somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃঞ্চপক্ষের ব্যবচ্ছেদ

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ মাধবীর জন্মদিন । গত পাঁচটি জন্মদিনে আমরা একসাথেই ছিলাম । প্রত্যেকটা জন্মদিনে সে খুব ভোরে আমাকে ডেকে তুলতো । আমি সাধারনত ভোরে ঘুম থেকে উঠিনা । আসলে আমি ঘুমাইই সকালে । কিন্তু প্রিয় মানবীর জন্মদিন বলে কথা, যত কষ্টই হোক ভোরে উঠে বের হতাম । দেখা হত নীলক্ষেতে । লাভলী হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে সারাদিন ঘোরাঘুরি । নিজ হাতে খাইয়ে দিত । পরম বিশ্বাসে বাম হাতটি জড়িয়ে ধরে সারাদিন ঘুরে বেড়াত ।

বন্ধু সাদাতের কাজিন ছিল মাধবী । সাদাতের বোনের বিয়েতে যখন ওদের বাড়িতে যাই তখন মাধবীকে প্রথম দেখি । খুব লাজুক ছিল । একদম কথা বলতো না । প্রশ্ন করলেও মাথা নিচু করে উত্তর দিত ।

বিয়ের কিছুদিন পরেই মাধবীর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ছিল । পরীক্ষা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করতে ঢাকায় আসে মাধবী । ব্যস্ত থাকার কারনে ওর দেখাশোনার দায়িত্ব অঘোষিতভাবে আমার ওপরেই দেয় সাদাত । কোচিংয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে কোথায় থাকবে তার পুরোটাই আমি ঠিক করে দেই ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে মাধবীর ঢাকায় থাকাটা নিশ্চিত হয়ে যায় । এতদিনে মাধবীর লাজুক ভাবটা কেটে যায় । আমি তখন ফাইনাল ইয়ারে পড়ি । পড়াশোনার চাপ একটু বেশি । সকালে ক্লাশ, বিকেলে টিউশনি করার পরে যেটুকু সময় পাই সন্ধ্যায় সেই সময়টুকু মাধবীর সাথে টিএসসিতে আড্ডা দেই ।

মাধবী হইহুল্লোর পছন্দ করেনা বলে তার তেমন বন্ধু জোটেনি, তাই আমাকেই একটু সময় দিতে হয় । এদিকে বন্ধুদের সময় না দিয়ে যখন মাধবীকে সময় দেয়া শুরু করলাম তখন বন্ধুরাও ফাজলামো শুরু করে । ওরা ভাবে আমরা প্রেম করছি । মাধবীকে ভাল লাগলেও কখনো তাকে বলিনি । কারন ও আমার বন্ধুর বোন । কিছু বললে যদি সাদাতের সাথে বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায় ।

হঠাৎ একদিন রাতে সাদাত আমাকে বলল "আচ্ছা মেঘ একটা সত্যি কথা বলতো, তুই কি মাধবীকে পছন্দ করিস ? আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড, অন্তত আমাকে মিথ্যা বলিস না "

আমি সাদাতকে মিথ্যা বলতে পারিনি । সাদাত সত্যটা মেনে নিয়েছে । সাদাতই মাধবীকে কথাটি জানিয়েছিল । মাধবী লজ্জাতুর মুখ নিয়ে মাথা নিচু করেছিল । তারপরের দুইটা দিন মাধবী আমার সাথে থাকলেও একটিবারের জন্যও মুখ খোলেনি । অনেক কথা বলার চেষ্টা করেও মাধবীকে কথা বলাতে পারিনি ।

এরপরের দুইদিন মাধবীর সাথে দেখা হয়নি । অনেকবার মোবাইলে কল দিয়েছি, রিসিভ করেনি । তার পরেরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটায় মাধবীর ফোন পেয়ে অবাক হয়ে রিসিভ করলাম ।

- অনেক ঘুমিয়েছো আর ঘুমানোর দরকার নেই, এবার উঠে নীলক্ষেতে চলে আসো । নাস্তা করবো একসাথে ।
- এত সকালে !
- তুমি আসবে কিনা বল ?
- হ্যা আসতেছি ।
- ৬.৩০ এর পর এক মিনিটও যেন দেরি না হয় ।

দেখা হল নীলক্ষেতের লাভলী হোটেলের তৃতীয় তলায় । পুরোটাই ফাঁকা ছিল, শুধুই আমরা দুজন । তিনবার কেমন আছো প্রশ্নটা করেও মাধবীর কাছ থেকে কোন উত্তর পাইনি । অভিমানে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম । হঠাৎ বাম গালে ঝড়োগতিতে একটা চুমু । আমি মাধবীর দিকে তাকাতেই দেখি সে মুহূর্তেই অন্যদিকে ঘুরে গেছে । আমিই প্রথম কথা শুরু করলাম ।

- ভালবাস সেটা এতদিন বলোনি কেন ?
- তুমিও তো বলোনি ।

মাধবীর ডান হাতটি ধরে আলতো করে একটা চুমু দিতেই সে আমার দিকে ঘুরে তাকালো । নিষ্পাপ মুখটি একদৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে । সেদিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর আমি আর নিজের হাতে সকালের নাস্তা খাইনি ।

অনার্স শেষ হওয়ার পরে একটা স্কলারশীপ পেয়ে কানাডা চলে যায় মাধবী । যাওয়ার সময় অনেক কেঁদেছিল । বলেছিল তুমি কোন চিন্তা করনা, মাত্র তো দুই বছর । একটু কষ্ট করে অপেক্ষা কর । এসেই আমরা বিয়ে করবো । বলেছিলাম বিয়েটা করেই নাহয় যাও । রাজি হয়নি, বলেছে "আমার উপর তোমার বিশ্বাস নেই । দুইটা বছর আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবেনা ?"

মাধবী চলে যাওয়ার পর চার মাস যোগাযোগ ছিল । এরপর আর যোগাযোগ রাখেনি । কোন কারন বলেনি শুধু বলেছে "তুমি আর আমাকে ফোন দিবেনা "।

তারপরও নির্লজ্জের মত অনেকবার ফোন দিয়েছি । কথা বলেনি । সাদাতের মাধ্যমে কারন জানার চেষ্টা করেছি । কিন্তু সাদাতকেও কিছু বলেনি । তারপর ফোন নম্বরটাই পাল্টে ফেললো ।

গতকাল সন্ধ্যায় সাদাতের সাথে দেখা হয়েছিল প্রায় চার মাস পরে । সাদাতের কাছেই জানতে পারলাম প্রায় বিশদিন আগে মাধবী তার এক সহপাঠীকে বিয়ে করেছে । সে আর দেশে ফিরবেনা ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×