিল নীল শাড়ি আর কপালে কালো টিপ ।

- এই যে ভাইয়া শুনছেন ?
- হ্যা বলুন ।
- আমি মোবাইল ব্যাংকে নতুন একাউন্ট খুলেছি, কিভাবে টাকা তুলতে হয় জানিনা । যদি একটু দেখিয়ে দিতেন অনেক উপকার হত ।
- আসুন দেখিয়ে দিচ্ছি ।

টাকা তুলে বের হওয়ার পরে মাধবী বলল -
- ভাইয়া অনেক উপকার করলেন ।
- এ এমন কি !
- আমরা কি একটু চা খেতে পারি ?
- চা ? এটা কি আপনার উপকার করলাম তার জন্য না পরিচিত হওয়ার জন্য ?
- না মানে,পরিচিত হওয়ার জন্য ।
- আসুন । আচ্ছা কি করেন আপনি ?
- এবার ভর্তি হলাম । আপনি ?
- আমি সেকেন্ড ইয়ারে ।

সেদিন প্রায় ঘন্টাখানেক কথা হয়েছিল মাধবীর সাথে । জানলাম তার পুরো নাম মাধবীলতা । বাবা নাকি খুব শখ করে নামটি রেখেছে । আমি তার অনুমতি নিয়েই লতা বাদ দিয়ে মাধবী নামে ডাকা শুরু করি । মাধবী থাকতো রোকেয়া হলে । প্রথম দিনই জানতে পেরেছিলাম তার তেমন কোন বন্ধু নেই । সে ঢাকায় এই প্রথম । কথা কম বলার কারনে তেমন বন্ধু তৈরি হয়নি । সাহস করে বলে ফেললাম "আমি যদি আপনাকে এই এলাকার রাস্তাঘাট ঘুড়িয়ে চিনিয়ে দেই আপনার আপত্তি নেই তো ? " কথাটা শোনার পরে মাধবী পরম বিশ্বাসের একটা হাসি দিয়েছিল ।

সেই থেকে মাধবীর সাথে নিয়মিত দেখা হত । দুই মাস বাদে একে অন্যকে তুমি বলা শুরু করি । ক্লাশের ফাঁকে টিএসসির ক্যাফেটেরিয়া বা মধুর ক্যান্টিনে একসাথে দুপুরের খাবার খেতাম । সন্ধ্যায় আবার বের হয়ে একসাথে হাটাহাটি, চা খাওয়া,গল্প কচরা ।

ভালই কেটেছে সাড়ে চারটা বছর । প্রতি রাতে তাকে হলের গেটে পৌছে দিয়ে আমি আমার হলে যেতাম । আর যাওয়ার সময় নিয়ম করে প্রতিদিন মাধবী আদুরে কন্ঠে বলতো "সিগারেট একটু কম করে খেও "

মাধবী অসাধারন কবিতা আবৃত্তি করতো । আমিও তখন টুকটাক কবিতা লিখতাম । যদিও সব কবিতা লেখা হত মাধবীকে কেন্দ্র করেই । মাধবী সেইসব বস্তাপঁচা কবিতা খুব সুন্দর করে আবৃত্তি করতো । মাধবী বুঝতে পারতো যে সব কবিতা তাকে ঘিড়েই লেখা । প্রতিদিন কবিতা হাতে পেয়ে সাথে সাথেই পড়তো আর মিটিমিটি হাসতো ।

প্রথম যেদিন মাধবীকে দেখেছিলাম সেদিনই অসম্ভব ভাল লেগে গিয়েছিল । তারপর একসাথে পথ চলতে চলতে কখন যে ভালবেসে ফেলেছিলাম তা মনে করতে পারছিনা । কিন্তু মাধবীকে কখনো ভালবাসার কথাটা বলিনি । ভয় ছিল,সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিল সেটা যদি নষ্ট হয়ে যায় ।

দেখতে দেখতে একসাথে সাড়ে চার বছর । ধৈর্য ধরে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছিল । তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ঈদের ছুটির পরে ঢাকায় এসেই মাধবীকে বলে দেব ভালবাসার কথা । জানি মাধবীও আমাকে ভালবাসে । সে আমাকে ফিরিয়ে দেবে না কখনোই ।

ঈদের ছুটি শেষ হল ছয় মাস পেরিয়ে গেছে । বলতে পারিনি "মাধবী আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি "। এখনও সেই চিরচেনা রাস্তা ধরে একাই হেটে চলি । একটার পর একটা সিগারেট খাই । এখন আর কেউ বলেনা "সিগারেট একটু কম করে খেও "। এখন আর কেউ কবিতা আবৃত্তি করে শোনায় না তাই আমার আর কবিতাও লেখা হয়না ।

যে আবৃত্তি করে শোনাতো তার সাথে যে আর দেখাই হলোনা । ছোট একটি গাড়ি দূর্ঘটনা তাকে আর ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে দিলোনা ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×